اَلْحَمْدُ للهِ عَظِيْمِ الشَّانِ, قَدِيْمِ الْاِحْسَانِ ,ذِيْ الْفَضْلِ وَالْإِمْتِنَانِ , اَلْقَائِلُ فِيْ مُحْكَمِ الْقُرْآنِ هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ وَ نَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ الرَّحِيْمُ الرَّحْمَنُ وَ نَشْهَدُ أَنَّ سَيِّدَنَا وَنَبِيَّنَا مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ بَعَثَهُ اللهُ لِلْإنْسِ وَالْجَانِّ , صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وعَلَى آلِهِ وَ أَصْحَابِهِ الَّذِيْنَ آمَنُوْا بِهِ وَنَصَرُوْهُ فَانْتَصَرُوْا عَلَى سَائِرِ الْأَدْيَانِ
أَمَّا بَعْدُ: فَيَا عِبَادَ اللهِ ! اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ * وَقَالَ تَعَالَى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً * يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ * وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيمًا*
সম্মানিত মুসাল্লিয়ানে কেরাম!আজকের খুতবার আলোচ্য বিষয় হলো:ইহসান বা অন্যের প্রতি অনুগ্রহশীল হওয়া।এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন: هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ অর্থাৎ সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কি হতে পারে?
‘ইহসান’ الإحْسَان শব্দের অর্থ: বদান্যতা, কল্যাণ, পরোপকার, সুসম্পাদন, সদ্ব্যবহার। এর বিপরীত শব্দ হলো: الإساءة ইসাআহ অর্থ-খারাপ ব্যবহার,অন্যায় আচরণ।অন্যের ক্ষতি করা।
পরিভাষায় ইহসান শব্দের অর্থ: সংক্ষেপে ইহসান বলতে বুঝায়: أن تعطي من مالك للآخرين নিজের সম্পদ হতে অন্যেকে দেওয়া।
ইহসান দুই প্রকার:
১) সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে ইহসান: তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে না দেখ, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে ধারণা রাখবে। অর্থাৎ সঠিকভাবে আল্লাহর হক আদায় করা।
২) মাখলুক বা সৃষ্টজীবের অধিকারে ইহসান: আর তা হলো; সকল প্রকারের মাখলুকের সাথে যথা সম্ভব উত্তম আচরণ করা। কিন্তু তা মুহসান তথা যার সাথে ইহসান করা হবে তার ব্যক্তিত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে ইহসান করার বেলায় পার্থক্য হবে।
ইমাম রাগেব বলেন: ইহসান দুই ধরণের। প্রথমত: অন্যকে পুরস্কৃত করা, দ্বিতীয়ত; তার কর্মের উপর প্রতিদান দেওয়া।
সম্মানিত উপস্থিতি: পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, ইহসান হচ্ছে ইসাআহ এর বিপরীত। এই মর্মে মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন:
وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ لِيَجْزِيَ الَّذِينَ أَسَاءُوا بِمَا عَمِلُوا وَيَجْزِيَ الَّذِينَ أَحْسَنُوا بِالْحُسْنَى) [النجم:31]
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর, যাতে তিনি মন্দকর্মীদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেন এবং সৎকর্মীদেরকে দেন ভাল ফল। (সূরা নাজম: ৩০)
উপরে আমরা ইহসানের প্রকার বর্ণনা করেছি, যে তা দুই প্রকার। এই দুই প্রকারের আরো বিভিন্ন দিক রয়েছে:
আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে ইহসানের আরেকটি অর্থ হলো: তা বিদআত মুক্ত হবে, অর্থাৎ রাসূল (সা.) যেভাবে আমল করতে বলেছেন, ঠিক সেভাবে করা। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করছেন:
(بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ وَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ)
হাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা: ১১২)
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলছেন:
وقال تعالى: (وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى) [لقمان:22]
যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে। (সূরা লুকমান:২২)
সৃষ্টজীবের সাথে ইহসানের অর্থ হলো: মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর সাথে সুন্দর আচরণ করা এবং ক্ষুধার্ত ও অসহায়দের প্রতি অনুগ্রহ করা। অক্ষমকে সহযোগিতা করা, পরষ্পর সন্ধি মীমাংসা করে দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:
وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা বাকারা: ১৯৫)
إِنَّ اللَّـهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ
আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন। (সূরা নাহল: ৯০)
মহান আল্লাহ আরো বলছেন:
: (وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ) [النساء:36]،
আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। (সূরা নিসা: ৩৬)
মুহসিনদের গুণাবলী:আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:
(إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ* آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُحْسِنِينَ* كَانُوا قَلِيلاً مِنْ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ* وَبِالأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ* وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ) [الذاريات:15-19]
আল্লাহভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে।এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতোপূর্বে তারা ছিল (১) সৎকর্মপরায়ণ,(২) তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত, (৩) রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত, এবং (৪) তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল। (সূরা যারিয়াত: ১৫-১৯)
বর্ণিত আয়াতের মর্যাদা অর্জনের জন্য অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করার পাশাপাশি রাতের নামায, ভোর রাতে ইস্তেগফার, এবং অভাবীদের সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে।
ইহসানের প্রতিদান জান্নাত: আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:
: (إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي ظِلَالٍ وَعُيُونٍ* وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُونَ* كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئاً بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ* إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنينَ) [المرسلات:41-44].
নিশ্চয় আল্লাহভীরুরা থাকবে ছায়ায় এবং প্রস্রবণসমূহে-এবং তাদের বাঞ্ছিত ফল-মূলের মধ্যে। বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার বিনিময়ে তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।
এই বিষয় বহু আয়াত রয়েছে, যাতে মুহসিনের জন্য অনেক প্রশংসা ও সাওয়াব বর্ণিত হয়েছে।
ইহসান প্রতিষ্ঠার করার কিছু ক্ষেত্র
বিতর্কের ক্ষেত্রে ইহসান প্রতিষ্ঠাতা করা: আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿ ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ﴾
আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়।
ইহসান করার ফল
ইহসানের কারণে শত্রুও বন্ধু হয়ে যায়: আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ﴿٣٣﴾ وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ ﴿٣٤﴾
যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়,সৎকর্ম করে এবং বলে,আমি একজন আজ্ঞাবহ,তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার? সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে,সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, জিহাদ ও দাওয়াতের মাঝে বিশাল ব্যবধান রয়েছে: অর্থাৎ একজন মুজাহিদ যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের মুকাবেলায় কঠোরতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালা বলছেন:
﴿ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ ﴾
হে প্রিয় নবী! অবিশ্বাসীদের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করো, আর তাদের প্রতি কঠোর হও।
পক্ষান্তরে একজন দাঈ, দাওয়াত পেশ করার ক্ষেত্রে তার মুখের ভাষা হবে কোমল ও চিত্তাকর্ষণীয়: আল্লাহ তায়ালা বলছেন:
ولا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ ولا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ
সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে,সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।
সম্মানিত উপস্থিতি! ইহসান থাকতে হবে বৈবাহিক জীবনেও: একজন পুরুষ বিয়ে করার সময়, দ্বীনদার ও বুদ্ধিমতী সৎচরিত্রবান নারীকে নির্বাচন করবে। এবং দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন: ﴿ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ﴾
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা: ১৯)
আবার সাংসারিক জীবনে বনিবনা না হলে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইহসান বজায় রাখার কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে:
﴿ الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ ﴾
তালাকে-হল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সুন্দরভাবে বিদায় দিবে। । (সূরা বাকারা: ২২৯)
চতুষ্পদ জন্তুর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেন:
الإحسان إلى البهائم، عن أبي هريرة ، عن رسول الله قال: ” دَنَا رَجُلٌ إِلَى بِئْرٍ ، فَنَزَلَ فَشَرِبَ مِنْهَا وَعَلَى الْبِئْرِ كَلْبٌ يَلْهَثُ ، فَرَحِمَهُ ، فَنَزَعَ إِحْدَى خُفَّيْهِ ، فَغَرَفَ لَهُ فَسَقَاهُ ، فَشَكَرَ اللَّهَ لَهُ ، فَأَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ رواه ابن حبان في صحيحه،
জনৈক ব্যক্তি এক কূপের কাছে গিয়ে পানি পান করলো, তার পাশে একটি কুকুর পানির জন্য তৃষ্ণাকাতরতায় হাঁপাচ্ছিল।লোকটি একটি মোজা খুলে পানি তুলে কুকুরটিকে পান করালো,কুকুরটি আল্লাহর দরবারের তার জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করলো। আল্লাহ তাকে এই কাজের জন্য জান্নাত দিলেন।ইবনে হিব্বান ৫৪৮
عَنْ عَمْرٍو بنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَن جَدِّهِ: أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولِ اللهِ، إِنِّي أَنْزَعُ فِي حَوْضِي حَتَّى إِذَا مَلَأْتُهُ لِإِبِلِيْ وَرَدَّ عَليَّ الْبَعِيْرُ لِغَيْرِيْ فَسَقَيْتُهُ؛ فَهَلْ لِيْ (فِي) ذَلِكَ مِنْ أَجْرٍ؟ فَقَالَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِيْ كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ حُرِّى أَجْرٌ رواه أحمد
জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)এর কাছে এসে বললো, আমি কূপের কাছে অবতরণ করে নিজের উটকে পানি পান করালাম, অতঃপর দেখলাম অন্য লোকের একটি উট পানি পান করতে এসেছে, আমি সেই উটটিকেও পানি পান করালাম। এতে কি আমার প্রতিদান আছে? রাসূল (সা.) বললেন প্রত্যেক প্রাণীর সাথে উত্তম আচরণে সাওয়াব রয়েছে। (মুসনাদে আহমদ)
এসব হাদীস থেকে জানা গেল যে, গবাদি পশু ও চতুষ্পদ জন্তুর সঙ্গেও যদি উত্তম আচরণ করা হয়, চাই ঐ প্রাণীর গোশতা খাওয়া জায়েয হোক কিংবা না জায়েয, তবুও সাওয়াব রয়েছে। এর বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাগুলো মাফ করে দিবেন।
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বত্র ইহসান প্রতিষ্ঠা করতে বলেছেন।যখন তোমরা কোন প্রাণীকে জবাই করো, তখনো যেন উত্তমভাবে জবাই করো। ছুড়ি বা চাকু ধার করে নিবে, যেন প্রাণীটির কষ্ট কম হয়। এই বিষয়টি অনেক লোকই গুরুত্ব দেন না।
সম্মানিত মুসাল্লিয়ানে কেরাম! উত্তম আচরণ বা ইহসানের বদলায় দুনিয়া ও আখেরাতে অনেক ফায়দা রয়েছে:
দুনিয়াবী ফায়দা হলো:
১। শত্রুতা বন্ধ হয়: আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ
জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে,সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।
২। কল্যাণে পৌঁছা যায়: আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন: إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ
তোমরা যদি সৎকাজ কর তবে তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যেই সৎকাজ করছো,(সূরা ইসরা: ৭)
৩।ইহসানকারীর জন্য প্রজ্ঞা ও জ্ঞান লাভ হয়: মহান আল্লাহ এরশাদ করেন: وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানদান করলাম। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
৪। মুহসিনের সঙ্গে আল্লাহ আছেন: কুরআনের বাণী: إِنَّ اللّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَواْ وَّالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ভয় করে ও সৎকর্মশীল, আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন।
৫।মুহসিনগণ কুরআন হতে উপকৃত হন: আল্লাহ তায়ালা বলেন: الم تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيمِ هُدًى وَرَحْمَةً لِّلْمُحْسِنِينَ আলিফ, লাম, মীম। এগুলো হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থের আয়াতসমূহ, এক পথনির্দেশ ও করুণা সৎকর্মশীলদের জন্য। (সূরা লুকমান: ১-৩)
৬।আল্লাহর ভালোবাসা লাভ: কুরআনের বাণী: وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।
৭। আল্লাহর রহমত অনুগ্রহকারীর নিকটে: আল্লাহ বলছেন:
وَلاَ تُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ بَعْدَ إِصْلاَحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا إِنَّ رَحْمَتَ اللّهِ قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ
পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। তাঁকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। (সূরা আ‘রাফ: ৫৬)
পরকালীন ফায়দা:
১। সমপরিমাণ অনুগ্রহ পাবে: মহান আল্লাহ বলছেন: هَلْ جَزَاء الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ
সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কি হতে পারে?
২। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন : وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ
এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে,আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। (সূরা তাওবা: ১০০)
৩। আল্লাহ পরকালে তার প্রতিদান নষ্ট করবেন না: আল্লাহ তায়ালা বলছেন: إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না। (সূরা কাহাফ: ৩০)
৪। ইহসানের প্রতিদান জান্নাত: কুরআনের বাণী:
فَأَثَابَهُمُ اللّهُ بِمَا قَالُواْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاء الْمُحْسِنِينَ
অতঃপর তাদেরকে আল্লাহ এ উক্তির প্রতিদান স্বরূপ এমন উদ্যান দিবেন যার তলদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তারা তন্মধ্যে চিরকাল অবস্থান করবে। এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান। (সূরা মায়েদা: ৮৫)
৫। যা চাইবে তাই পাবে: এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করছেন:
لَهُم مَّا يَشَاءونَ عِندَ رَبِّهِمْ ذَلِكَ جَزَاء الْمُحْسِنِينَ
তাদের জন্যে পালনকর্তার কাছে তাই রয়েছে, যা তারা চাইবে। এটা সৎকর্মীদের পুরস্কার। (সূরা যুমার: ৩৪)
৬। আল্লাহর চেহরা দেখার সৌভাগ্য হবে: রাসূলে কারীম (সা.) এরশাদ করেন,
عَنْ صُهَيْبٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : ” إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ ، قَالَ : يَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى : تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ : أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا ، أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ ؟ قَالَ : فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الآيَةَ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ
রাসূলুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন,জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন মহান বরকতময় আল্লাহ বলবেন,‘তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বেশি দেই?’ তারা বলবে,‘তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দাওনি? আমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’ তারপর আল্লাহ (হঠাৎ) পর্দা সরিয়ে দেবেন (এবং তারা তাঁর চেহারা দর্শন লাভ করবে)। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতীদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন (দীদার)ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়।’ (মুসলিম ১৮১)
মহান আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَانِهِمْ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ ﴿٩﴾ دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّـهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ۚ وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّـهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿١٠﴾
“নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদের প্রতিপালক তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন,শান্তির উদ্যানসমূহে তাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নদীমালা প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তাদের বাক্য হবে, ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ (হে আল্লাহ! তুমি মহান পবিত্র)! এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম। আর তাদের শেষ বাক্য হবে, ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)”। (সূরা ইউনুস ৯-১০)