১। স্বীয় আমলকে বড় মনে না করা ও তার উপর গর্ব না করা: মানুষ যত আমলই করুক না কেন, আল্লাহ তার দেহ থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে যত নেয়ামত তাকে প্রদান করেছেন, সে তুলনায় আল্লাহর সে মূলত: কিছুই হক আদায় করতে পারে নি। সুতরাং একনিষ্ঠ ও খাঁটি মু’মিনের চরিত্র হল, তারা তাদের আমলসমূহকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে, বড় মনে করে গর্ব-অহংকার করবে না; যার ফলে তাদের সওয়াব নষ্ট হয়ে যায় ও অলসতা এসে যায় সৎ আমল করার ক্ষেত্রে।
স্বীয় আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করার সহায়ক বিষয়:
(১) আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে জানা ও চেনা
(২) তাঁর নিয়ামতসমূহ উপলব্ধি করা ও
(৩) নিজের গুনাহ-খাতা ও অসম্পূর্ণতাকে স্মরণ করা। যেমন: আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে গুরু দায়িত্ব অর্পণের পরে অসীয়ত করেন:
“(নবুয়তের বোঝা বহন করত:) তুমি (তোমার রবের প্রতি) অনুগ্রহ প্রকাশ কর না যার ফলে বেশি কিছু আশা করবে।” (সূরা মুদ্দাসসির: ৬)
২। আমলটি কবূল হবে কিনা, এ মর্মে আশঙ্কিত থাকা: সালাফে সালেহীন- সাহাবায়ে কিরাম আমল কবূল হওয়ার ব্যাপারটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন, এমনকি তাঁরা ভয় ও আশঙ্কায় থাকতেন। যেমন: আল্লাহ তাঁদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন:“যারা ভীত-কম্পিত হয়ে দান করে যা দান করার, কেননা তারা তাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। (মুমিনুন: ৬০)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়াতের ব্যাখ্যা করেন যে, তারা রোযা রাখে, নামায আদায় করে, দান-খয়রাত করে আর ভয় করে যে, মনে হয় তা কবূল হয় না।
আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: তোমাদের পক্ষ হতে তোমাদের আমল সমূহ কবূল হওয়ার ব্যাপারে তোমরা খুব বেশি গুরুত্ব প্রদান কর। তোমরা কি আল্লাহর বাণী শ্রবণ কর না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের পক্ষ হতেই কবূল করে থাকেন।” (সূরা: মায়েদাঃ ২৭)
৩। আমল কবুলের আশা পোষণ ও দু‘আ করা: আল্লাহর প্রতি ভয়ই যথেষ্ট নয় ; বরং অনুরূপ তাঁর নিকট আশা পোষণ করতে হবে। কেননা আশা বিহীন ভয় নিরাশ হওয়ার কারণ এবং ভয় বিহীন আশা আল্লাহর শাস্তি হতে নিজেকে মুক্ত মনে করার কারণ; অথচ উভয়টিই দোষনীয়, যা মানুষের আকীদা ও আমলে মন্দ প্রভাব বিস্তার করে। জেনে রাখুন! আমল প্রত্যাখ্যান হয়ে যাওয়ার ভয়-আশঙ্কার সাথে সাথে আমল কবুলের আশা পোষণ মানুষের জন্যে বিনয়-নম্রতা ও আল্লাহ ভীতি এনে দেয়। যার ফলে তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। যখন বান্দার মধ্যে আশা পোষণের গুণ সাব্যস্ত হয় তখন সে অবশ্যই তার আমল কবূল হওয়ার জন্য তার প্রভুর নিকট দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে। যেমন- করেছিলেন আমাদের পিতা ইবরাহীম খলীল ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আলাইহিমাস সালাম)। যা আল্লাহ তায়ালা তাদের কা’বা গৃহ নির্মাণের ব্যাপারটি উল্লেখ করে বর্ণনা করেন।
“যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আলাইহিমাস সালাম) বায়তুল্লাহর ভিত্তি বুলন্দ করেন (দু‘আ করেন) হে আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক তুমি আমাদের দু‘আ কবূল করে নিও। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা: ১২৭)
৪। বেশি বেশি ইস্তেগফার-ক্ষমা প্রার্থনা: মানুষ তার আমলকে যতই পরিপূর্ণ করার জন্য সচেষ্ট হোক না কেন, তাতে অবশ্যই ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা থেকেই যাবে। এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শিক্ষা দান করেছেন, কিভাবে আমরা সে অসম্পূর্ণতাকে দূর করব। সুতরাং তিনি আমাদেরকে ইবাদত-আমলের পর ইস্তেগফার-ক্ষমা প্রার্থনার শিক্ষা দান করেন। যেমন: আল্লাহ তায়ালা হজ্জের হুকুম বর্ণনার পর বলেন:
“অত:পর তোমরা (আরাফাত) হতে প্রত্যাবর্তন করে, এসো যেখান থেকে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে আসে। আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাক,নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল ও দয়াবান।”(সূরা বাকারা: ১৯৯)
আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক নামাযের পর তিনবার করে “আস্তাগফিরুল্লাহ” (আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলতেন।
৫। বেশি বেশি সৎ আমল করা: নিশ্চয়ই সৎ আমল একটি উত্তম বৃক্ষ। বৃক্ষ চায় তার পরিচর্যা, যেন সে বৃদ্ধি লাভ করে সুদৃঢ় হয়ে যথাযথ ফল দিতে পারে। সৎ আমলের পর সৎ আমল করে যাওয়া অবশ্যই আমল কবুলের একটি অন্যতম আলামত। আর এটি আল্লাহর বড় অনুগ্রহ ও নেয়ামত, যা তিনি তার বান্দাকে প্রদান করে থাকেন। যদি বান্দা উত্তম আমল করে ও তাতে ইখলাস বজায় রাখে তখন আল্লাহ তার জন্য অন্যান্য উত্তম আমলের দরজা খুলে দেন। যার ফলে তার নৈকট্যের ও বৃদ্ধি পায়।
৬। সৎ আমলের স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখাঃ যে ব্যক্তি নেকী অর্জনের মৌসুম অতিবাহিত করার পর সৎআমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায়, তার জন্য জরুরী হল সে যেন সৎ আমলে স্থায়ী ও অটল থাকার গুরুত্ব, ফযীলত, উপকারিতা, তার প্রভাব, তা অর্জনের সহায়ক বিষয় ও এক্ষেত্রে সালাফে সালেহীনের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে।