৩নং যুক্তি: ধর্মীয় আইন হতে হবে নির্ভুল
দেখা যায় পৃথিবীতে এমন বহু ধর্ম রয়েছে যার ধর্মীয় আইন মানুষকেই সংশোধন করতে হয়। যেমন সতীদাহ প্রথা ছিল একটা ধর্মীয় আইন, যা মানুষের নজরে ভুল আইন হিসাবে ধরা পড়লো। ফলে ঈশ্বরের ভুল আইন মানুষকেই সংশোধন করতে হলো। তাই অনেকেই বিভিন্ন ধর্ম থেকে এসে কেন মুসলমান হয়েছেন তার জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, “অন্যান্য ধর্মের ভুলত্র“টি সংশোধন করে মানুষ আর মানুষের ভুলত্রুটি সংশোধন করে ইসলাম। ইসলামের এই মাহাত্ম্য দেখেই মুসলমান হয়েছি।” এ গৌরব একমাত্র ইসলামই করতে পারে যে এর কোন একটি কথাও অবৈজ্ঞানিক নয়।
৪নং যুক্তি : ধর্মীয় বিধান পক্ষপাতহীন হতে হবে
সৃষ্টিকর্তা যেমন সবার কাছে সমান, তেমনি তাঁর আইনও হতে হবে সবার জন্য সমান অর্থাৎ কুরআন আল্লাহর বাণী হিসেবে কুরআনের প্রতি সবার থাকতে হবে সম-অধিকার। অবশ্যই ইসলামের ক্ষেত্রে তা আছেও। কিন্তু দেখা যায় কোন কোন ধর্মের ব্যাপারে তা নেই। যেমন বেদে শুদ্রদের কোন অধিকার নেই। তাছাড়া ইসলামে যা এবাদত বন্দেগীর নিয়ম রয়েছে তা প্রত্যেকের জন্য একই হুকুম অর্থাৎ প্রত্যেককেই একই নিয়মে এবাদত করতে হবে। এখানে কারও জন্যই কিছু মাফ নেই বা কান্সেশন নেই। কিন্তু কোন কোন ধর্মে দেখা যায় উপাসনা সবাইকে করতে হয় না। এমন কি সবার উপাসনার অধিকার পর্যন্ত নেই। যেমন হিন্দু ধর্মে উপাসনার যাবতীয় মন্ত্রপাঠ ও অনুষ্ঠানাদি পালন করে শুধুমাত্র পুরোহিতগণ আর অন্যান্যরা শুধু সেখানে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটির শ্রীবৃদ্ধি করে মাত্র। তাদের কোন মন্ত্র পড়ার প্রয়োজন হয় না। খ্রীষ্টানদেরও সবাইকে সমানভাবে একই নির্দিষ্ট পন্থায় কোন উপাসনা করতে হয় না। যেমন করতে হয় মুসলমানদের নামায রোযাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে। তাছাড় দেখা যায় হিন্দুদের বেলায় এমন শ্রেণীবিভাগ রয়েছে যা অবশ্যই পক্ষপাতমূলক। যেমন পূজার পৌরোহিত্য করার অধিকার একমাত্র ব্রাহ্মণদেরই আছে এবং তা আছে জন্মসূত্রে। এতে আর কারও কোন অধিকার নেই তা সে যতই ধার্মিক হোক না কেন। শুধু তাই নয় ব্রাহ্মণদের পূজা-অর্চনার যে অধিকার রয়েছে সে অধিকার কেড়ে নেওয়ারও অধিকার কারও নেই। তা সে ব্রাহ্মণ কাট্টা মূর্খ কিংবা চারিত্রিক দিক থেকে সর্বজন ধিকৃত হলেও। তাছাড়াও নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুদের পিতা-মাতার মৃত্যুতে যে কয়দিন শোক পালন করতে হয় তার মেয়াদ হচ্ছে ৩০ দিন। পক্ষান্তরে আজই যদি কোন মুচি-মেথরও মুসলমান হয় তবে ইসলামী বিধান মোতাবিক কালই সে ব্যক্তি একজন আওলাদে রাসূলের সামনে দাঁড়িয়ে ইমামতি করার অধিকার রাখে। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, একমাত্র ইসলামেই কোন ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব নেই। তাছাড়া অন্যান্য ধর্মে দস্তরমত পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।
খ্রীষ্টানদের বেলায় উপাসনা শুধু ধর্মযাজকদের জন্য। আর অন্যান্যদের জন্যে শুধু যীশুখ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাসই যথেষ্ট, তাতেই নাকি তাদের মুক্তি।
কিন্তু ইসলামের বেলায় সম্পূর্ণই এর ব্যতিক্রম। এখানে শুধু বিশ্বাসে কোনই ফায়দা নেই। তাকে বিশ্বাস মোতাবিক প্রতিটি কাজই আল্লাহর বিধান অনুযায়ী করতে হবে এতে কারও কোন কান্সেশন নেই।
৫নং যুক্তি : পৈতৃক ধর্ম অপেক্ষা অধিক যুক্তিগ্রাহ্য না হলে কেউ নতুন ধর্ম গ্রহণ করে না
যারা অশিক্ষিত ও ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের কথা বাদ দিলে দেখা যায়, যারাই শিক্ষিত ও জ্ঞানী ব্যক্তি তারা কেউ কোনো দিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ অপেক্ষা অন্য ধর্মকে অধিক যুক্তিগ্রাহ্য মনে করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছে এমন কোনো কথা কোনো ইতিহাসে নেই। পক্ষান্তরে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বহু গণ্যমান্য শিক্ষিত ব্যক্তিদের কথা আছে, এমন কি অনেক রাজা বাদশাহদের কথাও আছে যে, তারা ইসলামের সৌন্দর্য ও যৌক্তিকতা দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিছু অশিক্ষিত লোককে যারা আর্থিক দিক থেকে খুবই দুর্বল তাদেরকে অর্থের লোভ দেখিয়ে খ্রীষ্টান করা হয়েছেন এমন ইতিহাস যে আছে তা আমি স্বীকার করি। কিন্তু এমনটি কেউই দেখাতে পারবে না যে, কোনো ধার্মিক মুসলমান ধর্ম সম্পর্কে বা ইসলামের ওপর ব্যাপক পড়াশুনা করে ধর্মের অসারতা দেখে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং খ্রীষ্টান বা হিন্দু হয়ে নব-খ্রীষ্টান বা নব-হিন্দু নাম দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যেমন নও-মুসলিম মরহুম মাওলানা আবুল হোসেন ভট্টাচার্য নও-মুসলমানদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এমন কি কোনো নযীর আছে পৃথিবীর ইতিহাসে? অর্থাৎ মওলানা আবুল হোসেন ভট্টাচার্য যেমন হিন্দুদের পুরোহিত হয়ে হিন্দুধর্ম ভালোভাবে পড়াশুনা করে দেখলেন এটা ভুল। পরে খ্রীষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ পড়ে দেখে বুঝলেন এটাও অচল। এরপরে ইসলামের উপর পড়াশুনা করে বুঝলেন যে এইটাই সঠিক এবং এইটাই তিনি গ্রহণ করলেন এবং কেন তিনি খ্রীষ্টান হলেন না এবং কেন ইসলাম গ্রহণ করলেন, তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য কতগুলি মূল্যবান গ্রন্থ তিনি রচনা করলেন। (আমরা এই ওয়েব সাইটেও তার লিখিত একটি মূল্যবান বই “আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?” ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করছি। ) আর সে মহাসত্যকে গোটা জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য যেভাবে একটা সংগঠন গড়ে তুললেন তেমন কোনো ঘটনা পৃথিবীর কোথাও কোনোদিন ঘটেছে, তার কি কোনো প্রমাণ আছে? অর্থাৎ মাওলানা আবুল হোসেন ভট্টাচার্য যেমন ছিলেন হিন্দুজাতির পুরোহিত তেমনি মুসলমানদের কোনো ইমাম সাহেব কি ইসলাম ধর্মের যাবতীয় গ্রন্থাদি পড়ে ইসলামের অসারতা বুঝতে পেরে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং ইসলামের আসারতা বুঝানোর জন্য কোনো বই পুস্তক রচনা করেছেন যেমন করেছেন মরহুম ভট্টচার্য সাহেব। গোটা পৃথিবী মন্থন করেও কি এই ধরনের কোনো নযীর উপস্থিত করতে পারবেন? তা অবশ্যই কেউ পারবেন না।