আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিণতি

شنق

হে মুসলিম ভাই ও বোন! সাবধান! আত্মহত্যা করা ইসলামী শরী’আতে একটি জঘন্যতম পাপ যার একমাত্র শাস্তি হল জাহান্নাম। বিশ্ব নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আত্মহত্যাকারীর জানাযা ছালাত আদায় করেননি (দ্রঃ মুসলিম, জানাযা অধ্যায়,হা/১৬২৪)।

এ থেকে অনুমান করা যায় সে কত বড় পাপী। আত্মহত্যা ইহকাল পরকাল উভয়টি ধ্বংস করে দেয়। তা যে কোন কারণেই সংঘটিত হোকনা কেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
(وَلَا تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ الله كَانَ بِكُمْ رَحِيْماً)[سورة النساء:২৯]
আর তোমরা আত্মহত্যা করনা,নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল (সূরাহ নিসা/২৯ )।
আত্মহত্যা প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ) কঠুর হুশিয়ারীবাণী উচ্চারণ করে গেছেন।
নিম্নে তদসংক্রান্ত হাদীছ গুলি পরিবেশিত হলঃ
عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَال: كَانَ بِرَجُلٍ جِرَاحٌ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَقَالَ اللَّهُ بَدَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ (رواه البخاري في صحيحه في كتاب الجنائزبرقم১২৭৫).
(১) জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ নবী (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,তিনি ফরমিয়েছেনঃএকজন ব্যক্তি জখম হলে,সে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ বললেনঃ আমার বান্দাহ আমার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিলাম (বুখারী,জানাযা অধ্যায়,হা/১২৭৫)।
عَنْ ثَابِتِ بْنِ الضَّحَّاكِ رَضِي اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ عُذِّبَ بِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ(رواه البخاري في كتاب الجنائز من صحيحه،১২৭৫)
(২) ছাবিত বিন যাহ্হাক (রাঃ) নবী (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,তিনি ফরমিয়েছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লৌহ অস্ত্রাঘাতে আত্মহত্যা করবে,তাকে সে লৌহ অস্ত্র দিয়েই জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে। (অর্থাৎঃ যেভাবে লৌহ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল,ঠিক সেভাবে সে জাহান্নামে আত্মহত্যা করতে থাকবে)(বুখারী,জানাযা অধ্যায়,হা/১২৭৫)।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِي يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ (رواه البخاري في كتاب الجنائز من صحيحه برقم ১২৭৬)

(৩) আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) ফরমিয়েছেনঃযে ব্যক্তি শ্বাঁসরুদ্ধ করে আত্মহত্যা করবে,সে জাহান্নামেও এভাবে আত্মহত্যা করবে। আর যে ব্যক্তি অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামেও এভাবে আত্মহত্যা করতে থাকবে (বুখারী,জানাযা অধ্যায়,হা/১২৭৬)।

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ تَحَسَّى سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَسُمُّهُ فِي يَدِهِ يَتَحَسَّاهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ فَحَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَجَأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا (رواه البخاري في كتاب الطب من صحيحه برقم৫৩৩৩ ومسلم في كتاب الإيمان من صحيحه برقم ১৫৮)

(৪) আবু হোরায়রা (রাঃ) নবী (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,তিনি ফরমিয়েছেনঃ যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে,সে জাহান্নামে অনুরুপভাবে (পহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতেই থাকবে। এবং উহা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে,তার বিষ তার হাতে থাকবে,জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর উহা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে,সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে । জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে,আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে (বুখারী,ডাক্তারী অধ্যায়,হা/৫৩৩৩,মুসলিম,ঈমান অধ্যায়,হা/১২৭৬)।

عَنْ ثَابِتِ بْنِ الضَّحَّاكِ قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَيْءٍ فِي الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَعَنَ مُؤْمِنًا فَهُوَ كَقَتْلِهِ وَمَنْ قَذَفَ مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهُوَ كَقَتْلِهِ (رواه البخاري في كتاب الأدب من صحيحه برقم ৫৫৮৭، ৫৬৪০)

(৫) ছাবেত বিন যাহহাক থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফরমিয়েছেনঃযে ব্যক্তি যে বস্তু দ্বারা দুনিয়ায় আত্মহত্যা করবে,তাকে কিয়ামত দিবসে সে বস্তু দ্বারাই শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে অভিশম্পাত করল সে যেন তাকে হত্যা করে ফেলল,আর যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে মিথ্যা অপবাদ দিল সেও যেন তাকে হত্যা করে ফেলল (বুখারী,আদব অধ্যায়,হা/৫৫৮৭,৫৬৪০)।

عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَجُلٍ قَتَلَ نَفْسَهُ بِمَشَاقِصَ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِ (رواه مسلم في كتاب الجنائز من صحيحه برقم১৬২৪ )

(৬) জাবের বিন সামুরাহ হতে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ নবী (ছাঃ) এর নিকট এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হল,যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার ছালাতে জানাযা আদায় করেননি (মুসলিম,জানাযা অধ্যায়,হা/১৬২৪)।

عَنِ ابْنِ سَمُرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَتَلَ نَفْسَهُ بِمَشَاقِصَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا أَنَا فَلَا أُصَلِّي عَلَيْهِ (رواه النسائي في كتاب الجنائز من سننه برقم১৯৩৮)

(৭) জাবের বিন সামুরাহ হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি লৌহ ফলক দ্বারা আত্মহত্যা করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেনঃ আমি কিন্তু তার জানাযা ছালাত আদায় করবনা (নাসাঈ,জানাযা অধ্যায়,হা/১৯৩৮)।
* আত্মহত্যার পশ্চাদে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারেঃ যেমন, সাংসারিক কলহ দ্বন্দ্বে পড়ে অতিরিক্ত রেগে যাওয়া, নিজের কাংখিত কোন কিছু লাভ করতে যেয়ে নিরাশ বা বঞ্চিত হওয়া। লজ্জা ও মান হানীকর কোন কিছু ঘটে যাওয়া,বা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকাশ হওয়া, অভাব,দারিদ্রতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হওয়া প্রভৃতি। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়,মহিলারাই বেশী অগ্রণী। অর্থাৎ আত্মহত্যা জনিত পাপ তাদের মাধ্যমেই বেশী সংঘটিত হয়ে থাকে। এর একমাত্র কারণ হল,সীমাহীন রাগ এবং ধৈর্যের অভাব। এজন্যই নবী (ছাঃ) এরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয় ফাসেকরাই হল জাহান্নামের অধিবাসী। তাঁকে বলা হলঃ কারা সেই ফাসেক্ব? তিনি বললেনঃ মহিলারা। জনৈক ব্যক্তি বললঃহে আল্লাহর রাসূল! তারা কি আমাদেরই মা,বোন,স্ত্রী নন? তিনি বললেনঃ হাঁ,অবশ্যয়। তবে তাদেরকে কোন কিছু দান করা হলে তারা শুকরিয়া জ্ঞাপন করেনা। আর যখন তারা বিপদাপদ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন ধৈর্য ধারণ করেনা (সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ্ ছহীহাহ,হা/৩০৫৮,মুখতাছার ছহীহাহ,হা/১৪৬১)।
আর সমস্ত বিপর্যয়ের মূল কারণ এই দুটি বিষয়ইঃ অর্থাৎ সীমাহীন রাগ এবং ধৈর্যের অভাব। সীমাহীন রাগের কারণেই স্বামী রেগে গিয়ে স্ত্রীকে এক সাথে তিন তালাক্ব দেয়,স্ত্রীকে খুন করে,একে অপরকে খুন করে,স্ত্রী আত্মহত্যা করে।
তদরুপ বিভিন্ন বিপদাপদে পড়ে ধৈর্য হারা হয়ে অনেকে আত্মহত্যার মত জঘণ্য পাপের পথ বেছে নেয়। মনে ভাবে এর মাধ্যমেই সে নিস্কৃতি পেয়ে গেল। অথচ এর মাধ্যমে তার দুনিয়া ও আখেরাত আরো বরবাদ হল।
প্রিয় পাঠক! ইতো পূর্বে উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদীছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি আত্মহত্যা করা কত বড় পাপ। আর এই পাপটি কিভাবে সূচিত তাও জানতে পেরেছি। এই বড় পাপটি সংঘটিত হওয়ার পিছনে ইবলিস শয়তানের মুখ্য ভূমিকা থাকে,মানুষকে জাহান্নামের মুখে ঠেলে দেয়াই শয়তানের কাজ। সে জন্যই আল্লাহ কুরআনের একাধিক স্থানে এই ইবলিস থেকে সাবধান করেছেন। এরশাদ হচ্ছেঃ
হে বানী আদম! আমি কি তোমাদের বিশেষভাবে বলে দিইনি যে,তোমরা শয়তানের ইবাদত করবেনা,কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়াসীন/৬০)।
এই পাপটি বেশীর ভাগ ঘটতে দেখা যায় বিধর্মীধের মাঝে। কারণ তারা মনে করে,এই দুনিয়াই তাদের প্রথম এবং শেষ, পরকালে তারা আদৌ বিশ্বাসী নয়। পরকালীন আযাব ও গযববের প্রতিও তাদের মোটেই ঈমান নেই। তারা ভাবে আত্মহত্যার মাধ্যমে তারা দুনিয়ার ঝামেলা ও প্রতিকুল অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে গেল। অথচ তারা এর মাধ্যমে নিজেকে আরো কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেয়,যদিও তারা কাফের হওয়ার জন্য অনুধাবন করতে পারেনা। অবশ্য কাফেরদের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া কোন বিচিত্র ব্যাপার নয়। কারণ,তারা হল অপরিণামদর্শী। তাদেরকে আল্লাহ “চতুষ্পদ জন্তু তুল্য” বলে আক্ষা দিয়েছেন,বরং তাদেরকে ঐ সব চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন (দ্রঃ আরাফ/১৭৯)।

 

তবে একজন খাঁটি মুসলিম ব্যক্তি যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, তার জন্য এমন জঘণ্য কাজে নির্লিপ্ত হওয়া আদৌ শোভা পায়না। কারণ সে ভাল করে জানে এর কি ভয়াবহ পরিণতি। এজন্য লক্ষ্য করা যায়,মুসলিমদের মাঝে যারা এ জঘন্য কাজে জড়িত তাদের ৯৯% ভাগই অজ্ঞ,মূর্খ এবং অপরিণাম দর্শী; যাদের শরী’আত সম্পর্কে তেমন কোন জ্ঞান নেই। সম্ভবত তারাও ঐ কাফেরদের মত ভেবে থাকে যে,এর মাধ্যমে তারা চির ঝামেলা মুক্ত হয়ে গেল——!!! সাংসারিক জীবনে অনূকুল,প্রতিকুল,চড়াই,উৎরায় বিভিন্ন অবস্থা দেখা দিতে পারে। আর কোন ব্যক্তিই এ দুই অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। যে প্রকৃত মুসলিম তার অবস্থান সর্বাবস্থায় শরী’আতের অনুগত হবে। এ প্রসঙ্গে নবী (ছাঃ) বলেনঃ

عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ (رواه مسلم في كتاب الزهد والرقائق من صحيحه، برقم৫৩৮)

মুমিন ব্যক্তির বিষয়টি আশ্চর্যজনক, তার সমস্ত কাজই কল্যাণকর। আর ইহা একমাত্র মুমিন ব্যক্তির জন্যই হয়ে থাকে,অন্য কারো জন্যে নয়। তাকে কোন আনন্দায়ক বস্তু স্পর্শ করলে সে (আল্লাহর) শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, ফলে ইহা তার জন্য কল্যাণময় হয়;পক্ষান্তরে তাকে কোন ক্ষতিকর বস্ত স্পর্শ করলে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে ইহাও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায় (মুসলিম,যুহ্দ ও রিকাক অধ্যায়,হা/৫৩৮)।
বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করাই একজন প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য সে যে কোন ধরনেরই বিপদাপদ হোকনা কেন। কারণ ভাগ্যের ভাল-মন্দের উপর ঈমান রাখা, ঈমানের অন্যতম রোকন (মুসলিম,ঈমান অধ্যায়,হা/৯)। এর উপর ঈমান না থাকলে বেঈমান হয়ে মরতে হবে।

* বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের ফযীলতঃ বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের ফলে বেহিসাব নেকী পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেনঃ إنما يوفى الصابرون أجرهم بغير حساب
একমাত্র (বিপদাপদে) ধৈর্য ধারণ কারীদেরকে বেহিসাব সওয়াবদেয়া হবে (সূরা যুমারঃ ১০)।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,নবী (ছাঃ) বলেনঃ

مَامِنْ مُصِيْبَةٍ تُصِيْبُ الْمُسْلِمَ إِلّا كَفَّرَ اللهُ بِهَا عَنْهُ ، حَتَّى الشَّوْكَةَ يُشَاكُهَا (أحمد، متفق عليه – صحيح الجامع ৫৭৮২)

অর্থঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন প্রকার মুছীবত দ্বারা আক্রান্ত হলে আল্লাহ তা’আলা উহা দ্বারা তার গুনাহ বিদুরিত করেন। এমনকি যদিও তার দেহে সামান্ন কাঁটাও বিঁধে তবুও (বুখারী,১০/১০৩মুসলিম,৪/১৯৯২)।
আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফরমিয়েছেনঃ

مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ (رواه البخاري في كتاب المرضى من صحيحه برقم ৫২১৩)

আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে তিনি বালা মুছীবত দ্বারা আক্রান্ত করেন (বুখারী,রোগীদের অধ্যায়,হা/৫২১৩ )।
তিনি (ছাঃ) আরো বলেনঃ

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا ( صحيح البخاري، كتاب المرضى، الحديث رقم ৫২১৬)

কোন মুসলিম ব্যক্তি কাঁটা বা তদাপেক্ষা বড়/ছোট কিছু দ্বারা আক্রান্ত হলে আল্লাহ তা দ্বারা তার গুনাহ দূর করেন। যেমন করে বৃক্ষ হতে পাতাগুলি ঝরে পড়ে যায় (বুখারী,রোগীদের অধ্যায়,হা/ ৫২১৬,ছহীহুল জামে’হা/৫৭৬৩ ইবনু মাসঊদ থেকে বর্ণিত)।
*কারা বেশী বিপদ গ্রস্ত হয়?
নবী (ছাঃ) বলেনঃ সবচেয়ে যাদের বিপদ আসে তাঁরা হলেনঃ নবী রাসূলগণ,অতঃপর সৎ ব্যক্তিগণ পর্যায় ক্রমে। মানুষ মুছীবতে আক্রান্ত হয় তারধার্মিকতা অনুসারে। সুতরাং যার ধর্মে দৃঢ়তা আছে তার বিপদও দৃঢ় হয়,পক্ষান্তরে যার ধার্মিকতা দুর্বল, তার বিপদও দূর্বল হয়। একজন ব্যক্তি বালা মুছীবতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এমন হয়ে যায় যে,সে মানুষের মাঝে বিচরণ করে অথচ তার কোন গুনাহ নেই (ইবনু হিব্বান,হাদীছ ছহীহ ,ছহীহুল জামে১৭০৫)।
তিনি (ছাঃ) আরো বলেনঃ

إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ صَبَرَ فَلَهُ الصَّبْرُ وَمَنْ جَزِعَ فَلَهُ الْجَزَعُ ( مسند أحمد برقم ২২৫২৫، صحيح الجامع ১৭০৬ ، صحيحة ১৪৬ )

অর্থঃ আল্লাহ কোন জাতিকে ভাল বাসলে তাদেরকে বিপদে পতিত করেন। কাজেই যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করবে তার জন্য তাই হবে, আর যে অধৈর্য হবে তার জন্য ঐ অধৈর্যতা থাকবে (মুসনাদ আহমাদ,হা/ ২২৫২৫,ছহীহুল জামে হা/ ১৭০৬, ছহীহা, হা/ ১৪৬-মাহমূদ বিন লাবীদ থেকে বর্ণিত )।
* আতা বিন আবি রাবাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ইবনু আব্বাস আমাকে বললেনঃ তোমাকে কি আমি একজন জান্নাতী মহিলা দেখাবনা? আমি বললমা হাঁ, অবশই। তিনি বললেন সে হল এই কালো মেয়েটি । সে নবীজি (ছাঃ) এর নিকট আগমন পূর্বক বললঃ আমি মৃগি রোগে আক্রান্ত বিধায় ভূ লুন্ঠিত হওয়ার সময় উলঙ্গ হয়ে যায়। সুতরাং আমার এই রোগ মুক্তির জন্য দু’আ করুন। নবী (ছাঃ) বললেনঃ যদি তুমি চাও ধৈর্য ধারণ করবে বিনি ময়ে পাবে জান্নাত। আর যদি চাও ,আমি তোমার জন্য এই রোগ মুক্তির জন্য দু’আ করব। মহিলাটি বললঃ তা হলে আমি ধৈর্য ধারণ করব। মহিলাটি আবার বললঃ তবে আপনি আমার জন্য এই মর্মে দু’আ করুন যেন আমি উলঙ্গ না হই। নবী (ছাঃ) তার জন্য সে মর্মে দ’ুআ করেছিলেন (ছহীহুল আদাব আল মুফরাদ হা/ ৩৯০, বুখারী ও মুসলিম)।
অতএব,হে মুমিন ভাইগণ, যাবতীয় বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করুন। মাত্রাতিরিক্ত ক্রোধ পরিহার করুন। নবী (ছাঃ) রাগ না করার জন্য বিশেষভাবে উপদেশ দিয়েছেন (বুখারী,আদব অধ্যায়,হা/৫৬৫১)। তিনি আরো বলেনঃ তুমি রাগ করনা,এর বিনিময়ে পাবে জান্নাত (তাবারানী প্রভৃতি,ছহীহুল জামে,হা/৭৩৭৪)।

আত্মহত্যার মত এই জঘণ্য পাপ থেকে নিজে বিরত থাকুন,অপরকেও বিরত রাখুন। এই পাপের ভয়াবহ পরিণতির কথা মুসলিম ভাইদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার করুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সমস্ত গর্হিত কাজ থেকে বিরত রেখে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথে পরিচালিত করুন (আমীন)।
(বিঃ দ্রঃ (ক) জেহাদের ধুওয়া তুলে যারা জেনে বুঝে স্বজ্ঞানে আত্মঘাতি বোমা হামলা করে নিজেদের জীবন ধ্বংস করে, এবং অপর মুসলিমদের প্রাণ নাশ করে সারা বাংলার শান্ত মুসলিম সমাজকে আজ আতঙ্ক গ্রস্ত করছে; আশা করি তাদের জন্যও এই লিফলেটটিতে বহু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
(খ) এই লিফলেটটি নিজে পড়ুন,অপরকে পড়তে দিন। পারলে এর ফটো কপি করে মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে বিতরণের ব্যবস্থা করুন। আল্লাহ সকলকে উত্তম বিনিময় দিন)

Related Post