Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

জাকাতগ্রহিতাকে স্বাবলম্বী করুন

Originally posted 2014-02-20 13:00:21.

images[4]

জাকাত ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত। জাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র ও বৃদ্ধি। হিজরি দ্বিতীয় সনে মতান্তরে চতুর্থ সনে জাকাত ফরজ হয়। এর আগেও জাকাতের বিধান ছিল। তবে জাকাতের অংশ নির্ধারিত ছিল না। ইসলাম জাকাত অনুমোদন করে সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখেছে। জাকাতের দ্বারা ধনী ও দরিদ্রের মাঝে কিভাবে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ হয় তা মহানবী সা: বাস্তবে দেখিয়ে গিয়েছেন। পরস্পরের এ বন্ধুত্বকে ইসলামের মহান আদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জাকাত সাম্যের জন্য আর্থিক বুনিয়াদ, সমাজ কল্যাণের চাবিকাঠি, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষক। ইসলাম মানবসমাজকে মধ্যপন্থার এক নির্ভুল অর্থনীতি উপহার দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনের অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ইসলামের এ মধ্যপন্থা সার্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। ইসলামি অর্থনীতিতে জাকাত যদিও ধনী ব্যক্তির প্রতি ফরজ করা হয়েছে,

কিন্তু মূলত এটি একটি সামাজিক ও জাতীয় কল্যাণ-ব্যবস্থা। ২০০৬ সালের সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্যমতে জানা গেছে যে, বাংলাদেশে ভিুকের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। এর মধ্যে ঢাকায় ৩০ হাজার, চট্টগ্রামে ১০ হাজার, খুলনায় আট হাজার, রাজশাহীতে ছয় হাজার, বরিশালে চার হাজার, সিলেটে চার হাজার, ১২টি বড় জেলা শহরে সাড়ে তিন হাজার করে ৩৬ হাজার, ৪৮টি ছোট জেলা শহরে গড়ে দুই হাজার করে ৯৬ হাজার, উপজেলা সদর ও পৌরসভাগুলোর প্রতিটিতে গড়ে ৫০০ করে এবং চার হাজার, ৪০০ ইউনিয়নের প্রতিটিতে গড়ে ৭৫ জন করে ভিুক রয়েছে এবং হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দুই কোটি ৫২ লাখ। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী সারা বিশ্বে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ১৭৫ কোটির উপরে, যা মোট বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। প্রতি রাতে বিশ্বে ৭৫ কোটি মানুষ না খেয়ে ঘুমায়, প্রতি বছর ৪২ হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যায়।

পৃথিবীর মোট সম্পদের ৮২.৭% ধনীরা এবং ধনীদেশগুলো ভোগ করছে, বাকি মাত্র ১৭.৩% সম্পদ ভোগ করে ৮০% গরিব দেশগুলো। ধনীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ২৭ বিলিয়ন ডলার গরিবের কাছে আসে, আর গরিবদের কাছ থেকে ধনীদের কাছে যায় ৫৬ বিলিয়ন ৩৬ ডলার। বাংলাদেশের এক কোটি ধনীর কাছে ২০ কোটি মানুষের সুখ-শান্তি, সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে। মাত্র ১০ শতাংশ খাদ্য ঘাটতি ৯০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষকে ুধা ও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়। ১৯৮২ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ সরকার জাকাত তহবিল অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় জাকাত তহবিল গঠন করে,

যেই ফান্ডে ইচ্ছাকৃতভাবে যে কেউ তার জাকাতের টাকা দিতে পারে। এখানে বাধ্যবাধকতা নেই। যদি বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করা যেত তাহলে বিত্তবানদের কাছ থেকে প্রতি বছর দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি জাকাত আদায় করা যেত,যার দ্বারা পৌনে দুই কোটি মানুষের আর্থিক ও নৈতিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হতো। আর তা হলে সম্ভবত ছোট এই দেশে ছয় লাখ ভিুক ও দুই কোটি ৫২ লাখ মানুষ হতদরিদ্র থাকত না। আল্লাহ পাক সূরা আল জারিয়াতের ১৯ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘এবং তাদের ধন সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক।’ বর্তমানে বিশ্বে সম্পদের অভাব নয়; বরং ওই সম্পদের ওপর জনগণের অধিকারহীনতাই দারিদ্র্য সমস্যার প্রধান কারণ। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জিত হয়। জাকাত শব্দটি ৩২ বার পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করার পরও যারা তা আদায় করবে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন ‘আল্লাহ পাক তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন এ ধারণা করে না এ কৃপণতা তাদের জন্য কল্যাণকর হবে; বরং এটা তাদের জন্য অত্যন্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। শিগগিরই তাদের আগুনের বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে কেয়ামতের দিন, যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল।

(আল ইমরান) অন্যত্র বলা হয়েছে, যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে রাখে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আজাবের কথা শুনিয়ে দাও। সেদিন পুঞ্জীভূত সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা ললাটে, পার্শ্বদেশে এবং পৃষ্ঠদেশে দগ্ধ করা হবে। আর বলা হবে এটা ওই জমাকৃত সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে; সুতরাং এখন তার স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা তাওবা)

জাকাত আদায় না করার ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বনবী সা:-ও কঠোর আজাবের কথা বর্ণনা করেছেন। অন্য দিকে যারা জাকাত আদায় করবে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,‘যারা জাকাত আদায় করে তারা সফলকাম।’ বিশ্বনবী সা: বলেন, ‘যারা জাকাত আদায় করবে তাদের বিভিন্ন প্রকার আজাব থেকে রক্ষা করা হবে। যথা কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেয়া হবে, জাহান্নামের আগুনের জন্য তার শরীর হারাম করে দেয়া হবে।’ জাকাত প্রদানের খাতসমূহ হলো মিসকিন যার কিছু নেই। ফকির যার একদিন চলে এমন কিছু নেই, ঋণগ্রস্ত, সম্বলহীন, মুজাহিদ, সম্বলহীন পথিক। আমাদের দেশে জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যে দৃশ্য দেখা যায় তা খুবই দুঃখজনক। মাহে রমজান এলে বিভিন্ন শপিং মলে ব্যানার টানানো হয়, যাতে লেখা থাকে এখানে জাকাতের কাপড় পাওয়া যায় আর সবারই জানা থাকে যে ওই কাপড়গুলো সাধারণ কাপড়ের চেয়ে অনেক বেশি নিম্নমানের। আর কিছু বিত্তবান সে কাপড় কেনে। এলাকার গরিবদের একত্র করা হয় এবং একটি করে কাপড় জাকাত হিসেবে দিয়ে থাকে,যা নিতে এসে অনেকেই পদপিষ্ট হয়। তার পরও আশাভরা মন নিয়ে আসা মানুষগুলো কাপড় নিয়ে স্ব স্ব গৃহে চলে যায়; কিন্তু তা এতটাই পাতলা যা পরার মতো উপযোগী নয় বিধায় পরতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমরা যদি একটু ভেবে দেখি যে, যেই কাপড়টা আমি জাকাত প্রত্যাশির হাতে তুলে দিলাম এই মানের কাপড় যদি আমার পরিবারের কোনো সদস্যকে দিতাম সেকি তা গ্রহণ করতে চাইত। অবশ্যই না।

তাই আসুন আমরা জাকাত প্রদানে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করি আমরা তালিকা করি আমাদের আত্মীয় প্রতিবেশির মধ্যে কতজন জাকাত পেতে পারে। এদের মধ্যে থেকে ২০১৩ সালে কিছু সংখ্যককে ছোট ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেই। কিছু মহিলাদের সেলাই মেশিন কিনে দেই, কিছু বেকারকে ভ্যান-রিকশা কিনে দেই। কাউকে ঋণমুক্ত করে দেই। কাউকে পড়ালেখা চালানোর জন্য এককালীন ফান্ড গঠন করে দেই, কাউকে ছোট একটি খামার করে দেই। কাউকে একটি গাভী বা দুটো ছাগল কিনে দেই  এভাবে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে দেখা যাবে পাঁচ বছরে আশপাশের পরিবারগুলো স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এভাবে যদি সব বিত্তবান ব্যক্তি উদ্যোগ নেন তাহলে বাংলাদেশ দারিদ্র্য মুক্ত হবে, সার্থক হবে আমাদের জাকাত প্রদান।

Related Post