আত্মসমালোচনা কি? এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি!

আত্মসমালোচনা কি?

আত্মসমালোচনা কি?

আত্মসমালোচনার শাব্দিক অর্থ

আভিধানিক অর্থে আত্মসমালোচনা বলতে বুঝায় নিজের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা। আর আরবীতে বলা হয়- * ﻣﺤﺎﺳﺒﺔ ﺍﻟﻨﻔﺲ * অর্থাৎ স্বীয় আত্মার হিসাব গ্রহণ করা। বিখ্যাত আরবী অভিধান ‘লিসানুল আরাবে’ উল্লেখিত হয়েছে-

* ﻭﻫﻮ ﻣﺄﺧﻮﺫ ﻣﻦ ﻣﺎﺩّﺓ ‏( ﺡ ﺱ ﺏ ‏) ﺍﻟّﺘﻲ ﺗﺪﻝّ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺪّ، ﺗﻘﻮﻝ : ﺣﺴﺒﺖ ﺍﻟﺸّﻲ ﺀ ﺃﺣﺴﺒﻪ ﺣﺴﺒﺎ ﻭﺣﺴﺒﺎﻧﺎ، ﻭﺣﺴﺎﺑﺎ ﻭﺣﺴﺎﺑﺔ ﺇﺫﺍ ﻋﺪﺩﺗﻪ

অর্থাৎ মুহাসাবার শাব্দিক অর্থ হল- গণনা করা বা হিসাব করা। সুতরাং মুহাসাবাতুন নাফসের অর্থ দাঁড়াচ্ছে আত্মার হিসাব গ্রহণ করা।

পারিভাষিক অর্থ পারিভাষিক অর্থে আত্মসমালোচনা বলতে বুঝায়,কোন কাজ করা বা ছাড়ার পূর্বে এমনভাবে সচেতন থাকা, যেন আমি কী করতে যাচ্ছি বা কী ছাড়তে যাচ্ছি তা আমার কাছে স্পষ্ট থাকে। যদি তা দেখা যায় আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক, তবে তা নিষ্ঠার সাথে পালন করা। আর যদি তা হয় আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক তবে তা থেকে সর্বতোভাবে বিরত থাকা। সাথে সাথে নিজেকে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজ তথা ফরয ও নফল ইবাদতে আবদ্ধ রাখা। ইমাম মাওয়ার্দী বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হল প্রতিদিন রাতে শয়নের পূর্বে দিনের বেলা যে

সমস্ত কাজ নিজের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে সেসব কাজ তদন্ত করা। অতঃপর যে কাজটি উত্তম ও কল্যাণকর প্রতীয়মান হয়, তা আগামীতে অব্যাহত রাখা এবং অনুরূপ কাজে নিজেকে জড়িত রাখা। আর যে সব কাজ নিজের ও সমাজের জন্য মন্দ ও অকল্যাণকর প্রমাণিত হয়, সে কাজটি পরিত্যাগ করা এবং সাধ্যমত তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর আগামীতেও অনুরূপ কাজে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা রাখা (আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া, পৃঃ ৩৪৬)।

আল্লামা ইবনুল কাইয়েমের মন্তব্য এখানে আরো স্পষ্ট। তিনি বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হচ্ছে- নিজের জন্য কী করণীয় এবং কী বর্জনীয় তা পৃথক করে ফেলা। অতঃপর সর্বদা ফরয ও নফল কতর্ব্যসমূহ আদায়ের জন্য প্রস্তুত থাকা এবং হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করার উপর সুদৃঢ় থাকা।

আত্মসমালোচনার অপর সংজ্ঞায় তিনি বলেন, এর অর্থ হল প্রতিটি কাজে সর্বপ্রথম আল্লাহর হক্বসমূহের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া; অতঃপর সে হক্বগুলো যথাযথভাবে আদায় করা হচ্ছে কী না তার প্রতি কড়া নজর রাখা (আল ফাওয়ায়েদ)।

আত্মসমালোচনার হুকুম

‘মুহাসাবাতুন নাফস’ বা আত্মসমালোচনাকে প্রতিটি মুমিনের জন্য অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহ সূরা হাশরের ১৮ নং আয়াতে বলেন,

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻟْﺘَﻨْﻈُﺮْ ﻧَﻔْﺲٌ ﻣَﺎ ﻗَﺪَّﻣَﺖْ ﻟِﻐَﺪٍ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিৎ- আগামী কালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কি প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন (অর্থাৎ তারা কোন কাজটি ভাল, কোনটি মন্দ তা বাছাই করা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে)। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক (হাশর ১৮)।

ইবনুল কাইয়িম বলেন, এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রত্যেক মুমিনের জন্য আত্মসমালোচনাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। যেন আল্লাহ বলছেন, তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করা কর্তব্য যে, আগামী দিনের জন্য তুমি যা প্রেরণ করেছ তা তোমার জান্নাতের পথ সুগম করছে, না কি তোমাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? (মাদারিজুস সালেকীন, ১/১৭০ পৃঃ)।

রাসূল (ছাঃ)-এর বহু হাদীছ থেকে আত্মসমালোচনার গুরুত্ব স্পষ্ট বোঝা যায়। উমার (রাঃ) বলেন,

* ﺣﺎﺳﺒﻮﺍ ﺃﻧﻔﺴﻜﻢ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﺤﺎﺳﺒﻮﺍ، ﻭﺯﻧﻮﺍ ﺃﻧﻔﺴﻜﻢ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺯﻧﻮﺍ . ﻓﺈﻧّﻪ ﺃﻫﻮﻥ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺴﺎﺏ ﻏﺪﺍ، ﺃﻥ ﺗﺤﺎﺳﺒﻮﺍ ﺃﻧﻔﺴﻜﻢ ﺍﻟﻴﻮﻡ، ﻭﺗﺰﻳّﻨﻮﺍ ﻟﻠﻌﺮﺽ ﺍﻷﻛﺒﺮ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺗُﻌْﺮَﺿُﻮﻥَ ﻻ ﺗَﺨْﻔﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺧﺎﻓِﻴَﺔٌ ***

‘তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ কর, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হবার পূর্বেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা মেপে নাও চূড়ান্ত দিনে মাপ গৃহীত হওয়ার পূর্বেই। কেননা আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আগামী দিনের চূড়ান্ত মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য হালকা হয়ে যাবে। তাই সেই মহাপ্রদর্শনীর দিনের জন্য তোমরা নিজেদেরকে সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কিছুই সেদিন গোপন

থাকবে না’।

আপনি কেন আত্মসমালোচনা করবে?

১. দ্বীনের উপর ইস্তিকামাত অর্জন : আত্মসমালোচনা দ্বীনের প্রতি ইস্তিক্বামাত অর্জন করা তথা অটল থাকার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম, যা মানুষকে আল্লাহর দরবারে মুহসিন ও মুখলিছ বান্দাদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়। ইমাম গাযালী বলেন, ‘মুহাসাবাকারী ব্যক্তির উদাহরণ হল একজন ব্যবসায়ীর মত, যে পরকালীন জীবনের জন্য ব্যবসা করে। এ ব্যবসায় দুনিয়াবী মুনাফা হিসাবে সে পেতে পারে আত্মিক পরিশুদ্ধি আর পরকালীন মুনাফা হিসাবে পেতে পারে জান্নাতুল ফেরদাউস এবং সিদরাতুল মুনতাহায় আম্বিয়ায়ে কেরামসহ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের চিরন্তন সাহচর্য। তাই দুনিয়াবী ব্যবসায় সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশের চেয়ে পরকালীন ব্যবসার সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ করা বহু বহু গুণ বেশী গুরুত্বপূর্ণ’ (ইহয়াউ উলূমিদ্দীন,

৩/৩৯৪ পৃঃ)।

২. পরকালীন জওয়াবদিহিতা সৃষ্টি : আত্মসমালোচনার সবচেয়ে বড় উপকার হল- এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে পরকালীন জওয়াবদিহিতার উপলব্ধি সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি তার প্রতিটি কর্মে আল্লাহর কাছে জওয়াবদিহি করার অনুভূতি রাখে, সে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই আল্লাহর একজন মুখলিছ ও মুত্তাকী বান্দায় পরিণত হয়। উমর (রাঃ) রাত হলে মাটিতে আক্ষেপের সাথে পদাঘাত করে নিজেকে বলতেন, ‘বল! আজ তুমি কি করেছ?’। মাইমুন বিন মেহরান বলতেন, ‘মুত্তাকী ব্যক্তি সেই যে নিজের জওয়াবদিহিতা এমন কঠোরভাবে গ্রহণ করে যেন সে একজন অত্যাচারী শাসক’ (ইহয়াউ উলূম ৩/৩৯৫)।

৩. দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি : আত্মসমালোচনা মানুষকে নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন করে তোলে। ফলে সে নিজের পারিবারিক ও সামাজিক কর্তব্যসমূহ পালনে বহুগুণ বেশী তৎপর হতে পারে।

৪. তওবার সুযোগ লাভ : আত্মসমালোচনা পাপ থেকে তওবা করার সর্বোত্তম মাধ্যম। যে ব্যক্তি নিজের সমালোচনা করতে জানে সে আল্লাহর হক্ব আদায়ে যেসব ত্রুটি করেছে, তা তার সামনে যখনই প্রকাশিত হয় তখনই সে তওবা করার সুযোগ পায়।

৫. ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন : আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের ত্রুটিগুলো ধরা যায়। ফলে আত্মসংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে ভবিষ্যতে আরো উন্নতরূপে গড়ে তোলা সম্ভব হয়। জীবনের প্রতিটি স্তরে আত্মসমালোচনা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা অবলম্বন করার অর্থ স্বীয় ভবিষ্যতকে অর্থপূর্ণ করে তোলা এবং জীবনের উদ্দেশ্যকে সুষ্ঠু ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করা। যা তার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে বিজয়লাভ অনিবার্য করে তোলে।

৬.নিয়তের পরিশুদ্ধি: আত্মসমালোচনা এমন একটি অভ্যাস যা বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার একটি গোপন লেনদেনের মত। ফলে তাতে আত্মার পবিত্রতা ও নিয়তের পরিশুদ্ধি অর্জিত হয় এবং অন্তর শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ইখলাছপূর্ণ হয়ে ওঠে।

৭. জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা সৃষ্টি : আত্মসমালোচনা জীবনের লক্ষ্যকে সবসময় সজীব করে রাখে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা অনুভব করতে পারি আমাদেরকে এই পৃথিবীর বুকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। পার্থিব জীবন শুধু খাওয়া-দাওয়া, হাসি-ঠাট্টার নয়, এ জীবনের পরবর্তী যে অনন্ত এক জীবন, তার জন্য যে আমাদের সবসময় প্রস্ত্তত থাকতে হবে- আত্মসমালোচনা আমাদেরকে সর্বক্ষণ তা স্মরণ করায়।

৮. আমলনামায় সমৃদ্ধি অর্জন : সারাদিন অনাহারে থেকে ছিয়াম পালন, রাতের ঘুম পরিত্যাগ করে তাহাজ্জুদ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় ইত্যাদি ফরয ও নফল ইবাদত মুহাসাবার এক একটি মহৎ ফলাফল। ইমাম গাযালী বলেন,‘ফজরের ছালাত আদায়ের পর মানুষের উচিৎ নিজের অন্তরের উপর ব্যবসায়ীদের মত শর্তারোপ করা এবং বলা যে- হে অন্তর! আমার একমাত্র পুঁজি আমার বয়স। বয়স যতই অতিক্রান্ত হচ্ছে ততই আমার পুঁজি নিঃশেষ হয়ে আসছে। আর তার সাথে ফিকে হয়ে আসছে অধিক লাভের আশাও। আজ আরো একটি নতুন দিন, আল্লাহ আমাকে সুযোগ দিয়েছেন আমার ব্যবসায় অধিক উন্নতি সাধনের জন্য। যদি আল্লাহ আজ আমার মৃত্যু দান করেন তবে তাঁর কাছে আমার কামনা থাকবে একটি দিনের জন্য হলেও দুনিয়ায় ফেরৎ যাওয়ার,যেন আমার আমলনামা আরও সমৃদ্ধ করতে পারি। সুতরাং আমার আত্মা! তুমি আপন হিসাব গ্রহণ কর কেননা তোমার মৃত্যু হবেই, তারপর হবে পুনরুজ্জীবন। তাই সাবধান! আবারো সাবধান! দিনটি তুমি নষ্ট করো না(ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, ৩/৩৯৪ পৃঃ)।

৯. ছোট ও বড় পাপ থেকে রক্ষা পাওয়া : মুহাসাবার ফলে কোন পাপ দ্বিতীয়বার পুনরাবৃত্তি করতে গেলে বিবেকে বাধা দেয়। ফলে পাপের কাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।

১০. দুনিয়াবী জীবনের চাহিদা হ্রাস: মুহাসাবার ফলে তাক্বদীরের প্রতি সুস্থির বিশ্বাস জন্ম নেয়। ফলে দুনিয়াবী যিন্দেগীর দৈনন্দিন অভাব- অভিযোগ আমাদেরকে বেকায়দায় ফেলতে পারে না। কোন অলীক কামনা-বাসনা আমাদের বিচলিত করে না। ফলে দুনিয়াবী ধন-সম্পদ, পদবী-মর্যাদা লাভের জন্য আর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ারও প্রয়োজন অনুভূত হয় না।

আত্মসমালোচনা না করার ফলাফল :

ইবনুল কাইয়িম বলেন, মুহাসাবা পরিত্যাগ করার অর্থ কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলা। এতে মানুষের অন্তর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ মুহাসাবা পরিত্যাগ করার ফলে দ্বীনের প্রতি তার শিথিলতা চলে আসে, যা তাকে নিশ্চিতভাবেই দুনিয়াবী জীবন ও পরকালীন জীবনে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। কেবলমাত্র আত্মগর্বী, প্রতারিত আত্মাই মুহাসাবা পরিত্যাগ করতে পারে। ফলশ্রুতিতে সে কোন কিছুর পরিণাম চিন্তা করে না। সমস্ত পাপ তার কাছে অত্যন্ত সহজ বিষয় হয়ে যায়। অবশেষে একসময় পাপ থেকে বেরিয়ে আসাটা তার কাছে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কখনো যদি সে সৎপথের সন্ধান পায়ও,তবুও সে তার অন্যায় অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করে।

আত্মসমালোচনার পদ্ধতি

আত্মসমালোচনা করার পদ্ধতি মূলতঃ দুটি-

১. কোন আমল শুরু করার পূর্বে মুহাসাবা করা : অর্থাৎ কোন কাজের সংকল্প করার পূর্বেই সে কাজটি সম্পর্কে অনুসন্ধান করা এবং যতক্ষণ না দুনিয়াবী ও পরকালীন জীবনের জন্য সেটা উত্তম ও কল্যাণকর প্রতীয়মান হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই কাজ থেকে বিরত থাকা (ব্যবসা,চাকুরী ইত্যাদি)। প্রতিদিন সকালে অন্তরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিতে হবে যেন সারাদিন সৎআমলের সাথে সংযুক্ত থেকে অসৎ আমল থেকে বিরত থাকা যায়।

২. আমল শেষ করার পর মুহাসাবা করা : চার ধাপে এটা করা যায়-

ক. আমলের প্রকৃত হক্ব আদায় করা হয়েছে কি না তা লক্ষ্য করা : ইবাদতসমূহ পালিত হওয়ার পর নজর

দেয়া যে, তাতে আল্লাহর হক্ব পরিপূর্ণ আদায় করা হয়েছে কি না। ইবাদতে আল্লাহর হক্ব ছয়টি-

১. আমলের মধ্যে খুলূছিয়াত থাকা,

২. তার মাঝে আল্লাহর জন্য নছীহত থাকা (আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি সঠিক বিশ্বাস পোষণ করা),

৩. রাসূলের (ছাঃ) প্রতি আনুগত্য থাকা,

৪. একাগ্রতা থাকা,

৫. নিজ সত্তার উপর আল্লাহর কর্তৃত্বের পূর্ণ উপলব্ধি থাকা,

৬. অতঃপর এ সকল বিষয়াদির প্রতিটিতে নিজের ত্রুটি

হচ্ছে-এই অনুতপ্তভাব থাকা (ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, ৪/৩৯৪ পৃঃ)।

এ সকল হক্ব পূর্ণভাবে আদায় করা হয়েছে কি-না আমল সম্পন্ন করার পর তা চিন্তা করতে হবে।

খ.ছওয়াব অর্জনে কমতি হল কি না তা লক্ষ্য করা : অর্থাৎ কোন বিশেষ বড় উপলক্ষ্য যেমন- রামাযানের ছিয়াম, জুম‘আর দিন, আশুরা, কিয়ামুল লাইল ইত্যাদি ছওয়াব অর্জনের বড় উপলক্ষ্য গুলো অতিক্রান্ত হওয়ার পর যথাযথভাবে তার হক্ব আদায় করা হল কি-না তা নিয়ে আত্মসমীক্ষায় বসা এবং ভবিষ্যতে আরো উত্তমভাবে তা পালনের জন্য সংকল্প করা।

গ. অপ্রয়োজনীয় কাজ পরিত্যাগ করা : দ্বীনী দৃষ্টিতে যে হালাল কাজ করার চেয়ে না করাই বেশী উত্তম মনে হয়, তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা ( যেমন-ইসলামী গান অত্যধিক শোনা)। কোন নির্দোষ কিন্তু অগুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকলে তা থেকেও নিজেকে সাধ্যমত সংযত করা। অর্থাৎ আগামীতে কেন এটা করব? এর দ্বারা কি আমি আল্লাহর পথে আরো অগ্রসর হতে পেরেছি? এর দ্বারা কি দুনিয়াবী ও পরকালীন জীবনে আমার বা মানবসমাজের কোন লাভ হয়েছে? তা অন্য কোন লাভজনক কাজ থেকে আমাকে বিরত করেনি তো? ইত্যাদি প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না পেলে সে পথে আর পা না বাড়ানো (ইহয়াউলউলূম ৪/৩৯৪)।

ঘ. ক্ষমা প্রার্থনা করা ও সৎআমল করা : এত সতর্কতার পরও যদি কোন পাপ অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ও তওবা করা। সাথে সাথে সৎআমল দ্বারা এই অপরাধের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

  ﺍﺗﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﻴﺜﻤﺎ ﻛﻨﺖ ﻭﺃﺗﺒﻊ ﺍﻟﺴﻴﺌﺔ ﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺗﻤﺤﻬﺎ

 ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর, কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়ে গেলে সাথে সাথে

সৎআমল কর যাতে তা মিটে যায়’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩)।

আত্মসমালোচনা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ এক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করতে পারি-

১. পাপ : কবীরা গুনাহ করা অথবা কোন ছগীরা গুনাহের উপর অভ্যস্ত থাকার কারণে মানুষের অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। পাপের পরিমাণ যত বৃদ্ধি পায় অন্তরের মরিচাও তত বিস্তৃত হয়। ফলে মুহাসাবা তথা আত্মসমালোচনার অনুভূতি মানুষের মন থেকে উঠে যেতে থাকে। একপর্যায়ে এমনকি কোন আমলটি খারাপ আর কোন আমলটি ভাল তা পার্থক্য করার প্রয়োজনীয়তাও সে হারিয়ে ফেলে।

২. দুনিয়াবী ব্যস্ততা : যে হালাল ও মুবাহ কাজ মানুষকে দুনিয়াবী যিন্দেগীতে বেশী ব্যস্ত রাখে এবং পরকালীন জীবনে নজর দেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেয় সেই কাজ তার আত্মসমালোচনার অনুভূতিও কমিয়ে দেয়।

৩. আল্লাহর বড়ত্ব ও তার প্রতি আনুগত্যের মাহাত্ম্য বুঝতে ব্যর্থ হওয়া : যদি আমরা তা যথার্থভাবে বুঝতে পারতাম, তবে অবশ্যই আমাদের প্রতি আল্লাহর অপরিসীম নে‘মত ও তার বিপরীতে আমাদের চরম অকৃতজ্ঞতার লজ্জাকর অবস্থান তুলনা করতে পারতাম। তুলনা করতে পারতাম- আমাদের প্রতি আল্লাহর হক্ব কী কী আর তার কতটুকু আমরা প্রতিপালন করছি এবং আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করছি।

৪. নিজের প্রতি সুধারণা রাখা : একজন মুমিনের জন্য এটা এক বড় ধরনের ঘাতক রোগ। কেননা নিজের প্রতি সুধারণা আপন ত্রুটিসমূহ থেকে মানুষকে বেখেয়াল করে দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে তোলে। যদি সে নিজের ত্রুটি ধরতেই না পারে তবে কিভাবে সে তার চিকিৎসা করবে? এজন্য বলা হয়ে থাকে,

* ﺇﻧﻚ ﺃﻥ ﺗﺒﻴﺖ ﻧﺎﺋﻤﺎً ﻭﺗﺼﺒﺢ ﻧﺎﺩﻣﺎً ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻥ ﺗﺒﻴﺖ ﻗﺎﺋﻤﺎً ﻭﺗﺼﺒﺢ ﻣﻌﺠﺒﺎً *

‘তুমি সারারাত ঘুমিয়ে যদি অনুতপ্ত অবস্থায় সকাল কর এটাই অধিক ভাল তার থেকে, যদি তুমি সারারাত তাহাজ্জুদ আদায় কর আর আত্মগর্ব নিয়ে সকাল কর।

৫. আখেরাতকে স্মরণ না করা : দুনিয়াবী মাল- সম্পদ আর পদমর্যাদার লোভে আখেরাতের অনন্ত যিন্দেগীকে ভুলে থাকার কারণে মানুষ মুহাসাবার অভ্যাস হারিয়ে ফেলে।

আত্মসমালোচনায় অভ্যস্ত হওয়ার উপায়

১. তাক্বওয়ার অনুভূতি জাগ্রত করা : আত্মসমালোচনার জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল আল্লাহভীতি অর্জন করা। আল্লাহর প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা, তাঁর মহত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, সর্বোপরি সর্বময় ক্ষমতার প্রতি ভীতির সাথে অবনত হওয়া পাপপ্রবণ আত্মাকে যেমন প্রশান্ত করে, তেমনি বিবেকের শাসনকে করে প্রবল। তাই জনৈক মনীষী বলেন, ‘তোমার পাপকাজটি কত ছোট সে চিন্তা করো না, বরং চিন্তা করো তুমি কত বড় ও কত মহান একজন সত্তার অবাধ্যতা করেছ।’

২. আমলনামার হিসাব প্রদানের অনুভূতি জাগ্রত করা : এই অনুভূতি নিজের মধ্যে জাগ্রত করা যে, যদি আমার আমলনামা দুনিয়াতেই আমি হিসাব করে নেই তবে কিয়ামতের দিন আমার হিসাব প্রদান সহজ হয়ে যাবে; আর যদি আত্মসমালোচনায় অবহেলা করি তার অর্থ হবে- কিয়ামত দিবসের হিসাব কঠিন হয়ে যাওয়া।

ইবনুল কাইয়িম বলেন,

* ﺍﺷﺘﺮﻧﻔﺴﻚ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﺴﻮﻕ ﻗﺎﺋﻤﺔ ﻭﺍﻟﺜﻤﻦ ﻣﻮﺟﻮﺩ ﻭﺍﻟﺒﻀﺎﺋﻊ ﺭﺧﻴﺼﺔ ﻭﺳﻴﺄﺗﻲ ﻋﻠﻰ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺴﻮﻕ ﻭﺍﻟﺒﻀﺎﻳﻊ ﻳﻮﻡ ﻻ ﺗﺼﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﻗﻠﻴﻞ ﻭﻻ ﻛﺜﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ *

‘তোমার আত্মাকে ক্রয় কর আজই, কেননা আজ বাজার সচল, দামও আয়ত্বের মধ্যে, পণ্য-সামগ্রী অনেক সস্তা। অচিরেই এই বাজার ও এই পণ্যসামগ্রীর উপর এমন দিন আসছে যেদিন সেখান থেকে ক্রয়ের আর কোনই সুযোগ পাবে না। কেননা সেদিন হল হালখাতার দিন’ (লাভ-ক্ষতি হিসাবের দিন) (আল-ফাওয়ায়েদ, পৃঃ ৪৯)।

৩. জান্নাত ও জাহান্নামকে স্মরণ: মুহাসাবা করার অর্থ জান্নাতপ্রাপ্তি এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের সৌভাগ্য অর্জন আর মুহাসাবা না করার অর্থ জাহান্নামের রাস্তায় ধাবমান হওয়া এবং আল্লাহর নৈকট্য থেকে বঞ্চিত হওয়া- এই উপলব্ধি অন্তরের গভীরে বদ্ধমূল করে রাখতে হবে। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলতেন,

* ﺇﺫﺍ ﺃﻣﺴﻴﺖ ﻓﻼ ﺗﻨﺘﻈﺮ ﺍﻟﺼﺒﺎﺡ ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺻﺒﺤﺖ ﻓﻼ ﺗﻨﺘﻈﺮ ﺍﻟﻤﺴﺎﺀ ﻭﺧﺬ ﻣﻦ ﺻﺤﺘﻚ ﻟﻤﺮﺿﻚ ﻭﻣﻦ ﺣﻴﺎﺗﻚ ﻟﻤﻮﺗﻚ .*

‘তুমি যখন সন্ধ্যা করবে তখন সকাল করার আশা করো না এবং যখন তুমি সকাল করবে তখন সন্ধা করার আশা করো না। অতএব অসুস্থতার পূর্বে তুমি তোমার সুস্থতার সুযোগ গ্রহণ কর এবং মৃত্যু আসার পূর্বেই

জীবনটাকে সুযোগ হিসাবে নাও’ (বুখারী)।

৪. আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের জীবনী অধ্যয়ন করা : আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং সালাফে ছালেহীন মানবেতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁদের মহত্তম জীবনাদর্শ আমাদেরকে সবসময় চেতনাদীপ্ত করে তোলে। তাঁরাই আমাদের চেতনার বাতিঘর। তাই তাঁদের জীবনেতিহাস জানতে হবে এবং তাদের জীবনাদর্শকে আমাদের জন্য একমাত্র আদর্শ মনে করতে হবে। আর এর মাধ্যমেই নিজেকে ক্রমাগত উচ্চস্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় আমরা মুহাসাবায় অভ্যস্ত হতে পারি। তাছাড়া মুহাসাবাকারী ব্যক্তির সাহচর্যে থাকাও মুহাসাবা করার জন্য খুব সহায়ক।

৫. আত্মা সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা : অর্থাৎ নফসের গতি-প্রকৃতি, নফসের পাতানো ফাঁদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। নফস যে সামান্য সুযোগ পেলেই অকল্যাণ ও অনৈতিক কাজে প্ররোচিত করে তা যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি তবে নফসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মানসিক শক্তি তৈরী হয়।

৬. দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন : শরী‘আতের বিধি-বিধান তথা হক্ব-বাতিল, ন্যায়-অন্যায়,হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা।

৭. নিজ সম্পর্কে সুধারণা পরিত্যাগ করা : এ ভয়াবহ রোগটির বিষময় ফলাফল এমনই যে, নিজের ভাল কাজকেই খারাপ আর খারাপ কাজকেই ভাল মনে হতে শুরু করে। এজন্য ইবনুল কাইয়িম বলেন,

* ﻭﻣﻦ ﺃﺣﺴﻦ ﻇﻨﻪ ﺑﻨﻔﺴﻪ ﻓﻬﻮ ﻣﻦ ﺃﺟﻬﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﻨﻔﺴﻪ *

‘নিজের প্রতি যে ব্যক্তি সুধারণা রাখে মূলতঃ সে নিজ সম্পর্কে অজ্ঞতম ব্যক্তি’। তাই নিজেকে সঠিক ও উঁচুস্তরের লোক মনে করে আত্মতৃপ্তি বোধ করা যাবে না। নতুবা নিজেকে অগ্রগামী করার তো সুযোগ থাকবেই না, বরং অচিরেই অনিবার্য ব্যর্থতার মুখোমখি হতে হবে।

৮. নিজের আমলনামা পরিমাপ করা : নিজের সৎআমল ও অসৎ আমলকে ছওয়াব ও পাপের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা এবং কোনটির ওজন ও প্রকৃতি কেমন তা যাচাই করা। এর ফলে মুহাসাবার অনুভূতি বিশেষভাবে জাগ্রত হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে হাশরের ময়দানে আমাদের কৃত অণু পরিমাণ পুণ্য এবং অণু পরিমাণ পাপও আমাদের আমলনামায় প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে (যিলযাল ৭-৮)।

শেষকথা : পরিশেষে বলব, আত্মসমালোচনা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেমন দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি করে, তেমনি এটি পরকালীন জওয়াবদিহিতা সৃষ্টির সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। আত্মসমালোচনা আমাদের বিবেককে শানিত করে তোলে। আমাদের বিচারবুদ্ধিকে প্রখর ও প্রজ্ঞাবান করে তুলে। করণীয় কাজ কিভাবে করব, বর্জনীয় কাজ কিভাবে বর্জন করব তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সর্বোপরি জীবনের উচ্চতম লক্ষ্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠার কাজে সর্বদা প্রহরীর মত দায়িত্ব পালন করে। প্রকৃত অর্থে নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যে ব্যক্তি সর্বদা সংগ্রাম চালায় সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুজাহিদ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

 * ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺪ ﻣﻦ ﺟﺎﻫﺪ ﻧﻔﺴﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻪ *

‘মুজাহিদ সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর জন্য নিজের অন্তরের সাথে জিহাদে লিপ্ত থাকে’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৭৯)।

আত্মসমালোচনা আমাদের আরো শিক্ষা দেয়,অন্যের ত্রুটি ধরার পূর্বে নিজের ত্রুটি দেখো। অন্যের নিন্দা করার পূর্বে নিজের মধ্যে যা কিছু খারাপ তা দূর করে নাও। এই নীতি যদি আমরা অবলম্বন করতে পারি তবে আমরা নিজ থেকেই নিজেদেরকে সংশোধন করে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারব, তেমনি অন্যের মাঝে ভুল দেখতে

পেলে, নিজের ভুলের মত মনে করে তা ভালবাসা ও স্নেহের সাথে সংশোধনের চেষ্টা নিতে পারব। এভাবে সমাজ পরিণত হবে পারস্পরিক সহযোগিতা, ভালাবাসা ও সৌহার্দ্যে পূর্ণ এক স্বর্গীয় সমাজ। অতএব আসুন! আমরা নিজেদেরকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসাবে, প্রকৃত মুসলমান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্কতার সাথে ফেলি। নিজেকে সচ্চরিত্রবান, নীতিবান ও আদর্শবান করে তুলি। এর মাধ্যমে

সমাজের আরো দশটা লোক আমাদের দ্বারা প্রভাবিত হবে। আর এভাবেই গড়ে উঠবে আদর্শ পরিবার, আদর্শ সমাজ থেকে আদর্শ রাষ্ট্র। আল্লাহ আমাদেরকে সে তৌফিক দান করুন এবং ইহজাগতিক,পারলৌকিক সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধনের কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখার যোগ্যতা ও সামর্থ্য দান করুন। আমীন!!

সবসময় মনে রাখুন রাসূল (ছাঃ)-এর সেই অবিস্মরণীয় বাণী-

* ﻛﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻛﺄﻧﻚ ﻏﺮﻳﺐ ﺃﻭ ﻋﺎﺑﺮ ﺳﺒﻴﻞ *

‘তুমি দুনিয়ার বুকে এমনভাবে বসবাস কর যেন তুমি একজন মুসাফির অথবা পথচারী’ (বুখারী, মিশকাত

হা/৫২৭৪)।

 

Related Post