ইসলামে যতগুলো মর্যাদাবান ও ফযীলতপূর্ণ দিবস রয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন। এর মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক বাণী রয়েছে। এ সংক্রান্ত কতিপয় প্রমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হল;
(১) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এ দিবসগুলোর রাত্রিসমূহের শপথ করেছেন। আমরা জানি আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বিষয়ের শপথ করেন তখন তা তার গুরুত্ব ও মর্যাদার প্রমাণ বহন করে। তিনি এরশাদ করেন ‘শপথ ফজরের ও দশ রাতের’। (সূরা ফজর: ১-২)
(২) রাসূল (সা.) বলেছেন: যিলহজ্বের প্রথম দশ দিন হল দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন। এ প্রসঙ্গে বহু হাদীস এসেছে। যার কয়েকটি তুলে ধরা হল;
ক. সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন: যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোন আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? রাসূল (সা.) বললেন : না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এল না। (বুখারী ও তিরমিযী)
খ. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসূল (সা.) বলেছেন: এ দশ দিনে (নেক) আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি করে পাঠ কর। (আহমদ)
এ দুই হাদীসের অর্থ হল- বছরে যতগুলো পবিত্র দিন আছে তার মাঝে এ দশ দিনের প্রতিটি দিন হল সর্বোত্তম। যেমন- এ দশ দিনের অন্তর্গত কোন জুমআর দিন অন্য সময়ের জুমআর দিন থেকে উত্তম বলে বিবেচিত।
(৩) যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকে রয়েছে আরাফা ও কুরবানীর দিন। আর এ দুটো দিনের রয়েছে অনেক বড় মর্যাদা। যেমন- হাদীসে এসেছে; আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.) বলেন: ‘আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি চায় ? (মুসলিম)
আরাফাহ (যিলহজ্ব মাসের নবম তারিখ) এ-দিনটি ক্ষমা ও মুক্তির দিন। এ দিনে সওম পালন করলে তা দু’বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গণ্য হয়। যেমন হাদীসে এসেছে; সাহাবী আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন: ‘আরাফার দিনের রোযা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করেন।’ (মুসলিম)
তবে আরাফার এ দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকারী হাজ্বীগণ রোযা পালন করবেন না। কুরবানীর দিনের ফযীলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে; সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে উত্তম দিন হল কুরবানীর দিন তারপর কুরবানীর পরবর্তী মিনায় অবস্থানের দিনগুলো। (আবু দাউদ)
(৪) যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের এ দিনগুলো এমন মর্যাদাসম্পন্ন যে, এ দিনগুলোতে নামাজ, রোযা , সদকা, হজ্ব ও কুরবানী আদায় করা হয়ে থাকে। অন্য কোন দিন এমন পাওয়া যায় না যাতে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল একত্র হয়।
একটি জিজ্ঞাসা: রমযানের শেষ দশক অধিক ফযীলতপূর্ণ না কি যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন বেশি ফযীলতসম্পন্ন ?
জবাব: যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিবস অধিক ফযীলতপূর্ণ, এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। কারণ, এ বিষয়ে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে। তবে মতভেদের অবকাশ রয়েছে রাত্রির ফযীলত নিয়ে। অর্থাৎ, রমযানের শেষ দশকের রাত বেশি ফযীলতপূর্ণ না যিলহজের প্রথম দশকের রাতসমূহ বেশি ফযীলতের অধিকারী ?
বিশুদ্ধতম মত হল, রাত হিসেবে রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো ফযীলতের দিক দিয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী। আর দিবসের ক্ষেত্রে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিবস অধিক মর্যাদার অধিকারী।
ইবনে রজব রহ. বলেন: যখন রাত্র উল্লেখ করা হয় তখন দিবসগুলোও তার মাঝে গণ্য করা হয়। এমনিভাবে, যখন দিবস উল্লেখ করা হয় তখন তার রাত্রিগুলো তার মাঝে গণ্য হয়; এটাই নিয়ম। এ ক্ষেত্রে শেষ যুগের উলামায়ে কেরাম যা বলেছেন সেটাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হতে পারে। তাহল, সামগ্রিক বিচারে যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের দিবসগুলো রমযানের শেষ দশকের দিবসসমূহের চেয়ে অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন। আর রমযানের শেষ দশকের লাইলাতুল কদর হল সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন।