কুরআন তেলাওয়াতের ফজীলত

تلاوة القرآن

১- সর্বোত্তম ইবাদত   আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং ইহকালিন কল্যাণ ও পরকালিন মুক্তির জন্য মানুষ ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত করে থাকে এর মধ্যে কুরআন তেলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম ইবাদত ।  মহানবী (সা) বলেন,ইবাদতসমূহের মধ্যে উত্তম ইবাদত হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত করা । (মুসলিম )

কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে সাহাবাগণ ও ওলামায়ে কেরামগণের মতামত হল “ফরজ ইবাদতের পর কুরআন তিলাওয়াত যাবতীয় যিকিরের চেয়ে উত্তম।

২- আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা।

৩-আল্লাহর সাথে কথোপকথন; আল-কুরআনের পবিত্র আয়াতসমূহ আল্লাহর বাণী। কুরআন যেহেতু আল্লাহর বাণী সেহেতু ইহার প্রত্যেকটি শব্দ ও বাক্য অলৌকিকত্ব ও আধ্যাত্মিকতা বিদ্যমান। বান্দা যখন একাগ্রচিত্তে এ কুরআন তিলাওয়াত করে তখন সে প্রকারান্তে আল্লাহ তায়ালার সাথেই কথা বলে ।  

  ৪- পিতা- মাতার সম্মান বৃদ্ধি: কুরআন অধ্যায়ন করে যে ব্যক্তি কুরআনের উপর আমল করবেন কিয়ামতের দিন তার পিতা মাতাকে উচ্চ সম্মানে সমাসীন করা হবে ।

রাসূল (সা) বলেন:হযরত সাহল বিন মুয়ায (রা) বলেন । রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে এবং তাতে যা আছে তার উপর আমল করেছে, তার পিতা মাথাকে কিয়ামতের দিন এমন একটি টুপি পরানো হবে যার কিরণ সূর্যের কিরণ হতে উজ্জল দেখাবে;এমতাবস্থায় সে ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং তার হুকুম অনুযায়ী আমল করে। (আবু দাউদ)  

৫- অন্তরের মরিচা দূর করে : কুরআন তেলাওয়াত অন্তরের মরিচা দূর করে। তাই বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।

ইবনে ওমর (রা) বলেন: একদা রাসূল (সা:) বলেছেন: এই অন্তরসমূহে মরিচা ধরে’ যেভাবে লোহায় মরিচা ধরে যখন উহাতে পানি লাগে । তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো: হে আল্লাহর রাসূল! উহার পরিশোধক কী? (উহা থেকে বাঁচার উপায় কি?) তিনি বললেন: বেশি বেশি মূত্যুর স্মরণ করা এবং কুরআন তেলাওয়াত করা । (বায়হাকী )

৬-ইহকালে জ্যোতি পরকালে সঞ্চয়: পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যে ইহকালে জ্যোতি পরকালে সঞ্চয় নির্ধারিত রয়েছে । রাসূলের হাদীস থেকে জানা যায় হযরত আবু যর (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি বললাম:হে আল্লাহর রাসূল (সা) আমাকে উপদেশ দিন । তিনি বললেন: আল্লাহকে ভয় করা তোমাদের কতর্ব্য। কেননা এটা ইসলামের মূল মন্ত্র । আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল (সা) আমাকে আর একটা উপদেশ দিন । তিনি বললেন:তোমাদের কুরআন পড়া উচিত; কেননা কুরআন তোমাদের জন্য ইহকালে জ্যোতি পরকালে সঞ্চয় । (ইবনে হাব্বান)

৭-সুপারিশ করার অধিকার লাভ: যে ব্যক্তি কুরআনের শিক্ষা লাভ করবে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করবে ও কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবন গঠন করবে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য সুপারিশ করার অধিকার লাভ করবে ।

হযরত আলী (রা.) বলেন; রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি কুরআন পড়েছে এবং মুখস্থ করেছে; অতপর এর হালালকে হালাল এবং হারাম জেনে আমল করেছে,তাকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন যাদের দোযখবাসী হওয়া অবধারিত ছিল । (ইবনে মাজাহ )

৮-আল্লাহর নিকট সম্মানিত হওয়ার মাধ্যম: কুরআনের জ্ঞানই হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞান।  আর এ জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের মধ্যেই নিহিত আছে মানবতার প্রকৃত কল্যাণ । ইসলামের দৃষ্টিতে এই জ্ঞানের বাহক ও শিক্ষার্থীরাই হচ্ছে সর্বোত্তম মানুষ ।

 

৯- অত্যধিক সওয়াব লাভের মাধ্যম: কুরআন যেহেতু আল্লাহ পাকের বাণী ইহার তিলাওয়াতে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন । তাই কুরআন অত্যধিক তিলাওয়াত করা সওয়াব লাভের মাধ্যম। কুরআন তিলাওয়াতকারীকে এবং এর উপলব্দিকারীকে অধিক সওয়াব দান করে থাকেন । এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা) বলেন:

১০- জান্নাত পাওয়ার উত্তম মাধ্যম: যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত ও মুখস্থ করেছে এবং যথাযথভাবে তার আমল করেছে তার জন্য রয়েছে বেহেশতের সুসংবাদ । এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন: কিয়ামতের দিন কুরআন তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে, কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকো আর বেহেশতে প্রবেশ করতে থাকো। অপর হাদীসে বলা হয়েছে:হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল আস (রা.) বলেন । রাসূল (সা.) বলেছেন: কুরআনের সাথীকে বলা হবে, তুমি পড়তে থাক, আর উপরে আরোহন করতে থাক । তুমি দুনিয়াই যে ভাবে তিলাওয়াত করতে । তুমি সব শেষে যে আয়াত পড়বে সে খানেই তোমার বাসস্থান । (তিরমিযী)

১১-কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে: কুরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে । কাজেই বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত । এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে উল্লেখ আছে যা হযরত আবু হুরায়রা (রা.)হতে রেওয়ায়েত আছে: কুরআন তিলাওয়াত শ্রেষ্ঠ ইবাদত । তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে । (মুসলিম )

১২- অন্তরের ইচ্ছা পূরণ হয়: কুরআন তিলাওয়াতকারীর অন্তরের ইচ্ছা আল্লাহ তায়ালার কাছে চাওয়ার আগেই তা পূরণ করে দেন । এ প্রসঙ্গে হাদীসে বলা হয়েছে ।

হযরত আবু সাঈদ (রা.) বলেন । রাসূল (সা:)বলেছেন:আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:যে ব্যক্তি কুরআন অধ্যয়নে নিয়োজিত থাকায় আমার নিকট কিছু চাওয়ার সময় পায় না তাকে আমি ঐব্যক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত দান করব যে আমার কাছে চায় । আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টির ওপর আল্লাহর যেমন শ্রেষ্ঠত্ব তেমনি দুনিয়ার অন্যসব বাণীর ওপর আল্লাহর কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ।(তিরমিযি)

১৩- ফিরেশতাদের সমসম্মান দেয়া হবে: কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ ফিরেশতাদের সঙ্গী হবেন । সম্মানের দিক দিয়ে তাদের সমতুল্য হবেন ।এ প্রসঙ্গে রাসূলের বাণী: হযরত আয়েশা (রা) বলেন: রাসূল (সা) বলেছেন: কুরআনের অভিজ্ঞ ব্যক্তি ফিরেশতাগণের সাথে থাকবেন। (বুখারী,মুসলিম)

হযরত আয়েশা (রা) বলেন: রাসূল (সা) বলেছেন:কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত পূণ্যবান লেখক ফিরেশতাগণের সঙ্গী (সম্মানের দিক দিয়ে তারা সম্মানিত ফিরেশতাগণের সমতুল্য) আর যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে মুখে আটকে যায় ,বার বার ঠেকে যায় এবং উচ্চারণ করা বড়ই কঠিন বোধ করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব । শুধু তিলাওয়াত করার জন্য একগুণ আর কষ্ট করার জন্য আর একগুণ। (বুখারী,মুসলিম)

১৪-কুরআনহীন হৃদয় শূন্য ঘরের সমতুল্য: মানব জাতিকে জাহিলিয়াতের অন্ধকার হতে উদ্ধার করে হেদায়েতের রাজপথ দেখিয়েছেন আল-কুরআন । এ দিক দিয়ে কুরআন হচ্ছে উত্তম হেদায়েতকারী গ্রন্থ । কাজেই এ কুরআন যার অন্তরে নেই সে হৃদয় শূন্য ঘরের সমতুল্য তাতে কোন সন্দেহ নেই । রাসূল (সা) বলেছেন:যে হৃদয় আল-কুরআনের কোন জ্ঞান নেই সে হৃদয় শূন্য ঘরের সমতুল্য ।(তিরমিযী)

আসুন আমরা কুরআন তেলাওয়াত করি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের পূণ্য কামাই করি । মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন

Related Post