মসজিদে নববী যিয়ারতের কিছু আদব-কায়দা

imagesCAXH8AYN

সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব-জাহানের প্রতিপালক ‘আল্লাহ্‌ তাআলার’জন্য। প্রিয় নবীমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিতহোক।

প্রিয় মুসলিম ভাই,

সে মহান আল্লাহর প্রশংসা করুন যিনি আপনাকে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের মসজিদে পৌঁছিয়েছেন। যে মসজিদের এক রাকাত নামাজ অন্য মসজিদের হাজাররাকাত নামাজের চেয়ে বেশী উত্তম, শুধু ‘মসজিদে-হারাম’ছাড়া। যেখানে কল্যাণকর কিছুশিখতে আসা অথবা শিখানোর উদ্দেশ্যে আসা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার তুল্য। অতএবমসজিদে নববীতে যত বেশী নামাজ আদায় করা যায় সে জন্য আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকাউচিত এবং মসজিদে যে সকল ইলমের আসর রয়েছে সেগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আপনার আগ্রহথাকা উচিত, যেন আপনি স্বচ্ছ জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর ইবাদত পালন করতে পারেন এবংঅজানা বিষয়গুলো প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারেন।

“আর তোমরা যদি না জান তবে আলেমদের জিজ্ঞেস কর।” [সূরা আম্বিয়া-৭] জেনে রাখুন, এমসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু আদব-আখলাক রয়েছে যেগুলো আমাদের বজায় রাখা উচিত। এরকয়েকটি আমরা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-

(১) মুসলিম নর-নারী পরিপূর্ণ ভাব-গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে, ধীর-স্থিরে, পবিত্রতারসাথে, সুন্দর বেশ-ভূষা নিয়ে মসজিদে আসবেন। বিড়ি-সিগারেট, পেঁয়াজ, রসূন ইত্যাদিরর্দুগন্ধ থেকে মুক্ত হয়ে ভাল ঘ্রাণ নিয়ে তারা আল্লাহর ঘরে আসবেন। কারণ বনী আদম যাথেকে কষ্ট পায় আল্লাহর ফেরেশতারাও তা থেকে কষ্ট পায়।

(২) ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়বেন। বলবেন-

মসজিদে ঢুকে প্রথমে ‘তাহিয়্যাতুল’মসজিদ দুই রাকাত নামাজ পড়বেন, তারপরযিকির-আযকার, ইবাদত-বন্দেগী বা কুরআন তেলাওয়াতে মশগুল হবেন।

(৩) আপনি যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে সালাম দিতে যাবেন তখনআদবের সাথে তাঁর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নিম্নস্বরে বলবেনঃ

“কর।”বরকতের নিয়তে মসজিদের গ্রিলবা দেয়াল স্পর্শ করবেন না, চুমা খাবেন না। রাসূলকে [সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম] সালাম দেয়ার সময় নামাযে দাঁড়াবার মত হাত বেধে দাঁড়াবেন না এবং দূর থেকেসালাম দিবেন না, কারণ এটা সাহাবায়ে কেরামের আমলের বরখেলাফ।

(৪) মসজিদে থাকাকালীন সময়টাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগান। ফরজ নামাজ শেষে নামাজেরজায়গায় বসে তাহে নবীজি, আপনার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। আমিসাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি রিসালত পৌঁছিয়েছেন, আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন, উম্মতকেনসীহত করেছেন, আল্লাহর রাস্তায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আল্লাহ আপনাকে আমারপক্ষ থেকে এবং সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে উত্তম বিনিময় দান করুন।”

এরপর আবু বকর ও উমর রাদিআল্লাহু আনহুমার নাম উল্লেখ করে তাদেরকে সালাম দিবেন।তারপর আপনি মসজিদের যে কোন নিরিবিলি স্থানে গিয়ে আল্লাহর কাছে যা ইচ্ছা দোয়াকরুন। এই একীন ও এই বিশ্বাসের সাথে দোয়া করবেন – ভাল-মন্দের মালিক একমাত্রআল্লাহ্‌। অতএব অন্য কারো ধর্ণা না ধরে দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় প্রয়োজন সরাসরিতাঁর কাছে পেশ করুন। প্রিয় নবীজি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইরশাদ করেছেন, “যখন তুমি প্রার্থনা কর তখন সরাসরি আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা কর। যখন তুমি সাহায্যকামনা কর তখনও সরাসরি আল্লাহর কাছেই সাহায্য কামনা সবীহ পড়ুন, যিকির করুন অথবা কুরআন তেলাওয়াত করুন। সবসময় ভিড়মুক্তস্থান নির্বাচন করুন, যেন ভিড় সৃষ্টিতে আপনার কোন অংশগ্রহন না থাকে এবং অপর মুসলিমভাইকে কষ্ট দিয়ে আপনি গুনার-ভাগী না হন।

(৫) কাতারের খালি জায়গা পূর্ণ করার জন্য উৎসাহী হোন। চাপাচাপি না হলে ফজীলতপাওয়ার জন্য সবসময় সামনের কাতারে দাঁড়াবার চেষ্টা করুন। যাতায়াতের পথে অথবা দরজারসামনে বসবেন না। এতে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে অন্য মুসলিম ভায়ের কষ্ট হয়। বাইরেরআঙ্গিনায় নামাজ পড়াকালে ইমামের সমান্তরালের সামনে গিয়ে কাতার করবেন না। পিলারগুলোরসাথে লাগানো সাইনবোর্ড দেখে ইমামের সমান্তরাল রেখা জেনে নিন।

(৬) আল্লাহর কিতাবকে যথাযথ সম্মান করুন। কুরআনের উপরে বা ভিতরে কিছু লিখবেন না, এর পাতা নিয়ে অনর্থক খেলা করবেন না। কুরআন শরীফের পাশে জুতা রাখবেন না।

(৭) কফ, থুথু ও ময়লা-আবর্জনা থেকে মসজিদ এবং মসজিদের আঙ্গিনাকে পরিচ্ছন্ন রাখুন।আপনার শিশুকে মসজিদের আদব-কায়দা শিক্ষা দিন। অনর্থক খেল-তামশা ও হৈ-হুল্লোড় থেকেতাদেরকে বিরত রাখুন।

(৮) মসজিদ থেকে একটু বিলম্বে বের হতে পারেন, যাতে মসজিদের গেটগুলোতে ভিড়অপেক্ষাকৃত কম হয়।

(৯) জেনে রাখুন মসজিদ ঘুমাবার জায়গা নয়। ভিক্ষা করা বা হারানো বস্তু তালাশ করারজন্য মসজিদ নয়।

(১০) খাবার পানি দিয়ে অজু করবেন না এবং মসজিদের কার্পেটগুলোকে গোল করে বালিশবানাবেন না অথবা গায়ে দিবেন না। এ কার্পেটগুলো নামাজ পড়ার জন্য ওয়াক্‌ফ করা হয়েছে, বিছানা বানাবার জন্য নয়। তদ্রূপ কুরআন শরীফের রেহালগুলো মাথার নীচে দিয়ে ঘুমাবেননা, কারণ এগুলো শুধুমাত্র কুরআন শরীফ রাখার জন্য ওয়াক্‌ফকৃত।

 

Related Post