১। আলহাজ্ব লর্ড-হেডলি আল ফারুক
আলহাজ্ব লর্ড-হেডলি আল ফারুক ১৮৫৫ইং ইংল্যান্ড জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাউজ অব লড্স্ এর সদস্য ছিলেন এবং প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ একজন সৈনিক, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও গ্রন্থকার ছিলেন। তিনি ১৯১৮ খৃষ্টাব্দের ১৬ই নভেম্বর রোজ শনিবার ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাঁর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আমার বন্ধুদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আমি মুসলমানদের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছি, কিন্তু আসলে তা হইনি। আমার বর্তমানকার এ বিশ্বাস প্রকৃতপক্ষে বহু বছরের চিন্তা গবেষণার ফল। স্বতস্ফুর্ত মুক্ত চিন্তা ভাবনা ও বিচার বিবেচনার মাধ্যমেই আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি” এ ছাড়াও তিনি এক চমৎকার তথ্য পরিবেশন করেছেন। তিনি পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেনঃ
“আমি বিশ্বাস করি যে, হাজার হাজার নর-নারী অন্তরে মুসলমান। তারা শুধু প্রচলিত প্রথা, প্রতিকূল পরিবেশ, সমালোচনার ভয়, ক্লেশ অশান্তি ও অবস্থান্তর এড়াবার ইচ্ছা ইত্যাদি কতিপয় কারণে সেই সত্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে পারে না যা তারা মনে মনে বিশ্বাস করে।”
“আমি জানি যে আমার আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে পথভ্রষ্ট মনে করবে এবং আমাকে মঙ্গল কামনার অযোগ্য মনে করবে তবু আমি জেনে বুঝেই এ পথে প্রথম পা বাড়ালাম। যদিও আজ আমার এ মত-বিশ্বাসের কথা আমি প্রকাশ করছি। কিন্তু এ বিশ্বাস আমার বিশ বছর পূর্বের। আমি তখনও যা বিশ্বাস করতাম এখনও তাই বিশ্বাস করি। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে এতদিন আমি আমার বিশ্বাস প্রকাশ করতে পারিনি, আর আজ সেই বিশ্বাস আমি প্রকাশ করছি। যতদিন আমার বিশ্বাস প্রকাশ করিনি ততদিন আমি আমার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিকট খুবই প্রশংসার পাত্র ছিলাম। আর সেই সত্য প্রকাশের কারণেই তাদের নিকট আর প্রশংসার পাত্র নেই বরং তাদের সবকিছু থেকেই বঞ্চিত।”
যেসব খ্রিস্টান মিশনারীগণ মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করে, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি (লর্ড আল ফারুক) বলেছেন, “যাদেরকে ওরা খ্রিস্টান বানাতে চায়, তারা তো (মুসলমানেরা) মিশনারীদের চাইতেও শ্রেষ্ঠতর খ্রিস্টান। আমি খুব বিবেচনা করেই ‘শ্রেষ্ঠতর খ্রিস্টান’ বলেছি। যীশু খ্রিস্টের প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গে বর্তমান খ্রিস্টানদের নীতি-বিশ্বাসের যে মিল আছে তার চাইতে অনেক অনেক গুণ বেশি মিল রয়েছে মুসলমানদের উদার মানসিকতা ও নীতি-বিশ্বাসের। আমি এসব খুব গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখেছি। আমি আশা করব আমার যারা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পূর্বের স্বজাতি যার খাঁটি খ্রিস্টান তার কোন বিরূপভাব পোষণ না করেই আমার এ পথেই অগ্রসর হবেন। আশা করি যারাই এ পথে অগ্রবর্তী হয়ে আসবেন তারাই সুখী হবেন।”
২। স্যার আব্দুল্লাহ আর্চিবালড্ হ্যামিলটন (ইংল্যান্ড)
স্যার আব্দুল্লাহ আর্চিবালড হ্যামিলটন ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ই ডিসেম্বর শুক্রবার ইংল্যান্ড জন্মগ্রহণ করেন এবং ৪৭ বছর বয়সে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২০শে ডিসেম্বর বুধবার তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি একজন সুপরিচিত ইংরেজ কুটনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বলেছেনঃ
“নিজের ইচ্ছা মুতাবিক কাজ করার মত বয়সে যখন পৌঁছি অর্থাৎ যখন থেকে স্বাধীনভবে মুক্ত মন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার মত বয়সে পৌঁছি তখন থেকেই আমি ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। আমার মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে এক বিরাট আলোড়ন।
আমার জন্ম হয় খ্রিস্টান ফ্যামিলিতে, লেখাপড়া করি খ্রিস্টানদের মধ্যে থেকে, বড় হয়েছি খ্রিস্টান পরিবেশে তা সত্ত্বেও আস্থা স্থাপন করতে পারিনি চার্চের শিক্ষার উপর। বরং যুক্তি ও সাধারণ জ্ঞানকে খ্রিস্টানদের অন্ধ বিশ্বাসের উপর স্থান দিয়েছি। আমার মুক্তবুদ্ধি অন্ধ বিশ্বাসের কাছে নতি স্বীকার করেছি। আমি ইসলাম গ্রহণ করে আমার বিবেকের নির্দেশ পালন করেছি এবং দেখেছি ইসলাম গ্রহণের পর আমি পূর্বের তুলনায় অনেক উত্তম ও সত্যিকার অর্থেই ভাল মানুষ হতে পেরেছি।
ইসলাম শিক্ষা দেয় বা সত্যিকার অর্থে মন্দ তা বর্জন করতে আর যা সত্যিকার অর্থে ভাল তা গ্রহণ করতে। ইসলাম ধনীদের শিক্ষা দেয় গরীবদেরকে দান করতে আর শক্তিমানদের শিক্ষা দেয় নিরীহদের পালন করতে। একমাত্র ইসলামই শিক্ষা দেয় মানুষের জন্মগত কোন পাপ নেই। আর শিক্ষা দেয় যে, নর ও নারী একই উপাদানে সৃষ্টি, একই আত্মার অধিকারী এবং তাদেরও বুদ্ধিবৃত্তি, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক থেকে সফলতা অর্জন করার সমান যোগ্যতা রয়েছে। যা অন্য কোন ধর্ম বলে না। আমি দেখেছি ইসলামের মধ্যে সাম্যের বাস্তব রূপ; যা আমাকে প্রভাবান্বিত করেছে।
তিনি বলেছেন, আমি মুসলমানদের সংসর্গে সব সময়ই খুব আরাম বোধ করেছি। তিনি বলেছেন ইসলামের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়াজন মনে করি না, কারণ তা সর্বজন স্বীকৃত। মসজিদে আজান হলে কিংবা ধনী কিংবা গরীব কিংবা রাজা কিংবা ভৃত্য, সবাই একই সঙ্গে গায়ে গায়ে মিলে দাঁড়িয়ে যায় নামায আদায় করতে। তারা মুছে ফেলে সব উঁচু নিচু ছোট বড়ের ভেদাভেদ। ঠিক এই ধরণের সাম্যের অনুশীলনী দেখতে পাইনি খ্রিীষ্টয় ধর্মসহ অন্য যে কোন ধর্মের মধ্যে।
আমরা আশা করি, যারাই এভাবে মুক্তমন নিয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনা করবেন তাদেরই জ্ঞানে ধরা পড়বে মহাসত্যের সন্ধান।
আমরা আরজ করব প্রতিটি মানবের নিকট-আসুন! আমরা যার যার নিজের স্বার্থেই একবার সন্ধান করি মহাসত্যের এবং আসুন তা গ্রহণ করি। মৃত্যুর পর এমন একদিন আসবে যেদিন এক আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী থাকবে না এবং সেদিন কোন গোড়ামিই কাজে লাগবে না।
চিন্তা করুন আমাদের প্রত্যেকেরই সামনে এমন একটা মুহূর্ত রয়েছে যেদিন আমাদের এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদেরকে চির অন্ধকারে মাটি চাপা দিয়ে অথবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে অন্যেরা যার যার ঘরে চলে যাবে, কিন্তু আমরা কোন দিনই আর ফিরে আসব না। এরপরে যে জিন্দেগী শুরু হবে সেটা হবে কর্মফল ভোগের জিন্দেগী। তখন আর সময় থাকবে না কর্মের এবং বিশ্বাস ও বিশ্বাস মুতাবিক কাজকে সংশোধন করে নেয়ার। কাজেই আসুন আজই সময় থাকতে সঠিক পথ বেছে নেই।”