রমযান সংযম সাধনের মাস। বিভিন্ন রোগী এই রোযার মাসে বিভিন্ন আশঙ্কা অনুভব করে থাকেন। রোযা এবং রোগ একই অবস্থানে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যা যেমন সৃষ্টি করতে পারে আবার একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে সমস্যা নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা অনেক কিছু জানি না বলে ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে সিয়াম সাধনায় বিরত থাকি। আবার রোযাকে প্রাধান্য দিয়ে শরীরের বিশেষ ক্ষতিও করে থাকি। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরা হলো।
পেপটিক আলসার রোগ যাদের আছে, তারা ভাবেন রোযা রাখা তাদের জন্য ঠিক নয়, তাতে রোগের উপশম হবে না। ভাবনাটা পুরোপুরী ঠিক নয় এ জন্য যে, একেকজনের উপসর্গ একেক রকমের। পুরনো আমাশয় বা ইরিটেবল বা বাওয়েল সিনড্রোমে যারা ভুগছেন তাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে রোযা কার্যকরী অর্থাৎ এ সময় পেটের সমস্যা কম হয়। যদিও ইফতারিতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভাজাজাতীয় মুখরোচক খাবার। এ ধরনের খাবারে অনেকরেই সমস্যা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে পেপটিক আলসার রোগে ব্যবহৃত ওষুধ অমিপ্রাজল, পেন্টেপ্রাজল একক মাত্রায় বেশি কার্যকর। কাজেই রোযায় পেপটিক আলসার রোগী এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম রোগীদের ক্ষতির আশঙ্কা কম বলে রোযা রাখতে পারেন।
ডায়াবেটিসে যারা ভুগছেন বিশেষ করে যারা ইনসুলিন নেন তাদের রোযা না রাখাই ভালো। তবে যারা ওষুধ ও খাবার নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে রাখছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোযা রাখতে পারেন। রোযা তাদের জন্য কিছুটা উপকারীও বটে। কেননা ওজন নির্ভর করে আহারের পরিমাণের ওপর। এখানে কমানোটাই উদ্দেশ্য। অনেকে রোযা রেখে পরিশ্রম কমিয়ে দেন, তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞর মতামত। ইনসুলিন যারা নেন চিকিৎসকের পরামর্শে সময় ভাগ করে সেহরি, ইফতারির সামঞ্জস্য রেখে রোযা রাখতে পারেন।
হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপে যাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় রোযা রাখায় তাদের কোনো নিষেধ নেই। তবে খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অনেকে সারা দিন রোযা রাখায় অনেক ক্যালারি ক্ষতি হয়েছে মনে করে ইফতার এবং সেহরিতে তা পূর্ণ মাত্রায় আদায় করে থাকেন। ফলে উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ভীষণ রকমের ক্ষতি হয়। তৈলাক্ত খাবার গ্রহণে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, রোযা শেষে দেখা যায় ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে. হার্ট অ্যাটাকের কারণও ঘটাতে পারে বলে অনেকের মতামত। এমতাবস্থায় সারাদিন রোযা রেখে রাতে বেশি পরিমাণ খেতে হবে এই ধারণা দূর করে চর্বি বা তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। পেঁয়াজ, লবণ এবং মসলা খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে। পক্ষান্তরে সবজি, ফল, শসা, পানি বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
যাদের সব সময় পেটে গন্ডগোল আমাশয়, ডায়রিয়া, বদহজম তারা অনায়াসেই রোযা রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সহকারে খাবার খেতে হবে। বাইরের ধুলাবালি মিশ্রিত ইফতারি, বিভিন্ন রঙ মেশানো শরবত যা দূষিত পানি, বরফ দিয়ে তৈরি শরবত পচা-বাসি জিনিস, তেলে ভাজা মুখরোচরক খাবার পরিহার করা উচিত। বাইরের তৈরি ইফতারি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি নয়। এগুলো খেলে টাইফয়েড, পেটের সমস্যা ইত্যাতি হতে পারে, জন্ডিস নামের উপসর্গও দেখা দিতে পারে এবং আপনার লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্র¯্রাবে যাদের ইনফেকশন যদিও তাদের বেশি পানি খেতে হয় তবুও তারা রোযা রাখতে পারেন সেহরি এবং ইফতারে বেশি পানি ও শরবত দিয়ে পুষিয়ে। কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি ছোলা, শাকসবজি, ফল খেয়ে রোযা রাখা কোন ব্যাপার নয়। গর্ভকালীন রোযা রাখা সম্ভব, তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবারের পুষ্টিমান, ক্যালারি ও পানির যেন কমতি না হয়। অন্যান্য অসুখ যেমন চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, আর্থাইটিস, নাক, কান, চোখের সমস্যায় রোযা রাখা সম্ভব আপনার চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করে।
কাজেই অসুখের অজুহাত দেখিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশকে না মেনে পাপের ভাগীদার না হয়ে জান্নাতের ফলভোগে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।