ইসলামের সব শিক্ষা ও ইসলামী বিধানের সারবস্তু একটি শব্দের মধ্যে প্রতিভাত হয়ে উঠতে পারে; একটি শব্দ, যা ইসলামের সর্বজয়ী মূল্য ও মহিমা এবং সব অবিসংবাদিত মূল্যবোধকে বাক্সময় করে তোলে। শব্দটি হলো ইনসাফ। আল্লাহপাক বলেন :‘আমি নিশ্চয়ই আমার রাসূলদের কিছু সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি;তাদের সাথে পাঠিয়েছি কিতাব এবং ন্যায়দণ্ড, যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর কায়েম হতে পারে।’(সূরা আল হাদীদ-আয়াত : ২৫)।
পৃথিবীতে নবী-পয়গম্বরদের (আ:) প্রেরণের মূল উদ্দেশ্যই ছিল অবিচারের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। মোটামুটি বলতে গেলে ইনসাফ হলো ন্যায্যত যার যা প্রাপ্য তা প্রদান করা। কিন্তু এই সহজ কথাটি জীবনের সব জটিলতা ও নিত্যপরিবর্তিত সহস্র রকম দাবির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। বস্তুতপক্ষেই ন্যায়বিচারকে আড়াল করার ক্ষেত্রে কত যে প্রলোভন, কত যে প্রতিবন্ধকতা, কত যে সংশয় ও পরস্পরবিরোধী সঙ্কট, তার কোনো শেষ নেই। এবং এ জন্যই সমগ্র মানব সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশনা হিসেবে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা সুস্পষ্ট নিদর্শনাদিসহ নবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন,নাজিল করেছেন হেদায়াতসমৃদ্ধ কিতাব এবং নির্ভুল মানদণ্ড। নাজিলকৃত এই ওহিসমৃদ্ধ কিতাব ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য তুলে ধরে; এবং যে মানদণ্ড আমাদের মধ্যে এমন শক্তি ও সামর্থ্য সৃষ্টি করে, যাতে আমরা আমাদের সব কিছু সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হই এবং কিতাবের হেদায়াত ও নবী-রাসূলদের (সা:) ব্যাখ্যানুযায়ী প্রদর্শিত পথে চলতে পারি।
আর হেদায়াতের এসব উৎসের যে সমন্বিত রূপ, তা থেকে আমাদের পক্ষে এই শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ ও সম্ভব হয়ে ওঠে যে,আমাদের ওপর আল্লাহপাকের কী অধিকার এবং আমাদের নিজের প্রতি ও অন্য মানুষের প্রতিই বা কী আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর এই আমাদের প্রতি আরোপিত যে হক বা অধিকার, তার মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হয়ে ওঠে। অতএব আল্লাহপাকের প্রতি আনুগত্য নিয়ে আমাদের যে জীবন, সেই জীবন হয়ে ওঠে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক,উভয় দিক থেকেই অব্যাহতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ।
সাধারণ অবস্থায় অনেক মানুষই ন্যায়বান হতে পারে। কিন্তু ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশনা দিচ্ছে, সর্বদা সর্বত্র, এমনকি কঠিন ঈর্ষা-বিদ্বেষের সম্মুখীন হয়েও ইনসাফ রক্ষা করতে হবে। ভিন্ন মানুষের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইনসাফ রক্ষায় সাধারণত দু’টি বড় প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান; একটি হলো ভালোবাসা ও অপরটি ঘৃণা। এখন আমরা লক্ষ করতে পারি, আল কুরআন কিভাবে আমাদেরকে প্রথম বাধাটি জয় করার শিক্ষা দেয়; যে শিক্ষা আমাদের নিকটতম আত্মীয়-পরিজনই শুধু নয়,এমনকি নিজের ক্ষেত্রেও সম-আচরণ ও যথাযথ ইনসাফ রক্ষার্থে অব্যর্থভাবে সাহায্য করে। আল্লাহপাক বলেন : ‘হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা ইনসাফের ওপর (সর্বদা দৃঢ়ভাবে) প্রতিষ্ঠিত থেকো; এবং আল্লাহপাকের জন্য সত্যের সাক্ষী হিসেবে নিজেকে পেশ করো। এই (কাজটি) যদি তোমরা নিজের, নিজের পিতা-মাতা কিংবা নিজের আত্মীয়স্বজনের ওপরও আসে (এই নির্দেশ বিস্মৃত হয়ো না)। সে ব্যক্তি ধনী কিংবা দরিদ্র যা-ই হোক (কোনো দিকে লক্ষ করবে না, কারণ) তাদের উভয়ের চেয়ে আল্লাহ তায়ালার অধিকার অনেক বেশি। অতএব তুমি কখনোই আপন খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না, ন্যায়বিচার করবে। যদি তোমরা পক্ষপাতিত্ব করো কিংবা (সত্য সাক্ষ্য দেয়া থেকে) বিরত থাকো, তাহলে (জেনে রাখো) তোমরা যা কিছুই করো না কেন, আল্লাহতায়ালা তার যথার্থ খবর রাখেন’ (সূরা নিসা : আয়াত- ১৩৫)।
ব্যক্তিস্বার্থ এবং ইনসাফের মধ্যে যে স্থায়ী বিরোধ,সে প্রসঙ্গে কুরআনের এই অটল ও দৃঢ়তাপূর্ণ বক্তব্য; সুবিচারকারী হও, এমনকি সে কারণে যদি তোমার সঙ্কীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ এবং ঘনিষ্ঠজনদের বিপক্ষেও দাঁড়াতে হয়। অজ্ঞজনদের ধারণা, নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য অন্যের প্রতি অবিচার করা দোষণীয় নয়। আসলে তাদের সিদ্ধান্ত,ন্যায় হোক অন্যায় হোক, অনেকটাই আত্মস্বার্থতাড়িত নির্মম এক কুৎসিত বিবেচনার ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস মানুষকে এই সঙ্কীর্ণ মানসিকতা থেকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। প্রাগুক্ত পবিত্র আয়াতগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে,আসলে সব মানুষের স্বার্থের হেফাজতকারী একজনই এবং তিনি আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা। আর আমরা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী যতক্ষণ সত্য ও ন্যায়কে আঁকড়ে থাকব, তিনি আমাদেরকে রক্ষা করবেন। এবং এ জন্যই ইসলাম যে ইনসাফের কথা বলে, সেখানে পক্ষপাতিত্বের আদৌ কোনো স্থান নেই।
সুবিচারের ক্ষেত্রে একটি কঠিন বাধা হলো ঘৃণা। এ বিষয়ে আল কুরআনের নির্দেশ :‘হে ঈমানদারগণ,তোমরা আল্লাহর জন্য সত্য ও ন্যায়ের ওপর সাক্ষী হয়ে অবিচলভাবে দণ্ডায়মান থাকো। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি দুশমনি বা ঘৃণাবশত তোমরা এমনভাবে প্রভাবিত হইও না, যাতে তোমরা ন্যায় ও ইনসাফ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ো। ইনসাফ রক্ষা করো,কারণ এই কাজটি আল্লাহকে ভয় করে চলার অধিকতর নিকটবর্তী। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো;নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল’(সূরা মায়িদা : আয়াত-৮)
অন্যভাবে বলতে হয়,তুমি এমনকি তোমার শত্রুদের ক্ষেত্রেও কোনোরূপ অবিচার করতে পারো না। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাই হলো দুশমনের প্রতি এমন ব্যবহার করা যে, তারা যেন কোনো মানুষই নয়; তাদের না আছে কোনো অধিকার এবং না আছে সুবিচার ও সদ্বিবেচনা লাভের কোনো যোগ্যতা ও অধিকার। এবং এ বিষয়টি ইসলাম-পূর্ব গোত্রীয় জাহেলি সমাজে যেমন সত্য ছিল,আজো একই রকম সত্য। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখন দেখতে পারি, ইসলাম কিভাবে সরাসরি এই আদিম ও অমানবিক আচরণকে দমন ও শৃঙ্খলিত করেছে। অন্য কিছু নয়, ঈমানদারদের প্রতি নির্দেশ এবং আল্লাহ যে সবার সব কার্যকলাপকে প্রত্যক্ষ করছেন,আল্লাহপাকের এই ঘোষণার ফলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। এবং সম্ভব হয়েছে এই জীবনবোধ জাগ্রত করা যে, শত্রুতার অজুহাতে বা শত্রুতার কারণে কারো বিরুদ্ধে কোনোরূপ অন্যায় অবিচার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সুবিচার প্রতিষ্ঠায় প্রতিশোধ গ্রহণ আবশ্যক; ইসলাম যাকে বলে ‘চোখের বদলে চোখ’। কিন্তু এ কথার অর্থ আদৌ এ রকম নয় যে, নিরপরাধ চোখের বিনিময়ে নিরপরাধ চোখ। এর প্রকৃত অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অনুকূলে দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। অথচ এটা খুবই চমকপ্রদ এবং কৌতূহলজনকও বটে যে, কেউ কেউ শেষোক্ত ব্যবস্থাকে প্রথম কথাটির সাথে মিলিয়ে নিয়ে পুরো বিষয়টিকে ‘বর্বর’ বলে উপহাস করছে।
যা-ই হোক বলাই বাহুল্য, আজ থেকে চৌদ্দ শ’ বছর আগে কুরআন এবং রাসূল (সা:)-এর নির্দেশগুলো সামনে রেখে এমন একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মিত হয়েছিল,যেখানে বিচারের মানদণ্ডে ধনী-দরিদ্র, বন্ধু-দুশমন, মুসলিম-অমুসলিম, শাসক ও শাসিত সবাই সমভাবে গৃহীত হতো; এবং সবাইকেই গ্রহণ করা হতো পক্ষপাতহীন ইনসাফের তুলাদণ্ডে। কাজী অর্থাৎ বিচারক ছিলেন সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন; এবং কেউই, এমনকি খলিফাও আইনের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। সাধারণ কোনো ব্যক্তি এবং খলিফার মধ্যে যদি কোনো ব্যাপারে বিরোধ সৃষ্টি হতো, নিজ নিজ সাক্ষ্যপ্রমাণসহ দু’জনকেই কাজীর দরবারে হাজিরা দিয়ে ফয়সালা গ্রহণ করতে হতো। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, মুসলমানদের স্বর্ণযুগে যেখানে যেখানে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেখানে সর্বত্রই এই নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা কার্যকর ছিল। উপরন্তু,এই সুবিচার শুধু মুসলিমশাসিত এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ইসলাম ঘোষণা করে, ন্যায়বিচার এমন একটি মৌলিক ও নৈতিক মূল্য বহন করে, যা শত্রুমিত্র প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একইভাবে প্রযোজ্য। ইতিহাস থেকে আমরা এখানে মাত্র দু’টি ঘটনার উল্লেখ করব।
বিশিষ্ট সাহাবী হুজাইফা বিন ইয়ামা (রা:) এবং তার পিতা মদিনার দিকে আসছিলেন। আবু জাহেল তাদের পথ রোধ করে দাঁড়াল। আবু জাহেল তাদেরকে এই শর্তে মুক্তি দিলো যে, তারা আসন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। তারা মদিনায় এসে পৌঁছলেন। মুসলমানদের সামনে তখন বদর যুদ্ধ। তিন গুণ অধিক এক বিরাট অস্ত্রসজ্জিত মুশরিক বাহিনীর মোকাবেলা নিয়ে মুসলমানেরা তখন এক দারুণ অবস্থার সম্মুখীন। এবং এই যুদ্ধ ছিল এমন, যা সদ্য উদীয়মান মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলতে পারে। অথচ এই কঠিন সঙ্কটের মধ্যেও রাসূল (সা:) হজরত হুজাইফা (রা:) এবং তার পিতাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখলেন, কারণ তারা যুদ্ধ না করার ওয়াদা করে এসেছেন। কঠিনতম সঙ্কটের মুহূর্তেও প্রতিশ্রুতি রক্ষার কী অভাবনীয় দৃষ্টান্ত,প্রাণঘাতী দুশমনদের মোকাবেলায়ও ইনসাফের কী অপূর্ব নমুনা!
অপর একটি ঘটনা। খলিফা হজরত উমরের (রা:) খেলাফতকালে মুসলমান সেনাবাহিনীকে একবার ফিলিস্তিন থেকে সিরিয়ায় যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলো। কিন্তু এলাকা পরিত্যাগের আগে সংগৃহীত সব নিরাপত্তা কর (জিম্মি ট্যাক্স) এলাকাবাসীকে ফেরত দেয়া হলো; কারণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না। অথচ গৃহীত ট্যাক্স ফেরত দেয়ার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? তারা সোজা চলে গেলেই পারত, অথবা সৌজন্যবশত শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট ছিল যে, ‘আমরা দুঃখিত, জরুরি কারণে আমাদেরকে অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে।’ কিন্তু না, এটা ছিল মুসলিম বাহিনী। গৃহীত সমুদয় ট্যাক্স ফিরিয়ে দেয়া হলো, অথচ পরাভূত জনগণের পক্ষে এটা দাবি করা বা বলপূর্বক আদায় করার কোনো প্রশ্নই ছিল না। মুসলিম বাহনী বিদায় নিলো,পশ্চাতে রেখে গেল অশ্রুসিক্ত এলাকাবাসীর সামনে ইনসাফের এমন এক অভাবনীয় উদাহরণ, যা তারা এমনকি তাদের পূর্ববর্তী স্বধর্মী শাসকদের কাছেও কখনো আশা করেনি।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, এমনকি মুসলিম উম্মাহর জীবনে যখন পতন নেমে এসেছে, তখনো বিক্ষিপ্তভাবে হলেও এমন অনেক ঘটনার সাক্ষাৎ মেলে যা রীতিমতো বিস্ময়কর। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উল্লেখই আশা করি যথেষ্ট হবে। ভারত তখন ব্রিটিশ শাসনাধীন। একটি জমি নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হলো। হিন্দুদের দাবি, জায়গাটি তাদের কারণ সেখানে এক সময় মন্দির ছিল। অন্য দিকে মুসলমানদের কথা, জায়গাটা মসজিদের। দু’পক্ষই এতটা অনড় ও উত্তেজিত যে, রীতিমতো দাঙ্গা বেধে যাওয়ার উপক্রম। ইংরেজ বিচারক কোনোভাবেই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না এবং কোনো সুরাহাও হচ্ছিল না। অবশেষে বিচারক উভয় পক্ষকে ডেকে জানতে চাইলেন যে, তারা একজন বিশেষ ব্যক্তিপ্রদত্ত ফয়সালা মেনে নিতে সম্মত কি না। লোকটি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ইমাম (মুসলিম ধর্মীয় নেতা); ধর্মপ্রাণ ও সত্যনিষ্ঠ হিসেবে তার বিশেষ পরিচিতি ছিল। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে ইমাম সাহেবকে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলো। মুসলমানেরা তাকে তাদের পক্ষে বলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাল, যাতে সংশ্লিষ্ট মামলায় মুসলিম সম্প্রদায় জয় লাভ করতে পারে। ইমাম সাহেব আদালতে এসে তার সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্যে বললেন, ‘জায়গাটা হিন্দুদেরই, মুসলমানদের দাবি ভিত্তিহীন।’ দৃশ্যত যা-ই মনে হোক, আসলে কিন্তু ইমাম সাহেব তার নিজ সম্প্রদায়ের কোনোরূপ বিরুদ্ধাচরণ করেননি, প্রকৃতপক্ষে কোনোরূপ ক্ষতিও করেননি। তিনি বরং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে কুণ্ঠাহীনভাবে প্রমাণ করলেন, ইনসাফের দাবিই সর্বোচ্চ, ইসলাম যেকোনো মূল্যে সত্য ও সততাকেই অবিচলিত অগ্রাধিকার দান করে। বস্তুতপক্ষে, এই-ই হলো ইনসাফ, বর্তমান পৃথিবী যে ইনসাফের প্রয়োজন আজ মর্মে মর্মে অনুভব করছে। আল কুরআন দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছে : ‘(হে ঈমানদার ব্যক্তিগণ) আল্লাহপাক তোমাদেরকে এই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তাদের (যথার্থ) মালিকের কাছে সোপর্দ করে দেবে; আর যখন মানুষের মধ্যে তাদের কোনো ব্যাপারে বিচার ফয়সালা করো, তখন তা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে করো। আল্লাহপাক তোমাদেরকে যা কিছু উপদেশ দেন, তা অতীব সুন্দর। আল্লাহপাক সব কিছুই দেখেন এবং শোনেন’ (সূরা নিসা-আয়াত- ৫৮)।