Main Menu

নও মুসলিমের আত্মকাহিনী

নও মুসলিমের আত্মকাহিনী

নও মুসলিমের আত্মকাহিনী

আমার ইসলাম পূর্ব নাম; অরুন কুমারচক্রবর্তী, বর্তমান নাম:মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম, পিতার নাম: ডা.

ফনিভূষণচক্রবর্তী, গ্রাম: মাস্টার পাড়া (লাকসাম রোড),পোস্ট: কান্দির পাড়, থানা:কোতয়ালী, জেলা: কুমিল্লা, বাংলাদেশ।

যখন কেউ আমার ইসলাম গ্রহণের কথা শুনে, তখন তাদের অনেকেই আমার কাছে আমারইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চান। আমি তাদেরকে খুব সংক্ষেপে আমার ইসলামগ্রহণের কারণ বলি। অনেক দিন ধরেই আমার ইসলাম গ্রহণের পূর্ণ কাহিনী লিখবোবলে ভাবতে ছিলাম। আমি ভীষণ অলস প্রকৃতির লোক, তাই লিখা হয়ে উঠছে না। আই পিসির সম্মানিত দাঈ মুহতারম মাওলানা মামুনুর রশীদ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় এবং ভিন্ন আরো একটি কারণে লিখতে শুরু করলাম। কারণটি হলো; কোন অমুসলিম যদি আমার জীবনের আত্মকাহিনী পাঠ করে সঠিক পথের সন্ধান পায় কিংবা কোন মুসলমান সঠিকভাবে ইসলাম পালন করে, তাহলে আমার ইসলাম গ্রহণের স্বার্থকতা আরো বৃদ্ধিপাবে।

আমার জন্ম হয়েছে এক বিশিষ্টব্রাহ্মণ পরিবারে। ‏ব্রাহ্মণদের মধ্যেও উঁচু নিচু শ্রেণীভাগ আছে। আমারপিতার বংশ ছিল ব্রাহ্মণদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ। হিন্দু শাস্ত্রে যাকে কুলিন বংশবলে। আমার পিতা ছিলেন খুবই ধার্মিক ও সৎ। আমি ৯ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে ছিলামদশম। আমার যখন জন্ম হয় তখন আমার গলায় ব্রাহ্মণ মতে পৈতা ছিল- হিন্দুরাযেহেতু পুনজনমে বিশ্বাসী তাই তাদের ধারণা আমি আগের জনমেও ব্রাহ্মণ ছিলাম। দ্বিতীয় বার যদি কেউ ব্রাহ্মণ হিসেবে জন্ম নেয়, তবে সে পরোলোকে চলে গেলেতার স্বর্গবাস। তাছাড়া আমার আগমন কালে আমার পরিবারে অনেক মঙ্গলবার্তা বয়েআনে। (আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে আমি একজন মুসলমান, আমি বিশ্বাস করি যদি আমারমৃত্যু ঈমানের সাথে হয় তাহলে অবশ্যই আমি জান্নাতে যাবো। আমি আল-হুদার সকলপাঠক-পাঠিকাদের নিকট দোয়া প্রার্থী, সকলে আমার জন্য দোয়া করবে। আল্লাহ যেন আমাকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করেন। আমীন)

আশ্চর্যের বিষয় এমন এক পরিবারে জন্ম নিয়ে মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ করবো তাএক অসম্ভব ব্যাপার ছিলো। কিন্তু রাব্বুল আলামীন যা চান তাই হয়, আমি তারজ্বলন্ত প্রমাণ। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ যারমঙ্গল কামনা করেন, তাকেই তিনি দ্বীনের বোঝ দান করেন। (বুখারী…)

ছোট বেলা থেকেই আমি খুব ধার্মিক ছিলাম। হিন্দুদের পূজা-পালিতে আমি নিয়মিতঅংশ নিতাম, এবং ব্রাহ্মণের কার্যাদি ভালোভাবেই পালন করতাম। এভাবে আমিচতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত উত্তীর্ণ হই। তারপর থেকেই আমার মধ্যে বিভিন্ন নেশারআগ্রহ জন্ম নেয়া শুরু হলো। হিন্দু ধর্মে যেহেতু মদ-গাজা স্বাভাবিক ব্যাপারছিলো, তাই অবাধে তাতে আকৃষ্ট হয়ে গেলাম. ক্রমশ আমার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছিলাম। পড়াশুনায় ভাল ছিলাম বলে পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাস করতাম। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো, গুল্লি ইত্যাদি খেলায় মগ্ন থাকতাম। এভাবেই পার করছিলাম কৈশোরের দিনগুলো। যখন অষ্টম শ্রেণীতে উঠি তখন থেকেই বাহিরে থাকার অভ্যাসটা প্রবল হয়ে গেল। ঘরে ভালো লাগতো না। কোন হোটেলের সামনে দাঁড়াতাম, কেউ হয়তএকটা সিঙ্গারা দিলে বা একটা লুচি দিলে তা খেতাম। একবার ঘর থেকে চলে গিয়েতিন দিন অন্য বাড়িতে ছিলাম। এই তিন দিন যে কোথায় ছিলাম, আজও তার হদিস খোঁজেবের করতে পারি নাই। এভাবে (SSC) পাস করার পর চলে যাই চট্টগ্রামে। সেখানে কলেজে ভর্তি হই। সেখানে গিয়ে পুরোপুরি নেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। এভাবে একসময় জীবনের প্রতি কেমন যেন বিতৃষ্ণা এসে যায়। কোথাও ৫/৬ মাসের বেশি থাকতেপারতাম না। তার মধ্যে বিভিন্ন বন্ধুদের পাল্লায় পরে বিভিন্ন নেশা জাতীয় টেবলেট, ফেনসিডিল তার সাথে জুয়া খেলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম। তবে আমার একটাঅভ্যাস ছিলো যে কোন কিছুতেই আমাকে গ্রাস করতে পারতো না। কোন না কোন সময়বিরক্ত লাগতো, মনে হতো কেউ যেন আমাকে ব্যবহার করছে। যখন দেখছে অতিরিক্ত হয়েযাচ্ছে, তখনই আমাকে এটার প্রতি বিমুখ করে রাখতো। এভাবে আমার জীবন হ য ব র ল -এর মতো চলছিল। এই হ য ব র ল জীবনের মাঝেই আই এ. ও বি এ. পাস করি। তখন আমিঢাকায় ছিলাম।

ভারতের বাবরী মসজিদে নিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঢাকায় ছোট খাট একটা দাঙ্গা হয়। আমি থাকতাম পুরান ঢাকার শাখারী বাজার ওয়াইজ ঘাট এলাকায়। যখন দাঙ্গাশুরু হয়, তখন আমি বাইরে ছিলাম, বাসায় ঢুকার মত পরিবেশ ছিল না। এভাবে তিনদিন শাখারী বাজারে রাস্তায় পার করে দিয়েছি। যখন এই দাঙ্গা ঠাণ্ডা হলো তখন ভাবলাম, মানবতার এমন অবক্ষয় কি করে হয়! মানুষ মানুষের প্রতি মুহূর্তের মধ্যে এমন ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে, জীবনে এটাই মানুষের রূপ প্রথম দেখা।তাই বাংলাদেশ ছেড়ে কলিকাতা চলে চাই। সেখানে বাসা ভাড়া করে থাকতাম। একটিভালো চাকরী ব্যবস্থাও হয়ে গেল। কিছু দিনের মধ্যে অনেক বন্ধু-বান্ধব জুটেগেল। সেখান বন্ধুরা বাংলাদেশী বন্ধু পেয়ে খুব খুশি। সেখানে প্রতি পাড়া-মহল্লায় বাংলা মদের আসর বসতো, বন্ধুদের সাথে প্রতি দিন সন্ধ্যায় মদের আসরেগিয়ে মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পরলাম। সেখানে একটি মেয়ের প্রেমে পড়লাম। মেয়েটি আমার প্রতি এতই আকৃষ্ট হলো যে সব লোক লজ্জা ভয় উপেক্ষা করে প্রতি রাতে আমার সাথে থাকতো। এভাবে সেখানে প্রায় আড়াই বছর গত হয়ে যায়। তিন মাস পার হওয়ার পর এক দিন সন্ধ্যায় বন্ধুরা মদের আড্ডায় যাওয়ার জন্য নিতে আসলো। ঘর থেকে বের হয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর থমকে দাঁড়ালাম। আমার বিবেক আমাকে প্রশ্ন করছে: কে তুমি, কি তোমার পরিচয়, পৃথিবীতে কেন এসেছ, তোমার কি করা উচিৎ? কেমন যেন ঘোরের মধ্যে কিছু সময় কাটলো। তারপর দেখলাম বন্ধুরা সবাই চলে গেছে, আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। এরপর থেকেই কিছু ভাল লাগতো না। কেমন যেন মনে শুধু অস্থিরতা বিরাজ করতো, হৃদয় শুধু আঞ্চান আঞ্চান করতো। এক মাস পর কলিকাতা থেকে নানা বাড়ি ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই নামক জেলায় চলে আসি। এখানে আসার পর মন আরো ব্যাকুল হয়ে গেল, কেন যে এমন হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। সকালে চলে যেতাম গভীর জঙ্গলে বিকালে ফিরতাম ঘরে। সারা দিন জঙ্গলে বসে শুধু কাঁদতাম। ছয় মাস থাকার পর বাংলাদেশে চলে আসি। কিন্তু ব্যাকুলতা দূর হলো না, আমি ভেবে শেষ করতে পারছি না কেন যে এমন হচ্ছে। কি যেন খুঁজছি কিন্তু তার সন্ধান পাচ্ছিনা। বাংলাদেশে আসার পর আমার পরিবার খুব বিরক্ত বোধ করছিল। কিছু দিন ঘুরাঘুরি করার পর কয়েকটি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতে লাগলাম। এবং কুমিল্লা আইন কলেজে এল এল বিতে ভর্তি হলাম। প্রথম বর্ষে হিন্দু আইন ও মুসলিম আইন দুইটি বই ছিল। হিন্দু আইন পড়তে গিয়ে দেখলাম: হিন্দু আইনটা হলো; কোন কর্তাব্যক্তি যদি বলতো: “এই রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারবে না” তার এই উক্তি যদি সকলে ১০০ বছর মেনে চলে সেটা হিন্দু আইনে পরিণত হয়ে যেত। হিন্দু আইনটা পুরোপুরি মানুষের তৈরী। যার মধ্যে ধর্মের কোন প্রাধান্য ছিল না। পক্ষান্তরে মুসলিম আইন পড়তে গিয়ে আমি আভিভূত হয়ে গেলাম। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, সম্পত্তি বণ্টন বিচার ব্যবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্য, সামাজিক বন্ধন সবটাতেই আল্লাহর হুকুম ও নির্দেশনা রয়েছে। এত সুন্দরভাবে মহান আল্লাহ ব্যাখ্যাসহকারে বিষয়গুলি উপস্থাপন করেছেন, যা কোন ইনসানের পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না। যা পরে কুরআনের তাফসীর পড়ে আরো বিস্তারিতভাবে অনুধাবন করতে পারি। তখন থেকেই ইসলাম ধর্ম জানার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে গেল। তখন নামাজ শিক্ষা বই কিনে রাত ভর গোপনে গোপনে পড়তাম, এবং কুরআনের বাংলা তাফসীরও অধ্যয়ন করতে থাকি। এই সুবাদে আমি যাদের প্রাইভেট পড়াতাম, তারা অধিকাংশই মুসলমান ছিলো তাদেরকে ছোট ছোট সূরা যেমন, ফাতেহা ইখলাস ইত্যাদি পড়াতে আমাকে ব্যাক পেতে হয়নি। যখনই আমি তাদেরকে সূরা পড়াতাম তখনই আমি অন্য জগতে চলে যেতাম। ছাত্ররা আমার এই অবস্থা দেখে স্যার বলে ডাকতো, তখন বাস্তব জগতে ফিরে আসতাম। তখনই হৃদয়ে বদ্ধমূল ধারণা হলো আমি যা খুঁজছি, ইসলাম ধর্মেই তা নিহিত আছে এবং এই পথেই আমার চলা উচিৎ। একদিন রাতে স্বপ্নেদেখি যে, আমি হাটছি, হাটতে হাটতে গভীর গর্তে পড়ে যাওয়ার উপক্রম, হঠাৎ কে যেন আমার বাম হাত ধরে আমাকে উদ্ধার করলো। তারপর থেকে জীবনটা কেমন যেন হয়েগেল। দুই মাস রাতে ঘুমাতে পারিনি। চোখ বুঝলেই দেখতাম লম্বা একজন লোক, মাথায় সাদা পাগড়ী, সাদা দাড়ি, সাদা দিশদাশা (জুব্বা) পরিহিত আমার সামনে আসছে। তাঁর স্পর্শটা সহ্য করতে পারতাম না। ঘুম ভেঙ্গে যেত, পরবর্তীতে লাইট জ্বালিয়ে শুইতাম, তখনও ঘুম আসতে চাইতো না। একবার স্বপ্নে দেখলাম, আমার একবন্ধুর সাথে রাম ঠাকুর আশ্রমে যাচ্ছি, আশ্রমের দরজায় লাল কাপড় পরিহিত একলোক আমার বন্ধুকে ভিতরে যেতে দিলো, আমাকে বাধা দিলো, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে কেন ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সে আমাকে বললো, ‘তুমি মুসলমান’। এভাবে আরো একদিন স্বপ্নে দেখি শাহরাস্তি মেহের কালী বাড়িতে হিন্দুদের বিরাট উৎসব হচ্ছে, আমি সেখানে গেলাম, রাত প্রায় ২/৩ টার দিকে বাড়িতে গিয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়ি, কে যেন বলছে এখানে কেন এসেছ? তুমি তো মুসলমান! তারপর থেকে আমি আমার পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে লাগলাম। আর ভাবছি কি করে এটা সম্ভব! আমরা নয় ভাই, তিন বোন, আত্মীয়-স্বজন সামাজিকতা এতসব ছিন্ন করে কি করে ইসলাম গ্রহণ করি? একবার ভাবছি আমার তো একটা জীবন, তার জন্য সবাইকে কি করে বিপদের মধ্যে ফেলে দেই! শেষে সিদ্ধান্ত নেই, আমার জীবন নষ্ট করে ফেলবো। তবুও সবাই সুখি হোক।

আমি বিভিন্ন নেশাতে আরো বেশি করে জড়িয়ে পড়লাম। তার সাথে রাতের পর রাত জুয়া ও নেশায় নিজেকে ডুবিয়ে দিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন, সে কি করে খারাপ হতে পারে, আমি যতই খারাপ হওয়ার চেষ্টা করেছি, আল্লাহ আমাকে ততই কাছে টেনে নিয়েছেন। আমি যখন ছাত্রদেরকে পড়াতাম তাদের (Home Work)এর খাতা দেখে নম্বর দিয়ে সই করতাম অবচেতনভাবেই সাইফুল ইসলাম (মোঃ সাইফুল ইসলাম) লিখতে শুরু করলাম। একদিন এক ছাত্রের বাবা আমাকে বললো, অরুন তুমি এটা কি সই করেছ? আমি বললাম সাইফুল ইসলাম। তিনি তখন আমাকে বললেন, তুমি কি মুসলমান? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমার মুখের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে দেখলেন।
আমার ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস ছিলো অনেক রাতে বাসায় ফেরা। একদিন রাতে বাসায় ফিরছি, এমন সময় ফজরের আযান দিলো, আযানটি আমার হৃদয়ে এমনভাবে স্পর্শ করলো যে আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। একবার প্রাইভেট পড়িয়ে বাসায় ফিরছি কুমিল্লা “দারোগাবাড়ি মাজার” নামে একটা মাজার ছিলো, সেখানে প্রতি বৃহস্পতি বার আছরের নামাযের পর যিকিরের আয়োজন হয়, ঠিক সেই সময় তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার কালে আল্লাহু আল্লাহু যিকিরের আওয়াজটা আমার কানে আসে। তখনই আমি সেখানে দাঁড়িয়ে গেলাম, সাধ্য নেই এক পা অগ্রসর হই। যিকির যখন শেষ হয় তখন আমি বাস্তবে ফিরে আসি। আমার জীবনটা ছিলো বেপরোয়া সিরিয়াসলি বলে কোন কাজ আমি করতাম না। আমার মা আমাকে প্রায়ই বলতো অরুন! তুমি সাবধানে চলাফের করবে! তুমি কিন্তু আর ৮/১০জনের মতো নও। এখন বুঝতে পারছি মা কেন আমাকে এভাবে বললেন। যদি মায়ের কথা শুনতাম তাহলে আরও আল্লাহর কাছে প্রেমিক হতে পারতাম। এখনও আমার এই অভ্যাসটা আছে। চলছে ঘোড়া লাগামহীন। তাতে একটা লাভ এই যে, এই অভ্যাসের কারণে আল্লাহর দয়া পাচ্ছি বেশি করে। যেমন নামায, যিকির ইত্যাদি যখন কম হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তিনি তা আদায় করে নেন। যেমন ঘুম ভাঙ্গিয়ে নামায পড়ান, ইসলাম বিষয়ে নানা ধরণের জ্ঞান আমাকে শিখান। যা আমি কলমে লিখে বুঝাতে পারছি না।
যাক তখন থেকেই রাত জেগে ইসলামী বই-পুস্তক যেমন নামায শিক্ষা, কুরআনের তাফসীরসহ বিভিন্ন কিতাবাদি পড়তাম। এবং প্রায় রাতেই আমি নিজে নিজে গোপনে তাহাজ্জুদের নামায পড়তাম। আমার পরিবর্তন লক্ষ্য করে আমার পরিবার হয়ত বুঝতে পেরেছে, তাই আমাকে বিদেশে পাঠাতে চেষ্টা করতে লাগলো। আমিও মনে মনে ভাবলাম এটাই মোক্ষম সুযোগ। কারণ একবার যদি কোন মুসলিম কান্ট্রিতে চলে যেতে পারি, তবে নিজেকে মুসলমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। তা ছাড়া আল্লাহর ঘর পবিত্র কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করতে পারবো। মদীনায় রাসূলের রাওজা মুবারক যিয়ারত করতে পারবো। আল্লাহ সুবহানাহুর নিকট অসংখ্য কৃতজ্ঞতা আদায় করছি, তিনি আমার মনের বাসনা পূরণ করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ শুকরান ইয়া রাব্ব!

পাসপোর্ট জমা দেই কিন্তু এক বৎসর পার হয়ে গেল ভিসা পাচ্ছি না। আমার যে কত অসুবিধা হচ্ছিল আল্লাহর হুকুম পালন করতে পারছি না বলে। ভিসা আসার ৩-৪ মাস আগে ইসলামকে ভালোভাবে জানার জন্য নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে ৪০ দিনের জন্য সিলেট থেকে তাবলীগ জামাতের শরীক হয়ে ঢাকায় আসি। সেখান থেকে ময়মনসিং যাই। এই ৪০ দিন আমি ইসলামকে কাছে থেকে দেখার ও বুঝার সুযোগ পাই। সেই ৪০ দিনের স্মৃতি আমাকে এখনও আপ্লুত করে রাখে।

 অনেকত্যাগ তিতিক্ষার পর, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতা‘আলা দীর্ঘ ৭টি বৎসর আমাকে নানানভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৯ ঈসায়ী সনের ২৮শে অক্টোবর পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ তা‘আলার মনোনীত ধর্ম (জীবন ব্যবস্থা) ইসলামে প্রবেশ করার দ্বারউম্মুক্ত করে দেন। কুয়েতে আসার দুই মাস পর এক বন্ধুর মাধ্যমে (কুয়েতী অবসরপ্রাপ্ত এক সামরিক অফিসার) ইসলাম প্রেজেণ্টেশন কমিটি (IPC) -তে রাত ৭-৮ দিকে আসি। ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করি, সম্মানিত দাঈদের নিকট হতে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় প্রশ্ন করে জেনে নেই। ইসলাম সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানার জন্য আই পি সি কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু বই দেন। যেহেতু আমিপূর্ব থেকেই ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটিভাবে জেনেছি, আর ইসলাম গ্রহণ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে  আছি, তাই আর কালবিলম্ব না করে পর দিন সকালে আবার আই. পি.সিতে যাই। সম্মানিত দা‘ঈর মাধ্যমে কালিমায়ে শাহাদাত (আশহাদু আন লা-ইলাহাইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ; অর্থ: আল্লাহ ছাড়াকোন প্রকৃত ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহররাসূল) পাঠ করে জনসম্মুখে একজন মুসলিম হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করি। (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার)

আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

আশ্চর্যেরব্যাপার যখন কালিমা পড়া শেষ হয়, তখন আমি নিজেকে এতই হালকা অনুভব করলাম, যেন আমার শরীর থেকে হাজার মণ ওজনের পাথর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এতই সুখ অনুভব করছিলাম যে, মনে হয় পৃথিবীতে আমার চেয়ে সুখী মানুষ দ্বিতীয় কেউ আর নেই। তার জন্য মহান আল্লাহর নিকট লক্ষ-কোটি কৃতজ্ঞতা আদায় করছি, সাথে এই প্রার্থনা করছি মহান মনীবের দরবারে তিনি যেন, মৃত্যু পর্যন্ত একজন প্রকৃতমুসলিম হিসেবে জীবন-যাপন করার তাওফীক দান করেন। আমীন।

 জানুয়ারি মাসে আমি ইসলাম গ্রহণ করি, ঐ বৎসরই আই পি সির পক্ষ থেকে ওমরা ও পরে হজ্জ করার তাওফীক মহান আল্লাহ আমাকে দান করেন। দীর্ঘ দিনের মনের আশা ছিল যে পবিত্র ঘর কা‘বা নিজের দৃষ্টিতে দেখবো, মনের আশাটি পূরণ হওয়ায় আল্লাহর লক্ষ-কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।

  ইসলাম গ্রহণের এক মাসের মধ্যেই GROUP-4 নামক এক কোম্পানীতে গার্ড হিসেবে কাজে যোগদান করি। ঐ কোম্পানীর অফিসার থেকে শুরু করে যখন যে Place ডিউটি করি, সবাই আমার ইসলাম গ্রহণের কথা শুনে। আমাকে এত সম্মান ও মুহাব্বত করতো, তা ভেবে আবেগে দুই নয়নে অশ্রু এসে যেত। ভাবতাম ইসলাম গ্রহণের আগে আমার কি নোংরা জীবন ছিলো! অথচ যখনই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা তাঁর এই নগন্য বান্দাকে ঈমানের আলো দান করলেন, সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়া ও আখেরাতে কতমান-মর্যাদা, সমাদর বৃদ্ধি পেলো, এ যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অলৌকিক দান তাঁর মনোনীত দ্বীনে প্রবেশ করার জন্য।

  আমি মুসলমান ভাই-বোনদের আহ্বান করবো সামান্য কয় দিনের দুনিয়ার মোহে আবদ্ধনা থেকে আল্লাহর বিধান ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলাপদ্ধতি বা পবিত্র কুরআন ও হাদীসের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করুন। তবেই এই দুনিয়ার মায়াময় জগৎ থেকে সত্যিকার মুসলমান হিসেবে বিদায় নেওয়া যাবে। আল্লাহ তা‘আলাআমাদের তাঁর দ্বীনের উপর চলার তাওফীক দান করুন। আমীন

 যাক GROUP-4 চাকুরীর সুবাদে বিভিন্ন প্লেসে কাজ করার সুযোগ করে দেন। যেমন জামইয়া (সুপার মার্কেট), স্কুল, হাসপাতাল, বড় বড় কোমপ্লেক্স, অফিস ইত্যাদিতে। এভাবে প্রায় তিন বৎসর কাজ করার পর হঠাৎ করে সালমিয়া অঞ্চলে এক আমেরিকান স্কুলে রাতের সিপাটে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। প্রতিদিন ফজরের নামাযের সময় পাশের এক মসজিদে ফজরের নামায পড়তে যেতাম। সেখানে নোয়াখালীর বানীপুরের জসিম নামের এক মুসল্লির সাথে পরিচিত হই। কথোপকথোনে বুঝতে পারলাম যে, ছেলেটা প্রচণ্ডভাবে আল্লামা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী সাহেবের ভক্ত। আমার ইসলাম গ্রহণের কথা শোনে আমাকে তাদের এলাকায় বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। আমিও তাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী দেখে তার প্রস্তাবে রাজী হই। এবং শর্ত দেই যে, আমি অতি সাধারণ পরিবারে বিয়ে করবো, যে পরিবারের লোকজন ইসলামের প্রতি অনুগত হবে। তার কথায় আস্থা রেখে ২০০৩ সালে এক মুসলিম পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করি।বর্তমানে আমার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় জনের নাম আয়েশা বিনতে সাইফ, আরছোট জনের নাম আসমা বিনতে সাইফ।

 নোয়াখালী জেলার চাটখীল উপজেলায় আমি বিয়ে করি। দাম্পত্য জীবনে প্রথম বৎসর ভালোই ছিলো। স্বামী-স্ত্রীর তথা আমাদের মাঝে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছিলো। কুয়েতে আমি যে চাকুরি করতাম, বেতন পেতাম ৮০ দিনার, তা দিয়ে স্ত্রীকে ভাড়া বাসায় রাখবো সেই সামর্থ আমার ছিলো না। তাই বাধ্য হয়েই শ্বশুর বাড়িতে রেখে কুয়েত চলে আসি। আমার শ্বশুর বিয়ের পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন, সুতরাং তাদের ফ্যামিলী তেমন সচ্ছল ছিলো না। আমাকে তারা সহযোগিতা করবে এমন সামর্থ তারা রাখতো না। এই কারণে আমার স্ত্রী ছিলো ক্ষুব্ধ। কারণ আমার শ্বশুর বাড়ির আশেপাশে যারা বসবাস করতো, তারা সকলেই ছিলো নামে মুসলিম। তাদের কাজে কামে আচার ব্যবহারে ইসলামের কোন কিছু প্রতিফলিত হতো না। ফলে কারণবশত ঝগড়া কিংবা কথা কাটাকাটি হলে, প্রতিবেশীরা আমার সন্তানদের বলতো, ‘হিন্দুর জন্মা’ স্ত্রীকে অপবাদ দিতো এই বলে যে, হিন্দুর নিকট বিয়ে বসেছে। আমার স্ত্রী এসবসহ্য করতে না পেরে, আমাকে ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়ে ছিলো। আল্লাহর রহমতে এতো ঝড়িঝাপটার পরেও আমাদের সংসার টিকে আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের দেশে কিংবা বিদেশে যারা বাংলাদেশী আছি, তারা সহজে একজন নওমুসলিমকে মেনে নিতে কিংবা সাদরে গ্রহণ করতে কুণ্ঠাবোধ করি। তাদের ধারণা তারা জন্মগত মুসলিম বলে, নামায পড়ুক কিংবা না পড়ুক, আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করুক কিংবা না করুক; তারাই মুসলিম। নও মুসলিম হওয়টা যেন অপরাধ! যা মোটেও বঞ্ছনীয় নয়। পিছনের দিকে তাকান, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় একজন নওমুসলিমের মর্যাদা আল্লাহ তা‘আলা কিভাবে প্রকাশ করেছেন। আসলে বর্তমানে বৃহৎমুসলিম সমাজই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও জ্ঞান থেকে পিছিয়ে আছে, ফলে তারা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, তাহযিব, তামাদ্দুন বুঝা থেকে বঞ্চিত। তাদের ধারণা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েছি, সুতরাং শিরক বিদয়াত, জুলুম নির্যাতন যাই করি না কেন, জান্নাতে আমরা যাবই। ইহুদীদের মতো বলে কিছু দিন জাহান্নামে থাকার পর তো আমরা জান্নাতে ঠিকই যাবো। সুতরাং ইসলামের মূল স্তম্ভ যে পাঁচটি তার কোনটাই সঠিকভাবে পালন করছে না। শুধুমাত্র ঐ অমূলক ধারণার কারণে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন বলেছেন;‘তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। এই অমিয় বাণীটা মুসলিম সমাজকে ভালোভাবে উপলব্ধি করার অনুরোধ রইল।

হিন্দুধর্মে কিছুই নাই। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, গীতায় বলেছেন, ঈশ্বর নিরাকার, তার কোন আকার নাই, রূপ নাই, গন্ধ নাই। মূর্তিপূজা নিরর্থক। আর বেদে রাসূলের আগমনের কথা বলা হয়েছে। এবং তাকে অনুসরণ করার নির্দেশও আছে। তারপরও তারা বিভিন্ন মূর্তিপূজায় অনরর্থক অর্থ ও সময় নষ্ট করছে। হিন্দু ধর্মে মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়েছে। অথচ সৃষ্টির সেরা হয়ে যখন ‘গাছ’কে পূজা করে সেজদা দেয়, তখন গাছকে কি সেরা বানানো হলো না? এতেই প্রতিয়মান হলো যে, তাদের ধর্মগ্রন্থ আর বাস্তব কার্যক্রমে বিরাট ফরাক রয়েছে। হিন্দু ভাইদের প্রতি স্বীয় ধর্ম ভালোভাবে উপলব্দি করার অনুরোধ রইলো।
হিন্দুদের বড় পূজা হলো ‘দূর্গাপূজা’। বিভিন্ন দেব-দেবীর সাথে ওদের বাহন হিসেবে সিংহ, পেঁচা, ইঁদুর ইত্যাদি নিকৃষ্ট জন্তু থাকে। চার দিন পূজা করার পর যখন দশমি দিন আসে, তখন মূর্তিদের সাথে সাথে ঐসব নিকৃষ্ট জন্তুদের পায়েও রং লাগিয়ে সেজদা দেয়। আবার তারাই বলে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব!। তাদের এই আচরণ হাস্যকর বৈ কিছুই নয়।
হিন্দু ধর্মে এক দেবতা আছে- যাকে বলে মনসা, মনসা হলো সাপের রাজা। তাই সাপের দংশন হতে রক্ষা পেতে হিন্দুরা মনসা পূজা করে মনসা দেবীকে তুষ্টকরে। আমি ছোট বেলায় দেখেছি- পাড়ার সব হিন্দু মহিলারা আমাদের বাসায় আসতো। আমার মা দীর্ঘ একমাস ধরে মনসাপূতি নামক পাঠ করতেন। আর সকলে মন দিয়ে শুনতেন। একমাস পর ঘটা করে মনসা পূজা করতো। এ এক বিরাট আয়োজন কত একাগ্রতা ও ভক্তিসহকারে যে তা পালন করতেন, না দেখলে বিশ্বাস করার কথা নয়। অথচ এত শ্রম-আয়োজন-একাগ্রতা পরকালে কোন কাজেই আসবে না। অথচ আল্লাহর মনোনীত ধর্মের অনুসারী হয়ে আমাদের মাঝে খুব কম লোকই ধর্মের প্রতি একাগ্রতা লক্ষ্য করাযায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জরুরি ছিল কুরআনে অনুবাদ ও তাফসীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মহিলাদের মাঝে এবং মসজিদে পুরুষদের মাঝে দারসের ব্যবস্থা করা। এই দারস সারা বাংলাদেশে চালু করতে পারলে মুসলমানদের মাঝে বিরাট জারগণ সৃষ্টি হবে। প্রবাসী প্রত্যেক ভাই-বোনদের প্রতি আমার অনুরোধ রইল, আপনারা যার যার অবস্থান থেকে ইসলামের সঠিক দাওয়াত আকড়িয়ে ধরার চেষ্টা করুন। তবে ইহকাল ও পরকালে সম্মানের সাথে লাভবান হতে পারবেন।
বর্তমানে আমি একটি জামইয়া (সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত সুপার মার্কেট) -এতে সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত আছি। বেতন অতি সামান্য। ১০ ঘণ্টা ডিউটি করে প্রথমে পেতাম ৮০দিনার। আজ তিন বৎসর পর বর্তমানে পাই ১৩৭ দিনার (প্রায় ৩৫০০০ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা)। এই বেতনও আমার জন্য পর্যাপ্ত নয়, সামান্যই বলবো, কারণ কুয়েতে বাসা ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, ব্যক্তিগত খরচ এসব সামাল দিতেই ৪০ দিনার ব্যয় হয়ে যায়। ঐদিকে দেশের পরিবারের জন্য বাসা ভাড়া, বাচ্চাদের স্কুল খরচ বিভিন্ন খরচে প্রায় ৬০ দিনারচলে যায়। তারপরও তো আজ এ অসুখ কাল সে অসুখ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও অতিরিক্ত খরচ রয়েছে। অনেক কষ্ট করে সামান্য কতটুকু বসতভিটা খরিদ করতে পেরেছি। কিন্তু তার উপর ঘর তৈরি করার মত অর্থকড়ি এখনও সঞ্চয় করতে পারিনি। হতাশ হইনি, আল্লাহ আমাকে অবশ্যই সেই ব্যবস্থা করে দিবেন। কারণ সব বিষয়ে সমাধানকারী একমাত্র আল্লাহ এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বাস, আল্লাহর যখন ইচ্ছা হবে, তখন অবশ্যই হবে। কিন্তু আমার পরিবারকে মানাতেপারছি না। দিবানিশি একটাই কথা “অভার টাইম কর, বেশি বেশি টাকা কামাও, বাড়িকর!” কিন্তু তাকে আমি বুঝাতে পারছি না। আমি নওমুসলিম, কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছি। আমাকে আল্লাহর হুকুম, রাসূলের আদর্শ আগে মানতে হবে। তারপর আল্লাহর দয়ায় যা কামাই, তা দিয়েই সব করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে জিনিস পত্রের অত্যাধিক দাম হেতু হয়ত সময় লাগতে পারে। তারপরও দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে মাঝেমধ্যে হতাশায় ভোগী। তার ফলশ্রুতিতে একদিন বাসে করে আই পি সি হতে আমার বাসায় (রাবিয়া) আসার পথে বাসের মধ্যে এক সহযাত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়। আমর সঙ্গে আইপি সির ব্যাগ দেখে, আমার সম্বন্ধে জেনে আমাকে বলে; সোবহান (এলাকার নাম) যান, বিভিন্ন কোম্পানীর ব্র্যাকে ব্র্যাকে যান, আপনার কথা তাদেরকে খুলে বলেন, আপনাকে সাহায্য করবে। তার কথা ধরে একদিন সোবহান যাই। আশ্চর্যের ব্যাপার! সেখানে যেয়ে ইসলামের মিলন মেলা দেখে আমি সব ভুলে যাই এবং সেই মিলনমেলায় নিজেকে শামিল করে সেখানে রাত যাপন করে পরের দিন ফজরের নামায পড়ে বাসায় আসি। সেই রাতে বাংলাদেশ থেকে আগত এক বড় দাঈ বয়ান করছিলেন। এত সুন্দর সুন্দর কথা বলছিলেন, যদি কোন ব্যক্তি পর্যায়ক্রমে শুনতে থাকে, তবে অবশ্যইসে একজন আদর্শ মুসলমান হতে বাধ্য।
যাক সেই দিন বয়ানে ওলি বলছেন:একদিন এক বাঘ শিকারের উদ্দেশ্যে লোকালয় এসে হাজির। ছাগলের পালের সামনে এসে, যেই না শিকার ধরার জন্য তৈরি হচ্ছিল, হঠাৎ তার নজরে পড়লো যে ছাগলের পালের মধ্যে এক বাঘের বাচ্চা রয়েছে। বাঘ তখন শিকার ধরার কথা ভুলে গেল। সে মনোযোগসহকারে দেখতে লাগলো, বাগের বাচ্চাটি অন্যান্য ছাগলের বাচ্চার সাথে ছাগলের দুধ খাচ্ছে। ছাগলের মত মে মে করে ডাকছে, ছাগলের পালের ঘাস খাচ্ছে ওখেলা করছে। তখন বাঘটি শিকার করা ভুলে গিয়ে বিষয়টি জানার জন্য বাঘের বাচ্চাটিকে ধরলো। বাঘ জিজ্ঞেস করলো, তুই বাঘের বাচ্চা, আর ছাগল হলো তোর আহারের বস্তু, আর তুই কিনা সেই ছাগলের দুধ খাচ্ছিস, ছাগলের মত ডাকছিস, তাদের সাথে খেলা করছিস, ব্যাপারটা কি? কিন্তু বাঘের বাচ্চা কিছুতেই স্বীকারকরতে চাচ্ছে না, সে যে বাঘের বাচ্চা। সে বলছে আমি ছাগলের বাচ্চা। এটাই আমার জায়গা। তখন বাঘ, বাচ্চাটিকে নিয়ে একটি কূপের সামনে নিয়ে বললো, এবার নিচের পানির দিকে তাকা, বাচ্চাটি পানির দিকে তাকিয়ে দেখলো, তার চেহারা আর বাঘের চেহারা হুবহু এক। সে একবার নিজের চেহারা দেখে আবার বাঘের চেহারা দেখে। তারপর বিশ্বাস জন্মে যে, আসলেই সে বাঘের বাচ্চা বাঘ। আজ আমাদের মুসলমানদের মধ্যে ৮০% বাঘের বাচ্চার মতো দুনিয়ার ধোঁকায় পরে সে যে, বাঘ সে কথা ভুলে গেছে। এটি যদিও রুপক গল্প। কিন্তু এই গল্পের মাঝে মুসলমানদের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে। আজ মুসলমানদের অবস্থা হয়েছে আলোচ্য গল্পের বাঘের বাচ্চার মত।
হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) বর্ণনা করেন: আমি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাস করলাম। হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ ও ধার্মিক লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। যখন অসৎকাজ, পাপাচার বৃদ্ধি পাবে। (বুখারী: ৭১৩৫)
তাই সকল পাঠক পাঠিকাদের প্রতি আমার অনুরোধ যে, ইসলামের সঠিক দাওয়াত পেশ করার কাজে আমরা সকলে নিজেকে আত্মনিয়োগ করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন

Related Post