ইক্বামাতে দ্বীন অর্থ দ্বীন ক্বায়েমের প্রচেষ্টা। আর দ্বীন ক্বায়েম বলতে বুঝায় কোন একটা জনপদে দ্বীন ইসলাম বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ণ বিধি-বিধান অনুসরণ ও বাস্তবায়নের পথে কোন প্রকারের বাধা ও অন্তরায় না থাকা। কোন দেশে যদি ইসলামী অনুশাসন বা কুরআন সুন্নাহর বিপরীত আইন চালু থাকে তাহলে জীবন যাপনের আন্তরিক নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও ঐ আইনের কারণে তা মানা সম্ভব হয় না। কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি ইসলামী আদর্শের বিপরীত কিছু শেখায় এবং ইসলাম না শেখায় তাহলে সেখানেও ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার মত মন মানসিকতাই তৈরি হয় না। যে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ও পরিবেশ ইসলামী আদর্শের বিপরীত, সেখানেও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা সম্ভব নয়। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজ জীবনের চাবিকাঠি যাদের হাতে, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক সর্বসাধারণ তাদের অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। সুতরাং সমাজের এই নেতৃস্থানীয় ও প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী যারা দেশ, জাতি ও সমাজ জীবনের স্নায়ুকেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে তারা যদি ইসলামী আদর্শ বিরোধী হয় তাহলে ও সেই সমাজের মানুষ ইসলাম অনুসরণ করার সুযোগ পায় না। ব্যক্তি জীবনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যতটা দ্বীন মানা হয় তা পরিপূর্ণ দ্বীনের তুলনায় কিছুই নয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামগ্রিক ও পরিপূর্ণ দ্বীন মানা তো দূরের কথা আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলোর ও হক আদায় করা হয় না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে নামায আদায় হতে পারে কিন্তু কায়েম হয় না। অথচ নামায কায়েমেরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আদায়ের নয়। এমনিভাবে যাকাত আদায়ও সঠিক অর্থে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হতে পারে না। রোযা তো এমন একটা পরিবেশ দাবী করে যা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সম্ভব নয়। হজ্জের ব্যাপারটা আরও জটিল। নামায, রোযা এবং যাকাত তো ব্যক্তি ইচ্ছে করলে সঠিকভাবে হোক বা নাই হোক তবুও আদায় করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ছাড়পত্র ছাড়া হজ্জের সুযোগ বর্তমান ব্যবস্থায় না থাকায় ব্যক্তি ইচ্ছে করলেও হজ্জের ফরজ আদায় করতে পারছে না। সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগে আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ-নিষেধের কোন একটিও পালন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অর্থনৈতিক জীবনে আমরা সুদ বর্জন করতে সক্ষম হচ্ছি না। সমাজ জীবনে বেপর্দেগী ও উলঙ্গপনা-বেহায়াপনা থেকে আমরা বাঁচতে পারছি না। যেনা শরীয়তে নিষিদ্ধ হলেও রাষ্ট্রীয় আইনে এর জন্যে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, খুন-খারাবী প্রভৃতি সামাজিক অপরাধ ও নৈতিকতা বিরোধী কাজের মূলোৎপাটন করে সৎকাজের প্রসার ঘটানোর সুযোগ এখানে রুদ্ধ। যেখানে দেশে দ্বীনের আনুষ্ঠানিক ও সামগ্রিক দিক ও বিভাগের অনুসরণ ও বাস্তবায়নে উল্লিখিত কোন বাধা নেই বরং দ্বীনের বিপরীত কিছুর পথে অনুরূপ অন্তরায় আছে সেখানেই দ্বীন কায়েম আছে বলতে হবে। এভাবে দ্বীন কায়েম হওয়ার জন্যেই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। সব নবী রাসূলেরই দায়িত্ব ছিল এভাবে দ্বীনকে বিজয়ী করার চেষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা সূরায়ে শূরায় ঘোষণা করেছেন:
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের সেই নিয়ম কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছেন যার নির্দেশ তিনি নূহ (আ.) কে দিয়েছিলেন। আর যা এখন তোমার প্রতি যে হেদায়াত ওহীর মাধ্যমে প্রদান করেছি, আর সেই হেদায়েত যা আমি ইব্রাহীম (আ.) মূসা (আ.)-এর প্রতি প্রদান করেছিলাম। (সব নির্দেশের সার কথা ছিল) তোমরা দ্বীন কায়েম কর এই ব্যাপারে পরস্পরে দলাদলিতে লিপ্ত হবে না। (সূরা আশ শূরা: ১৩)
এভাবে দ্বীন ক্বায়েমের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালানোটাই ইসলামী আন্দোলনের জাগতিক লক্ষ্য। আর এরই মাধ্যমে অর্জিত হয় পারলৌকিক লক্ষ্য অর্থাৎ নাজাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল কুরআনে যা বলা হয়েছে তারও সার কথা এটাই। জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর কাজের আওতাভুক্ত অপর কাজটি আমর বিল মা’রূফ ও নাহী আনিল মুনকার সঠিকভাবে দ্বীন ক্বায়েম হওয়ার পরই হতে পারে। আল কুরআন ঘোষণা করছে:
الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَر
এরা তো ঐসব লোক যাদেরকে আমি দুনিয়ায় ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব দান করলে তারা নামায ক্বায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে বাধা দান করে। (আল-হাজ্জ: ৪১