পূর্বে প্রকাশিরে পর : ১৭তম পর্ব
(ঘ) পাকিস্তান আন্দোলনের সময় আমার মানস পটে ভেসে উঠা সেই কোটি কোটি সোনার শিশু যারা আলোচ্য সময়ে কৈশোর ও যৌবনে পদার্পন করেছিল তাদেরকে বুঝানো হলো যে, ‘ইসলামী চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার আচরণ প্রভৃতি সব কিছুই মধ্যযুগীয় এবং সাম্প্রদায়িকতার দোষ-দুষ্ট। অতএব প্রগতির স্বার্থে এ সবকে সর্বোত্তভাবে বর্জন করতে হবে।’
যেহেতু তাদেরকে এ কথাও বুঝানো হলো যে, ‘আল্লাহ’ শব্দটিও প্রাচীন ও সাম্প্রদায়িক। সুতরাং ওটাকেও বর্জন করতে হবে। মোট কথা, ইসলামের নাম নিশানা রয়েছে এমন সব কিছুকে বর্জন করত আমরা যে আধুনিক প্রগতিবাদী এবং অসাম্প্রদায়িক তার প্রত্যক্ষ এবং জাজ্বল্যমান প্রমাণ সর্বসমক্ষে সুষ্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে।
শুধু আধুনিকতার স্বার্থেই নয়-আমাদের জাতীয় ভাষা ও এবং সভ্যতা সংস্কৃতির স্বার্থেও যে ওসবকে বর্জন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, কিশোর-তরুণদেরকে সেকথাও বেশ ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়া হলো।
এরপরে দেখা গেল যে, এক শ্রেণীর মানুষ বিশেষ করে আমাদের ভবিষ্যৎ আশা ভরসা স্থল কিশোর-তরুণদের বেশ কিছু সংখ্যক তাদের কথা-বার্তা ও সাহিত্যকর্মে সাম্প্রদায়িক (!) ‘আল্লাহ শব্দটিকে বাদ দিয়ে সে স্থলে অসাম্প্রদায়িক (?) ‘ভগবান’ শব্দটির ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন।
হিন্দুদের মূর্তি পূজার সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট অর্ঘ্য, অঞ্জলী, আলপনা, লগ্ন, লক্ষী বেদী, বর্ষবরণ, বর্ষাবরণ প্রভৃতি শব্দ টেনে এনে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির আসল পরিচয়কে তুলে ধরার কাজেও তাদের অনেককে বিশেষভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেল।
গভীর বিস্ময়ের সাথে আরো লক্ষ্য করা গেল যে, আমাদের স্নেহের তরুণীরাও আর পিছিয়ে রইলো না। তাদের অনেকেই ইলোরা-অজন্তার গায়িকা-নর্তকী, মঠ-মন্দিরের দেবদাসী-সেবাদাসী ও স্বর্গবেশ্যা রম্ভা-মেনকা প্রভৃতির কায়দায় পোশাক-পরিচ্ছদ পরতে শুরু করলো, তাদের চাল-চলন, অঙ্গ-ভঙ্গি এমনকি তাদের বাঁকা ঠোঁটের হাসিটুকুও হুবহু নকল করার অনুশীলন তারা শুরু করে দিলো।
আরো দেখা গেল যে আমাদের প্রগতিশীলতার পরিচয়কে তুলে ধরার মহান উদ্দেশ্যে এসব সংস্কৃতির সেবীরা এখন থেকে কয়েক হাজার বছর পূর্বে প্রচলিত শ্যামা-নৃত্য, বাউল সঙ্গীত, ভৈরবী-তাল, সূর্যা শপথ, ঝুমুর নাচ প্রভৃতিকে নতুন করে চালু করার কাজে ভীষণভাবে ব্যস্ত হয়ে উঠলো।
একদল নিজেদেরকে ‘সূর্য সন্তান’ বলে পরিচিত করকে মহা-গৌরবের কাজ বলে মনে করতে লাগলো। অথচ সূর্যের সন্তান হওয়া একটা অসম্ভব ব্যাপার। আর হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী কুমারী অবস্থায় কুন্তীর গর্ভে সূর্য কর্তৃক কর্ণ নামক একটি মাত্র সন্তানেরই জন্ম দেয়া হয়েছিল। যেহেতু সে যুগ বহু পূর্বেইবাসি হয়ে গিয়েছে। অতএব সূর্য কর্তৃক জন্মদানের কথা এখন আর কল্পনা করা যেতে পারে না।
আমাদের উল্লিখিত সংস্কৃতি সেবী এবং প্রগতিপরায়ণ ব্যক্তিরা তাঁদের এসব কার্যকলাপ এত প্রকাশ্যে এবং এত উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধুম-ধামের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন যে, যাঁদের চোখ-কান খোলা রয়েছে তাঁদের কাছে এ সবের বিশদ বর্ণনা দেয়ার কোন প্রয়োজনই হয় না।
তাদের এসব কার্যকলাপের সমালোচনা করার সামান্যতম যোগ্যতা আমার নেই। তেমন কোন অধিকার আমার আছে বলেও আমি মনে করিনা। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে স্বাধীনভাবে সব কিছু করার ন্যায় এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার তাঁদের রয়েছে বলে আমি মনে করি।
তবে আমি এবং আমার মতো নও-মুসলিমেরাও এদেশের আইনসঙ্গত নাগরিক। আমাদের সুবিধা অসুবিধার কথা তুলে ধরার ন্যায্য সঙ্গত অধিকার নিশ্চিতরূপেই আমাদেরও রয়েছে। সেই অধিকার বলে সুধী পাঠকবর্গের কাছে শুধু একটা বিষয়ের পরামর্শ বা একটা প্রশ্নের উত্তর আমরা পেতে চাই। আর সে বিষয় বা সে প্রশ্নটি হলোঃ
এইসব কার্যকলাপের ফলে আমাদের পূর্বতন আত্মীয়-স্বজনেরা যদি বলেন, যে, ‘যেহেতু ধর্ম-নিরপেক্ষতা, জাতীয়তা, সভ্যতা-সংস্কৃতি প্রভৃতির দিক দিয়ে আমরা এবং তোমাদের দেশের মুসলকমানেরা অভিন্ন, যেহেতু তাদের এবং আমদের ধমনীতে একই রক্ত প্রবাহিত এবং যেহেতু আমাদের পূর্জার্চনার অর্ঘ্য, অঞ্জলী, আলপনা, লগ্ন, লক্ষী, এমনকি আমাদের ভগবনকে পর্যন্ত তারা নিজস্ব করে নিয়েছে, অতএব তোমাদের আর মুসলমান থাকার কি প্রয়োজন থাকতে পারে? এবারের ঘরের ছেলে তোমরা শুদ্ধির মাধ্যমে ঘরে ফিরে আস।’
তবে যেহেতু বেশ কিছুদিন ধরে তোমরা ‘নিষিদ্ধ মাংসটা’ ব্যবহার করেছ, অতএব শুদ্ধির বেলায় তোমাদেরকে যে গোবর-চোনা খেতে হবে, অপরের তুলণায় স্বাভাবিক নিয়মেই তার পরিমাণটা হচ্ছে অনেক বেশী- তাহলে আমরা কি করবো আর তাদের কথারই বা কি উত্তর আমরা দেব?
এইসব সম্মানিত প্রগতিবাদী এবং সংস্কৃতি সেবীরা আমাদের জাতীয়-সভ্যতা সংস্কৃতি ও প্রগতিশীলতাকে তুলে ধরার জন্যে বিভিন্ন মুখী যেসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন তার একটি মাত্র দিকের কিছুটা অভ্যাস উপরে তুলে ধরা হলো।
অন্ততঃ অন্য আর একটি দিক সম্পর্কে কিছুটা আভাস না দিলে আলোচনার অঙ্গহানি হবে বলে আমাকে পূর্ব কথার জের টেনে এখানে বলতে হচ্ছে :
প্রগতিশীলতারকে ভিন্নভাবে তুলে ধরর জন্যে উপর্যুক্তমহলের একটি অংশ বিশেষভাবে তৎপর হয়ে উঠলেন।
এবং এ কাজ করতে গিয়ে তাঁদের কেউবা নতুন করে টাই এবং কোট- প্যান্টের অর্ডার দিলেন, কেউবা ব্লাউজের কাপড় দিয়ে শার্ট আর কেউবা শার্টের কাপড় দিয়ে ব্লাউজ বানালেন। কেউবা প্যান্টের সাথে পাঞ্জাবী জুড়ে দিলেন আর কেউবা শাড়ীর পরিবর্তে প্যান্ট পরতে শুরু করলেন।
এদেরই অন্য একটি দল বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠ-পোষকতা করতে গিয়ে লাঞ্চের টেবিলে বসে কাটাচামুচের সাহয্যে ‘চপ-কাটলেট, খাওয়া এবং ডিনারের সময়ে দল বেঁধে (বুফে ইঁভষবঃ) গুরে ঘরে ‘রাইচ’ ‘মার্টন’ ১কারী’ এবং ‘লিখারের’ সদ্ব্যবহার শুরু করে দিলেন।
এই ব্যক্তিরাই নিজেদের ছেলে-মেয়েদের আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে তোলাকে মুলতবী রেখে তার জাতীয়তাবদী নাম রাখার দিকেই সম্পূর্ণ মনোযোগটা ঢেলে দিলেন। এবং যথাযযোগ্য বিচার বিবেচনার পরে তাদের নাম রাখলেন-টম, টাইগার রকেট, বুলেট, টিটো, ষ্টালিন, টাইফুর অথব টগর, হবা, সুবোধ, তুষার পলাশ পারুল প্রভৃতি। আর না হয় এই ধরনের অন্য কিছু।
এ নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে জাতীয়তা এবং সভ্যতা-সংস্কৃতি নিয়ে এই যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে তার একটিমাত্র কারণকে আমি এখানে তুলে ধরতে চাই। বলাবাহুল্য এই অবস্থার পশ্চাতে বহু কারণই থাকতে পারে। তবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং উদাসীনতা ও যে তার একটি কারণ নানাভাবে সেকথা আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অতএব জাতীয়তা ও সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি, সে সম্পকের্জ সংক্ষিপ্ত আভাস দিয়ে প্রসঙ্গের ইতি টানছি।
ইসলাম সম্পর্কে আমি অতি সামান্য যেটুকু পড়া শুনা করেছি তা থেকে যা বুঝতে পেরেছি তাহলোঃ
ইসলাম আল্লাহর দেয়া পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং ইসলাম তার অনুসারীদের এই জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে আদর্শ মানুষ বা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসবে গড়ে তুলতে চায়।
পরিপূর্ণ জীবচন ব্যবস্থা’ হিসাবে এর অনুসারীদের জীবনের ছোট বড় কোন সমস্যার সমাধানের জন্যে অপরের মুখাপেক্ষী বা অন্য কারো লেজুড়বৃত্তি করার প্রয়োজন যে হয় না, এই নামটি থেকেই সেকথা অনায়াসে বুঝতে পারা যাচ্ছে।
সংস্কৃতিকে সভ্যতার নির্যাস বলা হয়ে থাকে। যদি তাই হয় তবে ইসলাম তার অনুসারীদের আদর্শ মানুষ বা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে গড়ে তুলে তাদের দ্বারা যে সভ্যতার সৃষ্টি করতে চায় সেই সভ্যতার নির্যাস কি হতে পারে প্রিয় পাঠকবর্গ একটু অভিনিবেশ সহকারে সে কথা একবার ভেবে দেখুন, আর আল্লাহর দেয়া পরিপূর্ণ জীবন-বিধানের সাহায্যে গড়ে উঠা আদর্শ মানুষ বা আল্লাহর প্রতিনিধিদের দ্বারা যে সংস্কৃতি গড়ে উঠবে তা কত সুন্দর, কতশালীন, কত সুদৃঢ়, কত নিখুঁত এবং কত সুরুচি-সম্পন্ন হতে পারে সে কথাও একবার চিন্তা করুন।
(ঙ) অন্যায়, অসত্য, উচ্ছৃঙ্খলতা ও চরিত্র-হীনতার দ্বারা সাময়িকভাবে কোন স্বার্থসিদ্ধি করা সম্ভব হলেও তার পরিণাম যে অতি ভয়াবহ হয়ে থাকে, জ্ঞান ও চিন্তাশীল কোন ব্যক্তিই সে কথা অস্বীকার করতে পারেন না।
অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে আমি অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করেছি যে দেশবাসী বিশেষ করে পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ে আমর মানস পটে ভেসে উঠা সেই সোনার শিশুদের যারা সে সময়ে তরুণ ও যুবক হয়ে উঠেছে, তাদেরকে লক্ষ্য করত কোন নেতা নির্দেশ দিলেন-আইন অমান্য কর, উচ্ছৃঙ্খলতা চালিয়ে যাও এবং ধরো আর মারো।
কোন নেতা তাদের ‘জ্বালানো পোড়ানো’ এবং নির্মূল করা, ধ্বংস করা ও খতম করার সবক দিলেন।
কোন নেতা লুটপাট, হত্যা-ব্যভিচার, বেয়াদবী ও বে-তমিজী প্রভৃতি চরমভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ যোগাতে লাগালেন।
ফলে যে সোনার শিশুরা সোনার মানুষ তথা দেশের যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে এ আশায় আমি সেই থেকে বুক বেঁধে প্রতীক্ষা করছিলাম, তাদের বড় একটা অংশ আমার চোখের সম্মখেই চোর, ডাকাত, খুনী, হাইজ্যাকার, উচ্ছৃঙ্খল, চরিত্রহীন, মদ্যপায়ী প্রভৃতি হয়ে গড়ে উঠলো।
একথা বলতে বুক ফেটে যায় যে, আমার মানস পেটে ভেসে উঠা সেই সোনার শিশুরা যাদের কল্যাণের আশায় আমি পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করলাম এবং যাদের কল্যাণ কামনায় সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলাম, আমার সেই সোনার শিশুদের যারা বড় হয়ে ‘গেরিলা পার্টি’ বা ‘মুক্তিবাহিনী’ গঠন করেছিল, আমার এই বৃদ্ধবয়সে তাদের কেউ কেউ আমাকে ‘শায়েস্তা করার’ জন্য কয়েকবার অফিসে হানা দিয়েছে, রাস্তা-পথে আমাকে লক্ষ্য করে টিটকারী বর্ষন করেছে, অপামানজনক কথায় আমার স্নেহ- প্রবণ এই অন্তরটাকে জর্জরিত করে তুলেছে। তাদের এসব করার একটি মাত্র কারণই আমি খুঁজে পেয়েছি। আর তাহলো, ইসলামের প্রতি আমার ভালবাসা।
এদের কার্যকলাপ কত বীভৎস, কত ক্ষতিকর এবং কত ভয়াবহ হয়ে দেশবাসীর স্মৃতি হতে এত সকালেই তা মুছে যায়নি বলে মনি করি। তবু কেউ যদি এ সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিতভাবে জানতে চান তবে তাঁকে আমার লিখিত ‘ইতিহাস কথা কয়’ নামক বই খানা অন্তত একবার পড়ে দেখতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘটনাবলীকে আমাদের স্মৃতিতে জাগরুক রেখে আসুন, ক্ষণিকের জন্যে আমরা ইসলামের দিকে নযর ফিরাই। ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠায় এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ইসলাম কি ভূমিকা পালন করতে বলেছে সেটা জানতে চেষ্টা করি ঃ
ক্স ইসলাম আক্রান্ত না হলে আক্রমণ করার অনুমতি দেয় না।
ক্স যেহেতু অন্যায় -অসত্যের দ্বারা ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়-অতএব ন্যায় ও সত্যের দ্বারা অন্যায়-অসত্যের প্রতিরোধ করার শিক্ষা ইসলাম দিয়ে থাকে।
ক্স সমস্যা এবং বিরোধ যত বড় ও যত প্রচণ্ডই হোক ইসলাম তাকে আপোষে মিটিয়ে ফেলতে বলে। আপোষের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে এবং যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে একমাত্র তখনই আক্রমণ প্রতিরোধ করার অনুমতি ইসলাম দিয়ে থাকে।
ক্স যেহেতু ইসলামী সংগ্রাম আদর্শের সংগ্রাম। অতএব ইসলামের পক্ষে যারা সংগ্রাম করবে তাদের আদর্শবাদী, ন্যায়-নিষ্ঠ, ধৈর্যশীল, স্থির-প্রাজ্ঞ, মানব-দরদী, ক্ষমা-পরায়ণ কঠোর যুদ্ধ-নিপুন অন্য কথায় প্রকৃত বীর বলতে যা বুঝায় তাই হতে হবে।
ক্স বৃদ্ধ, শিশু, নারী, রুগ্ন, পৃষ্ঠ প্রদর্শনকারী, পরাজিত শত্রু, এবং কোন শান্তিপূর্ণ নাগরিককে আক্রমণ, এমনকি সামান্যতম আঘাত দেয়াও ইসলামের দৃষ্টিতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ক্স যুদাবস্থায় বা অন্য কোন সময়ে ফলবান বৃক্ষ, ক্ষেতের ফসল, সাধারণের জলাশয়, গৃহপালিত পশুপাখি, কোন উপাসনালয়, বিগ্রহ, ধর্মী, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির সামান্যতম ক্ষতি সাধনকে ইসলাম ঘোরতর অন্যায় এবং কঠোরভাবে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে।
ক্স যুদ্ধ ক্ষেত্রের পরিস্থিতি যত প্রতিকূল এবং ত ভয়াবহই হোক মুসলমান যোদ্ধাগণ সর্বদা ন্যায় ও সত্যেল উপরে প্রতিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ করে যাবে কোন অবস্থায়ই সামান্যতম অন্যায়-অধর্মকে সমর্থন করবে না বা প্রশ্রয় দেবে না-এই হলো ইসলাম সমর্থিত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এর কোনটা তো মানা হয়-ইনি, বরং যুদ্ধে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে জাতির ভবিষ্যত আশা-ভরসা স্থল কিশোর তরুণদের এইসব নীতি-নিয়ম বিরোধী কাজে প্রবলভাবে উৎসাহ যোগানো হয়েছে এবং এইসব কাজে দক্ষতা প্রদর্শনকারীদের উদাত্ত কন্ঠে প্রশংসা হয়েছে।
তারপরে স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে যখন মুসলমানদের একটি দল ইসলাম রক্ষার নামে এবং অন্য দলটি ‘শত্রু ধ্বংসের’ নামে নির্বিচারে নরমেধ যজ্ঞ চালিয়ে গেলো এবং বিজয়ী ভারতীয় হিন্দুগণ যখন মুসলমান এবং পাকিস্তান নামক ইসলামী রাষ্ট্র- যে রাষ্ট্র পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে আদর্শ এবং অনুকরণীয় হবে বলে আমি, আমার মা এবং অন্যান্য হিন্দুদের কাছে বড় গলায় বলে আসছিলাম, সেই রাষ্ট্রের রক্ষক এবং বীর মুজাহিদ বলে পরিচিত লক্ষাধিক মানুষকে চরমভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত করত যুদ্ধবন্দী হিসাবে বেঁধে ভারতে নিয়ে গেলো, তখন আমার মনের অবস্থা কি হয়েছিল সেকথা একবার ভেবে দেখুন।
ভেবে দেখুন, স্বাধীন মুসলমান রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, বিলাস ব্যসন চরিত্রহীনতার কথা। তাহলেই এটা আপনাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, আমার স্নেহশীলা জননীর উদাত্ত আহবান সত্ত্বেও তার মৃত্যুশয্যায় পাশে শেষ দেখা করার জন্যে কেন আমি যাইনি-যেতে পারিনি।
যারা পূর্বের পর্বগুলো পড়তে আগ্রহী, তারা এখান থেকে পড়তে পারবেন।
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব ১১ পর্ব ১২তম পর্ব ১৩তম পর্ব ১৪তম পর্ব ১৫তম পর্ব ১৬তম পর্ব