আল কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কাউকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহ্বান জানানোকে দাওয়াত বলা হয়। এরই আরেক নাম তাবলিগ। দাওয়াত বা তাবলিগ কেবল মুসলমানদের জন্য একটি ধর্মীয় দায়িত্বই নয়, বরং ইসলামের প্রথম ও প্রধান মৌলিক কর্মসূচির অন্যতম। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ব্যাপক ও গতিশীল একটি ইসলামী আন্দোলনের নাম তাবলিগ, যা ইসলামী চিন্তা-চেতনায় সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত একটি নীরব বিপ্লব।
‘কে ওই শোনালো মোরে আজানের ধ্বনি/ মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর/ আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী।’ ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ সালাতের দিকে এসো/ ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ কল্যাণের দিকে এসো। এটাই চিরন্তন ইসলামী দাওয়াতের মূল সুর। সমগ্র বিশ্বের লাখ লাখ মসজিদে, মিনারে মিনারে তাওহিদ ও রিসালাতের বলিষ্ঠ উচ্চারণই ইসলামী দাওয়াতের প্রকৃত পরিচয়।
আল কুরআনে দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতি বাতলে দেয়া হয়েছে। দাওয়াত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর দিকে অর্থাৎ দ্বীন তথা কুরআন ও সুন্নাহর দিকে। নবীগণের দাওয়াতের মূল বিষয়ই ছিল তাওহিদের বিশ্বাস এবং শিরক থেকে মুক্তি। যারা দায়ি তাদেরকে আল্লাহর কথা, আল্লাহর রাসূলের কথা তাবলিগ করতে হবে। বানোয়াট, আজগুবি কথাবার্তা, বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয় এমন হাদিস দিয়ে কাউকে দাওয়াত দেয়ার কোনো অবকাশ নেই। যিনি দায়ি তার কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান থাকতে হবে, যা বলবেন সহি দলিলভিত্তিক বলবেন। দায়ির অন্তরে থাকবে আল্লাহর একিন এবং অন্তর থেকে মাখলুকের সব একিনকে দূর করতে হবে। আল্লাহ মানুষকে দুটো এখতিয়ার দিয়েছেন। সে চাইলে নিজের মর্জিমতো চলতে পারে, আবার চাইলে আল্লাহর মর্জিমতোও চলতে পারে। যে বা যিনি দাওয়াত দেবেন তিনি আল্লাহর মর্জি রক্ষা করতে গিয়ে নিজের মার্জিকে বিসর্জন দিতে হবে, তাহলেই তার জীবন সফল।
দায়ির দু’টি গুণ না থাকলে তার ডাকে মানুষ সাড়া দেবে না। আল্লাহপাক বলেন, ‘দায়ির দুই গুণের একটি হলো সে অপরকে যে পথে চলতে উপদেশ দেবে সে নিজে সেই পথে চলবে। আর দ্বিতীয়টি হলো দাওয়াত দিতে হবে মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে (নিজের জান, মাল ও সময় খরচ করে)।’ তবেই শ্রোতারা দিলের কানে, আমলের নিয়তে, অপর ভাইকে পৌঁছানোর নিয়তে, শোনার হক আদায়ের নিয়তে এবং দাওয়াতের নিয়তে বয়ান শুনবেন। আমাদের মনে রাখা উচিত দাওয়াত যে-সে কাজ নয়, এটি সব নবীর কাজ এবং একটি বড় ইবাদত। ফলে দাওয়াতি কাজ মনগড়া বা যেন-তেনভাবে করার সুযোগ নেই। নবী করিম সা:সহ সমস্ত নবী-রাসূল এবং সব সাহাবি সারা জীবন ইসলামের দাওয়াতের কাজে ব্যয় করেছেন। এ জন্য তারা নিঃস্বার্থভাবে জান, মাল ও সময়ের কোরবানি করেছেন। তারা নির্ভয়ে সাহসী উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, ‘আমার নামাজ, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্য।’ (সূরা আনয়াম-১৬২)।
ইসলামী দাওয়াতের মূল কথা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করা। আল্লাহর চূড়ান্ত মনোনীত নীতিনির্দেশনা হলো আল কুরআন এবং রাসূল সা:-এর জীবন হচ্ছে এর বাস্তব রূপ। পবিত্র কুরআনের জীবনপদ্ধতি ও রাসূল সা:-এর মহৎ আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে তাবলিগ। ইসলাম কারো লেবাস, মনগড়া আইনকানুন সৃষ্টি বা কোনো সন্ত্রাসের নাম নয়। কুরআন-ভিত্তিক ইসলামী বিধানই হচ্ছে ইসলাম। যাতে মানুষের জন্য রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত জীবনব্যবস্থা, যা মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য কল্যাণকর। আধুনিক বিজ্ঞানের জনক আইনস্টাইন বহু গবেষণা করে বলেছেন, ‘ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া এবং বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।’ আল্লাহর মনোনীত চির আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম ইসলাম। গুরু নানক বলেছেন, বেদ ও পুরাণের যুগ চলে গেছে। এখন এ দুনিয়াকে পরিচালিত করতে পবিত্র কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ। The Historical Role of Islam গ্রন্থে এম এন রায় বলেছেন, মহান ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলাম শ্রেষ্ঠ। ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. গিবন তার ‘রোমান সাম্রাজ্যের পতন’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘বস্তুতপক্ষে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আনীত শরিয়ত সর্বলোকের জন্য প্রযোজ্য।’ ইসলাম কোনো অঞ্চল, দেশ বা কোনো গোষ্ঠীবিশেষের ধর্ম নয়; তা সমগ্র বিশ্বের সব যুগের সব মানুষের ধর্ম এবং একমাত্র অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। ইসলামে কিংবদন্তি, কুসংস্কার বা গোঁড়াামির ঠাঁই নেই। আল কুরআনকে আঁকড়ে ধরেই নবী করিম সা: খোদার প্রেমে মগ্ন থেকেও সর্বকালের সেরা রাষ্ট্রনায়ক হতে পেরেছিলেন। সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছিলেন তেমনি প্রয়োজনে তলোয়ার হাতে নিয়ে বীরত্বের সাথে যুদ্ধও করেছিলেন। আবু জেহেল, আবু লাহাবদের হাতে ক্ষমতার দণ্ড ছেড়ে দেননি। তিনি ছিলেন ন্যায়বিচারক, আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ পিতা, আদর্শ সমাজ সংস্কারক, একজন আদর্শ মানবতাবাদী এবং আদর্শ ধর্মপ্রচারক। তিনি হাজারো কষ্ট সয়ে পথভ্রষ্ট মানবজাতিকে সত্য, ন্যায় ও সরল পথের দাওয়াত দিয়েছেন। নিজে সৎ কর্ম করে, কল্যাণ করে, অন্যকে সৎ কর্ম ও কল্যাণের দাওয়াত দিয়েছেন। অসুস্থ, অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজে না খেয়ে অন্যকে খেতে দিয়েছেন। কৃষিকাজে উৎসাহিত করেছেন, আবার সুদূর চীন দেশে গিয়ে জ্ঞান অর্জনের কথাও বলেছেন। অথচ আমরা মুবাল্লিগ, দায়ি, কুরআন প্রেমিক, নবীর সুন্নাহর ধারক-বাহক ও প্রেমিক; কিন্তু দেশের দুর্দিনে জনগণের মঙ্গলের কথা ভাবি না, প্রিয় নবীর অপমানের কার্টুন দেখে, চলচ্চিত্রে নবীজী সা:-এর চরিত্র হননের ছবি দেখে-শুনেও মুখ বন্ধ করে সয়ে যাই; পবিত্র আল কুরআন পোড়ানোর ঘটনায়ও অনেকে কষ্ট পাই না। আমরা মানুষকে ঈমানের দাওয়াত দিই, কিন্তু কোনো অন্যায় দেখলে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করি না, হাত দিয়ে প্রতিবাদ করি না। অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে কোনো রকমে ঈমান রক্ষা করি। এ তো পরিপূর্ণ ঈমানের শিক্ষা নয়। ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো।’ (সূরা বাকারা-২০৮)। ঈমান ও আমলে সালেহ (সৎ কাজ, মানুষের কল্যাণ) হলো তাবলিগের মূলমন্ত্র। মানুষের দুনিয়াবি কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি হলো মূল লক্ষ্য। আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি পথচলার রোডম্যাপ আল কুরআন। ঈমানদারের কাজ হলো এ রোডম্যাপের সবটুকুর সঠিক অনুসরণ করা। ইসলামে কেবল ঈমানই ফরজ নয়, সাথে সাথে ফরজ হচ্ছে জ্ঞানার্জন। সেই ফরজ জ্ঞান হতে হবে কুরআনি রোডম্যাপের ন্যায়নীতি, সত্য সুন্দর ও নবীর সুন্নাহর আদর্শিক জ্ঞান। মায়া-মমতা, দান-অনুগ্রহ, ইহসান, সাহায্য-সহানুভূতি, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা এগুলো বাক্সবন্দী করে রাখার নাম দাওয়াত নয়, ইসলামও নয়, মৃত্যুপরবর্তী জীবনেও তা ব্যবহার করার বিষয় নয়। ইহকালেই দুনিয়াবাসীর প্রতি এসব গুণ ব্যবহার করে মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হতে হবে। সফল দায়ি হতে হবে। মানুষের প্রতি একটু ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ প্রদর্শন, একটু সৎ কর্মের ব্যবস্থা করে দেয়া, জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান করা এবং দ্বীনের প্রতি আগ্রহী করে তোলার নামই তাবলিগ। তাবলিগ বিশ্বব্যাপী ঈমানের সব ক’টি শাখা (প্রায় সত্তরটির ওপরে শাখা) ছড়িয়ে দেয়ার আন্দোলন। মানুষে মানুষে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের এক বিস্ময়কর নজির সৃষ্টির আন্দোলন। নিজের ও অন্যের সংশোধন এবং মুক্তির আন্দোলন। দাওয়াতি কাজ মুমিন বান্দাকে মাখলুকের গোলামি থেকে মুক্তি দিয়ে খালেকের বান্দায় পরিণত করে।’ আর সে ব্যক্তির কথার চেয়ে অধিক ভালো কথা কার হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে এবং বলে আমি মুসলমান।’ (সূরা হা-মিম সিজদাহ-৩৩)। কেবল আনুষ্ঠানিক ইবাদতই নেক আমল নয়, নিজের দেশ ও বিশ্বকে নিয়েও ভাবতে হবে, মানুষের সুখ-দুঃখ, সঙ্কটের কথা ভাবতে হবে, ইসলামী জাহানের পরিস্থিতি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কেবল দোজখ থেকে বাঁচার জন্য, বেহেশত পাওয়ার আশায় তাবলিগ করলে দোজাহানের মুক্তির ফয়সালা হবে না। এতে বরং বুদ্ধি দুর্বল, ধর্ম সঙ্কীর্ণ ও মানবতা বিনষ্ট হবে। ‘যারা ঈমান এনেছে ও হিজরত করেছে এবং আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় মুজাহাদা (মেহনত) করেছে, আর যারা নিজেদের নিকট আশ্রয় দান করেছে। এরাই হলো ঈমানের পূর্ণ হক আদায়কারী। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও অতি সম্মানজনক রিজিক।’ (সূরা আনফাল-৭৪)।
রাসূল সা: বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘আমার পর আর কোনো নবী আসবে না। অতএব আমার একটি বাণী হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’ (বুখারি)। ‘এখানে (আরাফাতে) উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে আমার এ কথাগুলো পৌঁছে দেয়।’ (বুখারি)। নবীজী সা:-এর ওফাতের পর থেকে পবিত্র দায়িত্ব খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে তাবেইন, সলফে সালেহিন ও আলেমগণ পালন করছেন। এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ১৯৪১ সালে ভারতের দিল্লির মেওয়াতে মাওলানা ইলিয়াস রহ: দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু করেন। যার সম্প্রসারিত রূপ আজকের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা।
আল্লাহ পাক তাবলিগের কাজটি ব্যক্তিগতভাবে সমষ্টিগতভাবে সবার ওপর ফরজ করে দিয়েছেন। ‘যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো সাক্ষ্য বর্তমান রয়েছে, সে যদি তা গোপন রাখে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?’ (সূরা বাকারা-১৪০)। ‘তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকতেই হবে, যারা নেকি ও মঙ্গলের দিকে ডাকবে। ভালো ও সৎ কাজের নির্দেশ দেবে এবং পাপ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ কাজ করবে তারাই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করবে।’ (সূরা আল ইমরান-১০৪)।
শুধু কবর ও আখেরাতের ভাবনায় বিভোর হয়ে ‘আখেরাতের শস্যক্ষেত্র’ দুনিয়াকে ভুলে দুনিয়াতে শান্তির ইসলাম, কল্যাণের ইসলাম কায়েম করা সম্ভব নয়। নির্যাতিত অবহেলিত, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ, সমাজ, দেশ ও বিশ্ব যদি আমাদের ভাবনার বিষয় না হয়, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি যদি আমাদের তাবলিগ জামাতের দাওয়াত পৌঁছানোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম না হয়; তাহলে দুনিয়াবি শয়তান ও দাজ্জালকেও পরাভূত করা কখনো সম্ভব হবে না। মানবজাতিকে সৎ পথ প্রদর্শন তো দূরের কথা, বরং দিন দিন আমরা অজ্ঞতা, অদক্ষতা ও দরিদ্রতার অতলগহ্বরে হারিয়ে যাবো। মুসলমানের সংখ্যা বাড়লেও সবল ঈমানদারের সংখ্যা বাড়বে না। কুরআন ও সুন্নাহর প্রকৃত আলো পৌঁছবে না বিশ্বের ঘরে ঘরে।
দাওয়াত বা তাবলিগ বিষয়টি অনেক ব্যাপক বিষয়। আমরা এটাকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে বেঁধে যেন হালকা না করি। তাবলিগ এক নিরলস সংগ্রাম ও সাধনার নাম। আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, যদি তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ওপরের আমল ঠিক রাখি এবং ভেতরের এখলাস সহি রাখি, তাহলে দাওয়াতি কাজের ভূমিকা পালন করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। যেমন একজন রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই খোদাভীরু, সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ হবেন, কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের শান্তি ও কল্যাণের ব্যবস্থা করবেন, আর এটাই তার জন্য উত্তম তাবলিগ। একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজের ঈমান ও আকিদা সহি রেখে, নিজ কর্মস্থলে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে দেশ ও জাতির সেবা করবেন। অন্যকেও আদর্শ সেবক হতে উদ্বুদ্ধ করবেন। সেটাই হবে তার জন্য দাওয়াত ও তাবলিগের অন্যতম কাজ। এভাবে ব্যবসায়ী ব্যবসায় ক্ষেত্রে সততা ও ন্যায়নীতি বজায় রেখে ব্যবসায় করলে, কৃষক, শ্রমকি, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি সবাই মানবসেবার নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সঠিক দায়িত্ব পালন করে নিজে বাঁচলে ও অন্যকে সেবা দিলে দাওয়াতের কাজ হয়ে যায়। শিক্ষকেরা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সৎ ও কল্যাণের শিক্ষা দিলে, ছাত্রছাত্রীরা নিজেকে, সৃষ্টিকে এবং স্রষ্টাকে জানার এবং অন্যকে জানানোর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করে নবীর আদর্শের সৈনিক হলে, মুয়াজ্জিন আজান দিলে, ইমাম তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে দ্বীনের বাণী মানুষের মর্মমূলে পৌঁছার জন্য সহজ-সরল ভাষায় খুতবা দিলে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ইবাদতে ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করে দিলে, অলসতা ও হতাশা দূর করে জ্ঞানী ও কর্মঠ হতে এবং আমলে সালেহ করার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করলে তাবলিগের আসল কাজটি হয়ে যায়। শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক, যেকোনো কর্মজীবী, রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রপ্রধান যদি হয় ঈমানদার ও সৎ, খোদাভীরু, উত্তম চরিত্রের অধিকারী তাহলে সমাজ হবে পবিত্র, সুশৃঙ্খল, সমৃদ্ধ ও শান্তিময়।