মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত যেন, রবের ইবাদতে নিয়োজিত থাকি

Originally posted 2013-02-18 05:14:36.

images

রমযানের মাস সাধারণত: মুসলমানদের দ্বীনের প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনা বেশি দেখা যায়। এই অবস্থা দেখে মুমিনদের অন্তরে খুশির বন্যা বয়ে যায়। কারণ যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় নেক আমলের ঢল। মনে হয় ইসলামের জয় জয়কার। কিন্তু ঈদ ও তার পরবর্তী দিনগুলো উক্ত সুধারণার সত্যায়ন করেনা, অথবা সব ধারণা গুণাহমিশ্রিত আনন্দে ভেস্তে যায়। যে ব্যক্তি মাহে রমযান ও রমযান পরবর্তী মানুষের অবস্থা নিয়ে গবেষণা করবে তখন সে আশ্চর্য না হয়ে পারবে না। কেননা রমযানের পর লোকজন ইবাদতে অলসতা বরং ইবাদত থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে। মনে হয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ইবাদত, তাওবা ও সকল নেক আমল শুধুমাত্র মাহে রমযানের সাথেই সম্পৃক্ত। তারা এ কথা জানেনা যে, আল্লাহ তা’আলা রমযানসহ সবকয়টি মাসের রব। অন্যান্য মাসের তুলনায় রমযান হলো আনুগত্য ও ধৈর্যের অনুশীলন মাত্র। এ মাসে ঈমানী শক্তি সঞ্চয় করে বাকী এগার মাস চলতে হবে। হ্যাঁ, তবে রমযান মাসে ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব আছে এবং রমযান অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। কিন্তু রমযান মাসই কেবল ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট নয়। আর এ কারণেই রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময়ই দান-সদকা করতেন, তবে রমযানে তার দানের পরিমাণ অন্যান্য মাসের তুলনায় বেড়ে যেত।

আল-কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : তোমরা ঐ নারীর মত হয়োনা, যে সুতা দিয়ে মজবুতভাবে কাপড় তৈরি করার পর সুতাগুলো কাটতে শুরু করল। (সূরা নহল-৯২) অতএব, কল্যাণমূলক কাজগুলো কেবল রমযানের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং সব সময়ই আমাদের রবের ডাকে সাড়া দিতে হবে।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদতে নিয়োজিত থাক। (সূরা হিজর-৯৯) অতএব, মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ ইবাদত ও নৈকট্য অর্জনের সমাপ্তি নেই।  

ঈদে মানুষের বৈধ-অবৈধ পন্থায় আনন্দ-উল্লাস ও শরীয়তের সীমালঙ্ঘনের প্রতি দৃষ্টি দিলে মনে হবে না যে, তারা তাদের রমযানের নেক আমলগুলো প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে ভয় করছে, অথবা যে ঈদের মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সম্মান দান করেছেন তার ব্যাপারে তারা শুকরিয়া আদায় করছে। আর এ কারণেই তাদের অবস্থা ঐ নারীর সাথে তুলনা করা হয়েছে যে সুতা বুনার পর তা কেটে ফেলে। মানব প্রকৃতি হলো যদি সে স্বীয় সৃষ্টিকর্তার সাথে ব্যাস্ত থাকে তাহলে কখনো সে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কোন কাজে লিপ্ত হবে না।

আল-কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : নিশ্চয় যারা হেদায়েত স্পষ্ট হওয়ার পর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে শয়তান তাদের প্ররোচিত করে এবং আশা দেয়। (সূরা মুহাম্মদ-২৫) আসলে যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যকে ভালোবাসত তাহলে চোখের এক পলকের জন্যও তা থেকে দূরে থাকত না।

পূর্বযুগে বলা হত : যে ব্যক্তি ইয়ামানের রাস্তার আশেক, সে কখনো সিরিয়ার দিকে তাকাবে না। শুনে রাখুন, কেউ অলস ও দুর্বল হয়ে গেলে কিন্তু সাধনা করতে পারবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিজেকে ইবাদাত ও দৃঢ়তার উপর সংযত রাখা, কঠিনভাবে নিজেকে ইবাদতে আটকে রাখা। হে মুসলমান, খবরদার! রমযানে কুপ্রবৃত্তি দমন করে ধোকায় পড়োনা, তাতে তুমি রমযানের পর আবার ফিতনায় জড়িয়ে পড়বে। কেননা কুপ্রবৃত্তি মানুষকে চক্রান্তে ফেলে দেয়। যুদ্ধের ময়দানে এমন অনেক বীর পুরুষ ধোকায় পড়ে, ফলে সে এমন এক পরিস্থিতির শিকার হয়, যা সে কখনো কল্পনাও করেনি।

এখানে হামযা (রাঃ)-এর সাথে ওয়াহশির ঘটনা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। যে ব্যক্তি আমল করে কিছদূর গিয়ে আবার অলস হয়ে স্থির হয়ে যায় সে ব্যক্তি কখনো শান্তি পায় না। এক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার বাণী সবচেয়ে অর্থবহ, আল-কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : অতঃপর তুমি যখন ফারেগ হবে, তখন তুমি নামাজে দাড়িয়ে যাও। (সূরা ইনশিরাহ-৭) কেননা অলসতা কখনো কারো হক আদায় করতে পারে না। যে ব্যক্তি হায় হুতাশ করে সে কখনো হকের উপর অটল থাকতে পারে না।

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি নফসকে কন্ট্রোল করে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে সে-ই প্রকৃত বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি নিজের নফসের অনুসরণ করে ও আল্লাহর উপর ভরসা করে সে-ই অক্ষম। নফসকে শাসন করার মূলমন্ত্র হলো আমলের প্রতি দৃঢ় সংকল্প করা। কেননা সংশয়ের কারণেই কোন কাজ ধ্বংস হয়ে যায়। মুজাহাদা একটি আশ্চর্যজনক পদক্ষেপ। তাইতো দেখা যায় যারা নফসকে যা ইচ্ছা তা-ই করার জন্য ছেড়ে দেয়, নফস তাদেরকে অপছন্দনীয় কর্মকাণ্ডে ফেলে দেয়। আর যারা সর্বদা নফসের বিরোধিতা করে তাদের নফস কষ্ট পেলেও তারা সফল হয়ে যায়।

একথা সত্য যে দুনিয়ার জীবন কষ্ট-ক্লেশ থেকে কখনো পৃথক হয় না। জীবন চলার পথে অনেক মুসীবতের সম্মুখীন হতে হয়। মানব জীবনে সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো পরিণতি সম্পর্কে অনুভূতি না থাকা। বরং এর চেয়েও নিকৃষ্ট হলো পূর্ণমাত্রায় ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত হওয়ার পর ইবাদত কমিয়ে দিয়ে তার উপর সন্তুষ্ট থাকা, অথবা গুণাহ থেকে তাওবা করে আবার গুণাহে ফিরে আসা। যার অবস্থা এমন সে কখনো ইবাদত করে কামিয়াব হতে পারে না। যদি কেউ মৌসুমী ইবাদতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে তাহলে সে কঠিন শাস্তিতে নিমজ্জিত হবে, আর তা হলো ইবাদতের মজা ও আল্লাহর সাথে নিবির মুনাজাতের মিষ্টতা আস্বাদন করার সুযোগ না পাওয়া। মুমিন নারী ও পুরুষ যারা প্রতিটি মাসের রবের ইবাদত করে প্রত্যেক মাসে, তাদের বাহির ও ভিতর সমান। তাদের শাওয়াল মাস রমজানের মতই। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বলেন : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়ে বলেন : হে আব্দুল্লাহ তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়োনা, যে রাত জেগে ইবাদতের অভ্যাস করে আবার তা ছেড়ে দিল। আল্লাহ তাআলা মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত নেক আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর নবীকে। তাই আসুন আমরা সবাই আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হই। এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাতে অটল থাকার চেষ্টা করি। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সেই তাওফীক দান করুন এবং নেকগুলো কবুল করুন। আমীন… 

Related Post