বিশ্বাসীদের প্রতি আল কুরআনের দাবি

ctg4bd201208041344062765_group-reading-of-quran

আল কুরআন একজন মুসলমানের কাছে পরম সম্মানীয় একটি কিতাব বা গ্রন্থ। আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে আল কুরআনের অন্তত একটি কপি রয়েছে এবং বছরের অন্য মাসে না পারলেও রমজান মাসে অন্তত একবার তেলাওয়াতের চেষ্টা করি। কিন্তু এ আল কুরআন আমাদের কাছে কেন এসেছে বা এতে কী রয়েছে বা এর মর্মার্থ কী অথবা এর প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা খুব কমই রয়েছে। এটা কোনো ব্যক্তির মতামত নয় বরং স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ  থেকে নাজিলকৃত তারই মতামতের সমষ্টি। আমরা যারা মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিই স্বয়ং আল কুরআনের তাদের প্রতি কী দাবি রয়েছে তা এই কিতাব থেকে বুঝে নেয়া প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত জরুরি।

ঈমানদার হওয়ার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে  অন্য দু’টি বিষয়ের সাথে পবিত্র কুরআনের প্রতি ঈমান আনা। কুরআনের ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে  এর প্রতিটি শব্দ যে মহান আল্লাহ সুবহানু তায়ালার পক্ষ  থেকে নাজিলকৃত বা অবতীর্ণ তা মনেপ্রাণে মেনে নেয়া। এর বর্ণিত প্রতিটি বাক্য, ঘটনা, কাহিনী নির্ভুল বলে মেনে নিয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র হেদায়াত হিসেবে গ্রহণ করা। আল কুরআন হঠাৎ করে নাজিল করা কোনো গ্রন্থ নয় বরং মুহাম্মদ সা:-এর ২৩ বছরব্যাপী বিপ্লবী জীবনের বিভিন্নপর্যায়ে, বিভিন্ন প্রয়োজনে মহান আল্লাহর পক্ষ  থেকে দেয়া নির্দেশিকা।

কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন  ‘রমজান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে, গোটা মানবজাতির জন্য জীবনযাপনের বিধান এবং তা এমন স্স্পুষ্ট উপদেশাবলিতে পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সুস্পষ্টরূপে পার্থক্য তুলে ধরে।’ (সূরা বাকারা-১৮৫)

কুরআন শুধু ব্যক্তি চরিত্র সংশোধনের জন্য আসেনি, বরং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়সহ জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে। সূরা ফাতাহ-এর ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন ‘তিনি সেই আল্লাহ যিনি তার রাসূলকে হেদায়াতে (কুরআন) ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন।  যেন একে সমগ্র দ্বীনের (জীবনব্যবস্থা) ওপর বিজয়ী করে দিতে পারেন। আর এ মহা সত্য সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।’

দীর্ঘ ২৩ বছর কুরআন নাজিলের পর মহানবী সা: যখন একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এর সব দিকে পরপিূর্ণতা সাধন করেছেন তখন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ  থেকে ঘোষণা নিম্নরূপ  ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমার নেয়ামত তোমাদের প্রতি পূর্ণ করে দিয়েছি। আর তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিয়েছি। (সূরা মায়িদা-৩)। আমাদের পিতা, স্বামী বা সন্তানদের মধ্যে কেউ যদি প্রবাস থেকে চিঠি  লেখে তখন আমরা নিজে খুব আগ্রহ সহকারে পড়ি। আমাদের সবার স্রষ্টা আল্লাহ আমাদের প্রতি যে চিঠি দিয়েছেন তা বুঝে শুনে পড়া এবং সে অনুযায়ী জীবন চলার ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু আন্তরিক! অথচ কুরআনের সাথে মুমিনের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা আল্লাহ নিজেই বলে দিয়েছেন।

‘আমরা যাহাদিগকে কিতাব দিয়েছি, তারা তা যথার্থরূপে পড়ে (অর্থ ও ব্যাখ্যাসহকারে)। এরাই এর প্রতি ঈমান আনে। এর প্রতি যারা কুফরি করে মূলত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ (সূরা বাকারা-১২১)।

কুরআনের আয়াত শুনে মুমিনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও কুরআন কথা বলেছে। ‘প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই যাদের ষিল খোদার স্মরণের কালে কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। তারা তাদের খোদার ওপর আস্থা ও নির্ভরতা রাখে।’ (সূরা আনফাল-২)

কুরআন পড়া বা জানার সময় মুমিনের অন্তর সত্যকে মানার ক্ষেত্রে কতটুকু আগ্রহী হয়ে ওঠে, সে ব্যাপারে আল্লাহ বলেন  যখন তারা রাসূলের ওপর অবতীর্ণবাণী শুনতে পায়, তখন তোমরা দেখতে পাও সে সত্যকে জানা ও চেনার প্রভাবে তাদের চুসমূহ অশ্রুধারায় সিক্ত হয়ে যায়। তারা বলে ওঠে হে আমাদের খোদা, আমরা ঈমান এনেছি। আমার নাম সাক্ষাৎদাতাদের সাথে লিখে নাও।’ (সূরা মায়েদা-৮৩)।

আমরা যদি কুরআনকে যথার্থভাবে না পড়ি, একে যথার্থভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা না করি কিংবা এর শিক্ষা  থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নিই, সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন  আর যে ব্যক্তি আমার জিকির (কুরআন হাদিসের নছিহত)  থেকে বিমুখ হবে তার জন্য দুনিয়া হবে সঙ্কীর্ণ জীবন, আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে, হে আমার রব, দুনিয়ায় তো আমরা চুষ্মান ছিলাম। কে আমাকে অন্ধ করে তুলল? আল্লাহ বলবেন  হ্যা এমনিভাবে তো আমার আয়াতগুলো যখন তোমার কাছে এসেছিল তুমি তখন তা ভুলে গিয়েছিলে। ঠিক সেভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে।– সমাপ্ত –


Related Post