Main Menu

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

Originally posted 2013-06-28 17:24:40.

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

ইসলাম গ্রহণ

৭ম পর্ব

পরম পরিতৃপ্তি সহকারে বাসায় ফিরে আসি এবং ‘বেদে-পুরাণে গোমাংস’ নামক বইখানা নিজের উদ্যোগেই ছাপানোর ব্যবস্থা করি। ছাপানোর কাজ কিছুটা এগিয়েছে এমন সময় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।

এদিকে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার অব্যবহিত পরেই জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থাকে ভেঙ্গে দেয়া হয়।  ফলে একমাত্র ‘আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম’ (অর্থাৎ এই বই খানা) ছাড়া আমার প্রদত্ত বাকি কয়খানা বই উক্ত সংস্থা কর্তৃক প্রকাশ করা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।

এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই আমাকে চাকুরী থেক অবসর গ্রহণ করতে হয়।  সামর্থ এবং প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্য কোন চাকুরী গ্রহণ বা উপার্জনের অন্য কোন উপায় অবলম্বনের পরিবর্তে বাকি দিন ক’টা ইসলাম প্রচারের কাজে কাটিয়ে দিব বল আমি সঙ্কল্প গ্রহণ করি।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমার কথাগুলোকে সাথে করে কবরে নিয়ে যাওয়াকে আমি শুধু দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচায়কই নয়-অপরাধজনক বলেও মনে করি।  দেশবাসী বিশেষ করে আগামী দিনের নাগরিকদের জন্যে আমার কথাগুলোকে আমি রেখে যেতে চাই।

উল্লেখ্য যে, সেই কারণে অবসর গ্রহণের পরদিন থেকেই দিন-রাত খেটে লেখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।  দিনে দিনে পাপ দুর্নীতির প্রসার সীমাহীন হয়ে চলেছে এমতাবস্থায় চুপ করে থাকার অর্থই হলো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া এবং অবাধে চলতে সাহায্য করা।  কোন বিবেকবান মানুষের পক্ষেই তা করা সম্ভব নয়।

তাই, পাপ-দুর্নীতি প্রসারের কারণ এবং পাপ-দুর্নীতি সম্পর্কে ইসলাম যে সংজ্ঞা দিয়েছে আর তাকে সুনিয়ন্ত্রিত করণের জন্যে যে পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেছে, প্রথমেই তা জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করি এবং দিনরাত পরিশ্রম করার ফলে ‘ইতিহাস কথা কয়’ নামক বইখানা লিখা সম্ভব হয়।  ‘বিদায়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে, হয়তো ছাপানোর অবসর ঘটবে না। ” একথা চিন্তা করে বহু টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েও বইখানা দ্রুততার সাথে ছাপানোর ব্যবস্থা করি।  বর্তমানে তা বাজারে চালু রয়েছে।

অতঃপর ‘ফারুক-চরিত, ‘কুরআন ও বিজ্ঞান, ‘নামাযের দার্শনিক তত্ত্ব’, বিশ্ব ধর্ম-গ্রন্হে ‘কৃষি ও কৃষক’ ‘বদ-এর ফাঁদে বাংলার চাষী’ নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচখানা বই লেখার কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।  কিন্তু অর্থাভাবের দরুন ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না।  কোন দিনই হবে কিনা সে কথা আমি জানি না।  আমি শুধু এ টুকুই জানি যে,ছাপানো হোক আর না হোক মৃত্যুর পূর্বে আমার কথাগুলোকে লিখে রেখে যেতে হবে।

এ কাজে কৃষিতথ্য কেন্দ্রের প্রধান তথ্য-কর্মকর্তা শ্রদ্ধেয় মোস্তফা আলী সাহেব, উপপ্রধান জনাব কলিমুদ্দিন সাহেব, বন সম্পর্কীয় তথ্য কর্মকর্তা দেওয়ান আবদুল হামিদ সাহেব প্রমুখ কতিপয় সহকর্মী আমাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন, অন্যথায় বইগুলো লেখা হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব হতো না, সে জন্যে তাঁদের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

তাছাড়া আমার অবসর গ্রহণ উপলক্ষে কৃষিতথ্য কেন্দ্রের সহকর্মীবৃন্দকে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে প্রীতি-উপহার স্বরূপ অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে একটি মূল্যবান কলম আমার হাতে তুলে দিয়ে তার সদ্ব্যবহার করতে বলেছিলেন।

এতদ্বারা তাঁরা শুধু আমার প্রতি তাঁদের অন্তরের প্রীতি এবং শুভেচ্ছাই জ্ঞাপন করেননি-লেখার কাজে যথেষ্ট উৎসাহও যুগিয়েছেন আর সাথে সাথে কঠিন এক দায়িত্বের বোঝাও আমার উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন। অতএব বইগুলো লেখার কাজে তাঁদের অবদানও কোন অংশেই কম বা অনুল্লেখযোগ্য নয়।

কথায় কথায় আলোচনা দীর্ঘায়িত করে হয়তো ইতিমধ্যেই অনেকের ধৈর্যচ্যুতির কারণ ঘটিয়েছি।  কিন্তু এখনও একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।  অতএব একটু ধৈর্য ধারণের জন্যে সদয় পাঠকবর্গের উদ্দেশ্যে বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করছি।

অনুসন্ধিৎসা যে মানুষের স্বাভাবিক বৃত্তিসমূহের অন্যতম সেকথা প্রায় সকলেরই জানা রয়েছে।  আর এই বৃত্তিই যে অজানাকে জানার জন্যে মানব-মনে প্রেরণা এবং উৎসাহ সৃষ্টি করে সে কথা কারো অজানা নয়।

অজানাকে জানার এই স্বাভাবিক প্রেরণা থেকেই প্রায় প্রতিটি মানুষ আমাকে প্রশ্ন করে থাকেন যে আপনি কেন ইসলাম গ্রহণ করেছেন?

উল্লেখ্য যে, শুধু মুসলমানগণই নন-অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও অনেকে এই প্রশ্ন করে থাকেন।  খুব সম্ভব আমার নামের শেষে ‘ভট্টাচার্য’ পদবীটি থাকাই প্রশ্নকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।  তাছাড়া আজও আমি এই পদবীটি ব্যবহার করে চলেছি বলে অনেক সময় আমাকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীনও হতে হয়।

অতএব পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ভট্টাচার্য পদবীটিকে এখনও কেন ব্যবহার করে চলেছি সে সম্পর্কে প্রথমে আভাস দেওয়া যাচ্ছে।

একথা খুলে বলার প্রয়োজন হয় না যে, পিতা-মাতা, ভ্রাতা-ভগ্নী, আত্মীয়-স্বজন সহায়-সম্পদ প্রভৃতির চেয়ে পদবী বড় নয়।  যারা এসব কিছুকে বা এসব কিছুর মায়া-মোহকে অবলীলাক্রমে পরিত্যাগ করতে ধর্মান্তর গ্রহণ করে, পদবীর মোহ তাদের থাকে না, থাকা উচিৎ নয়- সম্ভবও নয়।

এমতাবস্থায় নামের শেষে পৈত্রিক পদবী জুড়ে দিয়ে বাহাদুরী প্রকাশ বা নিজেদের পার্থক্য বা বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরার কোন প্রশ্ন তাদের  মনে জাগতে পারে না।  যদি কারো হয় তবে বুঝতে হবে যে, সে ভণ্ড এবং তার ইসলাম গ্রহণ ষোল আনাই ব্যর্থ হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে ‘তবে এ পদবী রাখা হলো কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে অনিবার্য কারণেই অতীতের প্রসঙ্গ টেনে আনতে হয়।

মুসলমানদের সৌভাগ্যের দিনে যারা তাদের কাছে নিজেদের কন্যা ভগ্নী, ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রভৃতিকে বিয়ে দিয়ে গর্ভবোধ করতো, ‘দিল্লীশ্বরো বা জগদীশ্বরোবা’ অর্থাৎ ‘দিল্লীর ঈশ্বর (বাদশাহ-সম্রাট) ইহ-জগতের ঈশ্বর” এ কথা বলে তোষামোদ করতে দ্বিধাবোধ করত না, তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে যারা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতো, এক কথায় মুসলমানদের অনুগ্রহ পেলে যারা জীবনকে ধন্য ও সার্থক বোধ করতো, সেই তারা-ই সুযোগ বুঝে জঘন্য ষড়যন্ত্র, হত্যা, লুন্ঠন প্রভৃতি চালিয়ে মুসলমানদেরকে দুর্ভাগ্যের করুণ শিকার, অন্য কথায় বাদশাহী থেকে কড়ার কাঙ্গালে পরিণত করেও তৃপ্ত হতে পারল না।

এই দেশের লাঞ্ছনা পীড়িত এবং দারিদ্র জর্জরিত “ছোট জাতের” মানুষেরাই যে মুসলমান হয়েছে অর্থাৎ মুসলমনেরা যে  আসলেই দরিদ্র এবং ছোট জাতের মানুষ, কোন শিক্ষিত বা ভদ্র সন্তান যে মুসলমান হতে পারে না, সেকথা প্রমাণ করার জন্যে তারা আদা-জল খেয়ে লেগে গেল।  তাদের শিক্ষিত ভদ্র এবং সুধীসজ্জনদের অনেকে ‘একহাতে কুরআন এবং অন্য হাতে তরবারি’ নিয়ে ইসলাম প্রচার করা হয়েছে, এমন জঘন্য মিথ্যা এবং অবান্তর কথা ছাড়াও মুসলমানদের সম্পর্কে জঘন্য কল্প-কাহিনী রচনা ও ইতিহাস, সাহিত্য, উপন্যাস, নাটক-নাটিকা প্রভৃতির মাধ্যমে ব্যাপক এবং কার্যকরীভাবে সেগুলোর রটনায় লেগে গেলেন।  প্রচার মাহাত্ম্যে দিনে দিনে সেই জঘন্য মিথ্যা এবং অবাস্তব কল্প-কাহিনীগুলোই সত্যের রূপ ধারণ করত পরবর্তী  বংশধরদের মন-মগজেই স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসলো।

“লাঞ্ছনা-পীড়িত, দারিদ্র-জর্জরিত এবং অজ্ঞ অশিক্ষিত ছোটজাতের মানুষেরাই ইসলাম গ্রহণ করেছে” এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপনের অর্থাৎ ইসলামের সত্যতা যাচাই করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এবং বিভিন্ন ধর্মের উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবংশোদ্ভুত, মান-সম্মান ও বিত্ত বৈভবের অধিকারী মানুষেরাও যে ব্যাপক হারে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং করে চলেছে সে কথা জাজ্জ্বল্যমান রূপে প্রমাণ করার জন্যে শুধু আমি নই, আরো অনেকে নামের শেষে পিতৃ-পৈতামহিক পদবী ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

 ১ম পর্ব  এখানে   ২য় পর্ব এখানে ৩য় পর্ব  ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব

Related Post