ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে ঈমনী অমূল্য সম্পদ দিয়ে মালামাল করেছেন। আরো কৃতজ্ঞ আদায় করছি যেই মহান সত্তা ইসলামী যিন্দেগীর সাথে সম্পৃক্ত রেখেছেন । দরূদ ও শান্তি অবিরাম ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমণী মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর পবিত্র বংশধর ও সম্মানিত সাথীদের উপর।
ইসলাম একটি শান্তিময় ও সুশৃঙ্খল জীবন বিধান। নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর ইন্তেকালের পূর্বেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দ্বীনকে বিশ্ববাসীর জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। একজন মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম সুন্দর সুন্দর বিধান প্রদান করেছে। নবজাতক শিশু জন্ম গ্রহণ করার পর সন্তানের পিতা-মাতা বা তার অভিবাবকের উপর আকীকার বিধান ইসলামের সৌন্দর্যময় বিধানসমূহের মধ্য হতে অন্যতম একটি বিধান। তেমনিভাবে এজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তাকে কোন পদ্ধতি কবরস্থ করা হবে সেই বিষয়েও দিক নির্দেশা ইসলামের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। জন্ম ও মৃত্যু এই দু‘য়ের মধ্যবর্তী সময় তথা জীবনকালের প্রতিটি মুহূর্ত একজন নারী-পুরুষ কিভাবে জীবন পরিচালনা করবে সেই বিষয়েও ইসলামের নির্দেশনা পরিস্কার।

আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও সকল যুগের সব মানুষের জন্য উপযুক্ত জীবনবিধান হিসেবে নাজিল হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করে কোন্ পথে চললে মানুষের কল্যাণ হবে , আর কোন্ পথে চললে হবে অকল্যাণ, তা অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই অহী তথা জীবন বিধানের নাম হচ্ছে ‘আল ইসলাম’। মহান স্রষ্টা আল্লাহর বাণী ও হিদায়াত এবং সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ (সা)-এর শিক্ষা শুধুমাত্র বিশ্বাস ও নৈতিক বিধানের মধ্যেই সীমিত নয়, মানুষের জন্য প্রযোজ্য ও উপযুক্ত আইন-কানুনও এর আওতাভুক্ত। ফলে মানুষের জীবন চলার কোনো বিষয়ই এতে অনুপস্থিত নেই। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ বিধান হওয়ার পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করা হয়েছে। কুরআনের এমন একটি আয়াত হলো-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ -সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩
ইসলামী জীবনাদর্শের বুনিয়াদ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ঘোষণাটি হচ্ছে ইসলামী আকীদার প্রথম স্তম্ভ বা কালেমায়ে শহাদাতের প্রথমাংশ। এ অংশে আল্লাহ ছাড়া বন্দগীর যোগ্য কেহ নেই একথার স্বীকৃতি রয়েছে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ইসলামী আকীদা বা কালেমায়ে শাহাদাতের দ্বিতীয় অংশ। এ অংশে আল্লাহ তাআলার বন্দেগী করার জন্যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রদর্শিত পন্থাই সঠিক বলে মেনে নেয়া।
এ কালেমা (ঘোষণা) তার উল্লেখিত দু’টো অংশসহ প্রত্যেক মু’মিনের অন্তরেই বদ্ধমূল হয়ে যায়। কারণ, ঈমানের অপরাপর বিষয় ও ইসলামের পরবর্তী স্তম্ভগুলো এ ঘোষণারই পরিণতি। স্বাভাবিকভাবেই ফেরেশতা, আসমনী কিতাব, নবীগণ (আ), আখেরাতে, তাকদীরের ভাল-মন্দ ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি ঈমান আনয়ন এবং সালাত, সওম, যাকাত, হজ্জ, হালাল ও হারামের পার্থক্য, লেনদেন, আইন-কানুন, উপদেশ শিক্ষাদান ইত্যাদি সকল কাজকর্মই আল্লাহ তাআলার বন্দেগী ও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অনুসরণের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে।
মানব জীবনের কোনো খণ্ডিত অংশে নয় বরং তাঁর জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাসূলুল্লাহ সা:-এর সীরাত অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে হবে। আল কুরআনে বলা হয়েছে-

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا

‘রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তিনি নিষেধ করেছেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক।’ (সূরা হাশর: ৭)
ইসলামী সমাজ কালেমায়ে শাহাদাত ও তার চাহিদাগুলোর বাস্তব চিত্র পেশ করবে। যে সমাজে কালেমায়ে শাহাদতের রূপ পরিস্ফুট হয় না সে সমাজ ইসলামী সমাজ নয়। তাই কালেমায়ে শাহাদাত একটি পরিপূর্ণ জীবনাদর্শের ভিত্তি এবং এ ভিত্তির উপরেই মুসলিম উম্মাতের বিরাট সৌধ গড়ে উঠে। এ ভিত্তিটি সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত না হলে জীবন যাত্রা প্রণালী রচিত হতেই পারে না। এ ভিত্তির পরিবর্তে অন্য কোন ভিত্তি অবলন্বল অথবা এ ভিত্তিটির সাথে অন্য কোন আদর্শের আংশিক সংমিশ্রণ ঘটিয়ে জীবন বিধান রচনার প্রচেষ্টায় যে সমাজ গড়ে উঠবে তাকে কিছুতেই ইসলামী সমাজ আখ্যা দেয়া যেতে পারে না। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন:

إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّـهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ

“আদেশ দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। তিনিই আদেশ করেছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো বন্দেগী করা চলবে না। আর এটাই হচ্ছে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত জীবন বিধান।” (সূরা ইউসুফ: ৪০
প্রচলিত অর্থে ইসলাম কেবলমাত্র একটি ধর্মের নাম নয়। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,”

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّـهِ الْإِسْلَامُ ۗ

আল্লাহর নিকট একমাত্র জীবনবিধান হচ্ছে আল ইসলাম”। (সূরা আল ইময়ান :১৯)
মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক তথা মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও বিভাগে অল ইসলামের সুষ্পষ্ট বিধান রয়েছে। রাসূল (সা.) সেই বিধানকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি একদিকে যেমন মসজিদের ইমাম ছিলেন, অন্যদিকে তেমনি ছিলেন রাষ্ট্রপতি, সেনাপতি, বিচারপতি। আল কুরআন ও আল হাদীসে ইসলামী জীবন বিধান সংরক্ষিত রয়েছে। যারা ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে সেই বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করে তাদেরকে বলা হয় ‘মুসলিম’। একজন মুসলমান কখনো ইসলাম ছাড়া অন্য কোন মত ও পথকে গ্রহণ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন:

اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ

‘তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি যা কিছু নাযিল হয়েছে তা মেনে চলো, তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো অনুসরণ করো না।” সূরা আল আরাফ: ৩।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ ﴿٢٠٨﴾

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পুরোপুরি প্রবেশ করো, আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না।” (সূরা বাকারা: ২০৮)
কোন মুসলমান ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করবে, আর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্য কোন মত ও পথকে গ্রহণ করবে, তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তায়ালা অন্য একটি আয়াতে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন,

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান তালাশ করবে,তার কাছ থেকে তা মোটেই গ্রহণ করা হবে না, আর আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্হদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।” সূরা আল ইময়ান: ৮৫
কোন ব্যক্তি শরীয়াতের বিধি-নিষেধ অমান্য করার মধ্যে মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত বলে ঘোষণা করার পর কি করে দ্বীনের অনুসরণকারী হিসেবে পরিচিত হতে পারে? শরীয়াত লংঘন করার পর কারো পক্ষেই দ্বীনদার হিসেবে পরিগণিত হবার কোন উপায় নেই।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে এ জীবন বিধান যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দেন। আমীন!

Related Post