কিভাবে আমরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করব?

কিভাবে আমরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করব?

কিভাবে আমরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করব?

মুসলিম উম্মার জন্য রয়েছে দু’টি ঈদ। ঈদ শব্দটি আমরা সাধরাণত খুশী অর্থেই ব্যবহার করি। মূলতঃ ঈদ শব্দটির আরবী উচ্চারণ হচ্ছে, العيد আল-ঈদ। ঈদ শব্দের প্রকৃত হচ্ছে বারবার আগমণ করা। ঈদ যেহেতু প্রতিবছর আমাদের জন্য আনন্দ ও খুশীর বার্তা নিয়ে আসে তাই আমরা এই খুশীর দিনকে ঈদ বলি।
প্রতি বছর দুইবার কেন ঈদ আসে?
প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামরে বিরাট একটি রুকন পবিত্র রামাযান মাসের রোজা পূর্ণ করার পর কেন ঈদুল ফিতর আনন্দের বার্তা নিয়ে আমাদের কাছে আগমণ করে? কেনই বা জুল হজ্জ মাসের নয় তারিখে হাজীগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করে ইসলামের পঞ্চম রুকন পালন করার পরের দিন ঈদুল আযহা নামে আরেকটি ঈদ আমাদেরকে আনন্দ দেয়?
উত্তরটি খুবই সহজ। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনা করে, রাতগুলো বিভিন্ন এবাদতের মাধ্যমে জাগরণ করে রহমত, মাগফিরাত ও জান্নাতের আশায় আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করতে পেরে একজন সফল মু’মিন কি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন না? তিনি কি আনন্দিত ও খুশী হবেন না? তিনি খুশী হবেন, আনন্দিত হবেন। আল্লাহ যেহেতু তাকে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালন করার তাওফীক দিয়েছেন, তাই তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন, তারই বড়ত্ব বর্ণনা করবেন এবং তারই পবিত্রতা ঘোষণা করবেন। এমনিভাবে আল্লাহর মেহমানগণ যেহেতু পবিত্র হজ্জ পালন করে সফল হয়েছেন, তাই বিশ্বের মুসলিমগণও হাজীদের তাকবীর ধ্বনির সাথে যোগ দিয়ে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা ঘোষণা করে আল্লাহ্ আকবার বলে প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী করবেন, আনন্দিত হবেন এটি তাদের প্রাপ্য।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
বলুন, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানীতে। সুতরাং এরই জন্য তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত (আনন্দ প্রকাশ করা উচিত)। এটিই উত্তম সে সকল জিনিষ থেকে, যা তারা সঞ্চয় করেছে।
ঈদ আমাদেরকে কি শিক্ষা দেয়?
ঈদ আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ের দিকে আহবান জানায়। আসুন আমরা ঈদ থেকে বিশেষ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে আমাদের জীবনকে ধন্য করি।
১) ঈদ মুসলমানদেরকে ইসলামী ভ্রার্তৃত্বের শিক্ষা দেয়ঃ
ঈদ আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, বিশ্বের সকল মুসলিম ভাই ভাই। তাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা ঈদের দিনে একই সময়, একই স্থানে, একই কাতারে একজন ইমামের পিছনে দাড়িয়ে একই কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে এক মহান আল্লাহর সামনে হাজির হই। এখানে ধনী-গরীব, উঁচু-নীচু, রাজা-প্রজার কোন পার্থক্য থাকে না।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
يأيها الناس إنا خلقناكم من ذكر وأنثى وجعلناكم شعوبا وقبائل لتارفوا إن أكرمكم عند الله أتقاكم إن الله عليم خبير
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজরাতঃ ১৩)
২) মুসলিম জাতিকে ঈদ ঐক্যের আহবান জানায়ঃ
বর্তমান সময়ে মুসলমানদের ঐক্যের খুবই প্রয়োজন। ঈদের সম্মেলন থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলিমগণের পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিরাট এক সুযোগ রয়েছে। দৈনিক জামাআতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মুসলিমদের একত্রিত হওয়া, সাপ্তাহিক ঈদ জুমআর নামাযে তাদের সমবেত হওয়া, বছরে দু’টি ঈদের দিনে তাদের মহামিলনে এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্ব থেকে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে আগত হাজীদের আরাফাতের বিশাল মাঠে একত্রিত হওয়ার মধ্যে থেকেও যদি তারা ঐক্যের শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে এ জাতির মুক্তি ও কল্যাণের আশা কখনও বাস্তবায়ন হওয়ার নয়।
৩) ঈদ মুসলমানদের পারস্পরিক ভালবাসা ও মুহাব্বত বৃদ্ধির আহবান জানায়ঃ
ঈদ আমাদেরকে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেস ভুলে যেতে আহবান জানায়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যখন আমরা এক আল্লাহর সামনে দাঁড়াই, তখন এই চির সুন্দর দৃশ্য আমাদেরকে পারস্পরিক শত্রুতা, ঘৃণা ও হিংসা-বিদ্বেষ বর্জনের দিকে উৎসাহিত করে এবং পারস্পরিক ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির দিকে আহবান করে।
ঈদের আনন্দ কার জন্য?
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় রামাযানের আগমণের সাথে সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য এক শ্রেণীর মানুষ উদগ্রীব হয়ে উঠেন। অথচ রামাযানের সুমহান লক্ষ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্পর্কে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন আগ্রহ দেখা যায় না। তারা ব্যস্ত হয়ে যান ঈদের নতুন পোষাক ক্রয়, ঈদের খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, ঈদের ছুটি কাটানোর উপযুক্ত স্থান নির্ধারন সহ আরও অনেক কার্যক্রম নিয়ে।
যারা রহমত, বরকত এবং গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়ার এই মাসকে এবাদতের মাধ্যমে না কাটিয়ে শুধু আক্ষরিক অর্থে ঈদকে উপভোগ করতে চান, তাদের সম্পর্কে আপনি বলবেন? আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষিত ও প্রগতিবাদী অধিকাংশ লোকের মধ্যেই ঈদকে এভাবে আক্ষরিক অর্থে উদযাপন করতে দেখা যায়। ইসলামের মূল্যায়নে প্রকৃত পক্ষে ঈদের আনন্দ তাদের জন্য কোন অর্থবহ কল্যাণ বয়ে আনবে না। নতুন কাপড় পরে তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করলেও সে আনন্দ তাদের জন্য কোন সুসংবাদ বয়ে আনবে না, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঈদের দিনে অনেক হাসলেও সে হাসি তাদেরকে একদিন কাঁদাবে।
হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ
মু’মিন ব্যক্তির জন্য প্রতিটি দিনই হচ্ছে ঈদ, যদি না তাতে তার প্রভুর নাফরমানী করে থাকে এবং প্রতিটি দিনই তার জন্য আনন্দের, যদি সে তা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর স্মরণের মাধ্যমে কাটিয়ে থাকে।
সুতরাং যে ব্যক্তি রামাযানের পূর্ণ দায়িত্ব পালন না করে শুধু নতুন কাপড় পরিধান করে ঈদ করল, তার জন্য ঈদের আনন্দ শোভনীয় নয়; বরং যে ব্যক্তি এই পবিত্র মাসে আনুগত্য করে এবং তাকওয়ার পোষাক পরিধান করে তাঁর প্রভুর প্রিয় হতে পারল তার জন্যই প্রকৃত ঈদ।
যে ব্যক্তি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে নতুন ঝকঝকে গাড়িতে চরে ঈদগাহে গমণ করল, তাঁর জন্য ঈদ নয়; বরং প্রকৃত ঈদ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির জন্য যে এই মহান মাসে সকল গুনাহ হতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হতে পারল।
আফসোস ঐ বান্দার জন্য যে সুন্দর পোষাক পরে ঈদের আনন্দ প্রকাশ করে, কিন্তু গুনাহ থেকে তাওবা করে না, মৃত্যুকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে না, ঈদের দিনে দুনিয়ার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু কবরের সাথী সংগ্রহের চিন্তাও করে না।

Related Post