আল্লাহর পথে ব্যয়ের গুরুত্ব

index
আল্লাহ পাক বলেন, ‘আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; অন্যথায় মৃত্যু এলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি দান করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, আল্লাহ কখনো কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত(সূরা মুনাফিকুন,১০-১১)।
অনেকেই অর্থসম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করতে চায় না এ আশঙ্কায় যে সে গরিব হয়ে যাবে। কিন্তু জীবনসায়াহ্নে এসে যখন সে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শ্রীহীন ধূসর পৃথিবী; সব বন্ধন, সব কোলাহল মিথ্যা মরীচিকা ছাড়া কিছু নয়,তখন সে বিভীষিকাময় অনাগত জীবনের কথা স্মরণ করে সহসা দানে উৎসাহী হয়ে ওঠে। এ সম্পর্কে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘মানুষের জীবদ্দশায় এক দিরহাম দান করা, তার মৃত্যুকালে এক শত দিরহাম দান করা অপো উত্তম(আবু দাউদ মিশকাত)। হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: আরো বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, মা দ্বারা আল্লাহ পাক বান্দার সম্মান বৃদ্ধি ছাড়া হ্রাস করেন না। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহ পাক তাকে উন্নত করেন(মুসলিম, মিশকাত)।
আল্লাহ পাক কৃপণতা পছন্দ করেন না। কল্যাণকর কাজে অর্থ বিনিয়োগ না করে যারা তা পুঞ্জীভূত করে রাখে তারা যে সত্যিকারার্থে পরকালের বিপুল প্রাপ্তি থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছে তা উপলব্ধি করা তাদের পে সম্ভব হয়ে ওঠে না। আল্লাহ পাকের খাজাঞ্চিতে সম্পদের অভাব নেই। অর্থশালীরা জনগণের কল্যাণে খরচ না করলে তাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে আল্লাহ পাক এমন কাউকে সে জায়গায় প্রতিস্থাপিত করবেন যারা জনহিতৈষী কাজে অগ্রগামী হবে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘দেখ, তোমরাই তো তারা, যাদের আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে; যারা কার্পণ্য করে তারা তো কার্পণ্য করে নিজেদের প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত; যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন, তারা তোমাদের মতো হবে না’ (মুহাম্মাদ, ৩৮)।
দাতা ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করে। আর কৃপণ এবং সঙ্কীর্ণচেতার জন্য তারা ধ্বংস ও বরবাদের প্রার্থনা করে। হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন বিগত হয় না যে দিন দু’জন ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমন করেন না, তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং বলেন, হে আল্লাহ! আপনি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম বদলা দিন। দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদদোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস ও বরবাদ করুন’ (বুখারি-মুসলিম)।
কৃপণতা না করে মানুষ যদি জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পদ ব্যয় করে তবে মৃত্যুর পরে সে তার শুভফল ভোগ করবে। নবী কারিম সা: এরশাদ করেছেন, ‘বান্দা যখন মৃত্যুর পর কবরে অবস্থান করবে তখন সে সাতটি জিনিষের প্রতিদান পাবে। ১. কোন দ্বীনি এলেম যা সে শিা দিয়েছে। ২. সে যদি কোনো নহর বা জলাশয় খনন করে থাকে। ৩. সে যদি কোনো পানির কূপ খনন করে থাকে। ৪. খেজুর অথবা কোনো ফলদগাছ রোপণ করে থাকলে। ৫. ওয়ারিশি সম্পদ হিসেবে কুরআন শরিফ অথবা কোনো দ্বীনি গ্রন্থ রেখে গেলে। ৭. এমন সন্তান রেখে গেলে যে তার জন্য সর্বদা মা প্রার্থনা করবে। (বাযযাব, আবু নাঈম ও বায়হাকী)
দান এমন একটি সর্বাঙ্গীণ প্রতিরোধব্যবস্থা যা সমাজকে অবয়ের ভাঙন থেকে রা করে। এটি এমন এক সঞ্জীবনী ধারা যার মাধ্যমে ধনী এবং গরিবের মধ্যে নিবিড় বন্ধনের সৃষ্টি হয়। আর্ত-পীড়িতের চাপাকান্না আল্লাহর গজব ডেকে আনে। কিন্তু দান তা রোধ করে। দান গণরোষের অপ্রতিরোধ্য বিশৃঙ্খলা থেকে রা করে দেশ ও জাতিকে। সে জন্য দানধর্মী সৎকর্মকে আল্লাহপাক অত্যন্ত ভালোবাসেন। আল্লাহ পাক বলেন : ‘আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজদের ধ্বংসের মুখে নিপে কর না। সৎকাজ কর, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (বাকারা : ১৯৫) হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের কাছাকাছি এবং মানুষের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে, আর দূরে থাকে ভয়াবহ দোজখ থেকে। পান্তরে কৃপণ অবস্থান করে আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশতের বিপরীতে এবং মানুষের শুভকামনা থেকে অনতিক্রম্য অন্ধকারে অথচ দোজখের একান্ত সন্নিকটে। জাহেল দাতা, বখিল আবেদের চেয়ে আল্লাহর কাছে অবশ্যই বেশি প্রিয়।’ (তিরমিজি)
আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তার বান্দার প্রতি দয়ার বশবর্তী হয়ে সামান্য কাজ করলেও তাতে অনেক পুণ্য লাভ হয়। হজরত আনাস রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান একটি গাছ রোপণ করবে অথবা শস্য বপন করবে অতঃপর তা হতে মানুষ অথবা পশুপাখি কিছু খাবে, নিশ্চয়ই এটি দানরূপে গণ্য করা হবে। হজরত জাবির রা: থেকে সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘যা চুরি হয়ে যায় তা-ও তার জন্য দান হিসেবে লিখা হয়। (মিশকাত)
মুসলমানের কল্যাণার্থে খাদ্য এবং পোশাক দান করা প্রশংসনীয় কাজ। আল্লাহ পাকের কাছে এর জন্য আছে সম্মানজনক প্রতিদান। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান বিবস্ত্র মুসলমানকে বস্ত্র পরিধান করালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাকে বেহেশতের সবুজ পোশাক পরাবেন। কোনো মুসলমান তার ুধার্ত ভাইকে অন্ন দান করলে এবং তাকে পিপাসায় পান করালে আল্লাহ পাক তাকে বেহেশতের মোহর করা শরাব পান করাবেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
কিয়ামতের কঠিন দিনে যখন কোথাও একটু ছায়া থাকবে না, সে দিন দানকারীর জন্য তার দান শীতল ছায়া হবে। পার্থিব জীবনে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও যারা অন্যের প্রতি বদান্যতার হাত প্রসারিত করে তাদের জন্য অপো করছে কঠিনতম দিনে শান্তির ব্যবস্থা। হজরত মারছাদ বিন আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : আমার কাছে রাসূল সা: জনৈক সাহাবি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূল সা:-বলতে শুনেছেন : ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের রৌদ্রময় দিবসে মুমিনের জন্য ছায়া হবে তার দান। (আহমদ, মিশকাত)
আল্লাহ পাক তার বিশ্বাসী বান্দাদের নামাজ কায়েমের পাশাপাশি তাদের অর্জিত সম্পদ থেকে প্রকাশ্যে এবং চুপিসারে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়ার আগেই। কারণ মৃত্যুর বিভীষিকায় হারিয়ে গেলে কেউ এ নশ্বর পৃথিবীতে ফিরে আসে না। আল্লাহ পাক বলেন : ‘আমার বিশ্বাসী বান্দাদের বল, নামাজ কায়েম এবং তাদের যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে এবং প্রকাশ্যে দান করতে সে দিনের আগে যেদিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩১)
সাদকা এমন এক প্রতিরোধব্যবস্থা যা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে। দানকারী মানবপ্রেমিক হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক তাকে দীর্ঘজীবনের বিরল সৌভাগ্য ধন্য করেন। আকস্মিক এবং অকাল মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় হলো দানের মাধ্যমে মানুষের দোয়া অর্জন করা। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : নবী করিম সা: বলেছেন, ‘সাদকা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে এবং খারাপ মৃত্যু রোধ করে।’(তিরমিজি, মিশকাত)
অযাচিত বিপদ এবং বালা মুছিবত থেকে বেঁচে থাকতে দানের বিকল্প নেই। দানবিমুখ লোকেরা সব সময় বিপদাপদে নিমজ্জিত থাকে। সুস্থ, সবল এবং সদানন্দ জীবন একমাত্র দানের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : নবী করিম সা: বলেছেন, ‘তোমরা দানের ব্যাপারে দ্রুত কর। কেননা বিপদ একে অতিক্রম করতে পারে না। অর্থাৎ দান বিপদ দূর করে থাকে।’ ( রাজিন, মিশকাত)
অর্থ দ্বারা পরিশোধিত বিষয়ই একমাত্র দান নয়। আল্লাহকে স্মরণ করা দান। জনগণকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত করাও দান। এমনকি আপন স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করাও দানের মধ্যে শামিল। হজরত আবুজর গিফারি রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রতিবার ছুবহানাল্লাহ বলা সাদকা, প্রতিবার আল্লাহু আকবার বলা সাদকা, প্রতিবার আলহামদুলিল্লাহ বলা এবং প্রত্যেক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা সাদকা। ভালো কাজের উপদেশ দান সাদকা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাও সাদকা। এমনকি আপন স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্কও সাদকা।’ সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন : হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করে কি সওয়াব অর্জন করতে পারবে? মহানবী সা: বললেন : ‘বলো দেখি! যদি তোমাদের কেউ তা হারাম স্থানে স্থাপন করে, এতে পাপ হবে কি না? এভাবে সে যখন তা বৈধ পথে নিবৃত্ত করে তাতেও তার সওয়াব হবে।’ (মুসলিম, মিশকাত)
দানের সর্বোচ্চ ত্রে হলো আল্লাহর দ্বীন বুলন্দের কর্মকাণ্ডে তা প্রয়োগ করা। আল্লাহর শত্র“রা যাতে ইসলামি ভূখণ্ডের সীমানায় আক্রমণ চালাতে না পারে, তাদের সব ষড়যন্ত্র, অপকৌশল এবং ঘৃণ্য অপপ্রচার স্তব্ধ করার জন্য শক্তি অর্জনে ব্যাপক অর্থ খরচ করা প্রয়োজন। ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিরাব্যবস্থা সমুন্নত করা বিশেষ করে সামরিক জনবল নিয়োগ এবং আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ক্রয়ে বিপুল অর্থের দরকার। একজন বিশ্বাসী নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের কর্তব্য অবারিত দানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের হাতকে শক্তিশালী করা। আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মুকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, এ দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ ও তোমাদের শত্র“কে এবং এ ছাড়া অন্যদের যাদের তোমরা জান না, আল্লাহ জানেন; আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সূরা আনফাল : ৬০)
হাদিসে রাসূলে সন্তানসন্ততি এবং পরিবার প্রতিপালনে অর্থব্যয়, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উদ্দেশ্যে জন্তু বা যুদ্ধযান ক্রয়ে অর্থব্যয়ের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ অথবা সামরিক বাহিনীর পেছনে যে অর্থব্যয় করা হয় তাকেও উত্তম খরচ বলা হয়েছে। হজরত সাওবান রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: বলেছেন, ‘সর্বোত্তম অর্থ হলো ওই অর্থ যা নিজের সন্তান ও পরিবারের জন্য খরচ করা হয়। সে অর্থও উত্তম যা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উদ্দেশ্যে জন্তু ক্রয় করা হয়। আর সে অর্থও উত্তম, যা জিহাদে অংশগ্রহণকারী সঙ্গী-সাথীদের পেছনে খরচ করা হয়।’ ( মুসলিম)
আল্লাহর পথে ধনসম্পদ ব্যয়ের যে দু’টি উপমা পবিত্র কুরআনে এসেছে তার একটি হচ্ছে : ‘যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে থাকে এক শ’ শস্যকণা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা : ২৬১)
তাফসিরে মাআরেফুল কুরআনে বর্ণিত আছেÑ যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এমন; কেউ গমের একটি দানা মাটিতে বপন করল। এ দানা থেকে উৎপন্ন হলো একটি প্রাণবন্ত চারাগাছ। চারাগাছটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে সাতটি গাছে রূপান্তরিত হলো যা থেকে সৃষ্টি হলো সাতটি পরিপুষ্ট শীষ। আর প্রত্যেক শীষ সমৃদ্ধ হলো ১০০টি দানা দিয়ে। এই দৃষ্টান্তটি হতে অনুমান করা যায় সৎকর্মের সওয়াব এক থেকে শুরু করে ৭০০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কুরআনের উল্লিখিত দৃষ্টান্তটি বাস্তব অবস্থার সাথে একান্তভাবে তুলনীয়। সরষ মাটিতে রোগমুক্ত শস্যের দানা রোপণ করলেও সঠিক পরিচর্যা ছাড়া কৃষক কখনো তার কাক্সিত ফসল পাবে না। ফসল ফলানোর যাত্রাপথে কোনো একটি পদপে ত্র“টিপূর্ণ হলে আশানুরূপ ফল লাভের সম্ভাবনা থাকে না। কোনো কোনো সময় তার সব শ্রম এবং আর্থিক বিনিয়োগ সমূলে বরবাদ হওয়ার ঝুঁকিকে নাকচ করা যায় না।
আল্লাহর পথে ধনসম্পদ বিনিয়োগ সম্পর্কে দ্বিতীয় যে উদাহরণটি পবিত্র কুরআনে আছে তা হলো : ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে ধনসম্পদ খরচ করে তাদের উপমা কোনো উঁচুভূমিতে অবস্থিত উদ্যান, যাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয় ফলে ফলমূল দ্বিগুণ জন্মে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি নাও হয় তবে অল্প বৃষ্টিপাতই যথেষ্ট। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সূরা বাকারা : ২৬৫)
গ্রহণযোগ্য দানের উদাহরণ দেয়া হয়েছে উপরোক্ত আয়াতে। যারা আত্মার দৃঢ়তা এবং আল্লাহর খুশির জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা দেয়ার জন্য আল কুরআনে টিলায় অবস্থিত বাগানকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। উঁচু জায়গায় থাকায় তা বন্যাপ্লাবন থেকে সুরতি। অতি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা এর গাছপালার রোগবালাই বাড়ায় না। আর অল্প বৃষ্টি হলেও প্রবাহিত বাতাসের আর্দ্রতা এবং অবাধ সূর্যকিরণের চাঞ্চল্যে বাগানের ফলন প্রচুর পরিমাণে হয়ে থাকে। বিশুদ্ধ নিয়ত এবং গভীর আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর পথে ব্যয় করলে তা অবশ্যই পারলৌকিক কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে।

Related Post