নামায পড়ার নিয়ম

নামাযে সিজদাহর অবস্থা

নামাযে সিজদাহর অবস্থা

অযু অথবা তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করার পর, নামায আরম্ভ করার পূর্বে আরো কয়েকটি বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তা এখন আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ
নামাযের বাইরের ফরযসমূহ
নামায আরম্ভ করার পূর্বে নিম্নের বিষয়গুলোও লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থাৎ নামাযের বাইরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফরয রয়েছে, সেগুলো পালন করতে হবে।
১। শরীর পাক (যা গোসল, অযুর এবং তায়াম্মুমের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়) {এর বিষয় বিস্তাতির আলোচনা আপনার সামনে এই মাত্র উপস্থাপন করেছি।

২। কাপড় পবিত্র থাকতে হবে। অর্থাৎ যে কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করবেন, তা পবিত্র হতে হবে}

৩। নামাযের স্থান পাক থাকতে হবে। অর্থাৎ যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামায পড়বেন তা পবিত্র হতে হবে। সাধারণ একজন লোকের নামায আদায় করতে আড়াই হাত জায়গা লাগে, (কিবলার দিকে) ব্যক্তি হিসেবে আরো কম-বেশিও হতে পারে}

৪। সতর ঢাকতে হবে। (পুরুষের সতর নাভী থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। আর মহিলাদের সতর হলো; মুখ ও হাতের কব্জি এবং পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত অঙ্গ)

৫। কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে। {যেখান থেকে কা‘বা ঘর দেখা যায় না, এমন স্থানের লোকদের কিবলার দিক নির্দিষ্ট হলেই যথেষ্ট হবে}

৬। সময় মত নামায পড়তে হবে। সুতরাং আযানের সময় হওয়ার পূর্বে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। {বর্তমানে বিশ্বে সব দেশের নামাযের সময়সূচি ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি মসজিদে ডিজিটাল ঘরি লাগানো আছে, ঘড়িতে প্রতি দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের শুরু টাইম ও ইকামতের টাই দেখানো হয়}

৭। নিয়ত করতে হবে। {নামাজের ইচ্ছা করাই হচ্ছে নামাজের নিয়াত করা। মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। মনে মনে সংকল্প করতে হবে আমি এখন ফজরের, জোহরের, আসরের, মাগরিবের, ঈশার, জুমুয়ার, বিতরের, তারাবীর, তাহাজ্জুদের ইত্যাদি নামায আদায় করবো। নিয়ত না করলে নামায শুদ্ধ হবে না। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। (বুখারী)

এরপর নামাযের ভিতরে কিছু ফরজ রয়েছে সেগুলো এখন আলোচনা করবো।
১। তাকবীরে তাহরীমা বলা

২। দাঁড়িয়ে নামায পড়া

৩। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়া

৪। রুকু করা

৫। রুকু হতে দাঁড়ানো

৬। দুই সেজদা করা

৭। দুই সেজদার মধ্যখানে সোজা হয়ে বসা

৮। ধীরস্থীরভাবে প্রত্যেকটি রোকন আদায় করা

৯। শেষ বৈঠক

১০। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা

১১। শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠ করা

১৩। সালাম দিয়ে নামায শেষ করা

১৪। ধারাবাহিকভাবে রোকনগুলো আদায় করা।

উল্লেখিত রোকনগুলোর মধ্যে কোন কোন রোকনকে কেউ কেউ ওয়াজিবের মধ্যে শামেল করেছেন।

নামাযের সময় হলে আযান দিবে। আযানের শব্দগুলো নিম্নরূপ:
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ২ বার
আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ২ বার
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ ২ বার
হাইয়্যা আলাস সালাহ ২ বার
হাইয়্যা আলাল ফালাহ ২ বার
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ১ বার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ১ বার
আযানের বাক্যগুলো শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বলবেন, কিন্তু হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ শোনার পর, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলবেন। অতঃপর আযান শেষ হলে রাসূল (সা.)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করে নিম্নের দোয়া পাঠ করবেন।
عَنْ عبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمرِو بْنِ العاصِ رضِيَ اللَّه عنْهُما أَنه سَمِع رسُولَ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقُولُ إِذا سمِعْتُمُ النِّداءَ فَقُولُوا مِثْلَ ما يَقُولُ ، ثُمَّ صَلُّوا علَيَّ ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى علَيَّ صَلاةً صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ بِهَا عشْراً ، ثُمَّ سلُوا اللَّه لي الْوسِيلَةَ ، فَإِنَّهَا مَنزِلَةٌ في الجنَّةِ لا تَنبَغِي إِلاَّ لعَبْدٍ منْ عِباد اللَّه وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُو ، فَمنْ سَأَل ليَ الْوسِيلَة حَلَّتْ لَهُ الشَّفاعَةُ গ্ধ رواه مسلم
যে হাদীসে আযানে দোয়া বর্ণিত হয়েছে:
وَعنْ جابرٍ رضَي اللَّه عنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قَالَ :  من قَال حِين يسْمعُ النِّداءَ : اللَّهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعوةِ التَّامَّةِ ، والصَّلاةِ الْقَائِمةِ، آت مُحَمَّداً الْوسِيلَةَ ، والْفَضَيِلَة، وابْعثْهُ مقَامًا محْمُوداً الَّذي وعَدْتَه ، حلَّتْ لَهُ شَفَاعتي يوْم الْقِيامِة  رواه البخاري

এর পর ইকামত বলে নামায আরম্ভ করতে হবে। ইকামতের শব্দগুলো নিম্নরূপ:
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ১ বার
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ ১ বার
হাইয়্যা আলাস সালাহ ১ বার
হাইয়্যা আলাল ফালাহ ১ বার
ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
উপরে বর্ণিত কাজগুলো ধাপে ধাপে করেই আমাদেরকে মূল নামাযে প্রবেশ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে নামাযের পূর্বে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন ॥
* তাকবীরে তাহরীমা: আল্লাহু আকবার বলে নামায আরম্ভ করবে।
** সানাঃ (হাত বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয়)
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
নবী (সাঃ) নামায অবস্থায় মাথা নিচু করে যমীনের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠাতে নিষেধ করেছেন।
*** তাআ’উজঃ أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
**** তাসমিয়াঃ بسم الله الرحمن الرحيم

***** এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়:

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)

*** সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের পর পবিত্র কুরআনের যে কোন জায়গা থেক তিলাওয়াত বা অপর একটি সূরা পাঠ করতে হয়।
بسم الله الرحمن الرحيم

  • وَالْعَصْرِ
  • إِنَّ الإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ
  • إِلاَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকু করতে হবে।

**রুকুর তাসবীহঃ  سبحان ربي العظيم
** তাসমীঃ (রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়)  سمع الله لمن حمده
**তাহমীদঃ (রুকু  থকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়) ربنا و لك الحمد
এবং এই দোয়াটি পড়া উত্তম।  مباركًا فيه  حمدًا كثيرًا طيبًا

**সিজদার তাসবীহঃ  سبحان ربي الأعلى
** দু’সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়াঃ اللهم اغفرلي و ارحمني و عافني و اجبرني و ارفعني و اهدني و ارزقني
অতঃপর দ্বিতীয় সিজদা করবে।
তারপর প্রথম রাকাতের ন্যায় দ্বিতীয় রাকাত পূর্ণ করবে।
**তাশাহুদঃ
التحيات لله والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا، وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله
এভাবে তাশাহ্হুদ পাঠ করার পর আল্লাহ আকবার বলে চার বা তিন রাকা‘আত বিশিষ্ট নামাযের বাকী নামাযের জন্য দাঁড়াবে। বাকী নামায পূর্বের নিয়মে সমাপ্ত করবে। তবে কিরা‘আতের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

 

**দরূদের উচ্চারণঃ
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد، كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم، إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد، كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم، إنك حميد مجيد
**দূ‘আ মাসুরা:
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا ، وَلا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلا أَنْتَ , فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ” .
অ   তঃপর     السلام عليكم و رحمة الله বলে ডান দিকে সালাম ফিরাবে তারপর বাম দিকে সালাম ফিরাবে।
তারপর হাদীসে বর্ণিত নামাযের পরের দোয়াগুলো পাঠ করবে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আসুন আমাদের বাস্তব জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায পূর্ণ প্রস্তুতিসহ যথা সময়ে আদায় করি, আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক ও শক্তি দান করুন। আমীন ॥

Related Post