ইসলামী পোশাকের গুরুত্ব

ইসলামী পোশাক

শরীয়া ভিত্তিক পোশাক

মানুষকে কুপ্রবৃত্তি দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে: তাই প্রাণিকুলের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। এ প্রবৃত্তি থেকে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষও মুক্ত নন। যৌবনশক্তি সম্পন্ন প্রতিটি নর-নারীই তার যৌন ক্ষুধার তাড়নায় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষিত হয়ে থাকে। গুণগত ও মানসম্মত পণ্য উত্পাদনের জন্য কোয়ালিটি কন্ট্রোল যতখানি জরুরি, একজন প্রকৃত মানুষ তৈরিতে পর্দা বা তাকওয়ার পোশাক তার চেয়ে বেশি জরুরি।

 অনেকে মনে করেন পর্দা হচ্ছে মনে, যুক্তিটা অত্যন্ত ভুল: ঈমানের রঙ যার মনে লেগেছে, তাকওয়ার পোশাক তার দেহে আসবেই। সদাচরণকে যদি সুখ-শান্তির বসতবাড়ি ধরা হয়, তবে পর্দা বা তাকওয়ার পোশাক সেই সুখ-শান্তির দরজা। এ দুয়ের একটির অভাব হলেই অরাজকতা, নৈরাজ্য, অশান্তির দুর্বার স্রোতে সুখ-শান্তি হারিয়ে যেতে বাধ্য।

 ইসলামের ধর্মীয় পোশাকের মডেল হচ্ছে `তাকওয়ার পোশাক’: পর্দা সম্পর্কিত সব বিধানের সমষ্টি তাকওয়ার পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। সে পোশাক সতর ঢাকার, সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য চর্চার ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে অর্ধনগ্নতায় বা গর্ব ও অহংকারে পরিণত না হয়, শালীনতা ও মর্যাদাকে বিকশিত করার পথে কোনো বাধার সৃষ্টি না করে,তাই তাকওয়ার পোশাক। অর্থাৎ শালীন পোশাকে শরীর আবৃত করা, অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখা,নারী সৌন্দর্য যত্রতত্র প্রকাশ না করা,নারী-পুরুষে অবাধ মেলামেশা না করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি।

পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে শালীন, মার্জিত ও সুন্নতি পোশাকও তাকওয়ার পোশাক: আল কুরআনের সূরা আন নূর ও সূরা আহযাবে বলা হয়েছে,মহিলারা যেন জাহেলি যুগের মেয়েদের মতো বাইরে নিজেদের রূপ-সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করে না বেড়ায়। তারা ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় যেন চাদর দিয়ে নিজেদের দেহকে আবৃত করে নেয়। তারা যেন তাদের আঁচল দিয়ে বুক ঢেকে রাখে। ঝঙ্কারদায়ক অলঙ্কারাদি পরিধান করে ঘরের বাইরে না যায়। ঘরের ভেতরেও যেন তারা মুহাররম ও গায়রে মুহাররম পুরুষদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে চলে।

 এ ক্ষেত্রে নারীদের ঘরে আটকে রাখার কথা বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে তাদের সৌন্দর্যচ্ছটা আবরু করে রাখার কথা। নচেত যে কোনো কর্মস্থলে শত শত মানুষের মাঝে  বেআবরু একজন নারী একাই অশান্তি ও সর্বনাশ  করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। যে নারী অবাধ ও অর্ধনগ্ন চলাফেরা করে, সে স্বামী বা নিজের সর্বনাশই করে না, তার চলাচলের প্রতিফলন তার মন এবং তার মাধ্যমে তার ভবিষ্যৎ বংশধরের ওপরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় ভাবেই পড়ে। অনুরূপভাবে পুরুষের বেলায়ও তা প্রযোজ্য।

 রাসূল (সা.) মুখ নিঃসৃত বাণী হলো:“পরপুরুষের সম্মুখে সাজসজ্জা সহকারে বিচরণকারী নারী আলোকবিহীন কিয়ামতের অন্ধকারের ন্যায়।” (তিরমিযী)।

“যে ব্যক্তি কোনো অপরিচিত নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে কিয়ামতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত লোহা ঢেলে দেয়া হবে।” (ফাতহুল কাদীর)। হঠাৎ যদি কারো ওপরে নজর পড়ে যায় তাহলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। “হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে ক্ষমার যোগ্য। কিন্তু ফের ভালোভাবে দেখার উদ্দেশ্যে দৃষ্টি দেয়া ক্ষমারযোগ্য নয়”। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ শরীফ)।

পর্দা বা তাকওয়ার পোশাক যুক্তিসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত, তা কখনও প্রগতির অন্তরায় নয়: সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ শৃঙ্খলা, সভ্যতা ও আবরু রক্ষা করে চলবে— এটাই ধর্মীয় বিধান। পর্দা বা তাকওয়ার পোশাক নৈতিক চরিত্রের হেফাজত করে।  নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে সমাজে যে ত্রুটি-বিচ্যুতির উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে সব প্রতিরোধ করে।
পারিবারিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় করে। সুষ্ঠু, সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ সোনালী সমাজ বিনির্মাণে মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করে।

Related Post