বিনয় ও নম্র হওয়ার গুরুত্ব
নুমান ইব্ন বাশীর রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু
বিনয়ী ব্যক্তিকে সবাই ভালবাসে। ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ এতে নিহিত রয়েছে। সুতরাং আমাদের সবার উচিত বিনয়ী ও নম্র হওয়া। আর শালীনতা বজায় রেখে কথা বলা। প্রয়োজন হ’লে উত্তম কথা বলা নচেৎ বিরত থাকা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন আমরা বাণী ইসরাঈল হ’তে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং আত্মীয়, অনাথ ও মিসকীনদের সঙ্গে (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা লোকের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং ছালাত প্রতিষ্ঠিত করবে ও যাকাত প্রদান করবে; তৎপর তোমাদের মধ্যে হ’তে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই বিমুখ হয়েছিলে, যেহেতু তোমরা অগ্রাহ্যকারী ছিলে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। কাফির ব্যক্তি হ’লেও তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলা প্রয়োজন, যাতে তারা ইসলামের সুমহান আদর্শ দেখে ইসলামে প্রবেশ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা দু’জন ফিরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্ব-হা ২০/৪৩-৪৪)। আললাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি বিনম্র হও’ (শু‘আরা ২১৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
‘তুমি মুমিনদের প্রতি বিনম্র হও’ (হিজর ৮৮)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,‘আল্লাহর রহমতেই তুমি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছ। অন্যথা যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হ’তে তাহ’লে তারা তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
ভাল কথা ও উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে শত্রুর মন জয় করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘ভাল এবং মন্দ সমান হ’তে পারে না। অতএব মন্দকে উত্তম (ব্যবহার) দ্বারা প্রতিহত কর। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা রয়েছে, (অচিরেই) সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত হয়ে যাবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩৪)। বিনম্র ব্যবহার ও ভদ্র আচরণ সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা একদল ইহুদী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আস-সামু আলাইকা! তোমার মরণ হোক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের উপর। আয়েশা (রাঃ) বললেন, তোমাদের উপর আল্লাহর লা‘নত ও গযব পড়ুক। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে আয়েশা! থামো। নম্রতা অবলম্বন করা তোমার কর্তব্য। রূঢ় ও অশালীনতা বর্জন করো। আয়েশা (রাঃ) বললেন, তারা যা বলেছে তা কি আপনি শুনেননি? তিনি বললেন, আমি যা বললাম, তুমি কি তা শুননি? কথাটি তাদের উপরই ফিরিয়ে দিয়েছি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে (আল্লাহর কাছে) আমার কথাই কবুল হবে আর আমার সম্পর্কে তাদের কথা কবুল হবে না’।[বুখারী হা/৬৪০১; মিশকাত হা/৪৬৩৮।]
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একবার এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করে দিল। লোকেরা উঠে তার দিকে গেল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তার পেশাব করায় বাধা দিও না। অতঃপর তিনি এক বালতি পানি আনতে বললেন এবং তাতে ঢেলে দিলেন।[বুখারী হা/৬০২৫; মিশকাত হা/৪৯২।]
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি লোকটিকে দেখে বললেন, সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক ও সমাজের দুষ্ট সন্তান। এরপর সে যখন এসে বসল, তখন নবী করীম (ছাঃ) আনন্দ সহকারে তার সাথে কথা বললেন। লোকটি চলে গেলে আয়েশা (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে তার সাথে আনন্দ চিত্তে সাক্ষাৎ করলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আয়েশা! তুমি কখন আমাকে অশালীন দেখেছ? ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে সেই ব্যক্তি, যার খারাপ ব্যবহারের কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে’।[বুখারী হা/৬০৩২; মিশকাত হা/৪৮২৯।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, বিনয়ী ও নম্র ব্যক্তিকে যেমন আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন, তেমনি সমাজের সকল মানুষও তাকে পসন্দ করে ও ভালবাসে। তাই পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছাত্র-শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজন, সকল মুসলমান, এমনকি অমুসলিমদের সাথেও নম্র ব্যবহার করতে হবে। যাতে অমুসলিমরা মুসলিমদের আচার-ব্যবহার দেখে ইসলাম গ্রহণ করে। বিশেষ করে হকের পথের দাঈদের অবশ্যই বিনয়ী হ’তে হবে। নচেৎ মানুষ তার পাশ থেকে দূরে সরে যাবে। ১০০; মুসলিম হা/২৬৭৩।] = সমাপ্ত =