ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা

ঈমানের শাখাসমূহ

ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে

হযরত আবু হুরাইরহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা হল, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়া দেওয়া এবং লজ্জা ঈমানের একটি (বিশেষ) শাখা। (মুসলিম)

ঈমানের পরিচয়ের মধ্যে বলা হয়েছে কতকগুলো বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং আমলে পরিণত করার সমষ্টি হল ঈমান। এ থেকে বুঝা গেল- ঈমানের কিছু বিষয় দিলের দ্বারা সম্পন্ন হয়, কিছু জবানের দ্বারা এবং কিছু হাত, পা ইত্যাদি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা। এ সব গুলোকে ঈমানের শাখা বলা হয়।

আলেম-উলামাগণ হাদীসের ইঙ্গিতের মাধ্যমে গবেষণা করে কুরআন হাদীস থেকে ঈমানের ৭৭টি শাখা নির্ণয় করেছেন এবং  এগুলোকে  এভাবে ভাগ করেছেন:

ক). দিলের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৩০টি।

খ). জবানের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৭টি।

গ). বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পন্ন হয় ৪০টি।

আমলের সুবিধার জন্য সবগুলো সংক্ষেপে নিম্নে দেওয়া হল:

ক). দিলের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ –৩০টি।

১- আল্লাহর উপর ঈমান আনা।

২-আল্লাহ চিরন্তন ও চিরস্থায়ী, তিনি ব্যতীত সবকিছু তাঁর মাখলুক-একথা বিশ্বাস করা।   ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা।

৩-   আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনা।

৪-আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বরগণের প্রতি ঈমান আনা।

৫-তাকদীরের উপর ঈমান আনা।

৬-কেআমতের উপর ঈমান আনা।

৭-বেহেশতের উপর ঈমান আনা।

৮-দোযখের উপর ঈমান আনা।

৯-আল্লাহর সাথে মহব্বত রাখা।

১০-কারও সাথে আল্লাহর জন্যই মহব্বত রাখা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারও সাথে দুশমনী রাখা।

১১-রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-এর সাথে মহব্বত রাখা।

১২-এখলাস ( অর্থাৎ, সবকিছু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা।

১৩-তওবা অর্থাৎ, কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তা পরিত্যাগ করা এবং ভবিষ্যতে তা না করার জন্য সংকল্প করা।

১৪-আল্লাহকে ভয় করা।

১৫-আল্লাহর রহমতের আশা রাখা।

১৬-আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।

১৭-হায়া বা লজ্জা।

১৮-শোকর করা।

১৯-অঙ্গীকার রক্ষা করা।

২০-সবর।

২১-বিনয়, নম্রতা ও বড়দের প্রতি সম্মানবোধ।

২২-স্নেহ-মমতা ও জীবের প্রতি দয়া।

২৩-তাকদীরের উপর রাজী থাকা।

২৪-তাওয়াক্কুল করা।

২৫-নিজেকে বড় ও ভাল মনে না করা।

২৬-হিংসা বিদ্বেষ না রাখা।

২৭-রাগ না করা।

২৮-কারও অহিত চিন্তা না করা,

২৯-কারও প্রতি কুধারণা না করা।

৩০- দুনিয়ার মহব্বত ত্যাগ করা।

খ). জবানের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ৭টি।

৩১-কালেমা তাইয়্যেবা পড়া।

৩২-কুরআনে কারীম তেলাওয়াত করা।

৩৩-ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা।

৩৪- ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া।

৩৫. দুআ বা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা।

৩৬-আল্লাহর যিকির।

৩৭- বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাযত করা।

গ). বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়ঃ৪০টি।

৩৮ -পবিত্রতা হাসিল করা।

৩৯ – নামাযের পাবন্দি করা।

৪০ -সদকা, যাকাত, ফিতরা, দান-খয়রাত, মেহমানদারী ইত্যাদি।

৪১ – রোযা।

৪২ – হজ্ব।

৪৩ – এতেকাফ ( শবে ক্বদর তালাশ করা এর অন্তর্ভুক্ত )

৪৪ – হিজরত করা অর্থাৎ, দ্বীন ও ঈমান রক্ষার্থে দেশ-বাড়ি ত্যাগ করা।

৪৫ – মান্নত পুরা করা।

৪৬ – কসম করলে তা পুরা করা আর কসম ভঙ্গ করলে তার কাফফারা দেয়া।

৪৭ – কোন কাফফারা থাকলে তা আদায় করা।

৪৮ -ছতর ঢেকে রাখা।

৪৯-কুরবানী করা।

৫০ -জানাযা ও যাবতীয় আনুষাঙ্গিক কাজের ব্যবস্থা করা।

৫১ – ঋণ পরিশোধ করা।

৫২ -লেন-দেন ও কাজ-কারবার সততার সাথে এবং জায়েয তরীকা মোতাবেক করা।

৫৩ -সত্য সাক্ষ্য দান করা। সত্য জানলে তা গোপন না করা।

৫৪ – বিবাহের দ্বারা হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।

৫৫ -পরিবার-পরিজনের হক আদায় এবং চাকরদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।

৫৬ – মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।

৫৭ -ছেলে-মেয়েদের লালন পালন ও সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা।

৫৮ – আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা।

৫৯ – উপর ওয়ালার অনুগত হওয়া, যেমন চাকরের প্রভুভক্ত হওয়া।

৬০ – ন্যায় ও নিরপেক্ষভাবে বিচার করা।

৬১ -মুসলমানদের জামাতের সাথে থাকা ও হক্কানী জামাতের সহযোগিতা করা,তাদের পথ ছেড়ে    অন্যপথে না চলা।

৬২ -শরীয়ত বিরোধী না হলে শাসনকর্তাদের অনুসরণ করা।

৬৩ -লোকদের মধ্যে কোন ঝগড়া বিবাদ হলে তা মিটিয়ে দেয়া।

৬৪ – সৎ কাজে সাহায্য করা।

৬৫-সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে বাঁধা প্রদান করা।

৬৬-জেহাদ করা, সীমান্ত রক্ষা করাও এর অন্তর্ভুক্ত।

৬৭-শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি কায়েম করা।

৬৮-আমানত আদায় করা, গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় করা এর অন্তর্ভুক্ত।

৬৯- অভাবগ্রস্তকে কর্জ দেয়া।

৭৭-     প্রতিবেশীর হক আদায় করা ও তাদেরকে সম্মান করা।

৭১-লোকদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।

৭২-সালামের জবাব দেয়া ও সালাম প্রদান করা।

৭৩-যে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাকে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা।

৭৪-পরের ক্ষতি না করা, কাউকে কোনরূপ কষ্ট না দেয়া।

৭৫-অর্থের সদ্ব্যবহার করা।

৭৬-খেল-তামাশা, ক্রীড়া-কৌতুক ও নাচ-গান থেকে বিরত থাকা।

৭৭-রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা।

আল্লাহ আমাদেরকে ঈমানের উপর চলার তৌফিক দান করুক ।

Related Post