ঈমানদার হওয়ার সাধনা

imagesCAB3U99Z

আল্লাহ তায়ালা জিন ও ইনসান সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাঁর নির্দেশাবলিপূর্ণভাবে মানার জন্য। আর সুখ ও সফলতা রেখেছেন তাঁর আনুগত্য পালনকারীদের জন্য। আরতাঁর ইবাদতকে করেছেন দুর্গের মতো, যে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ ও নাজাতপ্রাপ্ত। এতেশুধু মঙ্গলই মঙ্গল, যার মধ্যে কোনো অকল্যাণ নেই ।পৃথিবতে সব মঙ্গল ও কল্যাণ মূলত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর আনুগত্যেই নিহিত।ইবনুল কায়্যিম রহ: বলেন, ‘পৃথিবীর সব অকল্যাণ নিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, এর মূলে রয়েছেরাসূল সা:-এর অমান্যতা এবং তাঁর অবাধ্যতা।’অন্য দিকে পৃথিবীর সব কল্যাণ তাঁরআনুগত্যে। এমনিভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনাসহ যাবতীয় সব সমস্যার মূলে রয়েছে রাসূলেরঅমান্যতা। তাই আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের তাঁর এবং রাসূল সা:-এর আনুগত্য করার নির্দেশদিয়েছেন। আর এর মাধ্যমেই মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হৃদয় সজীব হয়েছে।আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারেরা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্যকরো, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহ্বান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন’ (সূরা আলআনফাল : ২৪)। আর যে ব্যক্তি তার রবের আনুগত্যে অগ্রসর হবে, সে তত বেশি হেদায়েত ওকল্যাণপ্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘যারা সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদেরসৎপথপ্রাপ্তি আরো বেড়ে যায় এবং আল্লাহ তাদের তাকওয়া দান করেন।’ (সূরা মুহাম্মদ১৭)শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়্যাহ রহ: বলেন, ‘মানুষ রাসূল সা:-এর যত বেশি আনুগত্যশীলহবে, তত বেশি আল্লাহর একাত্ববাদ ও ধর্মীয় একনিষ্ঠতায় অগ্রগামী হবে। আর রাসূল সা:-এরযত বেশি অবাধ্য হবে ধর্মীয় দিক থেকে ততই পিছিয়ে পড়বে।’
যে আল্লাহ তায়ালার ডাকেসাড়া দেবে তার দোয়া কবুল হবে। তিনি এরশাদ করেন, ‘তিনি মোমিন ও সৎকর্মীদের দোয়াশোনেন’ (সূরা আশ-শূরা : ২৬); অর্থাৎ তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন। অন্য আয়াতেরভাষ্যানুযায়ী তিনি তাদের ভালোবাসেন, রহমত দান করেন এবং জান্নাত দানকরেন ।

পূর্ববর্তী রাসূলেরা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে ছিলেন অগ্রগামী। হজরত ইবরাহিম আ:-কেল্য করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অনুগত হও!’‘তিনি বলল, আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম’ (সূরা আল বাকারা : ১৩১)। আপন সন্তানকে কুরবানি করার জন্য যখন নির্দেশিত হলেন, সাথেসাথে সন্তুষ্টচিত্তে রাজি হলেন। অন্য দিকে সন্তানও আল্লাহ তায়ালার হুকুমকে সম্মানজানিয়ে বললেন, ‘আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকেসবরকারী পাবেন’ (সূরা আস-সাফফাত : ১০২)।মুসা আ: আপন প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনেছিলেন অগ্রগামী। তিনি বলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে এলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও’ (সূরা তোয়াহা৮৪)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবীকে বললেন, ‘উঠুন, সতর্ক করুন’ (সূরা আল মুদ্দাচ্ছির : ২)।এ নির্দেশ পেয়ে তিনি মানুষকে তাওহিদের দিকে ডাকতে আরম্ভ করেছেন। তাঁকে নির্দেশ দেয়াহয়েছে, ‘রাতে দণ্ডায়মান হন কিছু অংশ বাদ দিয়ে’ (সূরা আল মুজাম্মিল : ২)। এনির্দেশের পর তিনি নামাজ পড়তে পড়তে পা ফুলিয়ে ফেলেছেন।
জিন সম্প্রদায় একে অপরকেউদ্বুদ্ধ করেছে আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য। এরশাদ হচ্ছে, ‘হে আমাদেরসম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর কথা মান্য করো এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাসস্থাপন করো। তিনি তোমাদের গুনাহ মার্জনা করবেন’ (সূরা আল আহকাফ :৩১)

এ ছিল আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের কিছু নমুনা। অন্য দিকে মোমিনরা নবীদের আনুগত্যে ছিলঅগ্রগামী। ঈসা আ: যখন বললেন, ‘কারা আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? সঙ্গী-সাথীরা বললেন, আমরা রয়েছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী’ (সূরা আলে ইমরান :৫২)।
সাহাবায়ে কেরামরা রাসূল সা:-এর আনুগত্যে ছিলেন অগ্রগামী। হৃদয় উজাড় করেরাসূলকে ভালোবাসতেন। কোনো প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা ব্যতিরেকে রাসূল সা:-এর সব নির্দেশমেনে নিতেন। তাই আল্লাহর কাছে তারা হয়েছেন অনেক মর্যাদাবান। আল্লাহ তায়ালা তাদেরপ্রতি হয়েছেন সন্তুষ্ট।

কিবলা পরিবর্তনের ব্যাপারে রাসূল সা:-এর নির্দেশ এলে সাহাবারা নামাজরত অবস্থায়ইবায়তুল মুকাদ্দাস থেকে কাবা শরিফের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতে শুরু করেছেন। পরবর্তীনামাজের জন্য অপো করেননি।
দান-সদকার ব্যাপারে যখন সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন,তখনতারা তাদের উৎকৃষ্ট সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করেছেন। ওমর রা: তাঁর সম্পদের অর্ধেকদান করে দিয়েছেন। আর আবু বক্কর সিদ্দিক রা: তাঁর সব সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করেদিয়েছেন। আর যখন আয়াত নাজিল হলো, ‘কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদিতোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না করো’ (সূরা আলে ইমরান : ৯২)। তখন আবু তালহারা: রাসূল সা:-এর কাছে গিয়ে বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ ‘বাইরুহা’আমার কাছে সবচেয়েপ্রিয় বস্তু, আর তা আমি আল্লাহর জন্য দান করছি”(বোখারী)

কিশোর সাহাবি আবদুল্লাহ বিন ওমর রা.:-কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ কতই না ভালোছেলে যদি সে রাতে তাহাজ্জুদ পড়ত।’এর পর থেকে সেই কিশোর সাহাবি আবদুল্লাহ রাতে খুবঅল্প ঘুমাতেন’ (বুখারি ও মুসলিম)।
সাহাবায়ে কেরাম সেসব কথা ও কাজ থেকে বিরতথেকেছেন, যা রাসূল সা: নিষেধ করেছেন। জাহেলি যুগে তারা বাপ-দাদাদের নামে কসম কাটত, কিন্তু রাসূল সা: যখন বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বাপ-দাদাদের নামে কসম কাটতে নিষেধকরেছেন’, ওমর রা: বলেন, ‘আল্লাহর কসম এ কথা শোনার পর কখনো এ ধরনের কসম করিনি, এমনকিঅন্যের উক্তি হিসেবেও এ ধরনের শব্দ উল্লেখ করিনি’ (মুসলিম)। খায়বারের যুদ্ধেগৃহপালিত গাধা রান্না করার পর যখন রাসূল সা:-এর আহ্বানকারী এসে বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁররাসূল তোমাদের গৃহপালিত গাধা খেতে নিষেধ করেছেন; কেননা তা গুনাহ ও শয়তানের কাজ।’আনাস রা: বলেন, ‘প্রচুর ুধা থাকার পরও সবাই পাকানো হাঁড়ি-পাতিল থেকে মাংস ঢেলেদিয়েছেন’( বোখারীও মুসলিম )

ইসলামের প্রাথমিক সময়ে মদ বৈধ ছিল, কিন্তু যখন হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, সবাই মদএমনকি মদের পাত্র ঘরের বাইরে ছুড়ে ফেলেছেন। যেদিন এ ঘোষণা আসে সেই দিন মদিনারঅলিগলি ভেসে গিয়েছিল।
সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সা:-এর বলা ব্যতীতই পোশাক-পরিচ্ছদেওতাঁর অনুসরণ করতেন। রাসূল সা: স্বর্ণের আংটি বানিয়ে পরেছিলেন। মানুষ তা দেখেস্বর্ণের আংটি বানিয়ে পরা আরম্ভ করল। অতঃপর এক দিন রাসূল সা: মিম্বরে বসে বললেন, ‘আমি এই আংটি ব্যবহার করতাম’। তা তিনি ফেলে দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর কসম আমি কখনো তাআর ব্যবহার করব না। তা দেখে মানুষ তাদের আংটি ফেলতে শুরু করল’ (বুখারি ও মুসলিম)।রাসূল সা: যখন অছিয়ত লিখে রাখার কথা বলেছেন, তার পর থেকে ইবনে ওমর বলেন, আমি এর পরথেকে সবসময় অছিয়ত লিখে রাখতাম। রাসূল সা:-এর নির্দেশের কারণে তারা ভাষা ব্যবহারেওসতর্ক থাকতেন। জাবের ইবনে সুলাইম বলেন, রাসূল সা: যখন আমাকে বলেছেন, ‘কাউকে গালিদিও না, এর পর থেকে আমি কাউকে গালি দেয়নি’( আহমদ)

Related Post