পবিত্র মদিনা নগরীতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ার পর সাহাবায়ে কেরামের বড় একটি সংখ্যা মক্কা মোকাররমা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময়টাতে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হিজরত করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা জানতে পেরে তাকে হিজরত করতে বারণ করে দিয়ে বললেন, অচিরেই আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হবে। সুতরাং তোমাকে আমার সঙ্গেই যেতে হবে। হজরত আবু বকর সিদ্দিকের জন্য এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের আর কী সংবাদ-ই বা হতে পারে? মহানবীর হিজরতের সঙ্গী হওয়ার পরম সৌভাগ্য কি হাতছাড়া করা যায়? তিনি নিজ হিজরতের ইচ্ছা পরিত্যাগ করলেন। সেই সঙ্গে মহানবীর সঙ্গে হিজরতের বাহন হিসেবে দুটি উষ্ট্রী প্রস্তুতির কাজে লেগে গেলেন।
অপরদিকে, দলে দলে মুসলিম কাফেলা মদিনায় পাড়ি জমানোতে কাফির-মুশরিকরা বেশ চিন্তাগ্রস্ত এবং ভয়-আতঙ্কের মাঝেই ছিল। তাদের শঙ্কা ছিল, হয়তোবা একদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও হিজরতের কাফেলায় শামিল হবেন। আর তখন মদিনা হবে ইসলামের শক্তিশালী ঘাঁটি।
মক্কার কাফির-মুশরিকরা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার জন্য ‘দারুন নাদওয়া’য় পরামর্শ সভার আহ্বান করল। পরামর্শ সভা বসার পর কেউ প্রস্তাব করল নীরব-নির্জন কক্ষে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লামকে অন্তরীণ করে রাখা হোক, কেউ প্রস্তাব দিল তাকে দেশান্তর করা হোক। এভাবে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবই পরামর্শ সভায় উত্থাপিত হয়। কাফিরদের উদ্দেশ্য ছিল হিদায়াতের আলোকমশাল মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই এই দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল মক্কা নগরী তথা আরব ভূমিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশ ছিল অত্যন্ত সম্ভ্রান্তশীল। এই বংশের একজন সদস্যকে হত্যা করার অর্থ হচ্ছে কমপক্ষে বিশজন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। এ কারণে কাফির-মুশরিক চক্র এ জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের হিম্মত বা সাহস পাচ্ছিল না।
পরামর্শ সভায় প্রস্তাবের পর প্রস্তাব আসছিল; কিন্তু কাফির নেতা আবু জাহেলের কোনো একটি প্রস্তাবও মনঃপূত হচ্ছিল না। পরিশেষে সবাইকে খামুশ করিয়ে দিয়ে আবু জেহেল বলল :
‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুক্তি পাওয়ার উত্তম পদ্ধতি আমার কাছে হলো, মক্কার সবক’টি গোত্র থেকে একজন বাহাদুর যুবক নির্বাচন করা হোক। প্রত্যেকের হাতেই একটি করে ধারালো তরবারি সরবরাহ করা হোক। এরা সবাই একসঙ্গে মুহাম্মদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাকে হত্যা করবে। এভাবে হত্যা করা হলে মুহাম্মদের গোত্রের লোকেরা একই সঙ্গে মক্কার সবক’টি গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস পাবে না। বরং তখন তারা হত্যার আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিতে বাধ্য হবে। আর আমরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেব।’
আবু জেহেলের এই প্রস্তাবটিকে সবাই পছন্দ করে এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় বেশ জোরেশোরেই।
অপরদিকে, ওহির মাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাফিরদের এই চক্রান্তের সংবাদ জানিয়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে নির্দেশ হলো যে, আজ রাতেই আপনি মক্কা ছেড়ে চলে যাবেন। খোদায়ি নির্দেশ পালনে দুপুরের দিকেই তিনি হজরত আবু বকর সিদ্দিককে (রা.) তার বাড়িতে গিয়ে এই সংবাদ জানিয়ে এলেন। সিদ্ধান্ত এই হয় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই রাতের বেলায় হজরত আবু বকরের (রা.) বাড়ি চলে আসবেন। সেখান থেকে তারা চলে যাবেন সাওর গুহায়। এই গুহায় তিন দিন তারা আত্মগোপন করার পর মদিনার পথে পাড়ি জমাবেন।
মক্কার কাফির-মুশরিকরা নিজেদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বাস্তবায়নে দিনভর বেশ তোড়জোড় অব্যাহত রাখে। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা এসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাড়ি অবরোধ করে চারপাশে অবস্থান নেয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেভাগেই হজরত আলীকে (রা.) নিজ বাড়িতে ডাকিয়ে এনে রেখেছিলেন। হিজরতের সময় মহানবীর (সা.) সবচেয়ে বড় ফিকির ছিল মানুষের গচ্ছিত আমানত ফেরত দেয়ার উপয় কী? তাই তিনি হজরত আলীকে (রা.) নির্দেশ দিলেন, হিজরত করে চলে যাওয়ার পর মানুষের আমানতের সম্পদ তিনি যেন যথাযথভাবে প্রাপকদের হাতে তুলে দেন। এরপরই যেন তিনিও মদিনায় হিজরত করে চলে আসেন। আর আজকের রাত তিনি মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানায় শয়ন করবেন।
আজকের এই রাতে মহানবীর বিছানায় শয়ন করা স্বাভাবিক কোনো বিষয় ছিল না। কিন্তু হজরত আলী আত্মত্যাগের পূর্ণ মানসিকতা নিয়েই এই দায়িত্ব সাদরে গ্রহণ করে নেন। বাড়ির বাইরের কাফিরদের অবরোধ ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। তাদের ধারণা ছিল, আমাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথে আজ কোনো প্রতিবন্ধকতাই কার্যকর হবে না। তাই তারা বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে ইসলামী আকিদা-বিশ্বাসের উপহাস করছিল, হাসি-তামাশা আর ঠাট্টা-মশকরার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে, মহানবীর শানে ঔদ্ধত্য আচরণ প্রকাশ করছিল। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ ভয়মুক্ত অবস্থায় ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তাঁর পবিত্র মুখে সূরা ইয়াসিনের এই আয়াতটি জারি ছিল—‘এবং আমি তাদের সামনে এক অন্তরাল দাঁড় করিয়ে দিয়েছি এবং পেছনেও এক অন্তরাল দাঁড় করিয়ে দিয়েছি আর এভাবে তাদেরকে সবদিক থেকে ঢেকে দিয়েছি, ফলে তারা কোনো কিছু দেখতে পায়নি।’ (সূরা ইয়াসিন : আয়াত-৯)
এই আয়াত উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সব অবরোধকারীর চোখে পর্দা পড়ে যায়। তিনি নিঃসংকোচে ও নিরাপদহীনভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা হজরত আবু বকরের (রা.) বাড়ি চলে আসেন। হজরত আবু বকর (রা.) সফরসামগ্রী আগে থেকেই প্রস্তুত করে অপেক্ষায় ছিলেন। দেরি না করে উভয়ে মক্কা ছেড়ে সাওর গুহা অভিমুখে রওনা হলেন। গুহার মুখে পৌঁছে আগেভাগে তিনি গুহার ভেতর ঢুকলেন। উদ্দেশ্য ছিল সাপ-বিচ্ছু কিংবা কোনো বিষাক্ত প্রাণী যেন মহানবীকে কষ্ট দিতে না পারে। ভেতরে ঢুকে গুহার বিভিন্ন স্থানে যে ক’টি ছিদ্র খুঁজে পেলেন তা নিজের কাপড় টুকরো দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তখনও একটি ছিদ্র এমন ছিল, কাপড়ের অভাবে যা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। হজরত আবু বকর (রা.) নিজের পায়ের গোড়ালি চেপে ধরে তা বন্ধ করে রাখলেন। ত্যাগ এবং কুরবানির এই অকৃত্রিম দৃশ্য অবলোকন করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দরবারে দুই হাত উঁচু করে দোয়া করলেন—‘হে আল্লাহ! আবু বকরকে জান্নাতে আমার সঙ্গে আমার সমমর্যাদা দিয়ে বসবাসের সুযোগ করে দিও।’
মক্কার কুরাইশরা যখন বুঝতে পারল যে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার বাইরে চলে গেছেন, তখন তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার জন্য তত্কালীন যুগের পথবিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে বিভিন্ন দিকে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। তখনকার এই মনোবিজ্ঞানীদের কারও পথ অনুসরণের সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাদের সাহায্য নেয়া হতো। এমনি একটি অনুসন্ধানী দল অনুসন্ধান চালিয়ে গারে সাওরের মুখের সামনা-সামনি চলে আসে; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কুদরতিভাবেই এমন ব্যবস্থাপনা করে রেখেছিলেন যে, কাফির-মুশরিক অপশক্তি পেয়ারা নবীর সামান্য ক্ষতি করতেও পারেনি। গারে সাওরের মুখেই মাকড়সা জাল বুনিয়ে ফেলেছিল। কবুতর বাসা বানিয়ে সেখানে ডিমও পেরে রেখেছিল। অনুসরণকারীদের মনে সামান্যতম ধারণাও জন্মেনি যে, এই গুহার ভেতর তিনি অবস্থান করছেন। চারদিকে তালাশ করে নিরাশ হয়ে এরা শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
গারে সাওরে তিন দিন আত্মগোপন করে থাকার পর যখন মনে হলো যে কাফিরদের অনুসন্ধানের তোড়জোড় এখন আর নেই, তাদের অনুসন্ধানে এখন ভাটা পড়ে গেছে। এবার সাওর গুহা থেকে বেরিয়ে এলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আগে থেকেই একজন বিশ্বস্ত অনুচরকে বলে রেখেছিলেন, তিন দিন পর সে যেন ওই উট দুটি নিয়ে সাওর গুহার পাদদেশে চলে আসে। সেই অনুচর নির্দিষ্ট সময়েই যথাস্থানে উট নিয়ে হাজির হয়ে গেল। এভাবেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের উদ্দেশে মদিনা অভিমুখে রওনা হয়ে যান।
কুরাইশ সর্দাররা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গ্রেফতার করার জন্য শত উট পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল। শত উট পাওয়ার লালসায় আরবের আনাচে-কানাচে বহু লোক ছড়িয়ে পড়ল। তারা মহানবীর অনুসন্ধানে ছিল বেশ তত্পর। হজরত সুরাজা ইবনে মালিক তখনও কাফির ছিলেন। উট পাওয়ার লালসায় তিনি মহানবীর অনুসরণে বেরিয়ে ছিলেন। ‘দাহ্হা’ নামক স্থানের কাছাকাছি পৌঁছে সুরাকা মহানবীর একেবারে কাছাকাছি চলে আসেন। তিনি মনে করছিলেন, আমি মুহাম্মদকে গ্রেফতার করতে পুরোপুরি সক্ষম হয়ে গেছি। কিন্তু কুদরতের ইচ্ছা ছিল অন্য রকম। যখন তিনি খুব দ্রুতগতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে মহানবীর একেবারে কাছাকাছি চলে এলেন, তখন হঠাত্ করেই তার ঘোড়ার পা মাটির নিচে ধসে যায়। বহু চেষ্টা করেও ঘোড়া উঠানো সম্ভব হলো না। এবার নিজেই মহানবীর কাছে নিজ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। মহানবী তার জীবনের নিরাপত্তা দিয়ে দেন। তিনি মহানবীর কাছে গিয়ে কুরাইশদের তাবত্ ষড়যন্ত্র ও অপতত্পরতার বিশদ বিবরণ দেন। এবং তিনি নিজে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
এই সফরের এক পর্যায়ে যখন সঙ্গের আহার-খাবার শেষ হয়ে যায় তখন উম্মে মাবাদ নামক এক মহিলার বাড়ি অতিক্রম করছিলেন। এই মহিলা মুসাফিরদের আপ্যায়নে বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তার কাছে জানতে চাইলেন, তোমার কাছে খাওয়ার কোনো কিছু আছে যা আমরা কিনে নিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারি? মহিলা জবাব দিল, আল্লাহর শপথ! আমার কাছে কিছু থাকলে আপনাদের আপ্যায়নের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারতাম। কিন্তু সমস্যা হলো, দুর্ভিক্ষের কারণে আমার বকরিগুলোর স্তন শুকিয়ে রয়েছে। পাশেই দুর্বল একটি বকরি দাঁড়ানো ছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বকরিটির প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, তুমি বকরিটির দুধ দোহনের অনুমতি আমাকে দেবে? উম্মে মাবাদ বলল, যদি এই বকরির স্তনে কোনো দুধ থেকে থাকে তবে আপনি তা দোহন করে পান করতে পারেন। এই জবাব শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বকরিটিকে নিজের কাছে নিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। দেখতে দেখতেই বকরির স্তনটি দুধে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর বকরিটির স্তন থেকে এই পরিমাণ দুধ বেরিয়ে আসে যে, ওই দুধ শুধু উপস্থিত সবাই পরিপূর্ণ পরিতৃপ্ত হয়ে পান-ই করেননি, বরং একটি বড় পাত্র ভর্তি দুধ উম্মে মাবাদের কছে অবশিষ্ট থেকে যায়।
এদিকে, মদিনাবাসীর কাছে সংবাদ পৌঁছে গিয়েছিল যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছেন। এজন্য মদিনাবাসী ওই প্রভাতের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছিলেন, যেদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব ঘটবে মদিনা নগরীতে। মদিনাবাসী প্রতিদিনই সকালবেলা মদিনা থেকে বের হয়ে তাঁর পথের প্রতীক্ষা করতেন। আর দুপুরের উত্তপ্ত রোদের পর আবার তারা ফিরে আসতেন।
একদিন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দুপুর বেলায় বাড়ি পৌঁছামাত্র পাহাড়ের চূড়া থেকে এক ইহুদির আওয়াজ শুনতে পান। সে উঁচু স্বরে মদিনাবাসীর উদ্দেশে বলছে, যার অপেক্ষায় তোমরা প্রতীক্ষা করছিলে সেই মহানবী তোমাদের দ্বারে এসে গেছেন। এই আওয়াজ শোনা মাত্র সমগ্র মদিনা এবং তার আশপাশের এলাকাগুলোতে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার প্রবেশপথ কুবা নগরীতে ১৪ দিন অবস্থান করেন। এখানে পৌঁছে সর্বপ্রথম তিনি ‘মসজিদে কুবা’ নির্মাণ করেন। এরপর তিনি পবিত্র মদিনা নগরীতে আগমন করেন এবং হজরত আবু আইয়ুব আনসারীর (রা.) বাড়িতে অবস্থান করেন।
হিজরতের এই ঘটনাটি ইসলামী ইতিহাসের এত তাত্পর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা যে, হজরত ওমর (রা.) ইসলামী সন প্রবর্তনের জন্য সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করতে বসলেন। তখন উপস্থিত সবাই সর্বসম্মতিক্রমে হিজরতের ঘটনাকে সূচনা ধরেই ইসলামী সন প্রবর্তনের পরামর্শ দিলেন। আর এমনটি হবেই না কেন, যেদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদিনা মুনাওয়ারায় তাশরিফ নিয়ে এসেছেন, সে দিনটি সমগ্র মানবতার জন্য এমন সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে এসেছিল, যার সমকক্ষ সৌভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না।