ইসলামের মূল পাঁচটি ভিত্তি রয়েছে। প্রতিটি মুসলমানের ওপর সামর্থ্যরে ভিত্তিতে এ পাঁচটি কাজ করা ফরজ।
প্রিয়নবী সা. বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই, হজরত মুহম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, সালাত (নামাজ) কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, বায়তুল্লাহর হজ করা এবং মাহে রমজানে রোযা রাখা (বোখারী ও মুসলিম)।
এ পাঁচ ভিত্তির দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে সালাত তথা নামাজ। রাসুলে করীম সা. বলেছেন যে, সালাত হলো দীনের স্তম্ভ। কুরআন মজীদে একশতেরও বেশি জায়গায় নামাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এবং বিভিন্ন স্থানে নামাজের বিভিন্ন নামকরণও করা হয়েছে। যেমন, দু’আ, যিকির, তাসবিহ, ইনাবাহ। দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের হুকুম রয়েছে। দুনিয়ার বুকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য।
প্রতি ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে কয়েক মিনিট সময়ের দরকার হয়। এ সময়ে নিজেকে যাবতীয় স্বার্থাদির চিন্তা থেকে বিরত রেখে একাগ্র চিত্তে আল্লাহর দিকে গভীর মনোনিবেশ করতে হয়। তাকে সালাত আদায় করতে হয় স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নজির হিসাবে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নর ও নারীর জন্য সালাত আদায় করা ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার যোহরের সালাতের স্থলে জুম’আর নামাজ মসজিদে জামাতবদ্ধ হয়ে আদায় করতে হয়। সাপ্তাহিক এই সমাবেশে অত্যন্ত ভাবগম্ভীরতার সঙ্গে সালাত আদায় করা হয়, সালাতের পূর্বে স্থানীয় ইমাম খুৎবা (ভাষণ) দেন।
সালাতের তিনটি মৌলিক বিষয় রয়েছে : ১। আল্লাহর মহিমা ও কুদরতের কথা মনে রেখে একাগ্রচিত্তে তাকে হাজির-নাজির জানা। ২। বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা এবং উপযুক্ত শব্দে নিজের বিনম্রতা প্রকাশ করা। যেমন কারো প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াই। তাঁর দিকে মুখ ফিরাই এবং তাঁর প্রতি পূর্ণ মাত্রায় মনোনিবেশ করি। কিন্তু যখন পরম শ্রদ্ধা সহকারে রুকুতে বা সিজদা করে তখন সেটা হয় আরো বড় ধরনের সম্মান প্রদর্শন। ৩। এই বিম্রতাকে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যথাযথ সুনির্দিষ্ট ভঙ্গিমার মাধ্যমে স্থাপন করা এবং ভয় ও শ্রদ্ধায় অবণত হওয়া।
সকল সৃষ্টিরাজির ইবাদত-বন্দেগীর একটি নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে। এসব কিছুরই সমন্বয় ঘটেছে সালাতের মধ্যে। সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র নিয়মিত উদয় হয়, অস্ত যায়। এ যেন সালাতের এক রাকআতের পর আরেক রাকআত আদায় করার অনুরূপ। পাহাড় পবর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সালাতের শুরুতে মু’মিন-মুসলমানদেরও ঠিক এমনিভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পশু-পাখিরা বশ্যতা স্বীকারের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে নত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গতি রয়েছে সালাতের রুকুর। বৃক্ষরাজিকে আমরা মূলের সাহায্যে মাটি থেকে খাদ্য খাবার সংগ্রহ করতে দেখতে পাই।