নামাজ সম্পর্কে সব মুসলমানেরই এতটুকু ধারণা তো অবশ্যই আছে যে এটি ধর্মীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ দায়িত্ব। আজিমুশ্বান ইবাদত এটি। দ্বীনের বুনিয়াদ বা মূল স্তম্ভ নামাজ। কিন্তু একই সঙ্গে নামাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তা মানুষের ব্যক্তি সংশোধনে, তার আখলাকে চরিত্র তারবিয়্যাতে তারা অনন্য মহাপ্রতিষেধক। স্বয়ং কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে ঘোষণা হলো :
‘অহির মাধ্যমে যে কিতাব আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে তা আপনি তেলাওয়াত করুন, এবং নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : আয়াত-৪৫)
এই আয়াতে একেবারে স্পষ্ট ভাষায় একথা বলা হয়েছে যে, নামাজের বৈশিষ্ট্য হলো, সে মানুষকে তাবত্ অশ্লীলতা এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রেখে চারিত্রিকভাবে সংশোধনের পথে নিয়ে আসে, তাকে উত্তম আদর্শের পথে ধাবিত করে।
অসংখ্য বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য হাদিসের আলোকে এর অর্থ হলো, ইকামাতে সালাতের বিশেষ প্রভাব হলো সে ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকবে, তার গোনাহ এবং কুঅভ্যাসগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, নামাজকে যেন নিজের বোঝা মুক্তি হওয়ার কাজ হিসেবে আদায় না করা হয়। বরং কোরআনি ভাষ্যের ইকামাতে সালাত হতে হবে। ইকামাতে সালাতের শাব্দিক অর্থ নামাজকে সোজা করা। কিন্তু এখানে অর্থ হলো, নামাজের তাবত্ বাহ্যিক অবাহ্যিক নিয়মনীতি এবং আদাব ঠিক সেভাবেই আদায় করতে যেভাবে আদায় করেছেন হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দৃষ্টান্তস্বরূপ একে তো নামাজের যাবতীয় শর্তাবলি, সুন্নাত এবং তার আদাবের সহীহ জ্ঞানার্জন করে এসব বিষয়ের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়ত যে পরিমাণ একাগ্রতা এবং খুশুখুযুর পরিবেশ সৃষ্টি করা বান্দার মধ্যে আছে তা পুরোপুরি নিজের ভেতর বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়ে এমনভাবে নামাজে দাঁড়াবে যে, এখনই আল্লাহ তাআলার কাছে আবেদন নিবেদনপর্ব শুরু হবে। সরাসরি তাঁর কাছেই হাজির হয়ে তা যেন চাওয়া হচ্ছে এমন ভাব নিয়ে নামাজের আমলগুলো করতে থাকবে। এভাবে নামাজ আদায়কারীকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নেক কাজ করার সৌভাগ্য দান করে থাকেন। অশ্লীল অন্যায় কাজ থেকে বাঁচার জযবা বৃদ্ধি করে দিতে থাকেন।
আর যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করা সত্ত্বেও অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকে তাহলে তাকে একথা বুঝে নিতে হবে যে, তার নামাজের কোথাও ত্রুটি রয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
‘যে ব্যক্তির নামাজ তাকে অশ্লীলতা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করেনি, তাহলে বুঝতে হবে তার নামাজ কিছুই হয়নি।’বাস্তবতা হচ্ছে, যখন নামাজকে তার আদাব শর্তাবলিসহ আদায় করা হবে, তখন আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে ওই নামাজির একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। যে ব্যক্তির এই সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়, তার জন্য পর্যায়ক্রমে গোনাহ থেকে সরে আসা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
এক ব্যক্তি সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সংবাদ এলো যে, সে রাতভর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে থাকে, আর সকালের আগমুহূর্তে সে চুরি করে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অচিরেই ওই ব্যক্তিকে চুরি থেকে বিরত করবে। দেখা গেল অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ওই ব্যক্তি চুরি থেকে তওবা করে একজন পাক্কা নামাজি হয়ে যায়। (ইবনে কাসীর)
আজকাল আমাদের মাঝে অনেকেই দৃশ্যত নামাজের পাবন্দ হওয়া সত্ত্বেও অসংখ্য অসত্ কর্ম এবং অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে থাকি। সুতরাং বুঝতে হবে হাদিসের মর্মবাণী অনুযায়ী তার নামাজের কোথাও না কোথাও অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। যদি ওই অসম্পূর্ণতা দূর করে নেয়া হয় তাহলে আল্লাহ তাআলার ওই ওয়াদা অনুযায়ী অবশ্য মন্দ কাজ অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকবে। আর এভাবেই তার এই ইবাদত উত্তম ও উন্নত চরিত্র গঠনে এবং তার ব্যক্তি জীবনের সংশোধনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কার্যকর হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে নামাজের জাহেরি বাতেনি তাবত্ আদাব আদায় করে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। এবং দুনিয়া আখিরাতে তার উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। আমীন ==