অযূ করার ফযীলত:
১। অযূ গুনাহ মাফের কারণ: যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযূ করবে, তার শরীর থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যাবে, এমনকি নখের নিচ হতেও। (মুসলিম)
২। অযূ কিয়ামতের দিন পরিচয়ের ওসিলা হবে: নুয়াইম মুজমির (রা.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে আরোহন করলাম। তখন আবু হুরায়রা (রা.) অযূ করলেন, অতঃপর বললেন; আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি; যে কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে অযুর উজ্জ্বলতা দেখে দেখে ডাকা হবে, সুতরাং তোমরা তোমাদের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করো। (বুখারী ও মুসলিম)
৩। অযুর পরে দোয়া পড়ার ফযীলত: যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযূ করার পর এই দোয়াটি পাঠ করবে;
روى مسلم (২৩৪) عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ( مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ : أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ، إِلا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ ) رواه مسلم -২৩৪
زاد الترمذي (৫৫) : اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ التَّوَّابِينَ ، وَاجْعَلْنِي مِنْ الْمُتَطَهِّرِينَ
আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়ারাসূলুহ। (মুসলিম) তিরমিযী শরীফে উপরের দোয়াটির সঙ্গে নি¤েœর দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে: আল্লাহুম্মায আলনি মিনাত্তাওয়াবীনা ওয়াযআলনী মিনাল মুতাতাহহিরীন।
তার জন্য জান্নাতের সকল দরজা খোলে দেওয়া হবে, যে দরজা দিয়ে চাইবে সেই দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম ও তিরমিযী)
পবিত্রতা হলো নামাযের পূর্ব শর্ত, আর এটি দু‘ভাবে অর্জন করতে হয়
প্রথমত: অযু
দ্বিতীয়ত: তায়াম্মুম
আসুন এবার আমরা নামাযের পূর্ব প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ আমল অযূ করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।
নামাযের পূর্বে পরিপূর্ণরূপে অযূ করাঃ
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-আমি নামাযের জন্য পবিত্রতা লাভের ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ওযু করছি ” মনে মনে এই নিয়ত করে অযূ শুরু করতে হবে।
প্রথমে দু‘হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করার পর, মুখে ও নাকে তিনবার পানি দিয়ে কুলি করবে ও নাক ঝাড়বে,
অতঃপর মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করবে। মুখের পরিধি হলো: (কপালের উপর চুল গজানোর স্থান থেকে নিয়ে দাড়ির নিম্নভাগ, এবং এক কান থেকে নিয়ে অপর কান পর্যন্ত), এরপর দু’হাতের আঙ্গুলের শুরু থেকে কনুই পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত অতঃপর বাম হাত।
আবার নতুন করে দু’হাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে তা দ্বারা মাথা মাসেহ্ করবে। দু‘হাত মাথার অগ্রভাগ থেকে নিয়ে পিছন দিকে ফিরাবে অতঃপর অগ্রভাগে নিয়ে এসে শেষ করবে। তারপর দু‘কান মাসেহ্ করবে। দু‘হাতের দুই তর্জনী আঙ্গুল কানের ভিতরের অংশ এবং দু‘বৃদ্ধাঙ্গলী দিয়ে বাহিরের অংশ মাসেহ্ করবে। এর জন্য নতুনভাবে পানি নেয়ার দরকার নেই।
উল্লেখ্য অনেকে হাতের পিঠ দিয়ে ঘাড় বা গর্দান মাসেহ করে থাকেন। এই বিষয়ে হাদীসে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। বরং গর্দান মাসেহ করা বিদআত।
অতঃপর দু‘পা টাখনুসহ তিনবার ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা, তারপর বাম পা।
অযূ শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে কালিমা শাহাদতসহ দোয়া পড়লে জান্নাতের সকল দরজাই খোলা থাকবে। এই বিষয়ে আমরা ইতোপূর্বে অযুর ফযীলত বিষয়ক হাদীসে আলোচনা করেছি।
عَنْ عُمَرَ بَنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ رَفَعَ بَصَرَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ (رواه أحمد)
অযূর শেষে এই দোয়াটি পাঠ করবেন: ‘আশহাদুআল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।” এই নিয়মেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযূ করতেন।
এবার আসুন পবিত্রতার অর্জনের দ্বিতীয় পদ্ধতি তায়াম্মুম সম্পর্কে জেনে নেই;
আমাদের জীবন বিধান হলো সহজ ও সরল। এবং এই বিধান প্রত্যেকটি মুসলিমকে সাহায্য সহযোগিতা করে। আর এই দ্বীনের ভিত্তি হলো নামায, যা আদায় করতে প্রয়োজন হয় অযূ বা পবিত্রতার। সুতরাং যদি কেউ শরীয়ত সমর্থিত ওজরের কারণে পানি ব্যবহার করতে অপারগ হয় কিংবা পানি না পায়, তখন অযূর বিকল্প হিসেবে তাকে তায়াম্মুমের সাহায্যে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। আর এই তায়াম্মুমের জন্য আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে আমাদের জন্য মাটি ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মাটি আমার জন্য পবিত্র করা হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম আহমদ ও বায়হাকী হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
এই মর্মে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন;
وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ ۚ
সুতরাং তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো, (আর তা হলো) প্রথমত মুখ মাসেহ অতঃপর হাত মাসেহ করা। (সূরা মায়েদা: ৬)
আর যদি মাটিও না পাওয়া যায়, তাহলে মাটি জাতিয় বস্তু যেমন পাথর, বালু, জলাভূমি বা পাথর জাতিয় বস্তু দ্বারা তায়াম্মুমের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলছেন;
لَا يُكَلِّفُ اللَّـهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ ( البقرة: ২৮৬)
আল্লাহ কারো উপর সাধ্যে বাইরে কোন বোঝা চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাকারা: ২৮৬)
এবার আমরা তায়াম্মুম করার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ
তায়াম্মুম করার পদ্ধতি:
প্রথমত: নিয়ত করতে হবে, মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নাই, শুধু মনে মনে সংকল্প করবে যে, আমি ছোট অথবা বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য তায়াম্মুম করছি।
দ্বিতীয়ত: দুই হাত মাটিতে মেরে হালকাভাবে ঝেড়ে পুরো মুখ একবার মাসেহ করতে হবে।
তৃতীয়ত: পুনরায় দুই হাত মাটিতে মেরে দুনো হাতের কব্জিসহ মাসেহ করতে হবে।
উল্লেখ্য অনেকেই দুনো হাতের কনুই পর্যন্ত মাসেহ করার কথা বলেন বা করেন, যা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। পবিত্র কুরআনে ও হাদীসে হাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর শুধু হাত উল্লেখ করলে কব্জি পর্যন্ত বুঝায়। যেমন কোন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি চুরি করে, তাদের শাস্তির স্বরূপ কুরআনে হাত কাটার কথা উল্লেখ হয়েছে। আর সমস্ত উলামায়ে কেরাম একমত যে, চোরের শাস্তি হলো কব্জি পর্যন্ত হাত কাটা।