ইসলামে হালাল রুজির গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহপাক সূরা বাকারার ১৮৮নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থসম্পদ অন্যায়ভাবে খেও না এবং মানুষের ধনসম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উেকাচ দিও না’। নবী (সা.) বলেছেন, যে দেহে হারাম খাদ্যে উত্পন্ন মাংস রয়েছে তা জান্নাতে যাবে না। নবী (সা.) আরও বলেছেন, হালাল জীবিকা সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ (তাবরানি ও বায়হাকি) ইবাদাত কবুলের জন্য হালাল খাদ্য অন্যতম শর্ত।
পরের সম্পদ অবৈধ ভক্ষণের মতো ফুফু, বোন, কন্যা বা অন্য দুর্বল ওয়ারিশদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার পরিণাম সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিশকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন (ইবনু মাজাহ)। হালাল রিজিকের বিষয়ে অতীতে মুসলিম মনীষীরা অনেক সতর্ক ছিলেন, যা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। কথিত আছে আবদুল কাদের জিলানি (র.) ক্ষুধার জ্বালায় নদীতে ভাসমান একটি আপেল ভক্ষণ করেন। পরে মালিকের খোঁজ করে দায় মুক্তি চাইলে মালিক ১২ বছর তার চাকর হিসেবে নিযুক্তির শর্ত করলে তিনি তা মেনে নেন। কেননা দুনিয়ার ১২ বছর আখেরাতের তুলনায় খুব অল্প সময়।
ইমাম আবু হানিফা (র.) কাপড়ের ব্যবসা করতেন। একবার বান্ডিলের একটি কাপড়ে একটু ত্রুটি থাকায় তিনি কর্মচারীকে বললেন, ত্রুটি দেখিয়ে এর মূল্য কম নিও। পাইকাররা এলে কর্মচারী তা ভুলে গিয়ে সব বান্ডিল একই দামে বিক্রি করে দিল। ইমাম আজম বিষয়টি জেনে কর্মচারীকে বললেন, অন্যান্য বান্ডিলের টাকা এ বান্ডিলের টাকাসহ একত্র করে ফেলেছ সুতরাং পুরো টাকাটি গ্রহণ করা সমীচীন হবে না, এ বলে তিনি ওই সময়ে বিক্রির সব টাকা দান করে দিলেন। নবী (সা.) বলেছেন, বৈধ উপার্জনের সঙ্গে অবৈধ অল্প উপার্জনও যদি একত্রিত হয় ফলে পুরো উপার্জন অবৈধ গণ্য হবে। দেশে সুদ, ঘুষ, পরের সম্পদ আত্মসাত্, খাদ্যে ভেজাল, চুরি-ছিনতাই ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্পদের নেশায় মানুষ পাগল হয়ে উঠছে। আমরা একটু ভাবছি না এর পরিণাম কত ভয়াবহ। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ছেড়ে অবশ্যই আমাদের প্রস্থান করতে হবে। সম্পদ তখন আমাদের কোনো কাজেই আসবে না। ওয়ারিশরা সম্পদ ভাগ করে ভোগ করবে, কিন্তু অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে গেলে তার জন্য শাস্তি আমাকে ভোগ করতে হবে। তাই আমরা সাবধান হই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাত্ করলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিই, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হলে তাকে ফেরত দিই, ব্যক্তিকে পাওয়া না গেলে তার নামে দান করে দেই। আল্লাহর কাছে খাঁটিভাবে তওবা করি এবং হালাল রুজির বরকতের জন্য প্রার্থনা করি। সেই সঙ্গে নিজে সাবধান হই। সভা, সেমিনার ইত্যাদিতে এ বিষয়ে অন্যকে সতর্ক করি, তাহলে সমাজে শান্তি বিরাজ করবে।