Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

মানব মনে জিহাদের প্রভাব

"<yoastmark

পূর্বের পাঠ করতে এখানে ক্লিক করুন

জিহাদের কথা শুনলেই অনেকেই চমকে ওঠে, ভয় পায়। অথচ জিহাদ ছাড়া জীবন চলে কি করে। জীবন চলার পথে জিহাদ নেই কোথায়? জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে জিহাদ। জিহাদ ব্যতীত জীবন কল্পনাই করা যায় না। জিহাদের অর্থ হলো সর্বাত্মক চেষ্টা করা। প্রতিটি মানুষের জন্মের পর থেকেই শুরু হয় বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা। আর তা চলতে থাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। কাজেই জিহাদ প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজনীয় বিষয়। তবে কেউ জিহাদ করে আল্লাহর নীতি ও রাসূল সা: এর পদ্ধতি অনুযায়ী। আবার কেউ জিহাদ করে শয়তানের নীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী। পার্থক্য এখানেই। “জিহাদ” আরবী শব্দ। এর অর্থ কঠোর পরিশ্রম করা, চেষ্টা করা, সাধনা করা, সংগ্রাম করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর দ্বীনকে (ইসলামকে) বিজয়ী করার লক্ষে এবং আল্লহকে খুশী করার জন্য কুফরী তথা ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে মুমিনের সকল প্রচেষ্টা (দৈহিক, মানসিক, আর্থিক, জ্ঞানবুদ্ধি) নিয়োজিত করাকে জিহাদ বলে। অন্য অর্থে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে, শয়তানের বিরুদ্ধে, ফাসেক, মুশরেক, মুনাফেক, কাফেরদের বিরুদ্ধে জান, মাল ও জবান দিয়ে সর্বাত্মক সংগ্রামকে জিহাদ বলে। জালেমদের জুলুম অত্যাচার থেকে বিশ্ব মানবের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নীতিমালাসমূহের অন্যতম হচ্ছে জিহাদ। এটা ইবাদত এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কাজেই জেহাদী চেতনা ব্যতীত ঈমান পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। অথচ ইসলামের চির দুশমন শয়তান এবং তার দোসর মানুষ শয়তান, পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের টাকায় লালিত-পালিত তৃর্ণভূজী মানুষেরা এটাকে রং লাগিয়ে প্রচার করছে ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্যে। সেই সাথে তালে তাল মিলিয়ে কথা বলছে একশ্রেণীর মুসলমান (?)। তারা জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করছে সহজ-সরল মানুষগুলোকে। যাতে মানুষ এ পবিত্র ও শ্রেষ্ঠ কাজ থেকে বিরত থাকে। মনে রাখতে হবে ইসলাম কতিপয় অনুষ্ঠান পালনের সীমবদ্ধ ধর্ম নয়। এটা পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ধর্ম তো মানব জীবনের একটা ক্ষুদ্র জায়গার সাথে সম্পৃক্ত।

 ইসলামকে স্রেফ ধর্ম বিবেচনায় যারা চালাতে চায়, তারাই ইসলামকে শুধু ওয়াজ নসিহত ও কিছু ইসলামী শিক্ষাদীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। এর চেয়ে বেশী কোন তৎপরতার চালাতে চায়না। মাথার ওপর যে কোন ধরনের সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থাই কার্যকর থাকনা কেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেভাবেই চলুক না কেন,তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। একারণেই তারা মানুষকে কিছু আকীদা-বিশ্বাস ঠিক করার কথা বলে। নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত, কিছু তাছবিহ, তাহলিল, যিকির, আজকার, ওযীফা ইত্যাদি দিয়ে ইসলামকে সাজাতে চায়। মনে রাখতে হবে সীমাবদ্ধ এই আমল দ্বারা মানুষের মধ্যে বিনয়, নম্রতা, দয়া, সহানুভুতি ইত্যাকার কিছু সদগুণ দিয়ে সজ্জিত করা যেতে পারে। কিন্তু এগুলো বাতিলপন্থী ও শোষণ নিপীড়নমূলক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কষাঘাতে ধূলোয় মিশে যায়। বাতিল সমাজ ও রাষ্ট্রের শাসকদের নিকট জ্বী- হুজুরের ভূমিকায় থাকতে হয়। তাতে নিজের ঈমান ও মুসলিম সমাজের ঈমানের রক্ত ক্ষরণ সৃষ্টি হয়। আর সে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সুফিবাদী পদ্ধতি, ব্যক্তি কেন্দ্রিক সংস্কার ও সংশোধন প্রক্রিয়া, পীর মুরিদীর প্রতিষ্ঠানগুলো নানা রকমের প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করে মাত্র। কিন্তু এর মাধ্যমে ইসলামের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা। ফলে মানুষের সামষ্টিক জীবনেও পরিবর্তন আসবে না। মানুষের জীবনে ইসলামের সুফল পৌঁছে দিতে প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আর এ বাধা দূর করার জন্য কেবল ওয়ায নসীহত যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন শীষা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন তথা জিহাদ।

 ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, ইসলাম যখন আবির্ভূত হলো এবং আরবের জাহেলী সমাজব্যবস্থা যে মৌলিক জীবনাদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছিল, ইসলাম তার ভিত্তিমূলে আঘাত হানলো। শুরুতেই জাহেলী জীবন ব্যবস্থার ধারক বাহকরা বুঝতে পারলো যে, এটাতো তাদের জন্যে এক বিরাট আঘাত। সমগ্র নিয়ম নীতি ভেঙ্গে নতুন ভাবে সমাজ ব্যবস্থা গড়ার ডাক দেয়া হয়েছে। তারা আরো বুঝতে পারলো যে, তাদের দীর্ঘ দিনের মড়োলীপনা, দুর্বলের প্রতি সবলের আধিপত্য আর থাকবে না। এ কারণেই ইসলামী আন্দোলনকে অংকুরেই বিনষ্ট করে দেয়ার জন্য প্রবল আঘাত হানা হলো। যখনই হক ও বাতিলের দন্দ্ব সংঘাত শুরু হয় তখন সে সমাজের মানুষেরা সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রথম শ্রেণী খুব মেধাবী এবং দূরদর্শী। তারা তাদের দূরদর্শীতার ফলে ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে তা তারা অনুমান করতে পারে। তাই তারা সহজেই ইসলামকে মেনে নিয়ে এ আন্দোলনে শামিল হয়ে যায়। তবে এদের সংখ্যা সব সময় কম হয়ে থাকে। আর একশ্রেণী থাকে সম্পূর্ণ বিপরিত মেরুতে। তারা হলো প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার নেতৃত্ব দানকারী ও বড় বড় স্বার্থের প্রতিভূ। এরা সময় ক্ষেপন না করে তাদের প্রভাবাধীন বিপুল সংখ্যক সমর্থকদের কাজে লাগায়। তখন উভয় শ্রেণীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত চলতে থাকে। তৃতীয় আর একশ্রেণী তখন থাকে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। তারা অপেক্ষা করতে থাকে কখন কার জয় পরাজয় হয় এবং শেষ পরিণতি কি দাঁড়ায়? যতক্ষণ তারা বাতিলের ধ্বংসের লক্ষণ দেখতে না পায়, ততক্ষণ তাদের মানসিক পরিবর্তন আসে না। এই শ্রেণীর মধ্যে অনেকেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চারিত্রিক গুণাবলীর প্রতি প্রভাবিত হয় এবং ইসলামের বিজয় হোক- এমন প্রত্যাশাও করে। তবে প্রতিষ্ঠিত পুরনো শক্তির ভয়ে তারা ভীত থাকে। ইসলামী আন্দোলনে শামিল হওয়ার বাসনা থাকলেও সাবেক নেতৃত্ব তাদেরকে এমনভাবে আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে রাখে যে, তারা নড়াচড়া করতে সাহস করে না। জনগণের এই মানসিক অবস্থায়ই ইসলামের বিজয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং ইসলামী পতাকাবাহিদের পথ তখনই পক্ষে আসে, যখন তারা জিহাদের মাধ্যমে যথেষ্ট দৃঢ়তা দেখাতে পারে। সেই সাথে প্রতিরোধকারীদের ওপর প্রবল ও কার্যকর আঘাত হানতে পারে। তখন তারা ইসলামী শক্তির প্রতি আশাবাদী হতে থাকে যে, তারা যুলুমবাজ জাহেলী শক্তিকে আঘাত করার শক্তি রাখে। জনমতের অংগনে যখনই এ ধরনের মনোভাব ছড়িয়ে পড়ে, তখনই ইসলামের বিজয়ের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। বাতিলের রণহুংকারের বিরুদ্ধে ইসলামের যে প্রতিরোধ তার উদ্দেশ্যে এ নয় যে, তরবারীর জোরে রণাঙ্গণে সব কিছু ফয়সালা করা। বরং আত্মরক্ষার্থে বাতিলের আক্রমণকে প্রতিহত করা এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের ওপর অবিচল আস্থা তৈরী করা। তদুপরি ইসলামী আদর্শের কাছ থেকে উজ্জ্বল ভবিষ্যত লাভের আশা জাগ্রত করা এবং জাহেলী সমাজ ব্যবস্থার ক্ষতিকর দিকসমূহ মানব মনে স্পষ্ট করে দেয়া। কাজেই জিহাদ ব্যতিত ইসলামের সুফল মানুষের দোরগোড়ায় যেমন পৌঁছানো সম্ভব না। ঠিক তেমনিভাবে জিহাদ ব্যতীত মু‘মিনের জীবনে ঈমানের পূর্ণতাও আশা করা যায়না।

Related Post