Originally posted 2013-02-10 16:30:43.
ভূমিকা
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। আমরা শুধু তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ও তাঁর নিকট মক্ষা চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দিবেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা দিচ্ছেন-
يأيها الذين آمنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون . (آل عمران -১০২)
অর্থ: হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় কর, সাবধান মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
يأيها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس وَّاحدة وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء واتقوا الله الذي تساءلون به والأرحام إن الله كان عليكم رقيبا. (النساء-১)
অর্থ : হে মানব সমাজ ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের দু‘জন থেকে বিস্তার করেছেন অগনিত পুরুষ ও নারী। আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট কিছু চাও এবং আত্মীয়-জ্ঞাতীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন:
يأيها الذين آمنوا اتقوا الله وقولوا قولا سديدا . يصلح لكم أعمالكم ويغفرلكم ذنوبكم ومن يطيع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما. (الأحزاب-৭০-৭১)
অর্থ ঃ হে মানব সমাজ ! তেমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন। বিস্তার করেছেন তাদের দু‘জন থেকে অগনিত পুরুষ ও নারী। আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট চাও এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যপারে আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (নিসাঃ ১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله وقولوا قولا سديدا . يصلح لكم أعمالكم أعمالكم ويغفرلكم ذنوبكم ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيماً. (أحزاب-৭০-৭১)
অর্থ ঃ হে ঈমানদারগন! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক সত্য কথা বল, তিনি তোমাদের আমল সংশোধন করবেন ও তোমাদের গুনাহসমূহ মক্ষা করে দিবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে। (আহযাব-৭০-৭১)
নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম আদর্শ হলো রাসূল সা. এর আদর্শ। আর সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া ও নব প্রবর্তিত বিষয় তথা বিদআত। প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী এবং প্রতিটি গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
إن تجتنبوا كبائر ما تنهون عنه نكفر عنكم سيِّآتكم وندخلكم مدخلا كريما. (نساء – ৩১)
অর্থ ঃ যে সকল বড় গুনাহ সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা তা হতে বিরত থাক, তাহলে আমি তোমাদের ত্র“টি-বিচ্যূতিসমূহ মা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।(নিসা-৩১)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যারা কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে তাদেরকে নিজ দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ ছগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমল যেমন-সালাত, সাওম. জুমুআ, রমযান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان مكفرّات لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر. (مسلم)
অর্থ ঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমুআ হতে অন্য জুমুআ এবং এক রমযান হতে অন্য রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোর কাফ্ফারা হয়ে যায়, যদি কবীরা তথা বড় গুনাহগুলো থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম)
উল্লেখিত হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকা অতীব জরুরী। যদিও জ্ঞানীরা বলেন ঃ তওবা ও মা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। আর একই গুনাহ বার বার করলে তা আরা ছগীরা বা ছোট গুনা থাকে না।
অতএব কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকতে হলে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) বলেন ঃ লোকেরা রাসূল সা. কে ভাল ভাল বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত এবং আমি খারাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এজন্য যে, যাতে আমাকে খারাপ বিষয়গুলো স্পর্শ করতে না পারে।
কবি বলেন :
عرفت الشر لا للشر لــكن لتوقيه
ومن لم يعرف الخيرمن الشر يقع فيه.
অর্থ ঃ “ আমি খারাপ সম্পর্কে জেনেছি তা করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং খারাপি হতে রক্ষা পেতে। কারণ যে লোক মন্দ সম্পর্কে কোন ধারণা রাখে না সে তাতে পতিত হয়”।
বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে যে সব কবীরা গুনাহ হাফেয ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী তার প্রসিদ্ধ কিতাব “আল কাবায়ের” এ উল্লেখ করেছেন সেগুলো সহ আরো কিছু কবীরা গুনাহের আলোচনা করা হয়েছে। এসব কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এ গুনাহগুলো হতে বেঁচে থাকাও সম্ভব হবে।
এখানে প্রতিটি কবীরা গুনাহের আলোচনার সাথে একটি বা দু‘টি করে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোন কোন স্থানে বিষয়টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল্লাহর নিকটই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।
আল্লাহ সুন্দর নামগুলো এবং মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি যে, এই রিসালার মধ্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে তার দ্বারা আমাকে এবং সমস্ত মুসলমানকে প্রতিদান দিবেন ঐ দিন যে দিন কোন ধন সম্পদ ও সন্তান কারো কোন উপকারে আসবে না। একমাত্র ঐ ব্যক্তি উপকৃত হবে যে আল্লাহর নিকট সরল মন নিয়ে উপস্থিত হবেন। আর এই আমলসহ অন্য সমস্ত আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য।
তিনি তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন ও কুরআন-হাদীসের অনুসৃত পথ নির্দেশনা অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
কবীরা গুনাহ কি?
অনেকেই মনে করেন, কবীরা গুনাহ মাত্র সাতটি যার বর্ণনা একটি হাদীসে এসেছে। মূলতঃ কথাটি ঠিক নয়। কারণ হাদীসে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সাতটি গুনাহ কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা উল্লেখ করা হয়নি যে, কেবল এ সাতটি গুনাহই কবীরা গুনাহ, আর কোন কবীরা গুনাহ নেই। একারণেই আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ কবীরা গুনা সাক্ষাত হতে সত্তর পর্যন্ত। (ত্ববারী বিশুদ্ধ সনদে)। ইমাম শামস্দ্দুীন আয-যাহাবী বলেনঃ উক্ত হাদীসে কবীরা গুনাহের সীমাবদ্ধতা উল্যেখ করা হয়নি।
শায়খূল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন ঃ কবীরা গুনাহ হল- “যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া হয়েছে”।
তিনি আরো বলেনঃ যে সব গুনাহের কারণে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।
ওলামায়ে কেরাম বলেন ঃ তওবা ও মা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। আবার একই ছগীরা গুনাহ বার বার করার কারণে তা আর ছগীরা (ছোট) গুনাহ থাকে না।
ওলামায়ে কেরাম কবীরা গুনাহের সংখ্যা সত্তরটির অধিক বলে উল্লেখ করেছেন।
১ নম্বর কবীরা গুনাহ
الشرك بالله আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা
শিরক দুই প্রকার
১.শিরকে আকবার বা বড় শিরক ঃ আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদাত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে গাইরুল্লাহর জন্য নিবেদন করা। যেমন – আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা, তিনি ছাড়া অন্য কারো নামে মান্নত করা ইত্যাদি।
যদি কোন ব্যক্তি ইবাদাতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহুর্তে আল্লাহর ইবাদাত করে তবুও তা শিরক।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
إن الله لا يغفر أن يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء. (نساء -৪৮)
অর্থ ঃ “ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে মা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা মা করবেন। (নিসা-৪৮)
২. শিরকে আসগার বা ছোট শিরক ঃ রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর জন্য আমল করা ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
فويل للمصلين . الذين هم عن صلاتهم ساهون . الذين هم يراءون. (الماعون-৪-৬)
অর্থ ঃ দুর্ভোগ সে সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর। যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে”।
রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
أنا أغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا أشرك معي فيه غيري تركته وشركه. (مسلم وابن ماجة)
অর্থ ঃ “আমি অংশীদারদের অংশীদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকের সাথে ছেড়ে দেই”। (মুসলিম ও ইবনে মাজাহ)
قتل الناس بغير حق অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
والذين لا يدعون مع اله الها آخرولا يقتلون النفس التي حرّم الله إلا بالحق ولا يزنون ومن يفعل ذلك يلق أثاماُ. يضاعف له العذاب يوم القيامة ويخلد فيه مهاناً. إلا من (৬৭-৭০ تاب وآمن وعمل عملا صالحاً. (الفرقان
অর্থ ঃ যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদাত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তার শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং লাঞ্ছিত অবস্থায় সেথায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে। (ফুরকান-৬৭-৭০)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শরীয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা কবীরা গুনাহ।
(চলবে)