আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

তৃতীয় পর্ব

ভূমিকা

বিগত ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বইখানার প্রথম প্রকাশ ঘটে এবং অতি অল্প দিনের মধ্যেই সবগুলো সংখ্যা নিঃশেষিত হয়ে যায়।  ফলে সেই থেকে যাঁরা পত্র লিখে বা আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বইখানা পাওয়ার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন তাঁদেরকে সন্তুষ্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছেনা।  অনেকে বইখানা পুনমুদ্রণের দাবীও জানিয়ে আসছেন।

সময়ের পরিবর্তনে অবস্থারও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে।  সুতরাং পুর্নমুদ্রণ অপেক্ষা পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত আকারে বইখানার দ্বিতীয় সংস্করণ বের করাই যুক্তিযুক্ত বলে বিবেচিত হয়ে আসছিল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

 এখানে বলা অবশ্যক যে,বইখানা লেখার সময়ে আমাদের পরম স্নেহভাজন কিশোর-তরুণ এবং যুবক সমপ্রদায়ের কথাই আমার মনে বিশেষভাবে জাগরুক ছিল। এই জাগরুক থাকার অন্যতম প্রধান কারণ এই ছিল যে,শুধু দেশ এবং জাতির নয়- এদেশের ইসলামের ভবিষ্যত ও তাদের উপর একান্তরূপে নির্ভরশীল।

 অথচ সেদিন আমি অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করেছিলাম যে,তাদের বেশ কিছু সংখ্যকের মধ্যে ইসলাম বিরোধী মানসিকতা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে।  অবশ্য সে জন্য অন্য অনেকের মত আমি তাদেরকে এককভাবে দায়ী বলে মনে করিনি-করতে পারিনি। কেননা,বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ এবং বিদেশী ব্রাহ্মণ্যবাদ এ উভয়ের মিলিত ষড়যন্ত্র কিভাবে হত্যা-লুণ্ঠন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে এ ভারতবর্ষে সুদীর্ঘকাল রাজত্বকারী মুসলমানদেরকে দ্বীন-হীন কাঙ্গালে পরিণত করেও সন্তুষ্ট হতে পরেছিল না-তাদের ধর্ম,সংস্কৃতি,সভ্যতা এবং সুনাম-সুসশকেও নির্মমভাবে পদদলিত করেছিল,বই পুস্তুকে পাঠ করা ছাড়া আমাদের মতো সে অবস্থার নির্মম শিকারে পরিণত হয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের দুর্ভাগ্য তাদের হয়নি।

 এমতাবস্থায় জন্মের পর থেকে যাদেরকে তারা মুসলমান বলে জেনে আসছেন আসলে সেই মুসলমানগণ সুদীর্ঘ দু’শত বছরব্যাপী জঘন্য ষড়যন্ত্রের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট, নিপীড়িত এবং সর্বস্বহারা মানুষ্যাকৃতি জীব মাত্র।  সুতরাং অতি নগণ্য সংখ্যক সম্মানকজনক ব্যতিক্রম বাদে এসব মুসলমানকে দেখে ইসলাম সমপর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকে অন্যায় বা অস্বাভাবিক বলা এবং এই বিভ্রান্তির দায়িত্বকে এককভাবে আমাদের পরম স্নেহভাজন তরুণ ও যুব সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়া যেতে পারে না।

 অনুরূপভাবে, জন্মসূত্রে যে ইসলামের সাথে তাঁরা পরিচিত হয়ে আসছেন সে ইসলামও সে একই ষড়যন্ত্র, ত্রিত্ববাদ, বহুত্ববাদ, এলাহীধর্ম প্রভৃতির জঘণ্য আক্রমণ এবং একদিকে সুদীর্ঘকাল যাবত প্রয়োজনীয় যত্ন অনুশীলনের প্রচণ্ড অভাব আর অন্য দিকে নানা ধরনের কিম্ভুতকিমারকার এক নবতর সংস্করণ।

 এখানে বিশেষভাবে বলা আবশ্যক যে, সত্যের নিজস্ব মহিমা এবং ইসলামের সত্যিকার পরিচয় জানেন এমন ব্যক্তিদের অনবদ্য ত্যাগ ও সাধনার বলেই ইসলাম আজও গোটা পৃথিবীতে একটি জীবন্ত জীবন-ব্যবস্থারূপে বিরাজমান।  অন্যথায় পৃথিবীর অন্যান্য অনেক ধর্মাবলম্বীদের মত ধর্মের অত্যাচার থেকে আত্মরক্ষার জন্যে মুসলমানদেকেও ‘ধর্ম নিরপেক্ষতার’ রক্ষা কবচ ধারণ করতে হতো।  ফলে ইসলামকেও অন্যান্য অনেক ধর্মের মতই একটি প্রাণহীন অনুষ্ঠান সর্বস্বে পরিণত হয়ে উপাসনালয়ের চার দেওয়ালের মধ্যে আত্মগোপন করতে হতো।  সুতরাং ইসলাম, মুসলমান এবং বিভাগ পূর্ব ভারতে এ উভয়ের অবস্থা- এই তিনের সম্পর্কে আমাদের স্নেহ-প্রতীম কিশোর-তরুণ এবং যুব-সমপ্রদায়ের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়াকে কোনক্রমেই অস্বাভাবিক বলা যেতে পারে না।

 এমতাবস্থায় বিশেষ করে ইসলাম এবং মুসলমান সম্পর্কেই যাদের মনে বিভ্রান্তি বিদ্যমান, স্বাভাবিক কারণেই কারো মুসলমান থাকা বা কোন ব্যক্তি কর্তৃক ইসলাম গ্রহণ-এ উভয়ের কোনটার তাৎপর্যই অন্তত গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করা তাদের পক্ষে সম্ভবই হতে পারে না।

 অনুরূপভাবে বিভাগ-পূর্ব ভারতের ইসলাম এবং মুসলমানগণ কি নিদারুণ অবস্থায় নিপতিত হয়েছিল অন্তত মোটামুটি সেকথা না জানা পর্যন্ত এই উপমহাদেশের ইসলাম এবং মুসলমানদের বর্তমান দুরবস্থার আসল কারণ সম্যকভাবে অনুধাবন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হতে পারে না।

 সেই কারণেই আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কতিপয় ঘটনাকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে লিখিত ‘স্মৃতির পাতা থেকে শীর্ষক’ নিবন্ধটি এই সংস্কৃকরণের প্রথমেই সন্নিবেশিত করা হলো।

 অনেক পরবর্তী সময়ে লিখিত বলে আমার উদ্দিষ্ট কিশোর-তরুণ এবং যুব সম্প্রদায়ের অনেকের কাছে এই সন্নিবেশ কিছুটা বেখাপ্পা বোধ হতে পারে।  তবু ইসলাম গ্রহণের কারণে বিবাগ-পূর্ব কালে আমাকে কিভাবে লাঞ্ছিত এবং বিপদগ্রস্ত করা হয়েছিল তার কিছুটা বর্ণনা রয়েছে বলেই নিবন্ধটিকে এখানে জুড়ে দেয়া হলো।  আশা করি, এ থেকে তদানীন্তন কালে অর্থাৎ বিভাগ-পূর্ব ভারতে ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থান কত অসহায় এবং কত বিপজ্জনক ছিল তার কিছুটা আভাস তারা পাবেন।

 তথাপি প্রশ্ন উঠতে পারে যে,যেহেতু পুস্তকটির নাম দেয়া হয়েছে ‘আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম’ অতএব  শুরু থেকেই ইসলাম গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ একে একে তুলে ধরাই সঙ্গত এবং স্বাভাবিক ছিল।  আর সেই কারণসমূহ জানার আগ্রহ নিয়েই সেকথা বুঝতে পারাও মোটেই কঠিন ছিল না।  তা ছাড়া এই কারণসমূহ যে ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ঘটেছিল সে সম্পর্কে দ্বিমতের কোন অবকাশ থাকতে পারে না।  এমতাবস্থায় সেই কারণসমূহকে ঝুলিয়ে রেখে ঘোড়ার আগে গাড়ী জুড়ে দেয়ার মতো ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী  ঘটনা বা দুর্ঘটনা দিয়ে পুস্তক শুরু করার কি তাৎপর্য থাকতে পারে?  (চলবে)

  ১ম পর্ব  এখানে   ২য় পর্ব এখানে

Related Post