আল্লাহর মনোনীত মহান জীবন ব্যবস্থা ‘আল ইসলাম’

আল্লাহর মনোনীত মহান জীবন ব্যবস্থা ‘আল ইসলাম’

আল্লাহর মনোনীত মহান জীবন ব্যবস্থা ‘আল ইসলাম’

অধ্যক্ষ আ. ম. ম. খালেদ জমীল
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে তথা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দরতম গঠনে। তিনি আমাদেরকে শুধুমাত্র সৃষ্টি করেননি, বরং সৃষ্টির পাশাপাশি অফুরন্ত নেয়ামত ও অসংখ্য দান-অনুদানের মাধ্যমে এই পৃথিবীর বুকে আমাদেরকে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সম্মান-মর্যাদার সাথে বসবাস ও জীবন যাপনের সুযোগ দান করেছেন। আমাদের উপর মহান আল্লাহর অন্যতম প্রধান দান ও অনুগ্রহ হচ্ছে মহান জীবন ব্যবস্থা ‘আল ইসলাম।’ যাকে তিনি সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা রূপে আমাদের জন্য মনোনীত করেছেন। পবিত্র কুরআনে তিনি ঘোষণা করেন- নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা। [আল ইমরান : ১৯]

দ্বীন ও ইসলামের পরিচয়
আরবি শব্দ ‘আদ দ্বীন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল- আনুগত্য করা, বদলা নেয়া। জীবন বিধান ও সংবিধান। বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত অনুসারে ‘আদ্ দ্বীন’ এর পারিভাষিক অর্থ হল- দ্বীন হচ্ছে আল্লাহর ঐ বিধানের নাম, যা বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানব সম্প্রদায়কে তাদের প্রশংসিত ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে মৌলিকভাবে ভালো বস্তু বা গন্তব্য তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়। [নূরুল আনওয়ার ফি শরহিল মানার]
‘আল ইসলাম’ এর আভিধানিক অর্থ হল- মেনে নেয়া, আত্মসমর্পণ করা।
বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত অনুসারে ‘আল ইসলাম’ হচ্ছে মহান আল্লাহর সে জীবন ব্যবস্থার নাম, যাকে তিনি তাঁর প্রেরিত অসংখ্য নবী রাসূলের মাধ্যমে বিশ্বের ভিন্ন এলাকার ভিন্ন যুগের ও ভিন্ন জাতির অন্তর্ভুক্ত স্বীয় বান্দাদের জন্য প্রবর্তন করেছেন।
বিশেষ জ্ঞাতব্য বিষয়:
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর পূর্বে আগত নবী ও রাসূলগণ ছিলেন নির্দিষ্ট কালের, নির্দিষ্ট এলাকার ও নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানব গোষ্টির জন্য প্রেরিত। ফলত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা যে দ্বীন তথা ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন তা ছিল নির্দিষ্ট কালের, নির্দিষ্ট এলাকার ও নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ। তাদের আনীত ইসলাম সামগ্রিক এবং পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ ছিল না। তবে নবীকুল শিরোমণী সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.). হচ্ছেন সর্বকালীন, সর্বজনীন ও বিশ্বনবী। ফলত তাঁর আনীত আল্লাহর দ্বীন হচ্ছে একটি সামগ্রিক জীবন বিধান এবং যা মানব জীবনের সব সমস্যার সমাধান সম্বলিত ও সব বিভাগের নির্দেশনা সমৃদ্ধ একটি পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। অতএব ‘আল ইসলাম’ মৌলিকভাবে সকল নবী ও বর্তমানে সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আনীত আল্লাহর মানোনীত জীবন ব্যবস্থাকেই বুঝায়। যেহেতু তাঁর আনীত আল্লাহপ্রদত্ত জীবন ব্যবস্থাটাই একমাত্র সামগ্রিক, পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত।
ইসলামের মর্যাদা-বৈশিষ্ট্য
ইসলামই একমাত্র আল্লাহর মনোনীত পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। পবিত্র কুরআনের মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। [সূরা আল ইমরান : ০৩]
হিজরতের ১০ম বৎসর নবীজীর বিদায় হজ্জের প্রাক্কালে পবিত্র আরাফাতের ময়দানে নাযিল হওয়া এ আয়াতটি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট সনদ যে, একমাত্র ইসলামই আল্লাহর মনোনীত পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, জনৈক ইয়াহুদি ব্যক্তি হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) এর কাছে এসে বলল- আমীরুল মু’মিনীন! আপনারা স্বীয় কিতাবের মধ্যে এমন একটি আয়াত পাঠ করেন, সেটি যদি আমরা ইয়াহুদি সম্প্রদায়ের উপর নাযিল হত, আমরা নাযিল হওয়ার দিনটাকে একটি উৎসবের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। হযরত ওমর (রা.) প্রশ্ন করলেন- সেটি কোন আয়াত?  ইয়াহুদী বলল-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَ‌ضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
হযরত ওমর (রা.) ইয়াহুদী কে বললেন- আল্লাহর শপথ! তুমি না জানলেও আমি ভালভাবেই জানি কোন জায়গায় কোন দিনের কোন মুহূর্তে নবীজির উপর আয়াতটি নাযিল হয়। দিনটি ছিল জুমার দিন। জায়গা ছিল আরাফাতের ময়দান আর সময়টা ছিল বিকাল বেলা। [সহীহ বুখারি; কিতাবুত তাফসীর]
উল্লেখ্য যে, জুমার দিন ও আরাফাতের দিন নিঃসন্দেহে মুসলমানদের জন্য দুটি বড় মর্যাদার দিন। মহান আল্লাহ মর্যাদায়  এদিন দুটিকে যে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণার জন্য বেছে নেন তা বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত।
ইসলাম কেন পরিপূর্ণও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা?
ইসলামই একমাত্র সামগ্রিক, পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। কারণ মানব জীবনের যত দিক আছে ও বিভাগ আছে, ইসলাম সর্বদিক ও বিভাগ সম্পর্কে আমাদেরকে বিস্তারিত, সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ ‘কাজ’ সম্পাদন করা। যেমন- ক. পেশাব-পায়খানা, খ. খানা-পিনা, গ. শয়ন-জাগরণ। বলা বাহুল্য ব্যক্তি জীবনের এ তিনটি কাজের ভদ্রতা ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ইসলাম আমাদেরকে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করেছে।
হযরত আব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ (রা.) হতে বর্ণিত- জনৈক মুশরিক ব্যক্তি প্রসিদ্ধ সাহাবি হযরত সালমান ফারসী (রা.) কে রাগান্মিত ও উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে বলল- তোমাদের নবী তোমাদেরকে সব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, এমনকি পেশাব-পায়খানায় বসার ঢংও। হযরত সালমান (রা.) ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিলেন- বটে, শুধু তাই নয় তিনি আমাদেরকে আরো অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন- পেশাব-পায়খানার প্রাক্কালে কিবলামূখী হতে, নিষেধ করেছেন ডান হাতে শৌচ কার্য সম্পাদন করতে। নিষেধ করেছেন তিনটির কম সংখ্যক ঢিলা দ্বারা ইস্তেঞ্জা করতে এবং নিষেধ করেছেন বিষ্ঠা ও হাড় দ্বারা ইস্তেঞ্জা করতে। [তিরমিযী; আবওয়াবুত তাহারাত]
ইসলামে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা:
ব্যক্তি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। ইসলাম তার প্রধান ইবাদত সালাতের জন্য তাহারাত তথা জায়গা, কাপড় ও শরীর পাক-পবিত্র হওয়ার শর্তারোপ করার মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে নিশ্চিত করেছে।
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ হচ্ছে পারিবারিক জীবন। স্বামী-স্ত্রী পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে যে সামাজিক পরিবেশ গড়ে উঠে তাকেই বলা হয় পরিবার। ইসলাম পারিবারিক জীবনকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রবর্তন করেছে নিকাহ বা বিবাহ-শাদী ও এর সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান। বিবাহের বদৌলতে নর-নারী পরিচিত হয় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে। স্বামী-স্ত্রী যখন সন্তান-সন্ততির মালিক হয় তখন তারা পরিচিত হয় ‘পিতা-মাতা হিসেবে। ইসলাম পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের খুটিনাটি সব সমস্যার সমাধানের পাশা-পাশি সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্তুতির পারষ্পরিক অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ইসলামে সামাজিকতা:
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ হচ্ছে সামাজিক জীবন। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে জীবন যাপন করতে মানুষ সাচ্ছন্দ বোধ করে। সমাজের মানুষের শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর দেশের শান্তি, উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে। ‘ইসলাম’ মুসলমানদের সামাজিক জীবনকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে পরষ্পরকে ঈমানী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে এবং তাদেরকে ঐ সকল সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে যেগুলো তাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। আর ঐ সকল অসামাজিক কাজের প্রতি নিরুৎসাহিত করে যেগুলো এ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কে নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া ইসলাম মানুষের সমাজ জীবনকে সুন্দর, শান্তিময় ও স্থিতিশীল করার জন্য সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের উপর পরষ্পরের প্রতি বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করত, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ প্রদান করে।
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ হচ্ছে অর্থনৈতিক জীবন। মানব জীবনে অর্থের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে আপরিসীম। ইসলাম মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে গতিশীল করার উদ্দেশ্যে তাদের উপর আরোপ করেছে চারটি ফলপ্রসূ কর্মসূচি। যেমন-
ক. ইবাদতের পাশাপাশি রিযিক অনুসন্ধান।
খ. রিযিক অনুসন্ধান করতে গিয়ে শরীআত সম্মত পন্থা ও পদ্ধতির অবলম্বন করা এবং শরীআত বহির্ভূত পন্থা ও পদ্ধতি থেকে দূরে থাকা।
গ. উপার্জিত ধনসম্পদ শরীআত সমর্থিত খাতে ব্যয় করা।
ঘ. উপার্জিত সম্পদের একটি অংশকে সমাজের দরিদ্র, অসহায় ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য ব্যয় করা।
ইসলামে রাজনৈতিক ব্যবস্থা:
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ হচ্ছে রাজনৈতিক জীবন। দেশের শান্তি উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন ভাল রাজা ও সুন্দর রাজনীতির। রাজনীতির ক্ষেত্রে ইসলাম আমাদেরকে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে সে গুলোর অন্যতম হল-
ক. আল্লাহই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন।  [আলে ইমরান : ২৬]
খ. ন্যায়-পরায়ন মুসলিম শাসক রাষ্ট্রীয় দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে আদায় করবে ও বিচার কার্য কুরআন সুন্নাহভিত্তিক পরিচালনা করবেন। [সূরাতুন নিসা : ৫৮]
তিনি নামায ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ও যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা চালু করবেন। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন হবে তাঁর স্বরাষ্ট্রনীতি। [সূরাতুল হাজ্জ : ৪১]
গ. জালিম শাসকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল- সে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদেরকে অপমানিত করে ছাড়বে। [সূরাতুল নামল : ৩৪]
ঘ. ন্যায়পরায়ণ মুসলিম শাসক মহান আল্লাহর প্রিয়ভাজন। তিনি তাকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে সম্মানিত করবেন।
ঙ. জালিম শাসক আল্লাহর অপ্রিয়জন। তার শক্তি ক্ষমতা যতই বেশি হোক এক পর্যায়ে আল্লাহ চরমভাবে অপমানিত করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন।
আরেকটি কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম, যেখানে রাষ্ট্র কিভাবে চলবে, সেই বর্ণনা বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে। অন্য কোন ধর্মে রাষ্ট্র পরিচালনার বিধান নেই। তাই তারা রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে চায়।
ইসলামে নৈতিকতা:
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ হচ্ছে নৈতিক জীবন। ইসলাম মানুষের নৈতিক জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ঈমানের পাশাপাশি নির্দেশ দেয় তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়ে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। ‘হায়া’ তথা কাজ ও চাল চলনে ভদ্রতা ও শালীনতা অবলম্বন করা। সততা, আমানতদারিতা, ওয়াদা রক্ষা, মানবিকতা ইত্যাদি নৈতিক আচরণের এবং তাদের জন্য নিষিদ্ধ করে পাপাচার, নির্লজ্জতা, মিথ্যা, খেয়ানত, ওয়াদা খেলাফ, অমানবিকতা ইত্যাদি অনৈতিক আচার-আচরণকে।

ইসলামী বিষয়সমূহের শ্রেণী বিন্যাস
ইসলামী বিষয়সমূহকে সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক. আরকানুল ঈমান: বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ। যেমন- আল্লাহ, আল্লাহর ফেরেশতাগণ, নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, প্রেরিত রাসূলগণ, পরকাল ও তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
খ. আল ইবাদাহ: অর্থাৎ মহান স্রষ্টা, আল্লাহর প্রতি তার বান্দাদের একান্ত আনুগত্য প্রকাশ ও প্রদর্শন। এই আনুগত্য প্রদর্শনের প্রধান আল্লাহর বিধান হচ্ছে- সালাত, যাকাত, সাওম, হজ্জ।
গ. আল মুআমালা: অর্থাৎ মুসলমানদের পারষ্পরিক লেন-দেন সম্পর্কিত বিষয়াদি। যেমন- ক্রয়-বিক্রয়, শ্রম-মজুরী, ঋণের লেন-দেন, বিবাহ-শাদী ইত্যাদি বিষয়।
ঘ. আল আদাব বা শিষ্টাচার: অর্থাৎ মুসলমানদের পারস্পরিক সাক্ষাৎকার, কথা-বার্তা, আচার আচরণ ও চাল-চলনের সাথে সম্পৃক্ত ইসলামী শিষ্টাচার।
ঙ. আল হুদুদ ওয়াত তাগরিরাত: অর্থাৎ যারা অপরাধে জড়াবে তাদের শাস্তি সম্পর্কিত বিধি-বিধান। ইসলাম কতিপয় মারাত্মক অপরাধের শাস্তি বা দন্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে। যে গুলোকে বলা হয়- হুদূদ আর কতিপয় অপরাধের শাস্তির ধরণ নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করেছে মুসলিম বিচারককে। যেগুলোকে বলা হয়-  আত তাগরিরাত।
ইসলামের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
আল্লাহর মনোনীত মহান জীবন ব্যবস্থা আল ইসলাম নিঃসন্দেহে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহর একটি শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করেছেন। সে গুলো হচ্ছে-
ক. ইসলামকে জানা : ইসলামকে জানার উপায় হল- তালাবুল ইলম তথা ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণ করা। ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণের প্রধান মাধ্যম হল পড়া ও লেখা। মহান আল্লাহ নবী করীম সা. এর উপর নাযিলকৃত প্রথম ওহীতে তার নামে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কলমের কথা উল্লেখ করেছেন। যার দ্বারা তিনি মানব জাতিকে অজানা অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। প্রিয়নবী ইরশাদ করেন- ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। [ইবনে মাযাহ: ২২৪]
খ. ইসলামে সর্বাত্মকভাবে প্রবেশ করা : মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে মু’মিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারাহ: ২০৮)
গ. ইসলামের যথাযথ অনুসরণ করা : মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- আর (ইসলামের) এই পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করবে এবং এতদভিন্ন পথ অনুকরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। [সূরা আনআম : ১৫৩]
ঘ. ইসলাম ছাড়া অন্য জীবন ব্যবস্থার অনুসন্ধান না করা : মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন অনুসন্ধান করবে তা কখনও কবুল করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আল ইমরান : ৮৫]
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র সামগ্রিক, পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মুসলিম উম্মাহর উচিৎ আল্লাহর মহান নেয়ামত ইসলামের জন্য শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে একে জেনে বুঝে পরিপূর্ণরূপে আনুসরণ করা। ইসলামে পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমেই মুসলিম জাতি পরিণত হতে পারে আল্লাহর ঘোষিত সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন

Related Post