(১) ‘মীক্বাত’ থেকে ইহরাম বেঁধে সরবে ‘তালবিয়াহ’ পড়তে পড়তে কা‘বা গৃহে পৌঁছবেন।
(২) ‘হাজারে আসওয়াদ’ হ’তে ত্বাওয়াফ শুরু করে সেখানেই সাত ত্বাওয়াফ সমাপ্ত করবেন এবং ‘রুকনে ইয়ামানী’ ও ‘হাজারে আসওয়াদ’-এর মধ্যে ‘রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসনাহ, ওয়াকিনা- আযা-বান্না-র, পড়বেন।
(৩) ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে অথবা হারামের যে কোন স্থানে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবেন। অতঃপর যমযমের পানি পান করবেন।
(৪) এরপর প্রথমে ‘ছাফা’ পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে মুখ করে দু’হাত উঠিয়ে কমপক্ষে তিন বার ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু… ওয়াহদাহু, আনঁজাযা ওয়া‘দাহ, ওয়ানাসারা আবদাহ ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াহদাহু’ দো‘আটি পড়ে ‘মারওয়া’র দিকে ‘সাঈ’ শুরু করবেন। অল্প দূর গিয়ে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যে কিছুটা দ্রুত চলবেন। তবে মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। ‘ছাফা’ হ’তে ‘মারওয়া’ পর্যন্ত একবার ‘সাঈ’ ধরা হবে। এইভাবে সপ্তম বারে ‘মারওয়ায়’ গিয়ে ‘সাঈ’ শেষ হবে।
(৫) ‘সাঈ’ শেষে মাথা মুন্ডন করবেন অথবা সব চুল ছোট করবেন। মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ সামান্য চুল ছাঁটবেন।
(৬) ‘হজ্জে তামাত্তু’ সম্পাদনকারী প্রথমে ওমরাহ শেষ করে হালাল হয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। কিন্তু ‘হজ্জে ইফরাদ’ ও ‘ক্বিরান’ সম্পাদনকারীগণ ইহরাম অবস্থায় থেকে যাবেন।
(৭) ৮ই যুলহিজ্জার দিন মক্কায় স্বীয় আবাসস্থল হ’তে গোসল করে ও খোশবু লাগিয়ে হজ্জের ইহরাম বেঁধে ‘লাববায়েক…’ বলতে বলতে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন।
(৮) মিনায় পৌঁছে সেখানে যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের ছালাত পৃথক পৃথকভাবে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে ‘ক্বছর’ সহ আদায় করবেন। দুই ওয়াক্তের ছালাত একত্রে জমা করা চলবে না।
(৯) ৯ তারিখে সূর্যোদয়ের পর ধীরস্থিরভাবে ‘তালবিয়া’ ও ‘তাকবীর’ বলতে বলতে আরাফার ময়দানের দিকে যাত্রা করবেন।
অতঃপর সেখানে গিয়ে অবস্থান করে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দো‘আ ও যিকর-আযকার অধিক মাত্রায় করবেন এবং হজ্জের খুৎবা শ্রবণ শেষে সূর্য পশ্চিমে ঢলার পরে যোহর ও আছরের ছালাত যোহরের আউয়াল ওয়াক্তে ক্বছর সহ একত্রে ‘জমা তাক্বদীম’ করে পড়বেন।
অতঃপর সূর্যাস্তের পর আরাফা হ’তে মুযদালেফার দিকে রওয়ানা হবেন এবং সেখানে পৌঁছে এক আযান ও দুই ইক্বামতে মাগরিবের তিন রাক‘আত ও এশার দু’রাক‘আত ছালাত ক্বছর সহ এশার আউয়াল ওয়াক্তে ‘জমা তাখীর’ করে আদায় করবেন। অতঃপর ঘুমিয়ে যাবেন।
অতঃপর ঘুম থেকে উঠে আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের ছালাত আদায় করে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ-দরূদ ও যিকর-আযকারে লিপ্ত হবেন। অতঃপর ফর্সা হ’লে সূর্যোদয়ের আগেই মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন। এ সময় মুযদালিফা হ’তে ৭টি কংকর সংগ্রহ করে সাথে নিবেন।
(১০) মিনায় পৌঁছে সূর্যোদয়ের পর ‘জামরাতুল আক্বাবা’য় অর্থাৎ বড় জামরায় গিয়ে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন ও প্রতিবারে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। কঙ্কর মারা হ’লে কুরবানী করবেন। অতঃপর মাথা মুন্ডন করবেন অথবা ছোট করে সমস্ত মাথার চুল ছাঁটবেন।
(১১) এরপর ইহরাম খুলে ‘প্রাথমিক হালাল’ হয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। প্রাথমিক হালাল হওয়ার পর স্ত্রী মিলন ব্যতীত বাকী সব কাজ সাধারণভাবে করা যাবে।
(১২) অতঃপর মক্কায় গিয়ে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ সেরে তামাত্তু হাজীগণ ছাফা-মারওয়া সাঈ করবেন। কিন্তু ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় পৌঁছে সাঈসহ ‘ত্বাওয়াফে কুদূম’ করে থাকলে শেষে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ্’র পর আর সাঈ করবেন না।
(১৩) কা‘বা থেকে সেদিনই মিনায় ফিরে আসবেন ও সেখানে রাতে বিশ্রাম নিবেন। অতঃপর ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে প্রতিদিন অপরাহ্নে তিন জামরায় ৩´৭=২১টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।
(১৪) ১১ তারিখ দুপুরে সূর্য ঢলার পর ২১টি কঙ্কর সাথে নিয়ে প্রথমে ছোট জামরায় ৭টি, তারপর মধ্য জামরায় ৭টি ও সবশেষে বড় জামরায় (জামরাতুল আক্বাবাহ) ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। ১ম ও ২য় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে একটু দূরে নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে প্রাণ খুলে আল্লাহর নিকটে দো‘আ করবেন।
(১৫) ১২ তারিখে কঙ্কর মারার পর সূর্যাস্তের পূর্বেই যদি কেউ মক্কায় ফিরতে চান,তবে ফিরতে পারেন। কিন্তু যদি ১২ তারিখে রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই সূর্য মিনায় ডুবে যায়, তাহ’লে তাকে সেখানে অবস্থান করে ১৩ তারিখে কঙ্কর মেরে আসতে হবে। বাধ্যগত শারঈ ওযর থাকলে প্রথম দু’দিনের স্থলে একদিনে কঙ্কর মেরে মক্কায় ফেরা যাবে।
(১৬) সবশেষে মক্কায় ফিরে ‘ত্বাওয়াফে বিদা’ বা বিদায়ী ত্বাওয়াফ করতে হবে। তবে ঋতুবতী ও নেফাস ওয়ালী মেয়েদের জন্য এটা মাফ। ‘ত্বাওয়াফে বিদা‘র মাধ্যমে হজ্জ সমাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫; ‘বিদায় হজ্জের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ)।