Originally posted 2013-02-12 11:40:04.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ (ছাঃ)এর উ্পর, তাঁর পরিবার পরিজন ও তাঁর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকারীদের প্রতি।
অতঃপর হাদীছে এসেছে: ছাবেত হতে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন নবী (ছাঃ) এর পরিবার অভাবগ্রস্হ হতেন তখন তিনি পরিবারের লোকদেরকে ডেকে বলতেন: হে আমার পরিবার! ছালাত আদায় কর, ছালাত আদায় কর। ইবনু মুফলেহ বলেন: হাদীছটি মুরসাল তবে এর সনদ ভাল। আর এর স্পক্ষে চন্দ্র-সূর্য অধ্যায়ে একটি হাদীছ সাক্ষ্য হিসেবে আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ
তোমরা ধৈর্য এবং ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর অবশ্য উহা ভারী তবে আল্লাহ ভীরুদের জন্য ভারী নয়। (সূরা বাক্বারা:৪৫) তিনি আরো বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
হে ঈমানদার গণ! তোমরা ধৈর্য এবং ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন (সূরা বাক্বারা:১৫৩)
আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে ইহকাল ও পরকালের সমস্ত কাজের ক্ষেত্রে ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য তলব করার নির্দেশ দিয়েছেন। উহা দ্বারা সাহায্য তলব করার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন জিনিসকে তিনি খাছ করেন নি। আল্লাহ তাআলা বলেন: (وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ) ছালাতের পূর্বে ধৈর্যের কথা এজন্য এসেছে যে, ঈমান, ছালাত প্রভৃতি সমস্ত ফরয ও নফল ইবাদত ধৈর্যের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ
আর খাশেয়ীন হল তারা যাদের অন্তর আল্লাহর সম্মানে ও ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে ——–
নবী (ছাঃ) যখন কোন বি্পদা্পদের সম্মুখীন হতেন, অথবা চিন্তিত হতেন তখন তিনি ছালাত আদায় করতেন। কারণ এই ছালাত সহযোগিতাকারী সমস্ত বি্পদা্পদ অ্পসারণে। তবে ইহা সেই স্রষ্টার সাহায্যেই হয়ে থাকে যার দিকে ধাবিত হওয়া ও যার নৈকট্য অজর্ন করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি তার মাওলার দিকে ধাবিত হবে তিনি তাকে বেষ্টন করবেন এবং তার জন্য তিনি যথেষ্ট হয়ে যাবেন। কারণ সে তার মাওলা ব্যতীত সমস্ত বিষয় হতে বিমূখ হয়েছে। এবং আল্লাহ তাআলাকেই একমাত্র উদ্দেশ্য করেছে। আর আল্লাহ তাআলা কোন বান্দাকে নিরাশ করেন না যে একমাত্র তাঁকেই কামনা করে। নবী (ছাঃ) এর পরিবারে কোন প্রকার প্রতিকূল পরিস্হিতি আসলে তিনি তাদেরকে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং এই আয়াতটি তেলাওয়াত করতেনঃ
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ
অর্থঃ তুমি তোমার পরিবারকে ছালাত আদায়ের নিদের্শ দাও এবং এর উ্পর ধৈর্য ধারণ কর। আমি তোমার কাছে কোন প্রকার রুজী চাচ্ছি না আমিই তোমাকে রুজী দিয়ে থাকি। (সূরা তা-হা-ঃ১৩২) অর্থাৎ যদি তুমি ছালাত আদায় কর তবে তোমার নিকট ধারণাতীত ভাবে রিযিক আসবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
যে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার পথ করে দিবেন এবং তাকে এমন পন্থায় রিযিক দিবেন যার সে ধারণাই করতে পারবে না। (সূরা ত্বালাকঃ ২-৩) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُون مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِين
আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার এবাদতের জন্য। আমি তাদের নিকট কোন রুজী চাই না আর না চাই যে তারা আমাকে খাদ্য দান করুক। নিশ্চয় আল্লাহ হলেন মহান রিজিক দাতা শক্তিশালী ও শক্তির আধার। (সূরা যা-রিয়াতঃ ৫৬-৫৮)
হাদীছে ক্বুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
(يا ابن آدم تفرغ لعبادتي أملأ صدرك غنى وأسد فقرك، وإن لم تفعل ملأت صدرك شغلا ولم أسد فقرك)
অর্থঃ হে আদমের সন্তান! আমার ইবাদতে মন ঢেলে দাও তবে আমি তোমার বক্ষ সম্পদ দ্বারা ্পরি্পূর্ণ করে দিব এবং
তোমার দারিদ্র দূর করে দিব। আর যদি তুমি তা না কর তবে তোমার অন্তরকে ব্যস্ততা দ্বারা ্পরি্পূর্ণ কেের দিব এবং তোমার অভাব দূর করব না। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ )
ছালাত হল ভয়-ভীতি দূরীকরণের মাধ্যম। সুতরাং ছালাত আদায়কারী কখনও ভীত হবে না, বখীল হবে না, কৃ্পণ হবে না, অধৈর্য হবে না, সংকীর্ণ অন্তরের হবে না, লোভী এবং কম ধৈর্যের হবে না।
إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا إِلَّا الْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ.
অর্থঃ মানুষকে ভীতু করে সৃষ্টি করার হয়েছে। তাকে মন্দ স্পর্শ করলে সে ভীত হয়ে যায়, আর ভাল ষ্পর্শ করলে বখীল হয়ে যায়, তবে ছালাত আদায়কারীরা এর ব্যতিক্রম, যারা তাদের ছালাতে সু্প্রতিষ্ঠিত। (সূরা মাআরেজঃ ১৯-২৩)
ছাবেত বলেনঃ আশ্চিয়া(আঃ)গণ বি্পদ গ্রস্হ হলে তৎক্ষনাত ছালাতে মনযোগী হতেন। আর মুমেনগণ কেনইবা ছালাতে মনযোগী হবেনা অথচ উহা তাদের দ্বীনের স্তশ্ছ যেমন খোদ নবী (ছাঃ)ই বলেনঃ ছালাত হল দ্বীনের স্তশ্ছ। (তিরমিযী)
ইমাম মারওয়াযী বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে তার নবীর অনুসরণ করার নিদের্শ দিয়েছেন। আর যখন তারা আল্লাহর নিদর্শন দেখতে পাবে যাতে আল্লাহর গযবের আশংকা করবে এমতাবস্হায় তাদের কে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ছালাতের প্রতি মনযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ নিশ্চয় সুর্য ও চন্দ্র আল্লাহর অন্যতম দুটি নিদর্শন। সুতরাং উহাতে গ্রহণ লাগলে তোমরা ছালাতে মনোনিবেশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম )
স্বয়ং তিনি ছালাতে ব্যস্ত হয়েছেন। আর আমরা জানিনা ছালাতের মত এমন কোন আনুগত্য আছে যা দ্বারা আল্লাহ তার শাস্তিকে দুর করেন। তাইতো প্রিয় নবী (ছাঃ) চন্দ্র ,সূর্য গ্রহণ লাগলে রুকূ বর্ধিত করে ছালাত আদায় করেছেন। এবং সেজদায় যেয়ে আল্লাহর নিকট বিনীত হয়ে ক্রন্দন করেছেন।
ওক্ববার মেয়ে উম্মে কুলছূম প্রথম হিজরত কারি মহিলাদের অন্যতমা।
তার স্বামী আব্দুর রহমান বিন আউফ এমন ভাবে বেহুঁশ হন যে তারা মনে করে ছিলেন এতেই তার শেষ নি:শাস ত্যাগ হয়ে গেছে। এহেন মুহর্তে তিনি মসজিদের দিকে
রওয়ানা হন আল্লাহর নির্দেশিত বস্তু তথা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য তলব করার উদ্দেশ্যে।
কথিত আছে, ইবনে আব্বাসের নিকট সফরের অবস্হায় যখন তার ভাই ক্বুসামের মৃত্যু সংবাদ পৌঁছল তখন তিনি ইন্নাষ্ফিাহ বললেন। অত:পর রাস্তা হতে এক দিকে সরে গিয়ে উট বসালেন অত:পর দুই রাকআত ছালাত আদায় করলেন যাতে তিনি দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করলেন। অত:পর উঠে দাঁড়ালেন এবং তার সওয়ারীর দিকে পদচারনা করলেন। এসময় তিনি এ আয়াতটি পড়তে ছিলেনঃ
(وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ)
অর্থঃ তোমরা ধৈর্য এবং ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য ্প্রর্াথনা কর অবশ্য উহা ভারী তবে আল্লাহকে ভয় কারীদের জন্য ভারী নয়। (সূরা বাক্বারা:৪৫)
ইবনুল ক্বায়্যেম (রহঃ) বলেনঃ অন্তরকে আনন্দ দেয়া, তাকে শক্তিশালী করণ, তার প্রশস্তি করণ, তার স্বাদ বৃদ্ধি করণে ছালাতের বড় ধরণের ভূমিকা রয়েছে। উহাতেই রয়েছে অন্তর এবং রূহের সাথে আল্লাহর যোগাযোগ- তাঁর নৈকট্য অর্জন, তাঁকে স্বরণ রাখার আনন্দ, তার সাথে গো্পন মুনাজাতের খুশী, তার সামনে দাঁড়ানো, শরীরের সমস্ত অঙ্গ ও তার শক্তিকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যবহার করা, প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রতঙ্গকে তার ইবাদতের অংশ প্রদান করা এবং মাখলুক ও তাদের সাথে কথায় ব্যস্ত থাকা হতে বিরত থাকা,তার অন্তরের ও অঙ্গ প্রতঙ্গের শক্তিকে নিজের প্রতিপালক ও সৃষ্টিকর্তার দিকে ধাবিত করা, এবং ছালাতে থাকাকালীন স্বীয় দুশমন হতে নিরা্পদ ও আরামে থাকা ইত্যাদি বিভিন্ন গুণ এই ছালাতের মাঝে নিহিত থাকার জন্য ইহাই সব থেকে বড় ঔষধ এবং সব থেকে আনন্দ দায়ক, এবং মহাখাদ্য হিসাবে পরিগৃহীত হয়েছে যা একমাত্র বিশুদ্ধ অন্তরের জন্যই প্রজোয্য।
দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জন এবং দুনিয়া আখেরাতের সমস্ত অকল্যাণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ছালাত হল অন্যতম বড় সহযোগী। ইহাই হল গুনাহ হতে বিরত থাকার মাধ্যম, অন্তর ও শরীরের ব্যধি দূরকারী, অন্তর আলোকিতকারী, চেহারা শুভ্র কারি, আত্মিক ও দৈহিক ষ্ফুর্তী দানকারী, রিযিকের ব্যবস্থা কারি, অন্যায় প্রতিরোধ কারি, মাযলুমের সাহায্য কারি,
বিভিন্ন ধরণের সংশয় নিরসণকারী, পেটের বিভিন্ন ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে উ্পকার সাধনকারী।
মোট কথাঃ শরীর ও অন্তরের সুস্হতা, উভয়ের শক্তি সংরক্ষণ ও সকল প্রকার মন্দ বিষয় প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ছালাতের আশ্চর্য ধরণের ভূমিকা রয়েছে। দুজন ব্যক্তি কোন প্রকার বালা মসীবত, অসুখ, দুর্বি্পাক ইত্যাদিতে পতিত হলে দেখা যায় মুছল্লী ব্যক্তিটি অ্পর জনের তুলনায় কম আক্রান্ত হয়েছে। (অর্থাৎ বি্পদা্পদ তার তুলনায় কম দেখা যায়) এবং তার পরিণতিও নিরা্পদ জনক। এমনভিাবে দুনিয়াবী অনিষ্ট প্রতিহত করণের ক্ষেত্রেও ছালাতের আশ্চর্যজনক ভূমিকা রয়েছে- বিশেষ করে যখন বাহ্যিক ও আন্তরিকভাবে তার হক আদায় করা হয়। এক কথায়, দুনিয়া ও আখেরাতের অমঙ্গল প্রতিহত করণের ক্ষেত্রে এবং উভয় জগতের মঙ্গল অর্জনের ক্ষেত্রে ছালাতের ন্যায় অন্য কিছুর ভূমিকা নেই। ইহার রহস্য হল এই যে, কারণ ছালাত হল প্রতি্পালকের সাথে বান্দার সেতু বন্ধন স্বরূ্প। আর বান্দার স্বীয় প্রতি পালকের সাথে সম্পর্ক অনু্পাতে তার জন্য মঙ্গলের দরজা উম্মুক্ত করা হয় এবং অমঙ্গলের উ্পকরণসমূহের অবসান করা হয়। আর তার নিকট আল্লাহর তাওফীক্ব, নিরা্পত্তা সুস্হতা গনীমত, প্রাচুর্যতা, আরাম আনন্দ, নেআমত প্রভৃতি সবই তার হাতের নাগালে থাকে এবং তা তার নিকট অনতি বিলম্বে চলে আসে।
আল্লাহর নিকট আমরা এই কামনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে কথায় ও কাজে খুলূছিয়াত দান করেন। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর উ্পর, তার পরিবার পরিজন এবং সমস্ত সাথীদের প্রতি রহমত নাযিল করুন।