সুন্নাহর আলোকে যাকাতের গুরুত্ব

11

ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে সেইসব লোকদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ যুদ্ধ করার জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত দেয় ”। (বুখারী ও মুসলিম)
জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে যে, “আমি আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট বায়য়াত গ্রহণ করলাম নামায প্রতিষ্ঠা করতে, যাকাত দিতে এবং মুসলমান ভাইদের সাহায্য ও কল্যাণকর কাজ করতে ”। (বুখারী ও মুসলিম)
ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল- এতে সাক্ষ্য দেয়া, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দেয়া, শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ থাকলে হজ্জ করা এবং রমযান মাসে রোযা রাখা ”। (বুখারী ও মুসলিম)

যাকাত না দেয়ার শাস্তি

যে যাকাত দিতে অস্বীকার করে সে কাফির। প্রথমেই তাকে সংশোধন করতে চেষ্টা করতে হবে। যদি সে যাকাত না দিতে ক্রমাগত জেদ করে, তবে ইসলামি আইনে তা হত্যাযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত। তবে সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের উপরে ইসলামের নিয়মনীতি সম্যক ওয়াকিবহাল না থাকার কারণে কিছুটা নমনীয় হওয়া যাবে। তাকে যাকাত দিতে আদেশ দিতে হবে যতক্ষণ না সে যাকাত দিতে স্বীকার করে এবং যাকাতের বিধান মানিয়া চলে। যে ব্যক্তি যাকাত দেওয়া ফরজ বলে স্বীকার করে, কিন্তু উহা দেওয়া থেকে বিরত থাকে, সে পাপী, কিন্তু কাফির নহে। বরং মুসলিম শাসক সাজা প্রদানের মাধ্যমে তাকে যাকাত দিতে বাধ্য করবেন।
যদি কোন শক্তিশালী জনগোষ্ঠী যাকাত দেওয়া থেকে বিরত থাকে যদিও তারা যাকাতের বিধান স্বীকার করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে যতক্ষন না তারা যাকাত দেয়। আবু হুরায়রার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, “যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত লাভ করলেন এবং আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খলীফা নিযুক্ত হলেন তখন কয়েকটি আরবগোত্র ধর্মদ্রোহী হলো। হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে বললেন, “কেন আপনি এই লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঐ সব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা মেনে নেবে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই, যারা এরূপ বাণীতে বিশ্বাসী, তাদের ধনসম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা হবে যদি তারা অন্য কোন ন্যায়সঙ্গত বিধানের পরিপন্থী কাজ না করে যা আল্লাহই ভাল জানেন ”?
এ কথার পরে আবুবকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য টেনে আনে, কেননা ধনীদের জন্য যাকাত দেয়া ফরজ। আল্লাহ কসম, এমন কি আমি যুদ্ধ করবো তাদের বিরুদ্ধেও যারা একটি দড়িও (উটের পা বাঁধার জন্য) যা তারা আল্লাহ রাসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত হিসাবে দিতো, তা দিতে অস্বীকার করে”। ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, “ তাহলে আমি স্বীকার করে নিলাম, আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সঠিক ছিলেন”।

আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আরও বলেছেন, আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যারা গরীবদের প্রাপ্য (যাকাত) দেয় না তারা শেষ বিচারের দিনে ভয়ানক শাস্তি ভোগ করবে। তাদের জন্য আগুনের পাত তৈরী করে দোযখের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের পার্শ্বদেশ, কপাল এবং পৃষ্ঠদেশে ছেঁক দেয়া হবে। যখনই উহা ঠাণ্ডা হবে, পুনরায় উহাকে দিনভর (যা পাশ হাজার বছরের সমান) উত্তপ্ত করা হবে ও ছেঁক দেয়া হতে থাকবে বিচারের শেষ সময় পর্যন্ত যখন সে নিশ্চিত হবে যে, সে কি বেহেশতের পথে যাবে, না দোজখের পথে ”। (মুসলিম)

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি তার ধনসম্পদের যাকাত না দেয় তবে ঐ সম্পদ কিয়ামতের দিন অজগর সাপের আকার ধারণ করে তার গলদেশ বেষ্টন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারপর তিলাওয়াত করলেন, “আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যাহা তোমাদ্গিকে দিয়াছেন তাহাতে যাহারা কৃপণতা করে তাহাদের জন্য উহা মঙ্গল, ইহা যেন তাহারা কিছুতেই মনে না করে। না, ইহা তাদের জন্য অমঙ্গল। যাতে তারা কৃপণতা করিবে কিয়ামতের দিন উহাই তাহাদের গলায় বেড়ি হবে”। সূরা আল-ইমরান ১৮০। (নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)

হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “ সুদখোর, সুদদাতা, উহার সাক্ষী ও লেখক, উল্কি অঙ্কনকারিণী   এবং যে নারী উল্কি অঙ্কন করায়, অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি যে যাকাত দিতে অস্বীকার করে, হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করানো হয়, এদের সকলের উপর আল্লাহ অভিশাপ বা লা‘নত ”। (আহমাদ ও নাসায়ী)   

Related Post