নাস্তিকদের যুক্তি ও সৃষ্টির নিদর্শন

আল্লাহর পরিচয়

আল্লাহর পরিচয়

পূর্বের অংশটুকু এখানে

নাস্তিকরা আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করার যুক্তি হিসেবে কতগুলো উদ্ভট ও অযৌক্তিক প্রমাণাদি পেশ করার অপ-প্রয়াস চালিয়ে থাকে। তারা বলে আল্লাহকে কেউ দেখে না, ধর্মের ধ্বজাধারীরা সাধারণ মানুষকে শোষণ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর একটা ধারণা প্রসূত মতবাদ দাঁড় করানোর জন্য অদেখা-অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে মনগড়া কথাবার্তা চালু করে রেখেছে। জীবন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা এখন আর অসম্ভব নয় বলে অবৈজ্ঞানিক অস্পষ্ট চিন্তাধারার বিশ্বাস করারও কোন প্রয়োজন নেই। ভীতি প্রদর্শনের জন্য পরকালের কঠোর আজাবের কথা আর ভোগ লালসার আশ্বাসবাণীর জন্য স্বর্গ-এগুলো ধর্মেরই তৈরি, যার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা যা অনুভাব করা যায় না, তা কিভাবে বিশ্বাস করা যেতে পারে ? আল্লাহ নামক এই ধারণা মানুষেরই সৃষ্টি। মূলত: আল্লাহ বলতে কিছু নেই।

নাস্তিকদের মোটামুটি যুক্তিগুলো এ ধরনেরই। এসব কথাকেই নানাভাবে, নানা ভঙ্গিতে তারা পেশ করার চেষ্টা করে। অথচ তারাই আবার এমন সব জিনিস সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না-যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত অনুভাব করি ও বিশ্বাস করি। অদেখা হাজারো জিনিস আমরা প্রতিনিয়ত অনুভাব করে, না দেখে বিশ্বাস করি। মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। দেয়ালের অপর পাশে কি আছে, তা দেখার শক্তি আমাদের নেই। ধুয়ার কুণ্ডলী দেখলেই আমরা বুঝতে পারি পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে। আগুনের লেলিহান শিখা কিন্তু আমরা দেখিনি, দেখেছি তার নিদর্শন। তাতেই আমাদের বিশ্বাস হয়েছে-ওখানে অবশ্যই আগুন আছে। তখন কিন্তু আমরা যুক্তি দিতে চেষ্টা করি না যে, না, আগুনতো দেখা যাচ্ছে না। তাই বিশ্বাসও করব না। এ যুগের অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইলেক্ট্রনিক, ইথর, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন-আরো অনেক জিনিস আমরা শুধু নিদর্শন দেখেই বিশ্বাস করে থাকি। রেডিওর আওয়াজ, বিদ্যুতের আলো আর শ্বাস-প্রশ্বাসের নির্গত ও বহির্গত বায়ুও আমরা দেখি না, শুধু অনুভব করি। কেউ কি বলতে পারে যে এসব অদৃশ্য কথাবার্তায় আমরা বিশ্বাস করব না। এগুলো আমাদের দেখতে হবে। তবেই মাত্র বিশ্বাস করা যাবে। এ ছাড়াও বলা যায়, আগামী কিছুদিন পরই আরম্ভ হচ্ছে ২০০০ সালের বর্ষ বরণ উৎসব। তা শুনে আমরা সবাই বিশ্বাস করেছি। এটা কেন বলা হচ্ছে না যে- ২০০০ সাল আসুক, উৎসব উদ্‌যাপিত হক, তারপর বিশ্বাস করব-এখন না দেখে কীভাবে বিশ্বাস করব ? ক্রুজ মিসাইল আমরা দেখি না। কিন্তু আছে, তা বিশ্বাস করি। এখানে এ প্রশ্ন করি না কেন-দেখি না তাই বিশ্বাসও করব না। তাহলে স্রষ্টার এ বিশাল জগৎটা এত সুন্দর ও সুবিন্যস্ত আর সুশৃঙ্খল দেখেও কেন আমরা তাঁর শক্তিধর সূক্ষ্ম কারিগর সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করব ? আহম্মকী-বোকামি আর বিকৃতিরও একটা সীমা আছে।

মানুষ ব্রেনের করণেই সৃষ্টির সেরা জিব-আশরাফুল মখলুকাত। কিন্তু এ ব্রেন থাকা সত্ত্বেও এর অপব্যবহার করে সে যদি নিজেকে গরু-ভেড়া আর ছাগলের স্তরে নামিয়ে পশুর লাইনে দাঁড়াতে চায় তাহলে কে তাকে রক্ষা করতে পারে ! এসব বিকৃতমনা তথাকথিত বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিকরা মূলত: নিজেরাই নিজেদের জন্তু জানোয়ারের স্তরে নিয়ে গেছে। আমাদের দেশে সেই অ-কবরী” বুদ্ধিজীবীদের এখনও যারা শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা দরকার, ওরা যখন আবার ঢাকার আবহাওয়াকে দূষিত-কলুষিত করার চেষ্টা করবে তখনও কি এরা ছুটে যাবে সেখানে নাকে কাপড় গুঁজে ওদের শ্রদ্ধা জানাতে ? মূলত: এদেরকে লক্ষ করেই কোরআন বলেছে-

خَتَمَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ (البقرة :7 )

তাদের হৃদয় ও কর্ণকুহরে সিল মেরে দেওয়া হয়েছে আর তাদের চক্ষুর সম্মুখে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অন্ধত্ব। (সুরা বাকারা :৭) ঐ অ-কবরীর এ জ্বলন্ত আজাব দেখেও তারা দীক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না, এটাই বিস্ময়ের ব্যাপার।

কিছু মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্টতর

আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষের নিজের শরীরের মধ্যে তার অস্তিত্বের বহু নিদর্শন রেখে দিয়েছেন। বিস্মিত হতে হয় যখন কেউ গভীরভাবে তার নিজস্ব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর চিন্তা করে। সামান্য একটি অঙ্গকে বিশ্লেষণ করলেই সে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে। এসব কথা ভাবলে কোন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছাড়াও যে কোন বিবেকবান লোক অনায়াসেই আল্লাহর অস্তিত্বের বিশ্বাসী হতে বাধ্য। হৃৎপিণ্ডের চালিকাশক্তি ঠিক জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে। এক মুহূর্তও এর গতি বন্ধ হয়নি। চলছে আর চলছে। কে এ মেশিনটাতে রক্ত সঞ্চালন করছে ? এ ধরনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শারীরিক মেশিনসমূহ দিন-রাত ক্রমাগত চলছে, কোন বিরতি নেই। সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকারকারী নাস্তিক আর তাঁর আনুগত্যকারী মোমিন একই ভাবে এর দ্বারা বেঁচে আছে। আরও অসংখ্য মেশিন তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রতিনিয়ত সেবায় নিয়োজিত। এসব নিদর্শন রয়েছে তার অতি নিকট এবং নাগালের মধ্যে। কিন্তু আল্লাহ যাকে অন্ধ বানিয়েছেন, সে কি আর দু চোখ মেলে কিছু দেখতে পায়? এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা মোমিনদের বলেছেন চক্ষুষ্মান আর কাফেরদের বলেছেন অন্ধ। কাফির শব্দটা কোন ফতোয়া নয়। এর অর্থ হচ্ছে অস্বীকারকারী | ঠিক দুপুর সময়ে মধ্য আকাশে যখন সূর্য থাকে, তখন যদি কোন লোক বলে এখন রাত্রি-দ্বিপ্রহর, তখন তাকে আপনি কি বলবেন ? মূলত: এরা বোকা, অজ্ঞ আর জন্তু-জানোয়ারের মত। নিজেদের তারা যতই বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মনে করুক না কেন।

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آَذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ (الأعراف: 179 )

আমি অনেক জিন ও মানুষকে দোজখের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর রয়েছে, তারা তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা তারা দেখে না আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শুনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। (সুরা আরাফ:১৭৯)

ওয়েব গ্রন্থনা : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার /সার্বিক যত্ন : আবহাছ এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটি, বাংলাদেশ।

 (চলবে)

Related Post