ইলম অর্জন করা ফরজ

 

P1020410

দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা সবার জন্য আবশ্যক। দুনিয়াতে চলার জন্য ও ইবাদত করার জন্য দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা ফরয। অপরপক্ষে দ্বীনের খেদমত করার জন্য এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসারে জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য। কারণ একজন প্রকৃত আলেম একটি জাতি বা দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। আর কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইমাম বুখারী (রহঃ) ছহীহ বুখারীতে ‘কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জন করা’ শিরোনামে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এবং তার প্রমাণে কুরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতটি নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং জেনে রেখ, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)।[বুখারী পৃঃ ১৬।

তিনি আরো বলেন, -‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হ’তে। পড় এবং তোমার প্রতিপালক মহা মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে (এমন জ্ঞান) যা সে জানতো না’ (আলাক্ব ৯৬/১-৫)। মানুষ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে। এজন্য মহান আল্লাহ যারা জানে এবং যারা জানে না তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি বলেন, ََ ‘বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান’? (যুমার ৩৯/৯)। যে ব্যক্তি যত বেশী জানবে সে তত বেশী আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করতে সচেষ্ট হবে এবং অহংকার করা থেকে দূরে থাকবে। সাথে সাথে প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহকে বেশী-বেশী ভয় করবে। এটাই একজন আলেমের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন, إِن ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে; আল্লাহ পরক্রমশালী ক্ষমাশীল’ (ফাতির ৩৫/২৮)। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত কোন সত্য মা‘বূদ নেই এবং ফেরেশতাগণ, ন্যায়নিষ্ঠ বিদ্বানগণও (সাক্ষ্য প্রদান করেন) তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়’ (আলে ইমরান ৩/১৮)।

বর্তমানে অনেক আলেম ও সাধারণ মানুষ তাদের সন্তান-সন্ততিকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিতে চান না। এটা অতি পরিতাপের বিষয় বৈ কি? কেননা দ্বীনী ইলম না থাকলে, দ্বীনের খিদমতে এগিয়ে আসবে কিভাবে? এজন্য মহান আল্লাহ বলেন, َ ‘সুতরাং এমন কেন করা হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হ’তে এক একটি ছোট দল বহির্গত হয়, যাতে তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করতে পারে, আর যাতে তারা নিজ কওমকে (নাফরমানী হ’তে) ভয় প্রদর্শন করে, যখন তারা ওদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়’ (তওবাহ ৯/১২২)। সেকারণ কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করা সবার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরয’।[ইবনু মাজাহ হা/২২৪, সনদ ছহীহ।]

ইলম অর্জন দ্বারাই ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)।

ইলম অর্জন করা কল্যাণ লাভের উপায়। আল্লাহ যার কল্যাণ চান সে ব্যক্তিই এ পথের পথিক হয়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ِ، ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকেই দ্বীনের ইলম দান করেন’।[বুখারী হা/৭১।]

ইলম অর্জন করলে জান্নাতে যাবার পথ সহজ হয়। আর যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন’।[বুখারী, ‘ইলম’ অধ্যায় পৃঃ ১৬।] ইলম অর্জনের মাধ্যমে নবীগণের উত্তরাধিকারী হওয়া যায়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘আলেমগণই হ’লেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। নিশ্চয়ই তাঁরা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল, সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল’।[আবু দাউদ হা/৩১৫৭]

ইলম অর্জন করে অপরকে শিক্ষা দিলে, সে অনুযায়ী আমলকারী যে নেকী পাবে, শিক্ষাদাতাও অনুরূপ নেকী পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিবে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় ছওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করল। কিন্তু আমলকারীর ছওয়াব থেকে একটুকুও কমানো হবে না’।[ইবনু মাজাহ হা/২৪০, হাসান।

জ্ঞান অর্জনকারীর উপর আল্লাহ রহম করেন। আর ফেরেশতাগণ, আসমান যমীনের অধিবাসীগণ, পিপিলিকা এমনকি সমুদ্রের মাছও দো‘আ করতে থাকে। হাদীছে এসেছে,

আবু উমাম বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হ’ল। তাদের একজন আলেম, অপরজন আবেদ। তখন তিনি বললেন, আলেমের মর্যাদা আবেদর উপর ঐরূপ, যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর। তারপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ রহমত করেন এবং তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, আসমান যমীনের অধিবাসী, এমনকি পিপিলিকা তার গর্তে থেকে এবং মাছও কল্যাণের শিক্ষা দানকারীর জন্য দো‘আ করে’।[ছহীহ তারগীব হা/৭৭; মিশকাত হা/২১৩]

দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়ে গেলে মৃত্যুর পরেও তার ছওয়াব পাওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,     ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল ব্যতিক্রম (অর্থাৎ ঐ আমলগুলির ছওয়াব মরণের পরেও পেতে থাকবে)। ঐ তিনটি আমল হ’ল প্রবাহমান দান-ছাদাক্বা, এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দো‘আ করে’।[মুসলিম হা/১৬৩১।] অতএব সবার উচিত সন্তান-সন্ততিদের ছোট থেকেই দ্বীনের সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া। দ্বীনী ইলম শিক্ষা লাভ না করলে পৃথিবী অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। ফলে মানুষ দ্বীনী বিষয়ে অজ্ঞদের নিকট থেকে ফৎওয়া নিয়ে গোমরাহ হবে। হাদীছে এসেছে,

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে ইলম ছিনিয়ে নেন না। বরং দ্বীনের আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলমকে উঠিয়ে নিবেন। তখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না। ফলে লোকেরা মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে, তাদের জিজ্ঞেস করা হ’লে তারা না জেনে ফৎওয়া প্রদান করবে। এতে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে’।[বুখারী হা/১০০; মুসলিম হা/২৬৭৩।]  = সমাপ্ত =

Related Post