একজন মানুষ যখন ঈমাম আনে, তখন তার ভেতর সুপ্ত মানবীয় গুণাবলি নতুন রূপ ধারণ করে মানুষটাকে সুন্দর করে। একজন মুসলমান যখন ঈমান পোষণ করে মুমিন হয়, তখন তার পুরাতন বৈশিষ্ট্যাবলি পরিবর্তন হয়ে একটি উন্নতমানের গুণাবলি তার ভেতরে পয়দা হয়। তাই বলা চলে, ঈমান মুমিন জীবনের উজ্জীবনী শক্তি। একজন মুমিনের চরিত্রে, তার চিন্তা ও কর্মে কী ধরনের গুণাবলি পয়দা হওয়া উচিত তা আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। এ সব গুণাবলি আমাদের জীবনে বর্তমান কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন প্রতি মুহূর্তে। আল কুরআনে বর্ণিত মুমিনের কিছু গুণাবলি নিম্নরূপ :
০১. মুমিন সন্দেহ ছাড়াই আল্লাহর পথে জানমাল দিয়ে সংগ্রাম করে। ইরশাদ হচ্ছে,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ﴾
‘প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং তারা জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।’ (সূরা হুজরাত : ১৫)
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ
আরো এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করতে গিয়ে মরেও যাবে।’ (সূরা আত তাওবা ১১১)
০২- মুমিন জিহাদের ব্যাপারে ওজর পেশ থেকে বিরত থাকে। এরশাদ হচ্ছে
لَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ ﴾
‘যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে, তারা কখনো আল্লাহর পথে জানমাল জিহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি চাবে না।’ (সূরা আত তওবা : ৪৪)
﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَىٰ أَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوا حَتَّىٰ يَسْتَأْذِنُوهُ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ ﴾
‘মুমিন তো প্রকৃতপক্ষে তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূল সা:-কে অন্তর থেকে মানে। আর যখনই কোনো সামষ্টিক কাজ উপলক্ষে রাসূলের সাথে থাকে তখন অনুমতি না নিয়ে কোথাও যায় না। হে নবী,এভাবে যারা আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ ও রাসূলকে মেনে চলে।’ (সূরা আন-নূর : ৬২)
যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তারা নিজ জান ও মাল দিয়ে সংগ্রাম থেকে অব্যাহতি চায় না। আল্লাহ মুত্তাকিদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। কিন্তু যারা এই সংগ্রাম থেকে অব্যাহতি চায়, তারা প্রকৃতপক্ষে ফেতনায় নিমজ্জিত। এদের ব্যাপারে কুরআনের ঘোষণা – وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي ۚ أَلَا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا
এবং তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে আমাকে অব্যাহতি দাও এবং আমাকে ফেতনায় ফেলো না। সাবধান ওরাই ফেতনায় নিমজ্জিত রয়েছে।’ সূরা আত-তাওবা ৪৯।
একটু ব্যাখ্যা= *যেসব মুনাফিক মিথ্যা বানিয়ে পিছনে থেকে যাবার অনুমতি চাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এতই বেপরোয়া ছিল যে, আল্লাহর পথ থেকে পেছনে সরে যাবার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক ধরনের বাহানাবাজীর আশ্রয় নিতো৷ জাদ্দ ইবনে কায়েস নামক তাদের একজনের সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছেঃ সে নবী (সা) এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করলো, আমি একজন সৌন্দর্য পিপাসু লোক আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার এ দুর্বলতা জানে যে , মেয়েদের ব্যাপারে আমি সবর করতে পারি না৷ আমার ভয় হয়, রোমান মেয়েদের দেখে আমার পদস্খলন না হয়ে যায়৷ কাজেই আপনি আমাকে ঝুকির মধ্যে ঠেলে দেবেন না৷ এবং এ অক্ষমতার কারণে আমাকে এ জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে রেহাই দিন৷
** অর্থাৎ তারা তো ফিতনা বা পাপের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়ার দুহাই দিচ্ছে কিন্তু আসলে তারা আকন্ঠ্ ডুবে আছে মুনাফিকী, মিথ্যাচার ও রিয়াকারীর মত জঘন্য পাপের মধ্যে৷ নিজেদের ধারণা মতে তারা মনে করেছে, ছোট ছোট ফিতনার সম্ভবনার ব্যাপারে ভয় ও পেরেশানি প্রকাশ করে তারা নিজেদের বড় ধরনের মুত্তাকী হবার প্রামাণ পেশ করে যাচ্ছে৷ অথচ কুফর ও ইসলামের চুড়ান্ত ও সিদ্ধান্তকর সংঘর্ষকালে ইসলামের পক্ষ সমর্থনে ইতস্তত করে তারা আরো বড় পাপ এবং আরো বড় ফিতনার মধ্যে নিজেদের ফেলে দিচ্ছে যার চাইতে বড় কোন ফিতনার কথা কল্পনাই করা যায় না৷
০৩-বিপদ-মুছিবতকে মুমিন পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করে। এরশাদ হচ্ছে,
مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ ۚ
‘আল্লাহর অনুমতি ও নির্দেশ ব্যতীত কোনো বিপদ-মুছিবত আসতেই পারে না। যারা মুমিন আল্লাহ তাদের দিলে সঠিক হেদায়াত দান করেন।’ (সূরা আত তাগাবুন : ১১)
০৪-মুমিনরা সংবাদকে যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করে। এরশাদ হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ*
‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও। এরপরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা হুজরাত : ৬)
০৫-অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে মুমিনরা এড়িয়ে চলে। এরশাদ হচ্ছে,
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا * ﴾
‘এবং দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না, তথা মিথ্যা কাজে শরিক হয় না। আর অহেতুক বিষয়ের পাশ দিয়ে যখন তারা গমন করে তখন তারা নিতান্ত ভদ্রভাবে পাশ কাটিয়ে যায়।’ সূরা ফুরকান : ৭২।
০৬-মুমিন ব্যক্তি, কাফের ও মুনাফিকদের সামনে নতি স্বীকার করে না। এরশাদ হচ্ছে,
وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُم مِّنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا*
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَالْمُنَافِقِينَ وَدَعْ أَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا*﴾
‘মুমিন লোকদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিরাট অনুগ্রহ রয়েছে এবং কাফের ও মুনাফিকদের সামনে আদৌ দমে যেও না। তাদের নিপীড়ন মাত্রই পরোয়া করো না। আল্লাহই যথেষ্ট যে, মানুষ সব ব্যাপারে তারই ওপরে সোপর্দ করে।’ (সূরা আল আহজাব : ৪৭-৪৮)
-০৭মুমিন চোখ কান খোলা রেখে আল্লাহর কথা শোনে। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا *
﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا﴾
‘যখন তাদেরকে তাদের পরওয়ারদিগারের কথা বুঝানো হয়, তখন তারা তাতে বধির ও অন্ধ হয়ে থাকে না। আর যারা বলে, হে পরওয়ারদিগার! আমাদেরকে দান করো কমনীয় স্ত্রী এবং সন্তানসন্ততি আর আমাদেরকে পরহেজগার লোকদের ইমাম (অগ্রদূত) বানাও।’ (সূরা আল-ফুরকান : ৭৩-৭৪)
০৮-মুমিনরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নেক কাজ করে থাকে। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا﴾
﴿إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا﴾
‘যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তারা আল্লাহর ওয়াস্তে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলে : কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদেরকে সাহায্য দান করি, তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সূরা দাহর : ৮-৯)
-০৯- মুমিনরা হয় কাফিরদের প্রতি কঠোর আর পরস্পর দয়াশীল। এরশাদ হচ্ছে,
﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ*
‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা কাফেরদের প্রতি অতিশয় কঠোর এবং পরস্পর দয়াশীল। তোমরা তাদেরকে রুকু সেজদায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির সন্ধানে আত্মনিমগ্ন দেখতে পাবে। খোদানুগত জীবনযাপনের ফলে তাদের মুখাবয়ব উজ্জ্বল ও ভাস্বর থাকে।’ সূরা আল ফাতহ : ২৯।
মুমিন আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধীদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ ও পরকাল বিশ্বাসী লোকদের এমন কখনো দেখতে পাবে না যে, আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধীদের প্রতি তারা ভালোবাসা পোষণ করে না। যদিও (বিরোধীরা) তাদের পিতা-মাতা হোক, সন্তানাদি হোক, ভাই-বেরাদর কিংবা বংশ পরিবারের লোক হোক।’ (সূরা মুজাদালা : ২২) ১০- তওবা করা মুমিনের গুন
মানুষ জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে অনেক পাপ করে থাকে। এসব পাপ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সে যে কোন গুনাহ করুক না কেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ও তাকে ক্ষমা করে দিবেন। মহান আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾
তারা কি জানে না, আল্লাহই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, তাদের দান -খয়রাত গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, ও করুণাময়? (তওবা ১০৪)। তিনি আরো বলেন,
﴿وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ﴾
তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন (শূরা ২৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾
যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে পরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পাবে’ (নিসা ১১০)। আল্লাহ ত‘আলা মুনাফিক্বদের সম্পর্কে বলেন,
﴿إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا﴾
নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তুমি কখনও তাদের জন্য সাহায্যকারী পাবে না।(নিসা ১৪৫(।
﴿إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا﴾
তবে তাদের মধ্য থেকে যারা তাওবা করবে, নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করে নেবে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং নিজেদের দীনকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে নেবে, তারা মুমিনদের সাথে থাকবে৷ আর আল্লাহ নিশ্চিয়ই মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন৷ (নিসা -১৪৬)। তিনি আরো বলেন,
﴿إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ﴾
যারা ঈমানদান নর-নারীর উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তওবা করেনি, তাদের জন্যে জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা রয়েছে (বুরূজ /১০)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো,আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে৷ (নূর ৩১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর একান্ত বিশুদ্ধ তওবা; যাতে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দেন এবং তোমাদের প্রবেশ করান জান্নাতে, যার তলদেশে নদী সমূহ প্রবাহিত (তাহরীম ৮;
তওবা ও ইস্তেগফারের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইসতিগফার ও তওবা করে থাকি’। বুখারী হা/৬৩০৭। রাসূল (ছাঃ) এভাবে তওবা-ইসতিগফার করতেন, ‘হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার তওবা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াবান’। আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩৫২]
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সাইয়িদুল ইস্তিগফার হ’ল-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ، فَاغْفِرْ لِىْ، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, তুমি আমার প্রতি তোমার যে নে‘মত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই’।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তিগফার পড়বে এবং সন্ধ্যা হবার পূর্বে সে মারা যাবে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দো‘আ পড়বে এবং সে ভোর হবার পূর্বে মারা যাবে সেও জান্নাতবাসী হবে’। বুখারী হা/৬৩০৬।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বলবে, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোন হক্ব উপাস্য নেই, যিনি চিরস্থায়ী ও সবকিছুর ধারক এবং আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি। তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও সে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে’।[তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৫৩]
পরিশেষে বলা যায় যে, মানব জীবনের সার্বিক সফলতা নিহিত আছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আনুগত্য ও যথাযথ অুসরণের মধ্যে। এছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই। এ পথেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, যা পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের উপায়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর সন্তোষ ও রহমত লাভ করে পরকালে পরিত্রাণ লাভের তাওফীক দান করুন- আমীন!!