Main Menu
أكاديمية سبيلي Sabeeli Academy

হিলফুল ফুযুল: মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভূমিকা এবং আমাদের শিক্ষণীয়

হিলফুল ফুযুল: মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভূমিকা এবং আমাদের শিক্ষণীয়

হিলফুল ফুযুল: মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভূমিকা এবং আমাদের শিক্ষণীয়

প্রথম পর্ব

ভূমিকা:
সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহাপরাক্রমশীল, প্রবল পরাক্রান্ত, মহিমান্বিত, সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক, যিনি এক ও অদ্বিতীয়, যার কোন অংশীদার নেই; সেই চিরস্থায়ী এবং চিরপ্রতিষ্ঠিত আল্লাহপাকের জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক মানবতার মহান মুক্তির দূত জ্ঞানের বর্তিকা বাহক, অন্ধকার বিদূরণকারী উৎপীড়িত, নির্যাতিত, আতঙ্কিত, মজলুম জনতার হৃদয়ের বন্ধু, প্রাণের স্পন্দন, কঠিন বিভীষিকাময় দিবসে শাফায়াতের দ্বার উম্মোচক, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষ শেষনবী, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর। অসংখ্য কল্যাণ ও শান্তির ধারা নাযিল হোক সকল উম্মতে মুসলিমাগণের উপর এবং সেই সব সাহাবায়ে কেরামগণের উপর যারা স্বীয় জীবন, মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান, মোহনীয়, লোভনীয় পার্থিব সম্পদ সব কিছুর ঊর্ধ্বে নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে ভালবেসে বুকের টাটকা তাজা রক্ত দিয়ে ধূলির ধরাকে রঞ্জিত করে স্রষ্টার মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামকে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা প্রশস্ত করে গেছেন। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাক। তাবেঈনগণ, তাবে‘ তাবঈনগণ সর্বকালের মুজতাহিদ ইমাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল সৎকর্মপরায়ণ মুসলিম নারী-পুরুষের উপর। আজ আমি যে বিষয়টি লিখার উদ্যোগী হয়ে কলম ধারণ করেছি, সেই বিষয়ে আমার যোগ্যতা তেমন মেঘমুক্ত আকাশের দ্বিপ্রহরে সূর্যালোকে প্রদীপের আলো যেমন। তবুও যেন আমি জ্ঞানের বর্তিকা বিতরণে জ্ঞানীদের সাহচর্যে থাকতে পারি। এ জন্য পরম দয়ালু আল্লাহর দরবারে কল্যাণকর জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করি এবং সকলের নিকট দোয়া চাই। আল্লাহ আমার লিখাকে তোমার সন্তুষ্টির জন্য গ্রহণ কর এবং দু’জাহানে তোমার কল্যাণ পাওয়ার যোগ্য কর।
উদ্দেশ্য:
‘হিলফুল ফুযুল’ এ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভূমিকা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভুলুণ্ঠিত মুসলিম জাতি এবং মানবতাবাদী দলগুলো যেন তাদের কর্মপন্থা ঠিক করে মানব জাতীকে সম্মানের চূড়ান্ত শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়। এতে দলমত নির্বিশেষে নিগৃহীত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকার বঞ্চিত, আতঙ্কিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
আরবের তৎকালীন নীতি নৈতিকতা:
মরুচারী আরববাসীগণের মধ্যে নীতি নৈতিকতা ও চরিত্রের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী দুইটি ভাব ধারার বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। এক. জুয়া, মদ্যপান, ব্যভিচার, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, হত্যা, প্রতিহিংসা পরায়নাতা ইত্যাদি জঘন্য মানবেতর কার্যকলাপ। দুই. অপর দিকে লক্ষ্য করা যায়, দয়া-দাক্ষিণ্য, উদারতা, অতিথি পরায়ণতা, প্রতিজ্ঞা পরায়ণতা এবং আরো অনেক উন্নত মানসিক গুণাবলীর সমাবেশ। (আর রাহীকুল মাখতুম)
কারণ:
দু’টি কারণে ‘হিলফুল ফুযুল’ সংঘঠিত হয়। (আর রাহীকুল মাখতুম)
প্রথম কারণ: ফিজার যুদ্ধ (حرب الفجار) নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বয়স যখন পনের বছর তখন বিখ্যাত ফিজার যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এ যুদ্ধে এক পক্ষে ছিলেন, কুরাইশগণ এবং তাদের মিত্র বনুকেনানা। বিপক্ষে ছিলেন কায়েস আয়লানা। কুরাইশ-কেনানা মিত্রপক্ষে সেনাপতি ছিলেন হারব বিন উমাইয়া। কারণ, প্রতিভা এবং প্রভাব প্রতিপত্তির ফলে তিনি কুরাইশ ও কেনানাগোত্রের মধ্যে নিজেকে মান-মর্যাদার উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। যুদ্ধের প্রথম প্রহরে কেনানার উপর কায়সের পাল্লা ভারী ছিল কিন্তু দুপুর হতে না হতেই কায়সের উপর কেনানার পাল্লা ভারী হয়ে আসে। একে ফিজার যুদ্ধ এই জন্যই বলা হয় যে, এতে নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ এবং পবিত্র মাসের পবিত্রতা উভয়ই বিনষ্ট করা হয়। এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি চাচাদের হাতে তীর তুলে দিতেন। (আর রাহীকুল মাখতুম)
দ্বিতীয় কারণ:
অন্য একটি প্রাসঙ্গিক প্রত্যক্ষ পটভূমির কথাও জানা যায় তা হচ্ছে; যোবায়েদ নামক একটি লোক মক্কায় এসেছিলেন কিছু মালপত্র নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশে। আস বিন ওয়ায়েল তাঁর নিকট থেকে মালপত্র ক্রয় করেন কিন্তু তাঁর প্রাপ্য তাঁকে না দিয়ে তা আটক রাখেন। এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্যের জন্য তিনি আব্দুদ্দার মাখযুম, জামহ, সাহাম এবং আদী এ সকল গোত্রের নিকট সাহায্যের আবেদন জানান। তাঁর আবেদনে কেউ কর্ণপাত না করায় তিনি জাবালে আবু কুবায়েস পর্বতের চূড়ায় উঠে উচ্চ কণ্ঠে কিছু কবিতা আবৃত্তি করেন যার মধ্যে তাঁর নিজের অত্যাচারিত, উৎপীড়িত হওয়ার বিষয়টিও বর্ণিত ছিল। আবৃত্তি শ্রবণ করে জোবায়ের বিন আব্দুল মুত্তালিব দৌড়ে গিয়ে বলেন “এ লোকটি অসহায় এবং সহায়-সম্বলহীন কেন?” তাঁরই প্রচেষ্টায় উপর্যুক্ত গুত্রগুলো একত্রিত হয়ে একটি সন্ধি চুক্তি সম্পাদন করেন এবং পরে আস বিন ওয়ায়েলের নিকট থেকে জোবায়েরের পাওনা আদায় করে দেওয়া হয়। (আর রাহীকুল মাখতুম)
হিলফুল ফুযুল:
ফুজ্জার যুদ্ধের নির্মম নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতায় সুচিন্তাশীল ও সুদিচ্ছাপরায়ণ আরববাসীগণকে দারুণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিচলিত করে তোলে। এ যুদ্ধে অগণ্য জীবন নাশ হয়, অসংখ্য শিশু ইয়াতীম হয়, কত নারী বিধবা হয় এবং কত সম্পদ বিনষ্ট হয় তার ইয়ত্তা করা যায় না। ভবিষ্যতে আরববাসীগণকে যাতে এ রকম অর্থহীন যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে ভয়াবহ ক্ষয়-ক্ষতির শিকার না হতে হয় সে জন্য আরবের বিশিষ্ট গোত্রপতিগণ আব্দুল্লাহ বিন জুদয়ান তাইমীর গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর নামে একটি অঙ্গীকার নামা সম্পাদন করেন। আব্দুল বিন জুদয়ান ছিলেন তৎকালীন মক্কার একজন অত্যান্ত ধণাঢ্য ব্যক্তি। অধিকন্তু সততা, দানশীলতা ও অতিথি পরায়ণতার জন্য সমগ্র আরবভূমিতে তাঁর বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিল। এই কারণে আরবগণের উপর তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। এ প্রেক্ষিতেই তাঁর বাড়িতে অঙ্গীকার নামা সম্পাদন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। যে সকল গোত্র আলোচনা বৈঠকে অংশগ্রহণ করে তার মধ্যে প্রধান গোত্রগুলো হচ্ছে; বনু হাশেম, বনু মুত্তালিব, বনু আসাদ বিন আব্দুল উয্যা, বনু যোহরা বিন কেলাব এবং বনু তামীম বিন মুররাহ। বৈঠকে একত্রিত হয়ে সকলে যাবতীয় অন্যায়, অনাচার এবং অর্থহীন যুদ্ধ বিগ্রহের প্রতিকার সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করেন। তখনকার সময়ে নিয়ম ছিল গোত্রীয় কিংবা বংশীয় কোন ব্যক্তি, আত্মীয়-স্বজন অথবা সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ কোন ব্যক্তি শত অন্যায় অনাচার করলেও সংশ্লিষ্ট সকলকে তার সমর্থন করতেই হবে তা সে যত বড় বা বীভৎস অন্যায় হোক না কেন। এ পরামর্শ সভায় এটা স্থিরীকৃত হয় যে, এ জাতীয় নীতি হচ্ছে ভয়ঙ্কর অন্যায়, অমানবিক ও অবমাননাকর। কাজেই এ ধরণের জঘণ্য নীতি আর কিছুতেই চলতে দেওয়া যেতে পারে না। তা প্রতিজ্ঞা করলেন:
(ক) দেশের অশান্তি দূর করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
(খ) বিদেশী লোকজনের ধন-প্রাণ ও মান-সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
(গ) দরিদ্র, দুর্বল ও অসহায় লোকদের সহায়তা দানে আমরা কখনও কুণ্ঠাবোধ করব না।
(ঘ) অথ্যাচারী ও অনাচারী অন্যায়-অত্যাচার থেকে দুর্বল দেশবাসীদের রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব। (আর রাহীকুল মাখতুম)
নবী করিম (সাঃ) এবং তাঁর চাচা যোবায়ের বিন আব্দুল মুত্তালিব এ আলোচনা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রকৃত পক্ষে যুবক নবী (সাঃ)ই ছিলেন সে কল্যাণমুখী চিন্তা-ভাবনার উদ্ভাবক এবং চাচা যোবায়ের ছিলেন প্রথম সমর্থক। তাঁদের উভয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই ক্রমান্বয়ে সমর্থক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ বিন জুদয়ানের গৃহে বিভিন্ন গোত্রপতিগণের উপস্থিতিতে এবং তাদের সম্মতি সাপেক্ষে অঙ্গীকার নামা সম্পাদিত হয়। এরই ভিত্তিতে একটি সেবাসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা ছিল অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকার নামা। এ জন্য এ অঙ্গীকার নামা ভিত্তিক ভিত্তিক সেবাসঙ্ঘের নাম দেওয়া হয়েছিল “হিলফুল ফুযুল” বা “হলফুল ফুযুল”। (আর রাহীকুল মাখতুম)
কার্যকারিতা:
এ অঙ্গীকার নামার ফলে আরববাসীগণের মধ্যে চিন্তা চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে এবং প্রথমাবস্থায় খুব ভালভাবে কাজকর্ম চলতে থাকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুয়ত লাভরে পর কুরাইশদের মধ্যে কিছুটা বিরূপভাব সৃষ্টি হওয়ার ফলে শেষ পর্যন্ত এর কার্যকারিতা স্তিমিত হয়ে পড়ে। (আর রাহীকুল মাখতুম)
রাসূল (সাঃ) এর প্রতিক্রিয়া:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ অঙ্গীকার নামার কথা কখন ও বিস্মৃত হন নি। বদর যুদ্ধে বন্দীগণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের সময় তিনি এ প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছিলেন। একদা এ প্রসঙ্গে উল্লেখকালে তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলে ছিলেন, “আজও যদি কোন উৎপীড়িত ব্যক্তি বলে, হে ফুযুল অঙ্গীকার নামার ব্যক্তিবৃন্দ! আমি নিশ্চয় তার সে আহ্বানে সারা দিব। কারণ ইসলাম তো এসেছে ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং উৎপীড়িত ও অত্যাচারিতকে সাহায্য করতে।”
অধিকন্তু এ ব্যাপারে অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “আব্দুল্লাহ বিন জুদআনের বাসভবনে আমি এমন এক অঙ্গীকার নামায় শরীক ছিলাম যার বিনিময়ে আমি আসন্ন প্রসবা উটও পছন্দ করি না এবং যদি ইসলামের যুগে এরূপ অঙ্গীকারের জন্য আমাকে আহ্বান জানানো হয় তাহলেও আমি উপস্থিত আছি কিংবা প্রস্তুত আছি বলতাম।” (আর রাহীকুল মাখতুম)
বর্তমান বিশ্বে মানব রচিত বিধানের পিছনে মানুষ যেভাবে ছুটে বেড়াচ্ছে শান্তির প্রত্যাশায় তা শুধু ধু-ধু মরিচিকা মাত্র। কারণ প্রকৃত শান্তি ও কল্যাণ রাসূল (সাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে নিহিত। আরব জাহিলিয়াতে যেমন ন্যায়-অন্যায় মূখ্য বিষয় ছিল না, ছিল গোত্রীয়, বংশীয় ও সন্ধি সম্পর্কীয় টানে অন্যায়, অনাচারের সমর্থন দান; তা যত বিভৎস ও অরুচিকর হৌক না কেন। তেমনি বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, পুঁজিবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদের ধ্বজাদারীদের আস্ফালন জাহিলিয়াতের বিভৎসতাকেও হার মানিয়েছে। ধরাপৃষ্ঠে সর্বত্র চলছে অন্যায়, অবিচার আর জুলুম নির্যাতনের স্টিমরুলার। পৃথিবীর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হচ্ছে; তরুণ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতিতে প্রতিটি জন পদে প্রতিজ্ঞাপরায়ণ, ন্যায়পরায়ণ, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী, সত্যিকার জনহিতকারী এবং উন্নত মানসিকগুণাবলী সম্পন্ন লোকদের নিয়ে সংগঠন করা। যারা স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি, বংশীয় অহমিকা ও বর্তমানে প্রচলিত রাজনীতির গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সঙ্ঘ করবে। এ অঙ্গীকার নামা অবশ্যই আল্লাহর নামে সম্পাদন করতে হবে। যেমন জাহিলিয়াত যুগে আরববাসীগণ করেছিলেন। আর তাইএ অঙ্গীকার নামায় এমন শর্তাবলী সমাবেশ ঘটাতে হবে যা অনুসরণ করলে ধর্মীয় উগ্রবাদী, জে এমবি প্রশ্রয় পাবে না; তেমনি শহীদদের সম্মানের নামে অগ্নিপূজা, পীরের অনুসরণের নামে কবর পূজা, গণতন্ত্রের নামে আল্লাহদ্রোহী আইন ইত্যাদিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন একনিষ্ঠভাবে কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অনুসরণ। তবে আশা করা যায় ইনশা আল্লাহ সমাজের সর্বত্র শান্তির সমিরণ বইতে শুরু করবে। অন্যায় প্রমাণের মানদণ্ড হতে হবে কুরআন এবং সহীহ হাদীস। আর এ দু’টোকে মূলভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করলে সমাজে যেমন জালিম থাকতে পারে না তেমনি জুলুমও চলতে পারে না। জালিম আর জুলুম না থাকলে সমাজে অশান্তিও থাকবে না। কারণ ইসলাম জালিমের হাত ধরে ফেলতে অন্যায়, অত্যাচার প্রতিরোধ করতে এবং অত্যাচারিতকে সাহায্য করতে বলে। নিম্নে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে দল গঠন ও অন্যায় কাজে বাঁধাদান সম্পর্কে দলিল পেশ করা হল।
আল্লাহ বলেন: তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকতেই হবে যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে। ভাল কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে। যারা এই কাজ করবে তারাই সফলকাম হবে। (সূরা আলে ইমরান: ১০৪) তিনি আরো বলেন: তোমরা সর্বোত্তম দল (উম্মাত)। তোমাদেরকে মানুষের (হিদায়েত ও সংস্কারের) জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ করতে নিষেধ করবে। (সূরা আলে ইমরান: ১১০) এই বিষয়ে অনেক আয়াত আছে। আমি শুধু একটি এবং আয়াতের অংশবিশেষ উল্লেখ করেছি মাত্র।
নবী (সাঃ) বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন মন্দ কাজ হতে দেখে, তা যেন সে হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে, যদি এই ক্ষমতা সে না রাখে সে যেন মুখের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করে, আর যদি সে এই ক্ষমতাটুকুও না রাখে তবে যেন হৃদয়ের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করে। এটাই হল দুর্বলতম ঈমান।” (মুসলিম: ৪৯)
তিনি আরও বলেছেন: “সেই মহান আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার (মুহাম্মাদ) জান। অবশ্যই তোমরা সত্য ও ন্যায়ের দির্শেদ দিবে এবং অন্যায় ও অসত্যের কাজে বাধা দিবে। তা না হলে অচিরেই আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন। তোমরা প্রার্থনা করবে কিন্তু তোমাদের ডাকে সারা দেওয়া হবে না। (ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন এবং হাদীস হাসান। রিয়াদুস সালেহীন তাহক্বীক আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) হাদীস নং ১৯৮)

আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে; তিনি বলেন হে লোক সকল! এ আয়াত তোমরা পড়ে থাক, “হে ঈমানদারগণ! তোমারা নিজেদের কথা ভাব, কারো পথভ্রষ্টতায় তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না। তোমরা যদি সঠিক পথে থাকতে পার। তোমাদের সকলকে আল্লার কাছে ফিরে যেতে হবে। তারপর তোমাদেরকে তিনি বলে দিবেন; তোমরা দুনিয়ার জীবনে কী করে ছিলে? (সূরা মায়েদা: ১০৫) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে আমি (আবু বকর) বলতে শুনেছি, “লোরো যখন দেখে অত্যাচারী অত্যাচার করছে কিন্তু তার প্রতিরোধ তারা করল না আল্লাহ তা‘আলা শীঘ্রই এমন লোকদের উপর আযাব পাঠাবেন”। (হাদীসটি সহীহ সনদ সহকারে ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ও নাসায়ী বর্ণনা করেছেন। রিয়াদুস সালেহীন তাহক্বীক আলবানী (রহঃ) হাদীস নং ২০২)
এই বিষয়ে অনেক হাদীস রয়েছে, আমি সামান্য কয়েকটি হাদীসের অংশবিশেষ উল্লেখ করেছি মাত্র। (চলবে)

Related Post