ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সম্মান-মর্যাদা রক্ষার গুরুত্ব

ইসলামে মানবজাতির সম্মান রক্ষার গুরুত্ব

ইসলামে মানবজাতির সম্মান রক্ষার গুরুত্ব

মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে একমাত্র মনোনীত দিন ও জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম। মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন:

 وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿٨٥﴾

অর্থাৎ যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান: ৮৫)

আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন: إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللهِ الْإِسْلَامُ ۗ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন বা জীভন বিধান একমাত্র ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান: ১৯)

অনেক সময় গণমাধ্যমের বদৌলতে দৃষ্টিগোচর হয় যে, সন্তান তার বৃদ্ধ বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, অথচ তাদের সম্মান করলে স্বয়ং আল্লাহকে সম্মান করা হয়। রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন:

إِنَّ مِنْ إِجْلاَلِ اللَّهِ إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ ، وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِي فِيهِ وَالْجَافِي عَنْهُ ، وَإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ . رواه أبو داود ، وحسنه الألباني .

হজরত আবু মুসা আশআরি(র.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন,তিন প্রকারের লোককে ভক্তিশ্রদ্ধা করা আল্লাহকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত। ১. বৃদ্ধ মুসলমান, ২. যে কুরআনে হাফিজ মধ্যপন্থার ওপর থাকে, ৩. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। [আবু দাউদ ]

সুতরাং প্রত্যেকের উচিত উপরে বর্ণিত যোগ্যলোকদের সম্মান করা। কেননা আল্লাহর নিকট প্রত্যেক ভালো ও মন্দ কাজের প্রতিদান রয়েছে:  আল্লাহ বলেন-

فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ ﴿٧﴾ وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ ﴿٨﴾

“সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে, সে তা দেখতে পাবে।” এবং কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে, তাও সে দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল: ৭-৮)

ইমাম মুক্বাতিল (রঃ) বলেন, এই সূরাটি সেই দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে, যাদের একজন ভিখারীকে অল্প কিছু সদকা করতে ইতস্ততঃবোধ করত। আর অপরজন ছোট ছোট পাপ করতে কোন প্রকার ভয় অনুভব করত না। (ফাতহুল ক্বাদীর)

ইসলামে সর্ববিষয়ে নীতিমালা ও বিধি-বিধান রয়েছে:

জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ-ধনী-গরিব-শাসক-শাসিত-নির্বিশেষে সব মানুষের সম্মান রক্ষায় ইসলাম দিয়েছে এক অভূতপূর্ব বিধান, সর্বাঙ্গীণ নীতিমালা। আল্লাহ তায়ালা কারো কুৎসা রটানো, পরনিন্দা ও পরচর্চা করা, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা, তিরস্কার-ভর্ৎসনা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা ইত্যাদির ব্যাপারে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করছেন:

 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ

হে মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। (সূরা হুজুরাত: ১১)

 

 আল্লাহ তায়ালা গোপন দোষ তালাশ করাকে হারাম করেছেন। এমনিভাবে কারো সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করতেও আল্লাহ নিষেধ করেছেন। ইসলাম প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, সম্মান, সুনাম ও নিজ অবস্থা সুরক্ষা করার অধিকার দিয়েছে। পবিত্র কুররানে ইরশাদ হচ্ছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ

হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। (সূরা হুজুরাত: ১২)

 

আমরা অনেকে অহেতুক প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মানুষকে খাটো করি, যা আদৌ উচিত নয়। ইসলামে এসব কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সমালোচনার ঝড় তুলে তীব্র বাক্যালাপে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাকে নিষেধ করেছে ইসলাম। রাসূলে কারীম (সা.) এরশাদ করেন:

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو  رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ، قَالَ رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اَلْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُوْنَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَاجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ – (بخارى)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হস্ত ও জিহ্বা থেকে মুসলমান নিরাপদে থাকে। আর মুহাজির হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে হিজরত করে। (বুখারী)

পক্ষান্তরে ব্যক্তি, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনে মানুষের প্রতিপক্ষ থাকতেই পারে। চলতেই পারে পারস্পরিক বিরোধ। তাই বলে একে অন্যকে এমন ভাষায় বা এমন বাক্যবাণে জর্জরিত করা যাবে না, যা দ্বারা তার মানহানি ঘটে। এমন বক্তব্য দেয়া যাবে না, যার কারণে জনসমক্ষে বেইজ্জতি হতে হয়।

হাদীসে এসেছে,

وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

 যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অন্য ভাইয়ের দোষ গোপন করবে, মানুষের কাছে প্রকাশ করবে না, আল্লাহ তায়ালাও তার সব দোষত্রুটি কিয়ামতের দিন গোপন রাখবেন।

 রাসূলে কারীম [সা.]  আরো বলেছেন,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ‏:‏ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم‏:‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا، وَيُوَقِّرْ كَبِيرَنَا‏.‏

যে ছোটদের স্নেহ করে না, বড়কে শ্রদ্ধা করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আবু দাউদ ও তিরমিযী)

মহান আল্লাহ মানুষকে খুবই সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন:

 وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا ﴿٧٠

নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বানী ইসরাইল:  ৭০)

আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান ব্যক্তি কে?: পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এই বিষয়ে এরশাদ করেন:

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللهِ أَتْقَاكُمْ নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। (সূরা হুজুরাত: ১৩)

 আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামে দিক-নিদের্শনা মেনে আদর্শ জীবন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষকে সম্মান করার পাশাপাশি নিজেকে মর্যাদাবান করে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Related Post