বিস্ময়কর আল কুরআন

jpeg_14272মহাগ্রন্থ আল কুরআন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার পক্ষ থেকে সমগ্র মানবজাতির জন্য এক সুবিশাল জ্ঞানভাণ্ডার এবং আল্লাহ তায়ালার এক সুপরিকল্পিত নির্দেশনার বিন্যাস। কুরআন নাজিলের হাজার হাজার বছর আগের ও পরের এমন সব তথ্য এতে লিপিবদ্ধ আছে, যা বর্তমান সময়ে এটিই প্রমাণ দেয় : এই কুরআন সেই মহান সত্তার সৃষ্টি যিনি অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং এই মহান সত্তা তাই সব সৃষ্টির স্রষ্টা হওয়া যুক্তিযুক্ত। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু আবিষ্কার করেছেন যা দেড় হাজার বছর আগের নাজিলকৃত কুরআনে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন। আর কুরআনে কিছু জিনিস এমনভাবে এসেছে যে, তা মুসলিম অমুসলিম উভয়কে কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণার দ্বার খুলে দিয়ে বলে এক আল্লাহর কাছে এই সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ ব্যতীত কোনো মুক্তি নেই। এমন কিছু নিদর্শনের কথাই বলব।

১৯৭৩ সালে সিরিয়ার ‘এরলুস’ নামক একটি পুরনো শহরে খননকাজের সময় কিছু পুরনো লিখন পাওয়া যায়। পুরনো লিখন থেকে চার হাজার বছর আগের ‘ইরাম’ নামক এক শহরের উল্লেখ আছে। কোনো এক সময় এরলুস অঞ্চলের লোকজন ‘ইরাম’ গোত্রের লোকদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। কিন্তু ইরাম শহরের নাম কোনো সাম্রাজ্যের ইতিহাসে পাওয়া যায়নি। তা আছে পবিত্র কুরআন মজিদের ‘সূরা আল ফজর’-এর সাত নম্বর আয়াতে। এ সত্যটা আবিষ্কৃত হলো বিংশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে। প্রশ্ন দেড় হাজার বছর আগের কুরআনে তা এলো কী করে? এটি এই প্রমাণ করে যে, কুরআন মজিদ আল্লাহর তায়ালার বাণী।

‘সাবয়া সামওয়াত’ কথাটার অর্থ হলো ‘সাত আসমান’ আশ্চর্যের বিষয় হলো, ‘সাত আসমান কথাটি কুরআনে সাতবারই এসেছে। ‘শাহরুন’ মানে মাস। কুরআনে এ শব্দটি এসেছে ১২ বার। অবাক করার মতো বিষয় যে, এক বছরে ১২ মাস। চান্দ্র বছরের হিসাবানুযায়ী গড়ে বছরের প্রতি মাসে ৩০ দিন। বিস্ময়কর বিষয় যে, চাঁদের আরবি প্রতিশব্দ ‘কামার’ কুরআনে এসেছে ৩০ বার, যা মহান আল্লাহর বিজ্ঞতার পরিচয় দেয়।

পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থান কোনটি? সেই স্থানটি সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জর্ডানের পতিত ‘ডেড সি’ এলাকা। মাত্র কিছু দিন আগে এক ভূ-জরিপ অনুযায়ী এটি প্রমাণিত হয়েছে। যা ‘সি লেবেলের’ ৩৯৫ মিটার নিচে। পবিত্র কুরআনের সূরা আর রোমের তিন নম্বর আয়াতে ‘ফি আদনাল আরদ’ দ্বারা আল্লাহ গোটা ভূমণ্ডলের ‘সর্বনিম্ন অঞ্চল’ বলতে ডেড সিকে নির্দেশ করেছেন দেড় হাজার বছর আগে। আল্লাহ যে সর্বজ্ঞানী এটি তারই প্রমাণ।

কুরআনে ‘ইনসান’ শব্দটি এসেছে ৬৫ বার। এবার ইনসান বানাবার উপকরণগুলো কুরআনের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিলিয়ে দেখা যাক। ‘নুতফা’ (জীবনকণা) এসেছে ১২ বার, লাহম (গোশত) এসেছে ১২ বার, এজাম (হাড়) এসেছে ১৫ বার, ‘তোরাব’ (মাটি) এসেছে ১৭ বার, ‘আলাক’ (রক্তপিণ্ড) এসেছে ছয় বার এবং ‘মোদগা’ (মাংসপিণ্ড) এসেছে তিন বার। এসব উপাদান যোগ করলে হবে ৬৫ এবং এসব উপাদান দিয়ে বানানো ‘ইনসান’ কুরআনে ৬৫ বার উল্লেখ আছে। এটি মহান আল্লাহর জ্ঞানের ও পরিকল্পনার সূক্ষ্মতারই প্রমাণ।

সূরা আল হাদিদের ২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা লোহা সম্পর্কে বলেছেন  ‘আমি লৌহ অবতীর্ণ করেছি যাতে রয়েছে প্রচুর শক্তি এবং মানুষের জন্য অনেক কল্যাণ।’ অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন লোহা নাজিল বা অবতীর্ণ করেছেন। এই সত্যটা আবিষ্কৃত হয়েছে এই বিংশ শতাব্দীতে। বিজ্ঞানীরা অবগত হয়েছেন যে, লোহা উৎপন্নের জন্য ১৫ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন, যা পৃথিবীতে পাওয়া অসম্ভব। এই তাপমাত্রা শুধু সূর্যেই পাওয়া সম্ভব। লোহার এই নিদর্শন আমাদের এই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নিশ্চয়ই এই মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা থাকাটা যুক্তিযুক্ত এবং তিনি উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।

সবিশেষে বলতে চাই, মহাগ্রন্থ আল কুরআন শুধু পথনির্দেশিকা সংবলিত কোনো গুরুগম্ভীর পুস্তিকা নয়। এ মহাগ্রন্থ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা আমাদের সামনে এক বিস্ময়কর কিন্তু নিখুঁত সামঞ্জস্য তুলে ধরতে সক্ষম, যা মহাবিশ্বে পৃথিবীর মধ্যকার মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টি এবং মানুষের পারস্পরিক অবস্থানে বিদ্যমান। আর যা অবশ্যই আমাদের সন্দেহপূর্ণ, এলোমেলো এবং পরকালীন চিন্তাবিহীন জীবনপদ্ধতিতে মহান রাব্বুল আলামিন সম্বন্ধে দৃঢ় বিশ্বাস এনে দেবে।

==== ====

Related Post