শালীনতা, ভদ্রতা ও বিনম্র আচরণ হচ্ছে মু’মিনের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তাই যার মধ্যে ভদ্রতা ও শালীনতার মহত্ গুণটি যতটা পূর্ণাঙ্গরূপে বিকাশ লাভ করবে সে ততটা পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হিসেবে পরিগণিত হবে। শুধু তাই নয়, এই শালীনতা, ভদ্রতা ও বিনম্র আচরণের মধ্য দিয়েই একজন মানুষের প্রকৃত মানবতার পরিচয় ঘটে।
বর্তমান সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে অশান্তি-অরাজকতা ও বিশৃংখলা-বিপর্যয় বিরাজ করছে, এর একমাত্র কারণ হচ্ছে ইসলাম আমাদের যে সহিষ্ণুতা, শিষ্ট-সুন্দর ও বিনম্র আচরণ শিক্ষা দিয়ে থাকে, আমরা সেই শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের সঙ্গে অতি তুচ্ছ কারণেই আমরা উত্তেজিত ও উগ্র হয়ে উঠি, এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্য, কায়কারবার, লেনদেন ইত্যাদি পারস্পরিক বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের এই উত্তেজনা প্রকাশ পেয়ে যায়, আর এই উত্তেজনা ও উগ্র মনোভাব থেকেই সৃষ্টি হয় রেষারেষি।
আমরা আমাদের এই রুক্ষ-কঠিন আচরণকেই নিজেদের বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচায়ক বলে মনে করি। কিন্তু হাদিসে রাসুলুুল্লাহ (সা.) নিজের ক্রোধকেই দমন করার শক্তিকেই বীরত্ব বলে আখ্যায়িত করেন।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাউকে ধরাশায়ী করে ফেলে দেয়া বাহাদুরি নয়, বরং প্রকৃত বাহাদুর হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়। (বুখারি শরীফ)।
উন্নত মহত্ চরিত্রের অধিকারী সেই ব্যক্তিই হতে পারবে, যার স্বভাব-চরিত্রে কোমলতা ও মাধুর্যতা থাকবে। কারণ বিনম্রতা ও কোমলতার মাধুর্যই মানুষের স্বভাব চরিত্রকে সৌন্দর্যবিমণ্ডিত করে।রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আয়েশা (রা.)- কে নসিহত করে বলেন, তুমি নম্রতা অবলম্বন কর এবং কঠোরতা, অশালীনতা থেকে বিরত থাক।নম্রতা যে কোনো বিষয়কে সুসজ্জিত করে এবং যে বিষয়ে নম্রতা না থাকে সে বিষয়টি অসুন্দর ও ত্রুটিযুক্ত হয়। পরস্পরের মাঝে কঠোরতা, রুক্ষতা মানুষের চরিত্রকে কলুষিত করে এবং আল্লাহ তায়ালাও কঠোরতাকে পছন্দ করেন না।