যিনা বা ব্যভিচারের নিষেধাজ্ঞা

যিনা বা ব্যভিচারের নিষেধাজ্ঞা

যিনা বা ব্যভিচারের নিষেধাজ্ঞা

যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায় বিবাহ বন্ধন ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ করা। ইসলামী শরীয়াতে অবৈধ পন্থায় যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যিনার বিধান:
ইসলামের মূল লক্ষ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হল, মানুষের ইজ্জত-আবরু ও বংশের হেফাজত করা। যিনার মাধ্যমে ইসলামের এ মহান উদ্দেশ্য বিঘিœত হয় বিধায় ইসলামে এটি হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং যে সব মানবিক অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এটি তন্মধ্যে গুরুতর ও অন্যতম। ব্যভিচার একটি মহাপাপ যা অনেকগুলো অপরাধের নায়ক। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ﴿٣٢﴾
“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও অসৎ পন্থা।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّـهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ﴿١٥١﴾
“কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল-আনয়াম: ১৫১)
অশ্লীল কাজসমূহের মধ্যে যিনা বা ব্যভিচার সর্বাধিক গুরুতর ও জঘণ্য। অর্থাৎ যিনার অপরাধ শিরক ও নামায ছেড়ে দেওয়ার পরই এর অবস্থান।
যিনার কুফল:
যিনা বা ব্যভিচারের কারণে মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বিভিন্ন ধরণের কুফল বয়ে আনে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল:
(১) যিনাকারী বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এ কথা অনস্বীকার্য যে, যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে প্রাণঘাতি বিভিন্ন যৌনরোগ সৃষ্টি হয় যার মধ্যে মরণঘাতি এইডস্ (এইচ, আই, ভি), সিফিলিস, গণোরিয়া, মেহ-প্রমেহ, ক্ষয়রোগ ইত্যাদি প্রধান।
(২) ব্যভিচারের কারণে যৌন সম্ভোগের বৈধ পথ রুদ্ধ হয়ে যায়; এর মাধ্যমে বিবাহ, পরিবার, সন্তানসন্তুতির প্রতি মানুষের অবজ্ঞা সৃষ্টি হয়। ফলত: আবহমান কাল ধরে চলে আসা পরিবার প্রথা ধ্বংস হতে বাধ্য হয়।
(৩) যিনা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যকার বিভেদ উঠায়ে দেয়, এ দুই শ্রেণীর মধ্যে মূল পার্থক্য হল- চতুষ্পদ জন্তুর যৌনসঙ্গমের কোন নির্দিষ্ট পরিসর নেই, কিন্তু মানুষের জন্য এ পরিসর সীমিত। তাই মানুষ যখন যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন এ পরিসরের দেয়াল টপকে মানুষ চতুষ্পদ জন্তুতে পরিণত হয়। এ শ্রেণীর মানুষের দৃষ্টান্ত দিয়ে আল্লাহ বলেন:
وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ ﴿١٢﴾
“আর কাফেররা আনন্দ উপভোগ করে ও খায় যেমন খায় জতুষ্পদ জানোয়ার।” (সূরা মুহাম্মদ: ১২) এই আয়াত থেকে বুঝা গেলো যে, যিনাকারীর কাফেরের অন্তর্ভুক্ত।
(৪) যিনাকারীর লজ্জা থাকে না। যৌন পিপাসা মিটানোর নেশায় সে সাধারণ মানবিক লজ্জা-শরম হারিয়ে ফেলে। বৈধ-অবৈধের মধ্যে কোন পার্থক্য তার কাছে আর থাকে না।
(৫) মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যিনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যিনাকারীর পার্থিব শাস্তি:
যিনাকারীর ধরণ ও শ্রেণীভেদে ইসলামী শরীয়াত বিভিন্ন শাস্তি নির্ধারণ করে।
যেমন:
১) যিনাকারী যদি অবিবাহিত হয় এবং বিবাহ না করে অবৈধ সংগমে রত হয় তবে তাকে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। একদল মুমিন তাদের এ শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে বিধায় তারা মানব সমাজে চরম অপমানিত হবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّـهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ
“ব্যভিচারী নারী ও পুরুষ উভয়কে তোমরা একশত বেত্রাঘাত করবে; আর আল্লাহর বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে তোমাদের অন্তরে যেন তাদের প্রতি দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর মুমিনদের একটি দল অবশ্যই তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা আন্ নূর: ২)
২) আর যদি বিবাহিত হয় তাহলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
যিনাকারী যদি বিবাহিত হয় তবে তাকে জঘণ্য ও কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাকে প্রস্তারাঘাতে (রজম করে) হত্যা করা হবে। যাতে সে নিজ কৃতকর্মের প্রতিফল ভোগ করে এবং তার শরীরের প্রতিটি অংগ ঐরূপ কষ্ট অনুভব করে যেরূপ হারাম কাজে সে আনন্দ অনুভব করেছিল।
এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের বাণী রয়েছে; তিনি বলেন:
عن أبي هريرة: رضي الله عنه أَتى رَجُلٌ وهو في المَسْجِدِ، فَناداهُ فَقالَ: يا رَسولَ اللَّهِ، إنِّي زَنَيْتُ، فأعْرَضَ عنْه حتّى رَدَّدَ عليه أرْبَعَ مَرّاتٍ، فَلَمّا شَهِدَ على نَفْسِهِ أرْبَعَ شَهاداتٍ، دَعاهُ النبيُّ صلى الله عليه وسلم فَقالَ: أبِكَ جُنُونٌ قالَ: لا، قالَ: فَهلْ أحْصَنْتَ قالَ: نَعَمْ، فَقالَ النبيُّ صلى الله عليه وسلم اذْهَبُوا به فارْجُمُوهُ. قالَ ابنُ شِهابٍ: فأخْبَرَنِي مَن سَمِعَ جابِرَ بنَ عبدِ اللَّهِ، قالَ: فَكُنْتُ فِيمَن رَجَمَهُ، فَرَجَمْناهُ بالمُصَلّى، فَلَمّا أذْلَقَتْهُ الحِجارَةُ هَرَبَ، فأدْرَكْناهُ بالحَرَّةِ فَرَجَمْناهُ. البخاري (٢٥٦ هـ)، صحيح البخاري ٦٨١٥ صحيح- ومسلم (١٦٩١)
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে ছিলেন এমতাবস্থায় একজন লোক এসে তাকে বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমি যিনা করেছি। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লোকটি এভাবে চারবার বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন ঃ তুমি কি পাগল? লোকটি বলল ঃ না। তিনি আবার বললেন: তুমি কি বিয়ে করেছ? তিনি বললেনঃ হ্যা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ একে নিয়ে যাও, পাথর নিক্ষেপ করে একে মৃত্যু দন্ড দাও। -ফিকহুসসুন্নাহ ২য় খণ্ড ৩৪৬ পৃষ্ঠা, বুখারী: ৬৮১৫, মুসলিম: ১৬৯১)
তবে এ দুই ধরণের শাস্তি ইসলামী সরকারের বিচারকদের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।
যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি:
যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে;
( فَانْطَلَقْنَا إِلَى ثَقْبٍ مِثْلِ التَّنُّورِ أَعْلَاهُ ضَيِّقٌ وَأَسْفَلُهُ وَاسِعٌ يَتَوَقَّدُ تَحْتَهُ نَارًا فَإِذَا اقْتَرَبَ ارْتَفَعُوا حَتَّى كَادَ أَنْ يَخْرُجُوا فَإِذَا خَمَدَتْ رَجَعُوا فِيهَا وَفِيهَا رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَا انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا رواه البخاري ১৩৮৬
“যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।” (বুখারী)
যিনাহ/ব্যভিচার ৭ টি জিনিস দিয়ে হয়:
১। মন- এখান থেকেই ব্যভিচারের উৎপত্তি। যে ব্যক্তি মনের বিরুদ্ধে চলতে পারে সেই পূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হয়।
২। চোখ- চোখের ব্যভিচার সবচেয়ে বড় ব্যভিচার কারোর প্রতি অসাবধানতাবশত প্রথমবার চোখ পড়লে পাপ হয়না কিন্তু ২য় বার তাকালে বা ১ম বার দৃষ্টির পর সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে না নিলে যিনা তথা ব্যভিচার হয়।
৩। জিহ্বা- জিহ্বা দ্বারা ব্যভিচার হয় যখন একজন নর/নারী আরেকজন নর/নারীর সাথে কথা বলে রক্ত ও স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়া।
৪। কান- এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন নর/নারীর কথা শুনা হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলে সমাস্যা নেই।
৫। হাত- এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন কোন বিবাহিত/ অবিবাহিত নর/নারীর শরীরের যেকোন অংশ স্পর্শ বা ধরা হয়।
৬। পা- এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন পায়ে হেটে কাঙ্খিত কোন নর বা নারীর কাছে যাওয়া হয়।
৭। গুপ্ত অঙ্গ- এটা দিয়েই শুধু ব্যভিচার হয় মানুষ তা ভাবলেও এটার স্থান সবার পরে। কেননা উপরে ৬ টিকে দমন করতে পারলেই এই অঙ্গ হেফাযত করা যাবে।

বৃদ্ধ যিনাকারীর শাস্তি:
বাধ্যর্কে উপনীত কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তবে তার শাস্তি আরো কঠোর ও নির্মম হবে। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
وَعنْ أبي هريرة رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: ثَلاثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمْ اللهُ يوْمَ الْقِيَامةِ، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلا ينْظُرُ إلَيْهِمْ، ولَهُمْ عذَابٌ أليمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، ومَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ رواهُ مسلم. ১৮৫২
“আল্লাহ তিন ধরণের মানুষের সাথে কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের প্রতি তাকাবেনও না। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি; তারা হল, বৃদ্ধ যিনাকারী, মিথ্যাবাদী বাদশাহ ও অহংকারী ফকীর।” মুসলিম: ১৮৫২)

ব্যভিচারিণীর উপার্জন:
সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপার্জন হল- ব্যভিচারিণীর ঐ উপার্জন যা সে ব্যভিচারের মাধ্যমে অর্থাৎ দেহ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করেছে। এ সম্পর্কে রাফে বিন খাদিজ (রা) হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
عن رافع بن خديج رضي الله عنه قال رسول الله: صلى الله عليه وسلم شَرُّ الكَسْبِ مَهْرُ البَغِيِّ، وثَمَنُ الكَلْبِ، وكَسْبُ الحَجّامِ. صحيح مسلم ١٥٦٨
“কুকুর বিক্রিত পয়সা নিকৃষ্ট এবং যিনাকারিণীর উপার্জনও নিকৃষ্ট সিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে উপার্জনও নিকৃষ্ট।” (মুসলিম: ১৫৬৮)
অতএব যারা দেহ ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করে তাদের এ নিকৃষ্ট উপার্জন সম্পূর্ণভাবে হারাম, এ উপার্জন তাদের কোন উপকারে আসে না; এ অর্থ দিয়ে কোন কিছু করা হলে তা নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়।
সমলিঙ্গ ব্যভিচার বা সমকামিতা:
যৌন সম্ভোগের এ নিকৃষ্ট পন্থা আল্লাহর নবী লুত আলাইহিস্ সালামের কওম উদ্ভাবন করে। আল্লাহ বলেন:
أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنكَرَ ۖ فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَن قَالُوا ائْتِنَا بِعَذَابِ اللَّـهِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ ﴿٢٩﴾
“লুত তার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করিনি, তোমরা নারীদের পরিবর্তে পুরুষদের কাছে যেয়ে যৌন বাসনা পুরণ কর; তোমরা রাহাজানী কর এবং নিজেদের মজলিসে গর্হিত কর্ম কর? জওয়াবে তার সম্প্রদায় কেবল এ কথাই বলল, তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আল্লাহর আযাব আন।” (সূরা আল-আনকাবুত: ২৯)
তাদের এ নিকৃষ্ট ও জঘণ্য কাজের কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে চার প্রকার আযাব অবতীর্ণের মাধ্যমে ধ্বংস করেদেন; সে চার প্রকার আযাব ছিল-
১। তাদের দৃষ্টি শক্তি বিলুপ্ত করে দেন,
২। তাদের জনপদ উচু-নিচু করেদেন,
৩। তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর নিক্ষেপ করেন এবং
৪। তাদের উপর বিকট শব্দ প্রেরণ করেন।
ইসলামী শরীয়াতে এ গর্হিত কাজ সম্পূর্ণ হারাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এ অপকর্মে অভ্যস্ত ব্যক্তি যকৃতের প্রদাহে  Hepatitis আক্রান্ত হয়। এ ধরণের অপকর্মের শাস্তি কোন কোন ইমামের মতে যিনার শাস্তির অনুরূপ, আবার কারো কারো মতে উক্ত দু ব্যক্তির চোখ শীশা গালিয়ে অন্ধ করে দিতে হবে।
হস্তমৈথুন বা স্বমেহন:
কোন প্রকার যৌন সঙ্গী ছাড়া নিজে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বীর্যস্খলন করাকে স্বমেহন বা হস্তমৈথুন বলা হয়। বর্তমান বিশ্বে স্বমেহনের জন্য বিভিন্ন উপকরণও পাওয়া যায়; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেক্স পুতুল (Sex Doll), , ইলেক্ট্রিক লিঙ্গ (Electric Penis) ইত্যাদি। এ সব পদ্ধতিতে যৌন তৃপ্তি লাভ করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শ্রেণীর মানুষদেরকে লা’নত দিয়েছেন।

জতুষ্পদ প্রাণীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম:
জতুষ্পদ জন্তুর সাথে যৌন সঙ্গম বর্তমান বিশ্বে বহুল প্রচলিত এক বেহায়াপনা। তথাকথিত সভ্যতার নামধারীরা এ বিকৃত রুচির কর্মে রত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শ্রেণীর মানুষের উপর আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপ দিয়েছেন। হাদীসের দাবী অনুযায়ী কোন কুকুর যদি কোন পাত্রে মুখ দেয় তবে ঐ পাত্রটি সাতবার ধুতে হবে এবং কমপক্ষে একবার মাটি দিয়ে ধুতে হবে। অথচ কত নিকৃষ্ট ও বিকৃত রুচির অধিকারী হলে মানুষ সেই কুকুরের সাথে দিনযাপন করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা যায়, চতুষ্পদ জন্তুর সাথে সহবাস মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভাইরাসের আমদানী করে যা প্রাণঘাতি রোগের সৃষ্টি করে।
যিনার প্রতি উদ্বুদ্ধকারী বিষয়সমূহের হুকুম:
চলমান বিশ্বে ব্যভিচার ও অশ্লীলতার সমস্ত পথ উন্মুক্ত হয়ে আছে। বস্তুবাদী মানুষ যারা মনে করে এই দুনিয়াই শেষ, যতটুকু পার এখানেই আনন্দ উপভোগ করে যাও তারা মানুষকে বিপদগামী করার জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবন, নারী স্বাধীনতার নামে বেহায়াপনার প্রচলনের মাধ্যমে মানব সমাজকে বিশেষত: যুবক শ্রেণীকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা নিত্যনতুন পথ ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করছে। অশ্লীল সিনেমা, নোংরা পত্র-পত্রিকা, পর্ণ ভিডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইড এসবের কারণে মানুষ যিনার প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়ছে। ইসলাম কোন বিষয় হারাম করলে উক্ত হারাম বিষয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী আনুষঙ্গিক বিষয়ও হারাম করে। অতএব আল্লাহর হারামকৃত যিনার প্রতি উদ্বুদ্ধকারী সব কিছুই হারাম। যদি কেউ যিনা ও উচ্ছৃঙ্খল যৌন আচরণে উদ্বুদ্ধকারী বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে ইসলামী বিধান মতে সে অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধী বিবেচিত হবে।

লজ্জাস্থানের হেফাজত জান্নাতের গ্যারান্টি:
যারা অবৈধ যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থেকে নিজেদের লজ্জাস্থানকে অবৈধ ব্যবহার থেকে হেফাজত করে তাদের জন্য পরকালে জান্নাতের গ্যারান্টি রয়েছে। মহান আল্লাহ সফলকাম মুমিনদের পরিচয় প্রদান করতে যেয়ে বলেন:
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ﴿٥﴾ إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ ﴿٦﴾ فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ ﴿٧﴾ وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ ﴿٨﴾ وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ ﴿٩﴾ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ ﴿١٠﴾ الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿١١﴾
“আর তারা নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহকে সংযত রাখে, তাদের স্ত্রী ও তারা যাদের মালিক হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ছাড়া এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এ ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমা লংঘণকারী। এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্র“তি রক্ষাকারী; আর যারা নিজেদের নামাযে যতœবান থাকে। তারাই হবে উত্তরাধিকারী; উত্তরাধিকারী হবে ফেরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে।” (সূরা আল-মুমিন: ৫-১১)
সাহাল বিন সায়াদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
عن سهل بن سعد الساعدي رضي الله عنه : مَن يَضْمَن لي ما بيْنَ لَحْيَيْهِ وما بيْنَ رِجْلَيْهِ أضْمَن له الجَنَّةَ. صحيح البخاري ٦٤٧٤
“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (জিহবার) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের) নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চায়তা দিব।” (বুখারী ৬৪৭৪)
মহান আল্লাহ আমাদের যুবক ভাই ও যুবতী বোনদেরসহ সকল বয়সের নারী ও পুরুষকে এই হীন কাজ থেকে হেফাযত করুন। আমীন

Related Post