Main Menu

নামাজ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার

namaz-6
নামাজ ইবাদতগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, দ্বীনের প্রধানতম ভিত্তি। আর এ নামাজই বান্দা ও তার প্রভুর মধ্যকার সম্পর্ক দৃঢ়করণের প্রধান সেতুবন্ধ, ঈমানের সার্বণিক আলামত, মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী এবং ঈমানের অতন্দ্র প্রহরী। এটা মানুষের সব রকমের বিশ্বাসকে সতেজ করে রূহে উন্নতি, স্বভাবে সুষ্ঠুতা ও কর্মে সংশোধন এনে দেয়। নামাজ হচ্ছে সেই প্রাণশক্তি, যার মাধ্যমে বাতিলের মোকাবেলায় দৃঢ় ও অটল থাকা যায়। এটা মানুষকে সত্য ও সুন্দরের প্রতি উৎসুক করে তোলে। রাসূলে আকরাম সা: বলেছেন, ‘নামাজ হচ্ছে দ্বীনের স্তম্ভ; যে ব্যক্তি নামাজ প্রতিষ্ঠিত করল, সে ব্যক্তি তার পুরো দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করল।’ নামাজ ফার্সি শব্দ। আরবিতে বলা হয় সালাত। যার আভিধানিক অর্থ হলো : দোয়া, রহমত, দরুদ, ইস্তেগফার, দহন তথা আগুনে পুড়িয়ে সোজা করা, প্রার্থনা করা, অনুনয়-বিনয় করা, অগ্রসর হওয়া প্রভৃতি। কুরআনি পরিভাষায়  ‘আল্লাহর দিকে মুখ ফেরানো, অগ্রসর হওয়া এবং তাঁর নিকটতর হওয়ার চেষ্টা করা।’ পান্তরে, এটা এমন ইবাদত, যার জন্য নির্দিষ্ট রোকন রয়েছে, যা নির্ধারিত কিছু জিকির দ্বারা সীমাবদ্ধ, যা নির্ধারিত কিছু শর্তের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সময়ে সম্পাদন করতে হয়। একজন মুসলমানের সর্বপ্রথম ঈমানি দায়িত্ব হলো সালাত আদায় করা। মানবজীবনের প্রতিটি দিক ও বিষয়ে আলাদাভাবে সালাতের গুরুত্ব পরিলতি হয়। এটা মানবজীবনের চলার পথের সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দেয়। যার ফলে ব্যক্তি হয়ে ওঠে সফলকাম এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

সালাত মানুষকে পাপের মালিন্য থেকে পবিত্র করে, বেগোনাহ বানিয়ে দেয়। সালাত আদায় না করা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। কুরআনে ভাষণটি এসেছে এভাবে  ‘জান্নাতিরা জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করবে  কিসে তোমাদের জাহান্নামে নিয়ে এলো? উত্তরে জাহান্নামিরা বলবে  আমরা নামাজ পড়তাম না’ (আল মুদ্দাসির: ৪০-৪৩)। সালাত হলো ইসলামি গণ্ডিতে প্রবেশের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। সালাত হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো’ (আল বাকারা : ১৫৩)। বান্দার সালাতের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের ৮২ বার সালাতের কথা পুনঃ পুনঃ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা সালাতগুলো সংরণ করো। বিশেষভাবে মধ্যবর্তী সালাত এবং বিনয়-নম্রতার সাথে আল্লাহর দরবারে দাঁড়াও’ (আল বাকারা : ২৩৮)। নিজের ইচ্ছা, আশা, প্রত্যাশা, আমিত্ব সব কিছুই আল্লাহর সমীপে সঁপে দেয়ার নাম সালাত। রাষ্ট্রীয় মতা অর্জন করার পর সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলোনামাজ কায়েম করা এবং জাকাত আদায় করা।
আল্লাহ পাক বলেন, ‘তারা এমন লোক, যাদের আমি পৃথিবীতে মতা প্রদান করলে তারা সালাত কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে’ (সূরা আল হজ্জ : ৪১)। সালাত কায়েম ও জাকাত আদায় করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করা ইসলামি রাষ্ট্রের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলো (হে আমার বান্দাহ!), নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জন্ম, আমার মৃত্যু; বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত’ (আল-আনয়াম : ১৬২)। এ আয়াতে সালাত, কোরবানি, জীবন ও মৃত্যু  এ চারটি বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বিন্যাসের দিক দিয়ে সালাতের বিপরীত জীবন এবং কোরবানির বিপরীতে মৃত্যুকে নেয়া হয়েছে। বিন্যাসের মধ্যে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত এই যে, সালাতই হচ্ছে প্রকৃত জীবন। জীবন মানে সালাত আর সালাত মানেই জীবন। যে জীবনে সালাত নেই সে জীবন মৃত্যুর সমতুল্য। সালাতের মাধ্যমে বান্দা তার স্বীয় মাবুদের সমীপে সব চাওয়া, ফরিয়াদ এমনকি জীবন মরণ সমর্পণ করে দিয়ে প্রকৃত জীবনের প্রত্যাশী হয়। আল্লাহ পাক বান্দার প্রার্থনার ধারণাতীত সাড়া দিয়ে থাকেন। এ নামাজের ব্যাপারে সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

তাদেরকে সুশিায় শিতি করা মা-বাবার দায়িত্ব। আর এটা আল্লাহর রাসূল সা:-এর নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিন! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রা করো ওই অগ্নি থেকে  যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর  যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না আল্লাহকে, যিনি তাদের আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হন, তাই করেন’ (আল-তাহরিম : ৬)। আল্লাহ দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আত্মার পরিচর্যার সর্বোত্তম মাধ্যম সালাত। সালাতের মাধ্যমে রূহের সাথে তার রবের যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন থাকে। এতে রূহকে কোনো দুর্বলতা স্পর্শ করে না। রিপু কামনা-বাসনাসহ দেহ ব্যক্তির ওপর বিজয়ী হতে পারে না। দার্শনিক ইমাম গাজ্জালির ভাষায়, ‘আল্লাহ রূহকে সৃষ্টি করেছেন দেহের একটি বাহন হিসেবে। রূহ যখন মানুষের দেহকে পরিচালনা করে, তখন মানুষ সত্যিকার মানুষে পরিণত হয়। পান্তরে রূহ যখন দেহের অনুগত হয়ে পড়ে, মানুষ তখন তার মনুষ্যত্বহারা হয়ে যায়।’ এখানেই সালাতের গুরুত্ব নিহিত। সালাত দ্বীনের স্তম্ভ। যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, সে ঈমানের গণ্ডির বাইরে চলে যায়। সালাতের অপরিসীম গুরুত্বের কারণে শৈশব-কৈশোর থেকেই সন্তানদের সালাতে অভ্যস্ত করতে বলেছেন। তিনি বলেন, তোমাদের সন্তানদের সাত বছর হলে নামাজের নির্দেশ দাও, তাদের বয়স দশ বছর হলে এজন্য তাদের প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও’ (আবু দাউত : ৪৯৫, মুসনাদ আহমদ : ৬৬৮৯)। এদিকে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও এবং তাতে নিজে অবিচল থাক, আমি তোমার কাছে কোনো জীবনোপকরণ চাই না, আমি তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য’ (সূরা ত্ব-হা১৩২)
সালাত ব্যক্তি হৃদয়ে এমন এক অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা তাকে সব পাপ পঙ্কিলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় সালাত মানুষকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ এক ব্যক্তি সম্পর্কে মহানবী সা:-এর কাছে সংবাদ এলো যে, সে রাতভর তাহাজ্জুদ আদায় করে থাকে, আর সকালের আগ মুহূর্তে সে চুরি করে থাকে। মহানবী সা: বললেন, ‘ওই ব্যক্তি অচিরেই চুরি থেকে বিরত হবে।’ অল্প দিনের মধ্যে চুরি ছেড়ে দিয়ে তওবা করে পাক্কা নামাজি হয়ে গেল (ইবনে কাসির)
কেউ নামাজ আদায় করার পরও পাপ কার্য থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারল না; তাহলে বুঝতে হবে তার নামাজ প্রকৃত নামাজ নয়। তার নামাজ লোক দেখানো কিংবা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। রাসূলে আকরাম সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে তার নামাজ অন্যায় ও পাপকাজ থেকে বিরত রাখতে পারল না, প্রকৃত পে তার নামাজ নামাজই নয়।’ সালাতের প্রাণ বলা হয় খুশুকে। যার শাব্দিক অর্থ ভয় করা, বিনয় নম্র হওয়া, দমিত হওয়া, নম্রতা আন্তরিকতার সাথে ঝুঁকে পড়া প্রভৃতি। সালাতে খুশু অবলন্বন করার অর্থ শুধু শরীর নয়, বরং মন-মস্তিষ্ক সব কিছুই আল্লাহর সমীপে হীন দীন হয়ে ঝুঁকে যাওয়া বা অবনত হওয়া। মনের মধ্যে আল্লাহর মাহাত্ম্য এমনভাবে সঞ্চার করা, যেন মন্দ আবেগ অনুরাগ ও অবাঞ্ছিত চিন্তাভাবনা মনে না আসতে পারে। আল কুরআনে বলা হয়েছেÑ ‘মুমিনরা সফলতা লাভ করেছে। যারা নামাজে বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করে।’ সালাত বিনষ্টকারী কিয়ামতের দিন বড় ধরনের বিড়ন্বনার শিকার হবে। বেনামাজি হতভাগ্য লাঞ্ছনাগ্রস্ত আর অপমানিত হয়ে কিয়ামতের মাঠে আল্লাহর সমীপে দণ্ডায়মান হবে।পবিত্র কুরআনে এ চিত্রটি ফুটে উঠেছে ঠিক এভাবে, ‘গোছা পর্যন্ত পা খোলার কথা স্মরণ করো। সেদিন তাদের সিজদা করতে আহ্বান জানানো হবে; কিন্তু তারা তা করতে পারবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে। তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে। অথচ তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। যখন তাদের সিজদা করতে আহ্বান জানান হতো’ (সূরা আল কলম : ৪২-৪৩)।

বান্দা সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর জাত সিপাতকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারে। মহানবী সা:-এর অসংখ্য বাণী সালাতের গুরুত্ব বহন করে। তিনি বলেছেন, * কিয়ামতের দিন বান্দার যে কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে তা হলো নামাজ। হিসাব দিতে পারলে মুক্তি নচেত ব্যর্থতা অবধারিত। * অমুসলিমরা ও আমাদের মাঝে যে অঙ্গীকার  তা হচ্ছে সালাত। সালাত যে ত্যাগ করল সে কাফের। * যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করল সে আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত। * আর যে সালাত পরিত্যাগ করল সে তার দ্বীনকে ধ্বংস করল। * যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে গেছে। * পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তার মধ্যবর্তী সময়ের সব গোনাহ মা করে দেয় … যদি কবিরা গুনাহ না করা হয়। * যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথারীতি আদায় করবে, আল্লাহ তাকে পাঁচটি মর্যাদা দান করবেন। প্রথমত, তার দারিদ্র্য দূর করবেন। দ্বিতীয়ত, তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেবেন। তৃতীয়ত, তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। চতুর্থত, বিদ্যুতবেগে তাকে পুলসিরাত পার করবেন। পঞ্চমত, তাকে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। * কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের মুখ কালো হবে তারা হবে নামাজ তরককারী। * সবচেয়ে বড় চোর হলো সেই ব্যক্তি যে নামাজ চুরি করে। * সালাত মুমিনদের জন্য মেরাজস্বরূপ। * আল্লাহর বান্দা সালাত আদায় করে কিন্তু সেই সালাতের সওয়াব লেখা হয় দশ ভাগের এক, নয় ভাগের এক, আট ভাগের এক, সাত ভাগের এক, ছয় ভাগের এক, পাঁচ ভাগের এক, চার ভাগের এক, তিন ভাগের এক, দুই ভাগের এক অংশ (আবু দাউত ও নাসায়ি)। নামাজ মুমিনের সব চেয়ে বড় সম্পদ, প্রশান্তির উৎস, সান্ত্বনার বার্তা, সর্বোপরি সাফল্যের মূূল চালিকাশক্তি। যার নামাজ যত সুন্দর তার ব্যক্তি চরিত্র তত সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল। যে জীবনে নামাজ নেই সে জীবন নিরর্থক। অর্ধ দুনিয়ার মালিক হলেও এ জীবনের মূল্য আল্লাহর কাছে এক কানাকড়ির সমতুল্যও নয়। যে ব্যক্তি নামাজের প্রতি যতœবান সে জগতের অন্যান্য বিষয়ের ব্যাপারে যতœবান।নিঃসন্দেহে নামাজ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার। = সমাপ্ত=

Related Post