হযরত ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন; একদা আমরা রাসূলে কারীম (সা.) এর দরবারে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় সাদা ধবধবে পোশাক পরিহিত ও মিশকালো কেশধারী একব্যক্তি আমাদের মাঝে আবির্ভূত হল। তার উপর না ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল , আর না আমাদের মাঝে কেউ আদৌ তাকে চিনতো! তিনি রাসূলে কারীম (সা.) এর কাছে গিয়ে নিজের হাঁটু তাঁর হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে বসলেন, এবং নিজের হাত রাসূলে কারীম (সা.) এর উরুতে রেখে বললেন; হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। উত্তরে রাসূলে কারীম (সা.) বললেন; ইসলাম হচ্ছে; এই
১. তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল,
২. নামাজ প্রতিষ্ঠা কর,
৩. যাকাত প্রদান কর,
৪. রমযানের রোযা রাখ,
৫. এবং সামর্থ থাকলে তবে আল্লাহর ঘরে হজ্জ কর।
তিনি (আগন্তুক ব্যক্তি) বললেন; আপনি ঠিক বলেছেন। হযরত ওমর বলেন তাঁর প্রতি আমরা বিস্মিত হলাম এই জন্য যে, তিনি নিজেই প্রশ্ন করছেন আবার নিজেই জবাবে ঠিক বলে ঘোষণা করছেন। তিনি (আগন্তুক ব্যক্তি) বললেন; এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন! জবাবে রাসূলে কারীম (সা.) বলেন; ঈমান হচ্ছে এই
১. আল্লাহ
২. তাঁর ফেরেশ্তাগণ
৩. তাঁর কিতাবসমূহ
৪. তাঁর রাসূলগণ ও
৫. আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখা এবং
৬. তকদীর তথা ভাগ্যে ভালো-মন্দকে বিশ্বাস করা।
তিনি (আগন্তুক ব্যক্তি) বললেন আপনি ঠিক বলেছেন।
আগন্তুক বললো এবার আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন! জবাবে রাসূলে কারীম (সা.) বলেন; ইহসান হচ্ছে এই-
তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন, এই বিশ্বাস রাখ।
আগন্তুক বললো এবার আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে বলুন! জবাবে রাসূলে কারীম (সা.) বলেন; এই বিষয়ে প্রশ্নকৃত ব্যক্তি প্রশ্নকারী অপেক্ষা অধিক অবগত নয়। আগন্তুক বললো তবে তার নিদর্শনগুলি সম্পর্কে আমাকে বলুন! জবাবে রাসূলে কারীম (সা.) বলেন; তা হচ্ছে এই-
দাসী-বাঁদীরা নিজ নিজ মনিবকে প্রসব করবে। এবং জুতা বিহীন ও বিবস্ত্র গরীব রাখালরা উঁচু উঁচু অট্যালিকা তৈরী করতে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করবে। হযরত ওমর (রা.) বলেন; অতঃপর আগন্তুক চলে যায় আর আমি কিছুক্ষণ বসে থাকি, তখন রাসূলে কারীম (সা.) আমাকে বলেন; হে ওমর! প্রশ্নকারী কে ছিলেন তুমি জান কি? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন। রাসূলে কারীম (সা.) বললেন; তিনি ছিলেন জিবরাঈল, তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতে এসে ছিলেন। (মুসলিম)
হাদীসটির সার কথা
১. মানুষের উচিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা ও সুসংগঠিতভাবে থাকা।
২. আগন্তুকের উচিত সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে বৈঠকে বসা।
৩. প্রশ্নকারীর উচিত ভদ্রতা বজায় রেখে সাহসের সাথে প্রশ্ন করা।
৪. প্রশ্ন দ্বীন সম্পর্কে করা।
৫. প্রশ্নকৃত ব্যক্তিকে বিনয় প্রকাশ করা।
৬. প্রশ্নকৃত ব্যক্তির উচিত প্রশ্নকারীর স্খলন বা ত্র“টি ক্ষমা করা।
৭. প্রশ্নকৃত যদি বলে আমি এ বিষয় জানিনা এটা দোষনীয় নয়।
৮. অন্যের উপকারার্থে জানার পরও প্রশ্ন করা যাবে।
৯. ফেরেশ্তাগণ মানুষের আকৃতি ধারণ করতে পারে।
১০. ঈমান হচ্ছে প্রকাশ্যে ও অন্তরের বিশ্বাসের সমন্যয়।
হাদীসটি গবেষণা করলে আমরা যা জানতে পারি।
(ক) ইসলাম
১. এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ এক ও মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।
২. নামায প্রতিষ্ঠা করা।
৩. যাকাত তথা গরীব মিসকীনদের হক পৌঁছায়ে দেওয়া।
৪. রমযানের রোযা রাখা।
৫. সামর্থ থাকলে বায়তুল্লাহর হজ্জ করা।
(খ) ঈমান:
১. দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর অস্তিত্ব বিশ্বাস করা।
২. ফেরেশ্তাদেরকে আল্লাহ কর্তৃক নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এটা বিশ্বাস করা।
৩. কুরআনসহ সবগুলো আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখা।
৪. মহান আল্লাহ রাসূলগণকে মানবগোষ্ঠীথেকে নির্বাচন করেছেন, তা বিশ্বাস করা।
৫. মানবজাতিকে হিসাবের জন্য পুনরায় জীবিত হতে হবে বিশ্বাস করা।
৬. ভাগ্যের ভাল-মন্দ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিশ্বাস করা।
(গ) ইহসান; রিয়া (লোক দেখানো) মুক্ত ইবাদত করা, আর উহা তখনই সম্ভব যখন হৃদয়ে এই ধারণা পয়দা হবে যে আমি আল্লাহকে দেখছি। যদি এই ধারণা জন্ম না নেয়, তবে এই বিশ্বাস অবশ্যই রাখতে হবে যে আল্লাহ আমাকে দেখছেন।
(ঘ) কিয়ামতের নির্ধারিত সময় সম্পর্কে সংবাদ প্রদান। অবশ্যই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
(ঙ) কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ; ১. সন্তান মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। ২. অযোগ্য লোক, সৎ ও যোগ্য লোকদের প্রতিনিধি হওয়া।
ফায়দাহ: এই হাদীসে প্রশ্নকারী ফেরেশতা জিবরাঈল ছিলেন, এই কারণে হাদীসটিকে হাদীসে জিবরাঈল বলা হয়।
বর্ণনাকারী: নাম ‘উমর’ লকব বা উপধি ‘ফারুক’ এবং কুনিয়াত বা উপনাম ‘আবু হাফ্স’। পিতা ‘খাত্তাব’ ও মাতা ‘হান্তামা’। তিনিই সর্বপ্রথম ‘আমীরুল মু’মিনীন’ উপাধি লাভ করেন, সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করেন এবং রাসূল (সা.) থেকে ৫৩৯ টি হাদীস বর্ণনা করেন। ৬৩ বছর বয়সে আবু লুলুয়াহ মজুসীর (অগ্নিপূজক) হাতে শহীদ হন। রাসূলের হুজরায় তাঁরই সাথে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। তার খেলাফত কাল ১০ বছর ৬ মাস ৫ রাত ছিল।