ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য

ঈদুল ফিতরঈদ অর্থ খুশি এবং ফিতর এসেছে ফিতরা থেকে। সুতরাং ঈদুল ফিতরের অর্থ দাঁড়ায় দানখয়রাতের মাধ্যমে পবিত্র ঈদের উৎসবকে আনন্দে উদ্ভাসিত করে তোলা। জাকাত-ফিতরার মাধ্যমে ধনী ও গরিবের মধ্যকার ভেদাভেদ দূরীভূত হয়। আর এতেই হয় মুসলিম হৃদয় উদ্বেলিত। ঈদুল ফিতরের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতায় পরস্পরের শুভেচ্ছা, আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা বিনিময়ের মাধ্যমে মানবিক ও সামাজিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এটাই হলো ঈদুল ফিতরের সামাজিক তাৎপর্য। সমগ্র বিশ্বের প্রত্যেক মুসলমান যাতে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য রমজান মাসে বেশি হারে দানখয়রাত, জাকাত ও ফিতরা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এটা হলো ঈদুল ফিতরের অর্থনৈতিক তাৎপর্য। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাদা-কালো নির্বিশেষে একই কাতারে মিলিত হওয়া মানবসম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন পবিত্র ঈদ। আজকের মুসিলম ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। কলহ-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষের ফলে গোটা সমাজ তলিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান ঈদ নামমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন  ‘অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ ঈদের বাজারের দিকে তাকিয়ে দেখুন না; ঈদের বাজারে আমরা দেখতে পাই বিশেষ করে মহিলারা অসহনীয় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তারা অধিক মূল্যবান পোশাক-আশাকে সুসজ্জিত হয়ে সবার দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় হওয়ার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ ঈদের সময় মুসলমান নারী-পুরুষ অসহনীয় অপব্যয় করে থাকে। ঈদুল ফিতরের যথার্থ শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে এই পৃথিবীকে শান্তির নীড়ে পরিণত করতে সবার সচেষ্ট হতে হবে। ঈদরজনীর কাজ : ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাতে ইবাদতের অনেক ফজিলত রয়েছে। মহানবী সা: বলেন, যে ব্যক্তি ঈদের রাতে ইবাদতের মধ্যে লিপ্ত থাকবে তার কলব সেদিন মারবে না, যে দিবসে সব কলব মরে যাবে। অর্থাৎ পরকালে তার কোনো ভয় থাকবে না।

ঈদের দিনের কয়েকটি আমল : (১) শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে যথাসাধ্য সুসজ্জিত হওয়া (২) গোসল করা (৩) মিসওয়াক করা (৪) যথাসম্ভব উত্তম কাপড় পরিধান করা (৫) খোশবু লাগানো (৬) খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা। (৭) ফজরের নামাজের পরই ভোরে ঈদগাহে যাওয়া (৮) ঈদগাহে যাওয়ার আগে খুরমা অথবা অন্য কোনো মিষ্টি দ্রব্য ভক্ষণ করা (৯) ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতরা দান করা। (১০) ঈদের নমাজ ঈদগাহে আদায় করা। ওজর ছাড়া মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় না করা। (১১) ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া ও অন্য রাস্তায় ফিরে আসা। (১২) ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (১৩) ঈদগাহে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে তাকবির বলতে বলতে যাওয়া। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)

সাধারণ ক্ষমার দিন ঈদ : সাধারণত দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ তাদের ক্ষমতার ফখর হিসেবে বিশেষ কিছু দিনে জাতির অপরাধীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে থাকে, তেমনি মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। হজরত আনাছ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ঈদের দিন মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের মাঝে রোজাদারদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, হে ফেরেশতাগণ, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হবে? ফেরেশতাগণ বলেন, হে প্রভু, পুণ্যরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান। আল্লাহ পাক বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। অতএব, দোয়া করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে। আমার মর্যাদা, আমার সম্মান, দয়া ও বড়ত্বের কসম আমি তাদের দোয়া কবুল করব এবং তাদেরকে মাফ করে দেব।

Related Post